টেলিফোন-কেবিন বা এই শ্রেণীর কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে পুরষ্কার প্রদানের উদ্দেশ্য হল নিজের দিকে বেশি বেশি গ্রাহক আকর্ষণ করা। যাতে তার ব্যবসা বেশি চলে এবং লাভও প্রচুর হয়। আসলে এটি জুয়ার পর্যায়ভুক্ত। এতে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দেওয়া হয়, লভ দেখিয়ে বাতিল উপায়ে মানুষের অর্থ ভক্ষণ করা হয় এবং অন্য ব্যবসায়ী তথা গ্রাহকদের মনে হিংসা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক বিদ্বেষ জাগিয়ে তোলা হয়। (ইবনে বাজ)
মহান আল্লাহ বলেছেন,
“হে বিশ্বাসীগণ ! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজা বেদী ও ভাগ্য নির্ণয়ক শর ঘৃণ্য বস্তু শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারে। শয়তান তো মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ ঘটাতে চায় এবং তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ ও নামাযের বাধা দিতে চায়! অতএব তোমরা কি নিবৃত্ত হবে না ?” (মায়িদাহঃ ৯০-৯১)
“হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা একে অন্যের সম্পত্তি অন্যায়ভাবে গ্রাস করে না। তবে তোমাদের পরস্পর সম্মতিক্রমে ব্যবসার মাধ্যমে (গ্রহণ করলে তা বৈধ)। (নিসাঃ ২৯)
উক্ত শর্ত লাগিয়ে বিক্রেতার পণ্য বিক্রয় করা অথবা বিক্রয়ের সময় ক্রেতার উপর উক্ত শর্ত আরোপ করা সঠিক নয়। যেহেতু এতে ক্রেতা ধোঁকা খেতে পারে। এর ফলে ত্রুটিপূর্ণ পণ্য গ্রহণ করতে সে বাধ্য হয়, ফলে সে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ক্রেতা পূর্ণ মূল্য দিয়ে একটি ত্রুটিমুক্ত পণ্য পেতে চায়। কিন্তু পরবর্তিতে দেখা যায় তা ত্রুটিপূর্ণ। সুতরাং তার অধিকার আছে, সে তার পরিবর্তে অন্য পণ্য গ্রহণ করবে অথবা মূল্য ফিরিয়ে নেবে। (লাজনাহ দায়েমাহ)
কোন সুদী ব্যাংকে টাকা রাখা বৈধ নয়। বরং সুদী ব্যাঙ্কের মাধ্যমে কোন কারবারই বৈধ নয়। যেহেতু মহান আল্লাহ বলেন,
“সৎ কাজ ও আত্নসংযমে তোমরা পরস্পর সহযোগিতা কর এবং পাপ ও সীমালঙ্ঘনের কাজে একে অন্যের সাহায্য করো না। আর আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তিদানে অত্যন্ত কঠোর।” (মায়িদাহঃ ২)
কিন্তু ইসলামী ব্যাংক না থাকলে মানুষ টাকার হিফাজতের জন্য রাখতে বাধ্য হলে সে কথা ভিন্ন।
ব্যাংকের সুদ ব্যাংকে ছেড়ে দিলে তা অবৈধ পথে অথবা মুসলমানদের বিরুদ্ধে ব্যয় হতে পারে। সুতরাং তা তুলে নিয়ে নিঃস্ব মানুষদের মাঝে সওয়াবের নিয়ত না রেখে বিতরণ করে দেওয়া কোন জনকল্যাণমূলক কর্মে ব্যয় করা যায়। হারাম উপায়ে উপার্জিত মাল ও তওবার পরে উক্তরূপে ব্যয় করা যায়। ( ইবনে জিবরীন)
কারবারের শেয়ার হলে বৈধ নয়। যেহেতু ইসলামে সুদ বৈধ নয়। (ইবনে জিবরীন)
এতে যে কোন চাকুরী করা হারাম। যেহেতু এতে চাকুরী করার অর্থই হল সূদের উপর সহায়তা করা। অতএব যদি সূদী কারবারের উপর সহায়তা হয়, তাহলে সে (চাকুরে) সহায়ক হিসেবে অভিশাপে শামিল হবে। নবী (সঃ) সুদখোর, সুদদাতা, তার সাক্ষিদাতা ও তার লেখককে অভিসাম্পত করেছেন এবং বলেছেন, “ওরা সবাই সমান।” (মুসলিম ১৫৯৮ নং)
পক্ষান্তরে এ কাজ যদি সুদী কারবারের উপর সহায়ক না হয়, তাহলেও উক্ত কারবারে তার সম্মতি ও মৌন সমর্থন প্রকাশ পায়। তাই সুদী ব্যাংকে কোন প্রকার চাকুরী নেওয়া বৈধ নয়।
অবশ্য প্রয়োজনে ওই ব্যাংকে টাকা জমা রাখায় ক্ষতি নেই--- যদি ওই সমস্ত ব্যাংক ছাড়া টাকা জমা রাখার জন্য আমরা অন্য ভিন্ন কোন নিরাপদ স্থান না পাই। তবে এই শর্তে যে, তা থেকে যেন কেউ সুদ গ্রহণ না করে। যেহেতু সুদ গ্রহণ অবশ্যই হারাম। (ইবনে উসাইমিন)
নেট অস্ত্রের মত, ভাল মন্দ উভয় ভাবে ব্যবহার করা যায়। বাজারে হাউসে আসা অধিকাংশ যুবক তা নোংরা কাজে ব্যবহার করে। তা হলে তা তাদেরকে ভাড়া দিয়ে ব্যবসা বৈধ নয়। যারা ভাল কাজে ব্যবহার করবে, তাদেরকে ভাড়া দেওয়া যায়। (ইবনে জিবরিন)
মোট কথা নোংরা ও মন্দ কাজে সহযোগিতা করে কোন ব্যবসাই ইসলামে বৈধ নয়। লজ ও হোটেলে বহু যুবক যুবতি এসে রুম ভাড়া নেয়। কিন্তু যদি বুঝা যায় যে, তারা প্রেমিক প্রেমিকা, তাহলে তাদেরকে রুম ভাড়া দেওয়া বৈধ নয়। দোকানে গুড় বিক্রি হয়। কিন্তু যদি জানা যায় যে, এ গুড় দিয়ে ক্রেতা মদ তৈরি করবে, তাহলে তাঁর কাছে গুড় বিক্রি করা বৈধ নয় ইত্যাদি। মহান আল্লাহ বলেছেন,
“সৎ কাজ ও আত্নসংযমে তোমরা পরস্পর সহযোগিতা কর এবং পাপ ও সীমালংঘনের কাজে একে অন্যের সাহায্য করো না। আর আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তিদানে অতি কঠোর। (মায়িদাহঃ ২)
অনেকে বলবেন, ‘তাহলে তো ব্যবসাই চলবে না।’ কিন্তু আপনার ব্যবসায় যদি হারাম প্রবিষ্ট হয়, তাহলে আপনার দ্বীন চলবে কীভাবে? মহান আল্লাহ বলেছেন,
“হে বিশ্বাসীগণ! আমি তোমাদেরকে যে রুযী দিয়েছি, তা থেকে পবিত্র বস্তু আহার কর এবং আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। যদি তোমরা শুধু তারই উপাসনা করে থাক। (বাকারাহঃ ১৭২)
সস্তা দামে ডলার কিনে রাখা ও দাম বাড়লে তা বিক্রি করা বৈধ। তবে ডলার কেনার সময় টাকা নগদ নগদ দিতে হবে। ধারে কেনা বেচা চলবে না। (ইবনে বাজ)
মুদ্রা ব্যবসা, ডলারের বিনিময়ে টাকা, টাকার বিনিময়ে রিয়াল ইত্যাদি বিভিন্ন দেশের মুদ্রা ক্রয় বিক্রয়ে কোন শরয়ী বাধা নেই, যদি তা নগদ নগদ হাতে হাতে হয়। (ইবনে জিবরিন) তবে একই দেশীয় মুদ্রার বিনিময়ে কম বেশি দেওয়া নেওয়া চলবে না। যেহেতু তা সুদী কারবারে পরিণত হয়ে যাবে।
এ বিনিময়ে সমস্যা নেই। যেহেতু এক দেশীয় মুদ্রা হলেও উভয়ের মুল উপাদান ভিন্ন। (ইবনে জিবরিন, ইবনে উসাইমিন) আর নবী (সঃ) বলেছেন,
“সোনার বিনিময়ে সোনা, রুপার বিনিময়ে রুপা, গমের বিনিময়ে গম, যবের বিনিময়ে যব, খেজুরের বিনিময়ে খেজুর, লবণের বিনিময়ে লবণ ক্রয় বিক্রয় এর ক্ষেত্রে উভয় বস্তুকে যেমনকার তেমন, সমান সমান ও হাতে হাতে হতে হবে। অবশ্য যখন উভয় বস্তুর শ্রেণী বা জাত বিভিন্ন হবে তখন তোমরা তা যেভাবে (কম বেশী করে) ইচ্ছা বিক্রয় কর। তবে শর্ত হল, তা যেন হাতে হাতে নগদে হয়। (মুসলিম, মিশকাত ২৮০৮ নং)