৬২৬৭

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - ইয়ামান ও শাম (সিরিয়া) দেশের বর্ণনা এবং উওয়াইস করানী-এর আলোচনা

৬২৬৭-[২] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) নবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সা.) বললেন: ইয়ামানবাসীগণ (স্বেচ্ছায়) তোমাদের কাছে এসেছেন। তাদের অন্তর খুবই নরম এবং অত্যধিক কোমল। ঈমান ইয়ামানবাসীদের মাঝে এবং কৌশল (বুদ্ধিমত্তা) ও ইয়ামানবাসীদের মাঝে বিদ্যমান রয়েছে। আর গর্বঅহমিকা রয়েছে উটের রাখালের কাছে, অপরদিকে স্বস্তি ও শান্তি বিদ্যমান রয়েছে বকরি পালকদের মাঝে। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول ( بَاب تَسْمِيَة من سمي من أهل الْبَدْر فِي «الْجَامِعِ لِلْبُخَارِيِّ» )

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «أَتَاكُم أهلُ الْيمن هم أَرقُّ أفئدَةً وَأَلْيَنُ قُلُوبًا الْإِيمَانُ يَمَانٍ وَالْحِكْمَةُ يَمَانِيَةٌ وَالْفَخْرُ وَالْخُيَلَاءُ فِي أَصْحَابِ الْإِبِلِ وَالسَّكِينَةُ وَالْوَقَارُ فِي أهل الْغنم» . مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (4388) و مسلم (86 ۔ 84 / 52)، (184 و 186) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

وعن ابي هريرة عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: «اتاكم اهل اليمن هم ارق افىدة والين قلوبا الايمان يمان والحكمة يمانية والفخر والخيلاء في اصحاب الابل والسكينة والوقار في اهل الغنم» . متفق عليه متفق علیہ ، رواہ البخاری (4388) و مسلم (86 ۔ 84 / 52)، (184 و 186) ۔ (متفق عليه)

ব্যাখ্যা: (الإمان يمان و الفقه يمان والحكمة يمانية) সহীহ মুসলিম-এর বর্ণনায় রয়েছে, হাফিয তাঁর ‘ফাতহ’ গ্রন্থে বলেন, স্পষ্টভাবে ঈমানকে ইয়ামানের দিকে সম্বন্ধ করা হয়েছে কারণ (يمان) মূলত (يمنى) ছিল। জাওহারী ও অপর ব্যক্তি বিশিষ্ট নাহুবিদ সিবওয়াইহ থেকে বর্ণনা করে বলেন: তিনি সুর করে গাইতেন (يَمَانِيًّا يَظَلُّ يَشُدُّ كِيرًا و ينفخ دائما لهب الشواط) “ইয়ামানীরা হাঁপরকে শক্তিশালী করতে থাকে এবং সদা অগ্নিশিখায় ফুঁক দেয়"। এর মমার্থ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেন, তার তাৎপর্য হলো ঈমানকে মক্কার দিকে নিসবত করে বলার কারণ হলো এর সূচনা মক্কাহ থেকে। আর মদীনাহ হিসেবে মক্কাহ ডানে। কেউ বলেন, ঈমানকে মক্কাহ্-মদীনার সাথে সম্বন্ধ করা হয়েছে। আর এ দুটো শামের ডানদিকে পড়ে এর ভিত্তি হলো এ কথা রসূলের মুখনিঃসৃত বাণী যা তিনি তাবূকে অবস্থানকালে বলেছিলেন। কেউ কেউ বলেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো আনসারগণ। তাদের সৃষ্টি হয়েছে ইয়ামান থেকে। ঈমানকে তাদের প্রতি সম্বন্ধ করা হয়েছে। এর কারণ হলো যে অভ্রান্ত ধর্ম নিয়ে রাসূল (সা.) আগমন করেছে সে ধর্মের মূলে ছিলে তারা। এসব বর্ণনা করেছেন আবূ উবায়দাহ তার গরীব হাদীসে। তার সমর্থনে ইবনুস সলাহ বলেন, পূর্বের বক্তব্যকে বাহ্যিক অর্থে প্রয়োগ করতে কোন বাধা নেই।
সহীহুল বুখারী (হা. ৩৪৯৯)-তে রয়েছে, ইয়ামানের নাম রাখার কারণ হলো তা কা'বার ডানদিকে এবং শাম কাবার বামদিকে অবস্থিত। প্রাচ্যবাসীদের মধ্যে ইয়ামানীদের অগ্রাধিকার দেয়ার কারণ হলো মুসলিমদেরকে বড় কষ্ট দেয়া ব্যতীত তারা ঈমানের নিকটে বশ্যতা স্বীকার করেছে। যেমনটি প্রাচ্যবাসীরা ও অন্যান্যরা ছিল না। ইয়ামানের লোকেরা এ কথাকে হাকীকী অর্থে ব্যবহার করে। এর দ্বারা উদ্দেশ্য তৎকালীন থাকা মু'মিন ব্যক্তিবর্গরা। সব যুগের ইয়ামানী ব্যক্তি নয়। কারণ হাদীসের শব্দ তা দাবী করে না।
তিনি আরো বলেন, (الفقه) হলো দীনের বুঝ। (حكمة) থেকে উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর পরিচিতির সাথে যুক্ত ‘ইলম। (الفتح)-এর বক্তব্য এখানে সমাপ্ত।
ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) মুসলিমের শারাহ-এর মধ্যে ইবনু সলাহ থেকে বর্ণনা করে বলেন, (الحكمة)-এর বিভিন্ন জন বিভিন্ন রকম অর্থ বর্ণনা করেন। তন্মধ্যে তিনি বলেন, (الحكمة) বলা হয় এমন জ্ঞানকে যা মহান আল্লাহর পরিচিতির সাথে সংযুক্ত হুকুম আহকাম দ্বার বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত, দূরদর্শিতা বাস্তবায়ন, অন্তর পরিশুদ্ধকরণ, হককে কার্যকরণ ও তার প্রতি আমল করা, বাতিল ও প্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে বিরত থাকার সাথে সম্পৃক্ত। এসব গুণ যার রয়েছে তাকে (الحكمة) বলা হয়। আবূ বাকর ইবনুদ দারীদ বলেন, যেসব শব্দ তোমাকে নাসীহত করে, সতর্ক করে, ভালো কিছুর প্রতি আহ্বান করে ও মন্দ বিষয় থেকে নিষেধ করে সেটাই (حكمة) এবং (حكم) যেমন রাসূল (সা.)-এর বাণী (أن من الشعر حكمة)। কোন বর্ণনায় রয়েছে, (حكما)। (তুহফাতুল আহওয়াযী –এ্যাপ, হা. ৩৯৩৫)

এ হাদীস দ্বারা ইয়ামানবাসীদের বড় মর্যাদা প্রকাশিত হয়। রাসূল (সা.) সত্যই বলেছেন, যে কারণে ইয়ামানে সর্বদা বড় বড় বিজ্ঞ দুনিয়াবিমুখ আলিম জন্মেছে। এখনো এর ব্যতিক্রম নয়।
(الْفَخْرُ وَالْخُيَلَاءُ) নবী (সা.) -এর সময়ে ‘আরবে দুটি শ্রেণি ছিল। তাই তাদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেন যে, উটওয়ালার বদ-মেজাজের অধিকারী এবং বকরির রাখালরা সাদাসিধে। এটা সাহচর্যের প্রভাবে হয়ে থাকে। কারণ অধিকাংশ উটই দুষ্ট প্রকৃতির হয় এবং বকরি হয় নিরীহ প্রকৃতির। (মিশকাতুল মাসাবীহ - মুম্বাই ছাপা, ৫ম খণ্ড, পৃ. ২৯১)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩০: মান-মর্যাদা (كتاب المناقب)