৫৯১১

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা

৫৯১১-[৪৪] আবূ কতাদাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের সামনে ভাষণ দিতে গিয়ে বললেন, তোমরা আজ সন্ধ্যা এবং রাত্রিতে (লাগাতার) চলতে থাকবে। আর আল্লাহ ইচ্ছা করলে পানির কাছে আগামীকাল পৌছে যাবে। অতঃপর লোকেরা এমনভাবে (দ্রুত পথ) চলতে থাকল যে, কেউ কারো দিকে ফিরে চাইত না। আবূ কতাদাহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) সন্ধ্যারাত হতে চলতে চলতে রাত্রি যখন মধ্যাহ্নে পৌছল, তখন তিনি রাস্তা হতে একদিকে সরে বিশ্রাম গ্রহণ করলেন। অতঃপর বললেন, তোমরা (ফজর) সালাতের প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখবে। (এরপর সকলে ঘুমিয়ে পড়লেন এবং) সকলের আগে সর্বপ্রথম রাসূলুল্লাহ (সা.) -ই জাগ্রত হলেন, অথচ তখন সূর্যের তাপ এসে তার পিঠে পড়ছিল। অতঃপর তিনি (সা.) বললেন, তোমরা নিজ নিজ বাহনে আরোহণ কর। অতএব আমরা আরোহণ করলাম এবং সূর্য খুব উপরে উঠা পর্যন্ত ভ্রমণ করে তিনি এক জায়গায় অবতরণ করলেন। অতঃপর  তিনি (সা.) উযূর জন্য পানির পাত্র চাইলেন, যা আমার সাথে ছিল। তাতে পানিও ছিল খুব সামান্য পরিমাণ। তিনি (সা.) তা হতে একান্ত হালকাভাবে উযু করলেন। আবূ কতাদাহ (রাঃ), বলেন, তার উযুর পরও পাত্রে সামান্য পরিমাণ পানি অবশিষ্ট রয়ে গেল। এরপর তিনি (সা.) বললেন, তোমরা পাত্রের পানিগুলো আমাদের জন্য ভালোভাবে সংরক্ষণ করে রাখ। কেননা অচিরেই তা হতে একটি বড় ধরনের ঘটনা প্রকাশ পাবে।
অতঃপর বিলাল (রাঃ) সালাতের জন্য আযান দিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) দুই রাক’আত (সুন্নাত) আদায় করলেন, তারপর ফজরের (ফরয) সালাত আদায় করলেন এবং নিজেও সওয়ারীতে আরোহণ করলেন, আর আমরাও তাঁর সাথে রওয়ানা হলাম।
অবশেষে সূর্য যখন অনেক উপরে উঠল এবং প্রতিটি জিনিস সূর্যের প্রচণ্ড তাপে খুবই গরম হয়ে গেল, তখন আমরা ঐ কাফেলার লোকেদের কাছে এসে পৌছলাম, (যারা আমাদের পূর্বেই রওয়ানা হয়ে এসেছে) তারা বলে উঠল, হে আল্লাহর রাসূল! খুবই গরমে এবং পিপাসার তাড়নায় আমরা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছি। তিনি (সা.) বললেন, তোমাদের ওপর ধ্বংস আসবে না। এই বলে তিনি (সা.) পানির পাত্রটি আনালেন এবং পানি ঢালতে থাকলেন, আর আবূ কতাদাহ্ লোকেদেরকে পানি পান করাচ্ছিলেন। লোকেরা যখন পাত্রে পানি দেখতে পেল, তখন তারা আর বিলম্ব না করে একসাথে সকলে পানির জন্য ভিড় জমিয়ে ফেলল। তাদের অবস্থা দেখে রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমরা উত্তম আচরণ কর। তোমরা সকলেই এ পানি দ্বারা পরিতৃপ্ত হবে। আবূ কতাদাহ (রাঃ) বলেন, তারা অনুরূপ করল। রাসূলুল্লাহ (সা.) পানি ঢালতে থাকলেন, আর আমি পানি পান করাতে লাগলাম। শেষ পর্যন্ত আমি ও রাসূলুল্লাহ (সা.) ছাড়া কেউ ছিল না। এরপর পানি ঢালা হলো, তখন তিনি (সা.) আমাকে বললেন, এবার তুমি পান কর। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি পান না করা অবধি আমি পান করব না। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, লোকেদেরকে যে পানীয় পান করায়, সে হয় সর্বশেষে। আবূ কতাদাহ্ (রাঃ) বলেন, অতএব আমি পান করলাম। পরে তিনি (সা.) পান করলেন। আবূ কতাদাহ্ (রাঃ) বলেন, অতঃপর লোকেরা তৃপ্তি সহকারে আরামের সাথে পানির স্থানে এসে পৌছল। (মুসলিম)

সহীহ মুসলিমে অনুরূপই রয়েছে এবং হুমায়দীর গ্রন্থে ও জামিউল উসূলেও এরূপই রয়েছে। মাসাবীহ গ্রন্থে ও জামিউল উসূলেও এরূপই রয়েছে। মাসাবীহ গ্রন্থে (آخِرهم) শব্দের পর (شربا) শব্দটি বর্ণিত রয়েছে। (অর্থাৎ সর্বশেষ পানকারী)

الفصل الاول (بَاب فِي المعجزا)

وَعَن أبي قتادةَ قَالَ خَطَبَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ إِنَّكُمْ تَسِيرُونَ عَشِّيَتَكُمْ وَلَيْلَتَكُمْ وَتَأْتُونَ الْمَاءَ إِنْ شَاءَ اللَّهُ غَدًا فَانْطَلَقَ النَّاسُ لَا يَلْوِي أَحَدٌ عَلَى أَحَدٍ قَالَ أَبُو قَتَادَةَ فَبَيْنَمَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَسِيرُ حَتَّى ابْهَارَّ اللَّيْلُ فَمَالَ عَنِ الطَّرِيقِ فَوَضَعَ رَأْسَهُ ثُمَّ قَالَ احْفَظُوا عَلَيْنَا صَلَاتَنَا فَكَانَ أَوَّلَ مَنِ اسْتَيْقَظَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَالشَّمْسُ فِي ظَهْرِهِ ثُمَّ قَالَ ارْكَبُوا فَرَكِبْنَا فَسِرْنَا حَتَّى إِذَا ارْتَفَعَتِ الشَّمْسُ نَزَلَ ثُمَّ دَعَا بِمِيضَأَةٍ كَانَتْ معي فِيهَا شيءٌ من مَاء قَالَ فَتَوَضَّأَ مِنْهَا وُضُوءًا دُونَ وُضُوءٍ قَالَ وَبَقِيَ فِيهَا شَيْءٌ مِنْ مَاءٍ ثُمَّ قَالَ احْفَظْ عَلَيْنَا مِيضَأَتَكَ فَسَيَكُونُ لَهَا نَبَأٌ ثُمَّ أَذَّنَ بِلَالٌ بِالصَّلَاةِ فَصَلَّى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ صَلَّى الْغَدَاةَ وَرَكِبَ وَرَكِبْنَا مَعَهُ فَانْتَهَيْنَا إِلَى النَّاسِ حِينَ امْتَدَّ النَّهَارُ وَحَمِيَ كُلُّ شَيْءٌ وَهُمْ يَقُولُونَ يَا رَسُولَ اللَّهِ هَلَكْنَا وَعَطِشْنَا فَقَالَ لَا هُلْكَ عَلَيْكُمْ وَدَعَا بِالْمِيضَأَةِ فَجَعَلَ يَصُبُّ وَأَبُو قَتَادَةَ يَسْقِيهِمْ فَلَمْ يَعْدُ أَنْ رَأَى النَّاسُ مَاءً فِي الْمِيضَأَةِ تَكَابُّوا عَلَيْهَا فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَحْسِنُوا الْمَلَأَ كُلُّكُمْ سَيُرْوَى قَالَ فَفَعَلُوا فَجَعَلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصُبُّ وَأَسْقِيهِمْ حَتَّى مَا بَقِيَ غَيْرِي وَغَيْرُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ صَبَّ فَقَالَ لِيَ اشْرَبْ فَقُلْتُ لَا أَشْرَبُ حَتَّى تَشْرَبَ يَا رَسُولَ الله قَالَ إِن ساقي الْقَوْم آخِرهم شربا قَالَ فَشَرِبْتُ وَشَرِبَ قَالَ فَأَتَى النَّاسُ الْمَاءَ جَامِّينَ رِوَاءً. رَوَاهُ مُسْلِمٌ هَكَذَا فِي صَحِيحِهِ وَكَذَا فِي كتاب الْحميدِي وجامع الْأُصُولِ وَزَادَ فِي الْمَصَابِيحِ بَعْدَ قَوْلِهِ آخِرُهُمْ لَفْظَة شربا

رواہ مسلم (311 / 681)، (1562) ۔
(صَحِيح)

وعن ابي قتادة قال خطبنا رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال انكم تسيرون عشيتكم وليلتكم وتاتون الماء ان شاء الله غدا فانطلق الناس لا يلوي احد على احد قال ابو قتادة فبينما رسول الله صلى الله عليه وسلم يسير حتى ابهار الليل فمال عن الطريق فوضع راسه ثم قال احفظوا علينا صلاتنا فكان اول من استيقظ رسول الله صلى الله عليه وسلم والشمس في ظهره ثم قال اركبوا فركبنا فسرنا حتى اذا ارتفعت الشمس نزل ثم دعا بميضاة كانت معي فيها شيء من ماء قال فتوضا منها وضوءا دون وضوء قال وبقي فيها شيء من ماء ثم قال احفظ علينا ميضاتك فسيكون لها نبا ثم اذن بلال بالصلاة فصلى رسول الله صلى الله عليه وسلم ركعتين ثم صلى الغداة وركب وركبنا معه فانتهينا الى الناس حين امتد النهار وحمي كل شيء وهم يقولون يا رسول الله هلكنا وعطشنا فقال لا هلك عليكم ودعا بالميضاة فجعل يصب وابو قتادة يسقيهم فلم يعد ان راى الناس ماء في الميضاة تكابوا عليها فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم احسنوا الملا كلكم سيروى قال ففعلوا فجعل رسول الله صلى الله عليه وسلم يصب واسقيهم حتى ما بقي غيري وغير رسول الله صلى الله عليه وسلم ثم صب فقال لي اشرب فقلت لا اشرب حتى تشرب يا رسول الله قال ان ساقي القوم اخرهم شربا قال فشربت وشرب قال فاتى الناس الماء جامين رواء. رواه مسلم هكذا في صحيحه وكذا في كتاب الحميدي وجامع الاصول وزاد في المصابيح بعد قوله اخرهم لفظة شربا رواہ مسلم (311 / 681)، (1562) ۔ (صحيح)

ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীস বলা হয়েছে, (حَتَّى ابْهَارَّ اللَّيْلُ) অর্থাৎ রাত গভীর হওয়া পর্যন্ত।
তূরিবিশতী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, (ابْهَارَّ اللَّيْلُ)-এর অর্থ হলো রাত অর্ধেক হলো। কেউ কেউ বলেন, এর অর্থ হলো রাতের অধিকাংশ চলে গেল। আবার কেউ বলেন, এটি বলা হয় যখন রাতের তারকারাজি উদ্ভাসিত হয় এবং পৃথিবী হয় আলোকিত।
এ হাদীসের ব্যাখ্যায় ইবনু মালিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এখানে রাসূলুল্লাহ (সা.) - কাযা সালাত আদায় করতে বিলম্ব করেছেন। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, কেউ যদি ঘুমের কারণে অথবা ভুলে যাওয়ার কারণে সালাত আদায় করতে না পারে তাহলে জাগ্রত হওয়া মাত্রই অথবা স্মরণ হওয়া মাত্রই কাযা সালাত আদায় করা আবশ্যক নয়।

(شُمَّ أَذَّنَ بِلَالٌ بَالصَّلَاةِ) অর্থাৎ তারপর বিলাল (রাঃ) আযান দিলেন। মিরকাত প্রণেতা বলেন, এখান থেকে বুঝা যায় যে, কাযা সালাতের জন্য আযান দেয়া মুস্তাহাব। যেমন- সালাত আদায়ের জন্য আযান দেয়া সুন্নাত।
(أَحْسِنُوا الْمَلَأَ كُلُّكُمْ سَيُرْوَى) অর্থাৎ তোমরা সুন্দর আচরণ করে। প্রত্যেকেই পান করতে পারবে। এর অর্থ হলো তোমরা সকলেই পান করে তৃপ্ত হতে পারবে। অতএব তোমরা ভিড় করো না এবং ঠেলাঠেলি করার মাধ্যমে মন্দ আচরণ প্রকাশ করো না। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৯: চারিত্রিক গুণাবলি ও মর্যাদাসমূহ (كتاب الْفَضَائِل وَالشَّمَائِل)