পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা
৫৯১০-[৪৩] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা (সাহাবীগণ) অলৌকিক ঘটনাবলীকে বরকতের ব্যাপার বলে মনে করতাম। কিন্তু তোমরা (অর্থাৎ সাহাবীদের পরবর্তী লোকেরা) ঐগুলোকে কেবলমাত্র (কাফিরদের জন্য) ভীতি প্রদর্শনের ব্যাপার বলে ধারণা করে থাক। একদিন আমরা রাসূলল্লাহ (সা.) -এর সাথে এক ভ্রমণে ছিলাম। হঠাৎ পানির অভাব দেখা দিল। তখন তিনি (সা.) বললেন, তোমরা কোথাও হতে কিছু উদ্বৃত্ত পানির সন্ধান কর। তখন তারা সামান্য পানি সমেত একটি পাত্র নিয়ে আসলো। তখন তিনি (সা.) স্বীয় হাতখানা পাত্রটির মধ্যে প্রবেশ করিয়ে বললেন, বরকতপূর্ণ পবিত্র পানি নিতে এগিয়ে আসো। আর এ বরকত আল্লাহর পক্ষ হতে। বর্ণনাকারী (ইবনু মাস্’উদ) বলেন, নিশ্চয় আমি দেখেছি, রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর আঙ্গুলগুলোর ফাঁক দিয়ে ফোয়ারার মতো পানি বের হচ্ছে, আর অবশ্য আমরা খাবার গ্রহণ করার সময় (কখনো কখনো) খাদ্যের তাসবীহ পাঠ শুনতে পেতাম। (বুখারী)
الفصل الاول (بَاب فِي المعجزا)
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: كُنَّا نَعُدُّ الْآيَاتِ بَرَكَةً وَأَنْتُمْ تَعُدُّونَهَا تَخْوِيفًا كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي سَفَرٍ فَقَلَّ الْمَاءُ فَقَالَ: «اطْلُبُوا فَضْلَةً مِنْ مَاءٍ» فَجَاءُوا بِإِنَاءٍ فِيهِ مَاءٌ قَلِيلٌ فَأَدْخَلَ يَدَهُ فِي الْإِنَاءِ ثُمَّ قَالَ: «حَيَّ على الطَّهورِ الْمُبَارك وَالْبركَة من الله» فَلَقَد رَأَيْتُ الْمَاءَ يَنْبُعُ مِنْ بَيْنِ أَصَابِعِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَقَد كُنَّا نَسْمَعُ تَسْبِيحَ الطَّعَامِ وَهُوَ يُؤْكَلُ. رَوَاهُ البُخَارِيّ
رواہ البخاری (3579) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীসে বলা হয়েছে, (كُنَّا نَعُدُّ الْآيَاتِ بَرَكَةً وَأَنْتُمْ تَعُدُّونَهَا تَخْوِيفًا) অর্থাৎ আমরা আল্লাহর রাসূল (সা.) -এর মু'জিযাগুলোকে বরকত মনে করতাম আর তোমরা সেগুলোকে ভীতির কারণ মনে করো।
মিরকাত প্রণেতা বলেন, এর উদ্দেশ্য হলো আমরা রাসূল (সা.) -এর থেকে প্রকাশিত নিদর্শন ও মুজিযাগুলোকে বরকত মনে করতাম আর এগুলোকে সাধারণ প্রস্তাবিত দাবীর প্রেক্ষাপটে আগত ভয়ের ক্ষেত্র মনে করে থাকো। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
ফাতহুল বারীতে বলা হয়েছে, এখানে বর্ণনাকারী আবদুল্লাহ ইবনু মাস্'উদ (রাঃ), বুঝাতে চেয়েছেন যে, সকল মু'জিযাহ্ বা নিদর্শন ভয়ের কারণ নয়, আবার সকল নিদর্শনও মু'জিযাহ্ বরকত নয়। বরং চিন্তাভাবনা করলে দেখা যায়, কিছু হলো বরকতের জন্য। যেমন- অল্প খাবারে বেশি মানুষের তৃপ্ত হওয়া। আবার কিছু নিদর্শন আছে ভয়ের কারণ। যেমন- চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণ।
(كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي سَفَرٍ) অর্থাৎ আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাথে সফরে ছিলাম।
এখানে সফর বলে কোন সফরকে বুঝানো হয়েছে তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মাঝে মতানৈক্য আছে। যেমন- কেউ কেউ বলেন, এটি ছিল হুদায়বিয়ার সন্ধির সফর। আবার কেউ বলেন, এটি তাবুক যুদ্ধের সফরে ঘটেছিল।
‘দালায়িল' গ্রন্থে আবূ নু'আয়ম বলেন, এই সফর ছিল খায়বার যুদ্ধের। তবে ইমাম বায়হাক্বীর দালায়িল' গ্রন্থে হুদায়বিয়ার সফরকেই বেশি শক্তিশালী বলে উল্লেখ করেছেন।
রাসূলুল্লাহ (সা.) সাহাবীদের কাছে পানি চেয়েছেন। অথচ পানি ছাড়াও তো তাঁর মুজিযাহ প্রকাশ পাওয়ার মাধ্যমে সবার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ পানি সৃষ্টি হতে পারত। এর উত্তর দু’ভাবে দেয়া হয়ে থাকে
১. তিনি অতিরিক্ত পানি চেয়েছেন যেন তারা বুঝতে পারে যে, পানি থেকেই পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি (সা.) নিজে পানি সৃষ্টি করেননি।
২. এটিও হতে পারে যে, আল্লাহ সাধারণত প্রজননের মাধ্যমে বিভিন্ন কিছুকে বৃদ্ধি করেন। তাই দেখা যায় যে, একটি থেকে আরেকটি হয়। কিন্তু পানি এমনই যে, তা থেকে প্রজননের মাধ্যমে বৃদ্ধি পায় না। অথচ রাসূল (সা.) -এর হাতে তাই ঘটল, যা সাধারণত ঘটে না। আর এটিই স্পষ্ট মু'জিযাহ্।