৫৭১১

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির সূচনা ও নবী-রাসূলদের আলোচনা

৫৭১১-[১৪] উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: যে বালকটিকে খাযির আলায়হিস সালাম হত্যা করেছিলেন, সে ছিল জন্মগত কাফির। যদি সে বেঁচে থাকত, তাহলে সে তার পিতামাতাকে অবাধ্যতা ও কুফরের মধ্যে ফেলে দিত (অথচ তাঁরা ছিলেন ঈমানদার)। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب بدءالخلق وَذِكْرِ الْأَنْبِيَاءِ عَلَيْهِمُ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ)

وَعَنْ أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ الْغُلَامَ الَّذِي قَتَلَهُ الْخَضِرُ طُبِعَ كَافِرًا وَلَوْ عَاشَ لَأَرْهَقَ أَبَوَيْهِ طُغْيَانًا وَكُفْرًا» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (لم اجدہ) و مسلم (29 / 2661)، (6766) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

وعن ابي بن كعب قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ان الغلام الذي قتله الخضر طبع كافرا ولو عاش لارهق ابويه طغيانا وكفرا» . متفق عليه متفق علیہ ، رواہ البخاری (لم اجدہ) و مسلم (29 / 2661)، (6766) ۔ (متفق عليه)

ব্যাখ্যা: (الْخَضِرُ) (খাযির); মূসা আলায়হিস সালাম -কে যার কাছে গিয়ে জ্ঞান আহরণের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। কুরআনের সূরা কাহফে বিস্তারিত ঘটনার বিবরণ রয়েছে।
ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, জুমহুর ‘উলামার মতে খাযির আলায়হিস সালাম জীবিত এবং আমাদের মাঝে বিদ্যমান। বিশেষ করে সূফী ও বুযুর্গদের নিকট। তাদের থেকে খাযির আলায়হিস সালাম -কে দেখার ঘটনা, তার সাথে মিলিত হওয়া, তার থেকে জ্ঞান আহরণ করা এবং প্রশ্ন ও উত্তর প্রদান এবং তার উপস্থিতির কথা অসংখ্য। শায়খ ইবনুস্ সলাহ বিষয়টি স্পষ্ট বলেছেন। প্রজ্ঞাবান ‘আলিমদের মাঝে খাযিরের জীবিত থাকার ব্যাপারটি অস্বীকারকারীর সংখ্যা নগণ্য। মুফাসসির হিম্‌ইয়ারী এবং আবূ আমির বলেন, তিনি নবী ছিলেন। তবে রাসূল ছিলেন কিনা এ ব্যাপারে মতানৈক্য রয়েছে। কুশায়রী বলেন, অনেকের মতে তিনি ওয়ালী। যারা বলেন তিনি নবী ছিলেন, তাদের দলীল কুরআনের আয়াত যেখানে খাযির বলেছেন: (وَ مَا فَعَلۡتُهٗ عَنۡ اَمۡرِیۡ) অর্থাৎ “আমি নিজ মতে এটা করিনি"- (সূরাহ আল কাহফ ১৮ : ৮২)।
এ আয়াত থেকে বুঝা যায়, তাঁর প্রতি ওয়াহী অবতীর্ণ হত। তাছাড়া তিনি মূসা আলায়হিস সালাম থেকে অধিক জ্ঞানী। আর কোন ওয়ালী নবী থেকে জ্ঞানী হওয়া অসম্ভব। যাদের মতে তিনি নবী নন, তারা এর উত্তর দেন এভাবে যে, হতে পারে তার কাছে আল্লাহ তা'আলা কোন কোন ইলহামের পদ্ধতিতে ওয়াহী পাঠাতেন, যেমন মূসা আলায়হিস সালাম -এর মায়ের কাছে ইলহামের মাধ্যমে প্রেরণ করা হয়েছিল। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেন,
اِذۡ اَوۡحَیۡنَاۤ اِلٰۤی اُمِّکَ مَا یُوۡحٰۤی ﴿ۙ۳۸﴾   اَنِ اقۡذِفِیۡهِ ﴿ۘ۳۹﴾ “যখন আমি তোমার মাতাকে নির্দেশ দিয়েছিলাম যা নির্দেশ দেয়ার ছিল। তা এই যে, তুমি (মূসাকে) সিন্দুকে রাখ”- (সূরা ত্বা-হা- ২০: ৩৮-৩৯)। আমি (ইমাম নবাবী) বলি, মূসা আলায়হিস সালাম -এর মায়ের প্রতি যে ওয়াহী প্রত্যাদেশ হয়েছিল তা কেবল সন্তানের মুক্তির কৌশল সম্পৃক্ত। অপরদিকে সন্তানের বিষয়টি ইলহামের মাধ্যমে কোন ওয়ালীর হাওলা করা বিশুদ্ধ হবে না। কেননা ইলহামের উপর নির্ভর করে কোন ওয়ালীর জন্য একটি পবিত্র আত্মাকে এই বলে হত্যা করে ফেলা ঠিক হতে পারে না যে, সে স্বভাবজাত কাফির। (নাবাবী ব্যাখ্যাগ্রন্থ- অধ্যায়: মর্যাদা, অনুচ্ছেদ: খাযির আলায়হিস সালাম -এর মর্যাদা)

(طُبِعَ كَافِرًا) অর্থাৎ তাকে কুফরীর প্রকৃতি দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে; তাই সে সব সময় কুফর পছন্দ করবে। অতএব এ হাদীস (كُلُّ مَوْلُودٍ يُولَدُ عَلَى الْفِطْرَةِ) অর্থাৎ প্রত্যেক সন্তান ইসলামী স্বভাবজাতের উপর জন্ম নেয়- (বুখারী, মুসলিম)। হাদীসের সাথে সাংঘর্ষিক নয়। কেননা এখানে ইসলামী স্বভাবজাত দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে ইসলাম গ্রহণের যোগ্যতা। জন্মগত কেউ দুর্ভাগা হওয়ার সাথে এটা সাংঘর্ষিক নয়। প্রসিদ্ধ হাদীসে রয়েছে, প্রত্যেক সন্তানের মাঝে যখন আত্মা ফুঁকা হয়, তখনই সে সৌভাগ্যবান নাকি হতভাগা লিখে দেয়া হয়- (বুখারী, মুসলিম)।
(وَلَوْ عَاشَ لَأَرْهَقَ أَبَوَيْهِ طُغْيَانًا وَكُفْرًا) “যদি সে জীবিত থাকত তবে তার পিতা-মাতাকে কুফরী ও গোমরাহীতে বাধ্য করত।” অর্থাৎ এই সন্তান বড় হওয়ার বয়স পেলে পিতা-মাতাকে কুফরী করতে বাধ্য করত এবং উভয়ের পথভ্রষ্ট হওয়ার কারণ হত। মোটকথা, সন্তানটিকে হত্যা করার কারণ দুটো। একটি কারণ- স্বভাবজাত কাফির হয়ে জন্মগ্রহণ, দ্বিতীয়ত- জীবিত থাকলে পাপী ও অন্যকে ভ্ৰষ্টকারী হওয়া।
ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, যখন তার পিতা-মাতা মু'মিন ছিলেন তখন সেও মু'মিন। অতএব তাকে হত্যা করা বৈধ হয় কিভাবে? তাই এর ব্যাখ্যা জরুরী। এর ব্যাখ্যা এই হতে পারে যে, এই বাচ্চা যদি প্রাপ্তবয়স্ক হত তবে কাফির হত এবং জীবিত থাকলে পিতা-মাতার ওপর চড়াও হত এবং তাদের নি'আমাতের কুফরী করত ও তাদের অবাধ্য হত। অথবা এমনও হতে পারে যে, পিতা-মাতাকে সে তার অনুসরণে বাধ্য করত, যার ফলে তারা পথভ্রষ্ট হত। ইবনু মালিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, যদি বলা হয়, ভবিষ্যতে কেউ কাফির হওয়ার আশঙ্কায় বর্তমানে তাকে হত্যা করা বৈধ নয়। অতএব খাযির তাকে ভবিষ্যতের আশঙ্কায় কিভাবে হত্যা করলেন? আমি (ইবনুল মালিক) বলি, হয়তো এটা তাদের শারী'আতে বৈধ ছিল। আমি (নবাবী) বলি, আল্লাহ তা'আলা কর্তৃক খাযির-এর কাজের স্বীকৃতি দেয়া এবং মূসা আলায়হিস সালাম তার কাজের স্বীকৃতি দেয়ার কারণে বৈধতার বিষয়টি স্পষ্ট। বরং আমাদের শারী'আতেও এটা বৈধ হওয়ার প্রমাণ বহন করে, যদি কারো বেলায় নিশ্চিত জানা যায় যে, সে কুফরী স্বভাব নিয়ে জন্মেছে, যেমন শারী'আত প্রণেতা এখানে এই কাজের স্বীকৃতি দিলেন। তবে খাযির নুবুওয়্যাত ও ওয়াহী দ্বারা পরিচালিত ছিলেন বলে তার কাজটি শারী'আতের ভিত্তিতে হয়েছে। কোন ওয়ালীর জন্য আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞান বা ইলমে লাদুন্নী অথবা অদৃশ্য ইলহামের ভিত্তিতে এমন বড় ঘটনা ঘটানোর কোন সুযোগ নেই।  (নবাবী ব্যাখ্যাগ্রন্থ- অধ্যায়: মর্যাদা, অনুচ্ছেদ: খাযির আলায়হিস সালাম -এর মর্যাদা)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৮: সৃষ্টির সূচনা ও কিয়ামতের বিভিন্ন অবস্থা (كتاب أَحْوَال الْقِيَامَة وبدء الْخلق)