৫৬৬১

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - আল্লাহ তাআলার দর্শনলাভ

৫৬৬১-[৭] শা’বী (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর সাথে ’আরাফাতের মাঠে কাবে আহবার (রাঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ হলে তিনি তাঁকে এ বিষয়ে (আল্লাহ তা’আলার দর্শন সম্পর্কে) প্রশ্ন করলেন। তা শ্রবণে কা’ব (রাঃ) এমন জোরে আল্লা-হু আকবার আওয়াজ দিলেন যে, তা পাহাড় পর্যন্ত প্রতিধ্বনিত হয়ে উঠল। তখন ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেন, আমরা হাশিম-এর বংশধর (অর্থাৎ যথার্থ জ্ঞানের অধিকারী, অতএব অবাস্তব ও অযৌক্তিক কথা আমরা বলি না)। অতঃপর কা’ব (রাঃ) বললেন, আল্লাহ তা’আলা তাঁর দর্শন ও বচনকে মুহাম্মাদ (সা.) ও মূসা আলায়হিস সালাম-এর মাঝে বিভক্ত করেছেন। অতএব মূসা আলায়হি সালাম আল্লাহ তা’আলার সাথে দু’বার কথাবার্তা বলেছেন এবং মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহকে দু’বার দেখেছেন। মাসরূক (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমি ’আয়িশাহ্ (রাঃ) -এর কাছে উপস্থিত হয়ে প্রশ্ন করলাম, মুহাম্মাদ (সাঃ) প্রভুকে দেখেছেন কি? জবাবে ’আয়িশাহ্ (সাঃ) বললেন, হে মাসরূক! তুমি আমাকে এমন এক কথা জিজ্ঞেস করেছ, যা শ্রবণে আমার দেহের পশম খাড়া হয়ে গেছে। মাসরূক (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমি বললাম, আপনি আমাকে সুযোগ দিন। অতঃপর আমি এ আয়াতটি পাঠ করলাম- (لقد رأى من آيَات ربّه الْكُبْرَى) “মুহাম্মাদ ও তাঁর প্রভুর বিরাট বিরাট নিদর্শনসমূহ দেখেছেন"- (সূরা আন্ নাজম ৫৩ : ১৮)। তখন ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেন, এ আয়াত তোমাকে কোথায় নিয়ে পৌছিয়েছে? বরং তা দ্বারা জিবরীল (আঃ)-কে উদ্দেশ্য করা হয়েছে। [অতঃপর ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেন,] যে লোক তোমাকে বলে, মুহাম্মাদ (সা.) তার প্রভুকে দেখেছেন অথবা তাঁকে যা কিছু নির্দেশ করা হয়েছে, তা থেকে তিনি কিছু গোপন করেছেন অথবা মুহাম্মাদ (সা.) সেই পাঁচটি বিষয় অবগত ছিলেন, যেগুলো এ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে- (اِنَّ اللّٰهَ عِنۡدَهٗ عِلۡمُ السَّاعَۃِ ۚ وَ یُنَزِّلُ الۡغَیۡثَ) “কিয়ামাতের জ্ঞান কেবল আল্লাহর নিকটই আছে, তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন...”- (সূরা লুকমান ৩১ : ৩৪)। [অর্থাৎ সে লোক মুহাম্মাদ (সা.) -এর ওপর জঘন্য মিথ্যারোপ করল।
প্রকৃত কথা হলো, না তিনি আল্লাহকে দেখেছেন, না তিনি আল্লাহর কোন বিধান গোপন করেছেন, আর না তিনি ঐ পাঁচটি ব্যাপারে অবগত ছিলেন, যেগুলোর জ্ঞান আল্লাহর সাথে সম্পর্কিত ও তার একক বৈশিষ্ট্য]
হ্যাঁ; বরং তিনি জিবরীল (আঃ)-কে দেখেছেন। অবশ্য জিবরীল আলায়হিস সালাম-কেও তিনি তাঁর আসলরূপে মাত্র দু’বার দেখেছেন। একবার সিদরাতুল মুনতাহার কাছে, আরেকবার ’উক্বার ’আজইয়াদে। (আজইয়াদ মক্কা নগরীতে একটি বস্তির নাম। (أَجْيَادٍ) নামে হেরেম শরীফের একটি দ্বারও আছে) রাসূলুল্লাহ (সা.) - যখন তাঁকে প্রকৃত আকৃতিতে দেখেছেন তখন তাঁর ছয়শত ডানা ছিল এবং তা গোটা আকাশ জুড়ে বিস্তৃত ছিল। (তিরমিযী)

তবে বুখারী ও মুসলিম-এর বর্ণনাতে কিছু বাক্য বৃদ্ধি ও পার্থক্যসহ বর্ণিত আছে। যথা- মাসরূক (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমি ’আয়িশাহ্ (রাঃ) -কে প্রশ্ন করলাম, দূরত্বে যদি তাই হয়, যা আপনি বলেছেন, তাহলে আল্লাহর বাণী- (ثُمَّ دَنَا فَتَدَلّٰی ۙ﴿۸﴾ فَکَانَ قَابَ قَوۡسَیۡنِ اَوۡ اَدۡنٰی ۚ﴿۹﴾) “অতঃপর তিনি নিকটবর্তী হলেন, অতঃপর আরো কাছে এলেন, তখন সে নৈকট্য ছিল দু’ ধনুকের পরিমাণ, অথবা তারও কম”- (সূরাহ আন্ নাজম ৫৩ : ৮-৯)। এটার অর্থ কি? উত্তরে ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেন, এর দ্বারা জিবরীল আলায়হিস সালাম-কে বুঝানো হয়েছে। তিনি সাধারণত মানুষের আকৃতিতে রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কাছে আসতেন, কিন্তু এবার তিনি তাঁর প্রকৃতরূপে রাসূল-এর সামনে এসেছিলেন, ফলে তা গোটা আকাশ জুড়ে গিয়েছিল।

اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب رؤيةالله تَعَالَى)

وَعَن الشّعبِيّ قَالَ: لَقِيَ ابْنُ عَبَّاسٍ كَعْبًا بِعَرَفَةَ فَسَأَلَهُ عَنْ شَيْءٍ فَكَبَّرَ حَتَّى جَاوَبَتْهُ الْجِبَالُ. فَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ: إِنَّا بَنُو هَاشِمٍ. فَقَالَ كَعْبٌ: إِنَّ اللَّهَ قَسَّمَ رُؤْيَتَهُ وَكَلَامَهُ بَيْنَ مُحَمَّدٍ وَمُوسَى فَكَلَّمَ مُوسَى مَرَّتَيْنِ وَرَآهُ مُحَمَّدٌ مَرَّتَيْنِ. قَالَ مسروقٌ: فَدخلت على عَائِشَة فَقلت: هَل رَأَى مُحَمَّدٌ رَبَّهُ؟ فَقَالَتْ: لَقَدْ تَكَلَّمْتَ بِشَيْءٍ قَفَّ لَهُ شَعَرِي قُلْتُ: رُوَيْدًا ثُمَّ قَرَأْتُ (لقد رأى من آيَات ربّه الْكُبْرَى) فَقَالَتْ: أَيْنَ تَذْهَبُ بِكَ؟ إِنَّمَا هُوَ جِبْرِيلُ. مَنْ أَخْبَرَكَ أَنَّ مُحَمَّدًا رَأَى رَبَّهُ أَوْ كَتَمَ شَيْئًا مِمَّا أُمِرَ بِهِ أَوْ يَعْلَمُ الْخَمْسَ الَّتِي قَالَ اللَّهُ تَعَالَى: (إِنَّ اللَّهَ عِنْدَهُ عِلْمُ السَّاعَةِ وَيُنَزِّلُ الْغَيْثَ) فَقَدْ أَعْظَمَ الْفِرْيَةَ وَلَكِنَّهُ رَأَى جِبْرِيلَ لَمْ يَرَهُ فِي صُورَتِهِ إِلَّا مَرَّتَيْنِ: مَرَّةً عِنْدَ سِدْرَةِ الْمُنْتَهَى وَمَرَّةً فِي أَجْيَادٍ لَهُ سِتُّمِائَةِ جَنَاحٍ قَدْ سَدَّ الْأُفُقَ رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَرَوَى الشَّيْخَانِ مَعَ زِيَادَةٍ وَاخْتِلَافٍ وَفِي رِوَايَتِهِمَا: قَالَ: قُلْتُ لِعَائِشَةَ: فَأَيْنَ قَوْلُهُ (ثُمَّ دَنَا فَتَدَلَّى فَكَانَ قَابَ قَوْسَيْنِ أَوْ أَدْنَى) ؟ قَالَتْ: ذَاكَ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ كَانَ يَأْتِيهِ فِي صُورَةِ الرَّجُلِ وَإِنَّهُ أَتَاهُ هَذِهِ الْمَرَّةَ فِي صُورَتِهِ الَّتِي هِيَ صُورَتُهُ فَسَدَّ الْأُفُقَ

اسنادہ ضعیف ، رواہ الترمذی (3278) * فیہ مجالد بن سعید : ضعیف و اصل الحدیث عند البخاری [4855] و مسلم [177]، بغیر ھذا اللفظ) و الروایۃ الثانیۃ صحیحۃ متفق علیھا (رواھا البخاری : 3235 و مسلم : 290 / 177)، (439) ۔
(ضَعِيف)

وعن الشعبي قال: لقي ابن عباس كعبا بعرفة فساله عن شيء فكبر حتى جاوبته الجبال. فقال ابن عباس: انا بنو هاشم. فقال كعب: ان الله قسم رويته وكلامه بين محمد وموسى فكلم موسى مرتين وراه محمد مرتين. قال مسروق: فدخلت على عاىشة فقلت: هل راى محمد ربه؟ فقالت: لقد تكلمت بشيء قف له شعري قلت: رويدا ثم قرات (لقد راى من ايات ربه الكبرى) فقالت: اين تذهب بك؟ انما هو جبريل. من اخبرك ان محمدا راى ربه او كتم شيىا مما امر به او يعلم الخمس التي قال الله تعالى: (ان الله عنده علم الساعة وينزل الغيث) فقد اعظم الفرية ولكنه راى جبريل لم يره في صورته الا مرتين: مرة عند سدرة المنتهى ومرة في اجياد له ستماىة جناح قد سد الافق رواه الترمذي وروى الشيخان مع زيادة واختلاف وفي روايتهما: قال: قلت لعاىشة: فاين قوله (ثم دنا فتدلى فكان قاب قوسين او ادنى) ؟ قالت: ذاك جبريل عليه السلام كان ياتيه في صورة الرجل وانه اتاه هذه المرة في صورته التي هي صورته فسد الافق اسنادہ ضعیف ، رواہ الترمذی (3278) * فیہ مجالد بن سعید : ضعیف و اصل الحدیث عند البخاری [4855] و مسلم [177]، بغیر ھذا اللفظ) و الروایۃ الثانیۃ صحیحۃ متفق علیھا (رواھا البخاری : 3235 و مسلم : 290 / 177)، (439) ۔ (ضعيف)

ব্যাখ্যা: (حَتَّى جَاوَبَتْهُ الْجِبَالُ) ‘আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন যে, তিনি (কাব) আওয়াজ উঁচু করে এমন তাকবীর দিলেন পাহাড় পর্যন্ত আকাশ প্রতিধ্বনি দিল, মনে হচ্ছিল যে, তিনি প্রশ্নটাকে খুব বড় মনে করেছিলেন তাই তিনি তাকবীর দিয়েছেন। হয়তো ঐ প্রশ্নটি ছিল আল্লাহর দর্শন সম্পর্কিত, তাই তার শরীরের পশম পর্যন্ত দাঁড়িয়ে গিয়েছিল।
(هَل رَأَى مُحَمَّدٌ رَبَّهُ؟) ‘আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমি প্রতিটি আয়াত পড়েছি, যার উপসংহার হলো এই আয়াতটি, (لَقَدۡ رَاٰی مِنۡ اٰیٰتِ رَبِّهِ الۡکُبۡرٰی) “সে তার প্রতিপালকের বড় বড় নিদর্শন দেখেছিল”- (সূরা আন নাজম ৫৩: ১৮)। যেমন অন্য আরেকটি বর্ণনাতে তার সমর্থন করে, অর্থাৎ: قُلْتُ لِعَائِشَةَ: فَأَيْنَ قَوْلُهُ (ثُمَّ دَنَا فَتَدَلَّى فَكَانَ قَابَ قَوْسَيْنِ أَوْ أَدْنَى) অতএব আমি বলব, অন্য বর্ণনাটির মধ্যেও (رَأَى) শব্দটি নেই, অতএব স্পষ্ট হয়ে গেল যে, তিনি (আল্লাহ) উদ্দেশ্য নিয়েছেন তার মান মুতাবেক বড় একটি নিদর্শন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
(فَقَالَتْ: أَيْنَ تَذْهَبُ بِكَ؟) আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, অর্থাৎ তুমি আয়াতের অর্থ থেকে যা বুঝেছ ভুল বুঝেছ এবং এই মত পোষণ করছ। আর আয়াত তাকে এই ভুল মতের দিকে নিয়ে যাওয়ার কথাটি রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, অতএব সার কথা হলো উক্ত আয়াতে জিবরীল আলায়হিস সালাম-ই উদ্দেশ্য। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ, তুহফাতুল আহওয়াযী হা. ৩২৭৮)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
বর্ণনাকারীঃ শা‘বী (রহঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৮: সৃষ্টির সূচনা ও কিয়ামতের বিভিন্ন অবস্থা (كتاب أَحْوَال الْقِيَامَة وبدء الْخلق)