পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জান্নাত ও জান্নাতবাসীদের বিবরণ
৫৬৪৭-[৩৬] সা’ঈদ ইবনু মুসাইয়াব (রহ.) হতে বর্ণিত। একদিন তিনি আবূ হুরায়রাহ (রাঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করলেন। তখন আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কাছে আমি এ দু’আ করি, আমাকে ও তোমাকে তিনি যেন জান্নাতের বাজারে একত্রিত করেন। তখন সা’ঈদ (রাঃ) বললেন, সেখানে কি বাজারও আছে? তিনি উত্তরে বললেন, হ্যা, আমাকে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: জান্নাতবাসীগণ যখন জান্নাতে প্রবেশ করবে, তখন তারা নিজ নিজ ’আমালের মান অনুযায়ী স্থান লাভ করবে। অতঃপর দুনিয়ার দিনগুলোর হিসাব ও পরিমাণ অনুযায়ী সপ্তাহের জুমু’আর দিন তাদেরকে একটি বিশেষ অনুমতি প্রদান করা হবে, আর তা হলো তারা তাদের প্রভুর সাক্ষাৎ লাভ করবে। সেদিন আল্লাহ তা’আলা তাঁর ’আরশকে জনসম্মুখে করে দেবেন এবং জান্নাতবাসীদের সামনে জান্নাতের বৃহৎ বাগান একটি বাগানে আত্মপ্রকাশ করবেন এবং জান্নাতবাসীদের জন্য তাদের মান ও মর্যাদা অনুপাতে নূরের, মণি-মুক্তার, মতি এবং সোনা-রোপার মিম্বার স্থাপন করা হবে। তাদের মধ্যে সাধারণ মর্যাদাবান ব্যক্তি- অথচ জান্নাতীদের মধ্যে কেউ হীন হবে না- কাফুর কস্তুরীর টিলার উপর বসবে। এ সমস্ত টিলায় বসা লোকেরা কুরসী বা আসনে বসা ওই লোকেদেরকে নিজেদের অপেক্ষা অধিক মর্যাদা লাভকারী বলে ধারণা করবে না। (অর্থাৎ প্রত্যেক জান্নাতী স্বীয় স্থানে সন্তুষ্ট থাকবে)
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বলেন, আমি প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি আমাদের প্রভুকে দেখতে পাব? তিনি (সা.) বললেন, হ্যা, দেখতে পাবে। আচ্ছা বল দেখি, সূর্য এবং পূর্ণিমার রাতে চাঁদ দেখতে তোমাদের কোন প্রকারের সন্দেহ হয়? আমরা বললাম, না। কোন সন্দেহ হয় না। রাসূল (সা.) বললেন, ঐভাবে তোমাদের রবকে দেখতে তোমাদের কোন রকমের সন্দেহ হবে না এবং উক্ত বৈঠকে এমন কোন লোক অবশিষ্ট থাকবে না, যার সাথে আল্লাহ তা’আলা সরাসরি কথা বলবেন না। এমনকি আল্লাহ তা’আলা উপস্থিত এক লোককে বলবেন, হে অমুকের পুত্র অমুক! তোমার কি স্মরণ আছে যে, অমুক দিন তুমি এ কথাটি বলেছিলে? মোটকথা, দুনিয়াতে সে যে সকল অন্যায় করেছিল তার কিছু কিছু তাকে আল্লাহ তা’আলা স্মরণ করিয়ে দেবেন। তখন সে বলবে, হে আমার প্রভু! তুমি কি আমাকে ক্ষমা করে দাওনি? আল্লাহ তা’আলা বলবেন, হ্যাঁ, নিশ্চয়। আমার ক্ষমার বদৌলতেই তুমি আজ এ মর্যাদার অধিকারী হয়েছ।
ফলকথা, তারা এ অবস্থায় থাকতেই একখণ্ড মেঘ এসে তাদেরকে ওপর থেকে আচ্ছন্ন করে ফেলবে এবং তা তাদের ওপর এমন সুগন্ধি বর্ষণ করবে যে, ঐ রকম সুগন্ধি তারা আর কখনো পায়নি। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা বলেন, তোমরা উঠ এবং তার দিকে চল, যা আমি তোমাদের সম্মান বৃদ্ধির জন্য তৈরি করে রেখেছি। আর তোমাদের মনে যা যা চায় তা থেকে নিয়ে নাও। অতঃপর আমরা এমন একটি বাজারে আসব, যাকে ফেরেশতাগণ বেষ্টন করে রেখেছেন। তাতে এমন সকল জিনিস রক্ষিত থাকবে, যা মানব চক্ষু কখনো দেখতে পারেনি, তার সংবাদ কানে শুনতে পাইনি, এমনকি মানুষের হৃদয়ও কল্পনা করতে পারেনি। অতএব আমাদেরকে সেই বাজার থেকে এমন সব কিছু দেয়া হবে যা আমরা পছন্দ করব, অথচ উক্ত বাজারে কোন জিনিসই ক্রয়-বিক্রয় হবে না, বরং সেখানে জান্নাতীগণ একজন অন্যজনের সাথে সাক্ষাৎ করবে। বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: সেই বাজারে একজন উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন লোক একজন সাধারণ ধরনের লোকের সাথে সাক্ষাৎ করবে, অবশ্য জান্নাতীদের মধ্যে কেউ হীন নয়। তখন সে তার পোশাক-পরিচ্ছদ দেখে আশ্চর্যান্বিত হবে কিন্তু তার কথা শেষ হতে না হতেই সে অনুধাবন করবে যে, তার পোশাক তার চেয়ে আরো উত্তম হয়ে গেছে। আর এটা এজন্য যে, জান্নাতে কোন লোকের অনুতপ্ত ও দুশ্চিন্তায় পতিত হওয়ার সুযোগ থাকবে না।
অতঃপর (উক্ত বাজার ও পরস্পরে দেখা-সাক্ষাৎ করে) আমরা নিজ নিজ বাসস্থানের দিকে ফিরে যাব। এ সময় আমাদের স্ত্রীগণ আমাদের সাথে সাক্ষাৎ করে বলবে, মারহাবা, খোশ আমদেদ! মূলত যখন তোমরা আমাদের কাছ থেকে পৃথক হয়েছিলে, সে অবস্থা অপেক্ষা এখন তোমরা আরো অধিক সুন্দর চেহারা ও সৌন্দর্যমণ্ডিত হয়ে আমাদের কাছে ফিরে এসেছ। তখন আমরা বলব, আজ আমরা আমাদের মহাপরাক্রশালী প্রভুর সাথে বসার সৌভাগ্য লাভ করেছি। কাজেই এ মর্যাদার অধিকারী হয়ে প্রত্যাবর্তন করা আমাদের জন্য যথার্থ উপযোগী হয়েছে এবং এমন হওয়াই উচিত ছিল।
[তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ; আর ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন হাদীসটি গরীব]
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب صفةالجنة وَأَهْلهَا)
وَعَن سعيد بن الْمسيب أَنه لقيَ أَبَا هريرةَ فَقَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ: أَسْأَلُ اللَّهَ أَنْ يَجْمَعَ بَيْنِي وَبَيْنَكَ فِي سُوقِ الْجَنَّةِ. فَقَالَ سَعِيدٌ: أَفِيهَا سُوقٌ؟ قَالَ: نَعَمْ أَخْبَرَنِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ أَهْلَ الْجَنَّةِ إِذَا دَخَلُوهَا نَزَلُوا فِيهَا بِفَضْلِ أَعْمَالِهِمْ ثُمَّ يُؤْذَنُ لَهُمْ فِي مِقْدَارِ يَوْمِ الْجُمُعَةِ مِنْ أَيَّامِ الدُّنْيَا فَيَزُورُونَ رَبَّهُمْ وَيَبْرُزُ لَهُمْ عَرْشُهُ وَيَتَبَدَّى لَهُم فِي روضةٍ من رياضِ الجنَّة فَيُوضَع لَهُم مَنَابِر من نور ومنابرمن لُؤْلُؤٍ وَمَنَابِرُ مِنْ يَاقُوتٍ وَمَنَابِرُ مِنْ زَبَرْجَدٍ وَمَنَابِرُ مِنْ ذَهَبٍ وَمَنَابِرُ مِنْ فِضَّةٍ وَيَجْلِسُ أَدْنَاهُم - وَمَا فيهم دنيٌّ - عَلَى كُثْبَانِ الْمِسْكِ وَالْكَافُورِ مَا يَرَوْنَ أَنَّ أَصْحَابَ الْكَرَاسِيِّ بِأَفْضَلَ مِنْهُمْ مَجْلِسًا» . قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ وَهَلْ نَرَى رَبَّنَا؟ قَالَ: «نَعَمْ هَلْ تَتَمَارَوْنَ فِي رُؤْيَةِ الشَّمْسِ وَالْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ؟» قُلْنَا: لَا. قَالَ: كَذَلِكَ لَا تَتَمَارَوْنَ فِي رُؤْيَةِ رَبِّكُمْ وَلَا يَبْقَى فِي ذَلِكَ الْمَجْلِسِ رَجُلٌ إِلَّا حَاضَرَهُ اللَّهُ مُحَاضَرَةً حَتَّى يَقُولَ لِلرَّجُلِ مِنْهُمْ: يَا فلَان ابْن فلَان أَتَذكر يَوْم قلت كَذَا وَكَذَا؟ فيذكِّره بِبَعْض غدارته فِي الدُّنْيَا. فَيَقُولُ: يَا رَبِّ أَفَلَمْ تَغْفِرْ لِي؟ فَيَقُولُ: بَلَى فَبِسِعَةِ مَغْفِرَتِي بَلَغْتَ مَنْزِلَتَكَ هَذِهِ. فَبَيْنَا هُمْ عَلَى ذَلِكَ غَشِيتْهُمْ سَحَابَةٌ مِنْ فَوْقِهِمْ فَأَمْطَرَتْ عَلَيْهِمْ طِيبًا لَمْ يَجِدُوا مِثْلَ رِيحِهِ شَيْئًا قَطُّ وَيَقُولُ رَبُّنَا: قُومُوا إِلَى مَا أَعْدَدْتُ لَكُمْ مِنَ الْكَرَامَةِ فَخُذُوا مَا اشْتَهَيْتُمْ فَنَأْتِي سُوقًا قَدْ حَفَّتْ بِهِ الْمَلَائِكَةُ فِيهَا مَا لَمْ تَنْظُرِ الْعُيُونُ إِلَى مِثْلِهِ وَلَمْ تَسْمَعِ الْآذَانُ وَلَمْ يَخْطُرْ عَلَى الْقُلُوبِ فَيُحْمَلُ لَنَا مَا اشْتَهَيْنَا لَيْسَ يُبَاعُ فِيهَا وَلَا يُشْتَرَى وَفِي ذَلِكَ السُّوقِ يَلْقَى أَهْلُ الْجَنَّةِ بَعْضُهُمْ بَعْضًا . قَالَ: فَيُقْبِلُ الرَّجُلُ ذُو الْمَنْزِلَةِ الْمُرْتَفِعَةِ فَيَلْقَى مَنْ هُوَ دُونَهُ - وَمَا فيهم دنيٌّ - فيروعُه مَا يرى عَلَيْهِ من اللباسِ فِيمَا يَنْقَضِي آخِرُ حَدِيثِهِ حَتَّى يَتَخَيَّلَ عَلَيْهِ مَا هُوَ أحسن مِنْهُ وَذَلِكَ أَنَّهُ لَا يَنْبَغِي لِأَحَدٍ أَنْ يَحْزَنَ فِيهَا ثُمَّ نَنْصَرِفُ إِلَى مَنَازِلِنَا فَيَتَلَقَّانَا أَزْوَاجُنَا فَيَقُلْنَ: مَرْحَبًا وَأَهْلًا لَقَدْ جِئْتَ وَإِنَّ بِكَ مِنَ الْجَمَالِ أَفْضَلَ مِمَّا فَارَقْتَنَا عَلَيْهِ فَيَقُولُ: إِنَّا جَالَسْنَا الْيَوْمَ رَبَّنَا الْجَبَّارَ وَيَحِقُّنَا أَنْ نَنْقَلِبَ بِمِثْلِ مَا انْقَلَبْنَا . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيث غَرِيب
اسنادہ ضعیف ، رواہ الترمذی (2549) و ابن ماجہ (4336) * ھشام بن عمار صدوق اختلط ، ولم یثبت بانہ حدث بھذا الحدیث قبل اختلاطہ ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা: (أَسْأَلُ اللَّهَ أَنْ يَجْمَعَ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) সা'ঈদ ইবনু মুসাইয়্যাব (রহিমাহুল্লাহ)-কে বলেন, আল্লাহর রাব্বুল আলামীন যেন আমাকে ও তোমাকে জান্নাতের বাজারে একত্রিত করেন। আসলে জান্নাতে প্রতি সপ্তাহে একদিন সকলের মিলন হবে সেটাকেই জান্নাতের বাজার বলা হয়েছে উক্ত হাদীসে। উক্ত বাজারে মনোমুগ্ধকর অনেক আকার-আকৃতি থাকবে যে কেউ তার মনের চাহিদা অনুপাতে তাতে রূপান্তরিত হতে পারবে। জান্নাতবাসীরা তাদের ‘আমল অনুপাতে সেই বাজারে উপস্থিত হবে। প্রতি জুমু'আর দিন একবার করে অনুমতি পাবে। প্রত্যেকের জন্য আসন থাকবে। তাদের ‘আমল অনুপাতে কারো জন্য মণি-মুক্তার আসন থাকবে। কারো জন্য ইয়াকূত ও পান্না পাথরের এবং কারো জন্য স্বর্ণ ও রূপার। জান্নাতবাসীদের সর্বনিম্ন ব্যক্তি মিশক আম্বারের আসনে বসবে।
(هَلْ نَرَى رَبَّنَا) জান্নাতে মু'মিনরা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনকে দেখতে পাবে কোন প্রকার কষ্ট-ক্লেশ ছাড়া। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সকলের সামনে উপস্থিত হয়ে জান্নাতবাসীদের সাথে সরাসরি কথা বললেন এবং তাদেরকে দেয়া বিভিন্ন নি'আমাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ হা. ৫৬৪৭, তুহফাতুল আহওয়াযী হা. ২৫৪৯)