৫৫৪১

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - হাশর

৫৫৪১-[১০] আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) নবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন। একদিন তিনি (সা.) বললেন: (কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা আদম আলায়হিস সালাম-কে লক্ষ্য করে বলবেন, হে আদম! আদম আলায়হিস সালাম উত্তরে বলবেন, হে আমার প্রভু! আমি উপস্থিত! আপনার আনুগত্যই আমার জন্য সৌভাগ্য। সমস্ত কল্যাণ আপনারই হাতে। তখন আল্লাহ তাআলা বলবেন, তোমার আওলাদের মধ্য হতে জাহান্নামের দলকে বের কর। আদম আলায়হিস সালাম বলবেন, জাহান্নামের দলে কতজন? আল্লাহ তা’আলা বলবেন, প্রত্যেক হাজারে নয়শত নিরানব্বই জন। এ সময় শিশু বৃদ্ধ হয়ে যাবে, প্রত্যেক সন্তানধারী মহিলার গর্ভপাত হয়ে যাবে। আর তোমরা লোকেদেরকে দেখবে নেশাগ্রস্ত, মূলত তারা নেশাগ্রস্ত নয়, বরং আল্লাহর আযাবই কঠিন। সাহাবীগণ প্রশ্ন করলেন, আমাদের মধ্য থেকে কে হবে সেই একজন? তিনি বললেন, বরং তোমরা এ সুসংবাদ জেনে রাখ যে, তোমাদের মধ্য থেকে একজন এবং ইয়াজুজ-মাজুজদের থেকে এক হাজার। অতঃপর তিনি (সা.) বললেন, সে মহান সত্তার শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ! আমি আশা করি যে, তোমরা হবে জান্নাতবাসীদের এক-চতুর্থাংশ। আবূ সাঈদ (রাঃ) বলেন, এ কথা শুনে আমরা সকলে ’আল্লা-হু আকবার বলে উঠলাম। অতঃপর বললেন, আমি আশা করি, তোমরা হবে জান্নাতীদের এক-তৃতীয়াংশ। তখন আমরা পুনরায় বললাম ’আল্লা-হু আকবার’। অতঃপর তিনি (সা.) বললেন, আমি আশা করি যে, তোমরা জান্নাতীদের অর্ধেক হবে। এ কথা শুনে আমরা আবার বললাম, ’আল্লা-হু আকবার। অতঃপর তিনি (সা.) বললেন, মানুষের মধ্যে তোমাদের সংখ্যার তুলনা হবে যেমন একটি সাদা গরুর চামড়ার মধ্যে একটি কালো লোম অথবা একটি কালো গরুর চামড়ার মধ্যে একটি সাদা লোম ।(বুখারী ও মুসলিম)।

الفصل الاول (بَاب الْحَشْر)

وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: يَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى: يَا آدَمُ فَيَقُولُ: لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ وَالْخَيْرُ كُلُّهُ فِي يَدَيْكَ. قَالَ: أَخْرِجْ بَعْثَ النَّارِ. قَالَ: وَمَا بَعْثُ النَّارِ؟ قَالَ: مِنْ كُلِّ أَلْفٍ تِسْعَمِائَةٍ وَتِسْعَةً وَتِسْعِينَ فَعِنْدَهُ يَشِيبُ الصَّغِيرُ (وَتَضَعُ كُلُّ ذَاتِ حَمْلٍ حَمْلَهَا وَتَرَى النَّاسَ سُكَارَى وَمَا هُمْ بِسُكَارَى وَلَكِنَّ عَذَابَ اللَّهِ شديدٌ) قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ وَأَيُّنَا ذَلِكَ الْوَاحِدُ؟ قَالَ: «أَبْشِرُوا فَإِنَّ مِنْكُمْ رَجُلًا وَمِنْ يَأْجُوجَ وَمَأْجُوجَ أَلْفٌ» ثُمَّ قَالَ: «وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ أَرْجُو أَنْ تَكُونُوا رُبُعَ أَهْلِ الْجَنَّةِ» فَكَبَّرْنَا. فَقَالَ: «أَرْجُو أَنْ تَكُونُوا ثُلُثَ أَهْلِ الْجَنَّةِ» فَكَبَّرْنَا فَقَالَ: «أَرْجُو أَنْ تَكُونُوا نِصْفَ أَهْلِ الْجَنَّةِ» فَكَبَّرْنَا قَالَ: «مَا أَنْتُمْ فِي النَّاسِ إِلَّا كَالشَّعْرَةِ السَّوْدَاءِ فِي جِلْدِ ثَوْرٍ أَبْيَضَ أَوْ كشعرة بَيْضَاءَ فِي جِلْدِ ثَوْرٍ أَسْوَدَ» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (3348) و مسلم (379 / 222)، (532) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

وعن ابي سعيد الخدري عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: يقول الله تعالى: يا ادم فيقول: لبيك وسعديك والخير كله في يديك. قال: اخرج بعث النار. قال: وما بعث النار؟ قال: من كل الف تسعماىة وتسعة وتسعين فعنده يشيب الصغير (وتضع كل ذات حمل حملها وترى الناس سكارى وما هم بسكارى ولكن عذاب الله شديد) قالوا: يا رسول الله واينا ذلك الواحد؟ قال: «ابشروا فان منكم رجلا ومن ياجوج وماجوج الف» ثم قال: «والذي نفسي بيده ارجو ان تكونوا ربع اهل الجنة» فكبرنا. فقال: «ارجو ان تكونوا ثلث اهل الجنة» فكبرنا فقال: «ارجو ان تكونوا نصف اهل الجنة» فكبرنا قال: «ما انتم في الناس الا كالشعرة السوداء في جلد ثور ابيض او كشعرة بيضاء في جلد ثور اسود» . متفق عليه متفق علیہ ، رواہ البخاری (3348) و مسلم (379 / 222)، (532) ۔ (متفق عليه)

ব্যাখ্যা: (بَعْثَ النَّارِ) অর্থাৎ জাহান্নামে প্রেরিত হওয়ার জন্য উপযুক্ত দল। (مَا بَعْثُ النَّارِ؟) এর অর্থ (مَا مِقْدَارُمَبْعُوثِالنَّارِ؟) জাহান্নামে প্রেরিত লোকেদের সংখ্যা কত? কেউ বলেন, (مَا) এখানে সংখ্যাবাচক (كَمِ) এর অর্থে ব্যবহার হয়েছে।
(مِنْ كُلِّ أَلْفٍ تِسْعَمِائَةٍ وَتِسْعَةً وَتِسْعِينَ) প্রতি হাজারে নয়শত নিরানব্বই জন। এর বিপরীতে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) -এর হাদীসে রয়েছে, (مِنْ كُلِّ مِائَةٍ وَتِسْعَةً وَتِسْعِينَ) প্রতি একশতে নিরানব্বই জন এর উত্তরে কিরমানী বলেন, এখানে সংখ্যার কোন বিবেচনা নেই বরং এর দ্বারা মু'মিনদের সংখ্যা কম ও কাফিরদের সংখ্যা বেশি বুঝানো হয়েছে, আবার আবূ সা'ঈদ (রাঃ)-এর হাদীসকে মোট বানী আদম-এর ওপর প্রয়োগ করতে হবে। তখন প্রতি হাজারে দশজন হবে। এই অর্থই বেশি কাছাকাছি হবে। কারণ ইয়াজুজ-মাজুজের আলোচনা আবূ সা'ঈদ-এর হাদীসে এসেছে। আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর হাদীসে নয়। অথবা প্রথম হাদীসকে সমগ্র সৃষ্টির সাথে যুক্ত করতে হবে এবং দ্বিতীয় হাদীসকে এ উম্মতে মুহাম্মাদীর সাথে যুক্ত করতে হবে। অতএব প্রতি এক হাজারে নয়শত নিরানব্বই জন হবে কাফির এবং প্রতি একশতে নিরানব্বই জন হবে পাপী। এটাই অধিক স্পষ্ট।
(يَشِيبُ الصَّغِيرُ) ছোটরা বৃদ্ধ হয়ে যাবে অধিক চিন্তা ও বড় উদ্বেগের কারণে। বাগাবীর বর্ণনায় রয়েছে, এতে শিশুরা বুড়ো হয়ে যাবে। আর ভয়ে গর্ভবতী মহিলা গর্ভপাত করে ফেলবে।
হাসান বলেন, স্তন্যদানকারিণী মা দুধ ছাড়ার আগেই সন্তানকে ভুলে যাবে। গর্ভবতী পেটে থাকা বাচ্চাকে অপূর্ণ প্রসব করবে। এ অর্থ সে ব্যক্তির মতকে অধিক মজবুত করে যে বলে, এ কম্পন সংঘটিত হবে দুনিয়াতে। কারণ কিয়ামতের পর গর্ভবর্তী হয় না। আর যারা বলে, এসব ঘটনা কিয়ামতে সংঘটিত হবে। তারা বলেন, এর দ্বারা বিষয়টি ভয়াবহতা বুঝানো হয়েছে। ব্যাপারটি বাস্তব নয়। যেমন মানুষের কথা (أَصَابِنَا أَمْرٌ يَشِيبُ فِيهِ الْوَلِيدُ) আমাদের এমন ব্যাপার হয়েছে যাতে শিশুরা বুড়ো হয়ে যাবে। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো বিপদ। যখন তারা বিষয়টিকে খুব বড় মনে করল এবং তাতে ভয়ের উদ্রেক হলো তখন তিনি (সা.) তাদের মনে আশায় সঞ্চার করার জন্য বললেন, (أَبْشِرُوا) “তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ কর।'
(فَإِنَّ مِنْكُمْ رَجُلًا وَمِنْ يَأْجُوجَ وَمَأْجُوجَ أَلْفٌ) এর অর্থ হলো, অবশ্যই তোমাদের প্রত্যেক ব্যক্তির বিপরীতে ইয়াজুজ-মাজুজ থেকে একহাজার জন হবে। এতে এ কথার ইঙ্গিত রয়েছে যে, জাহান্নামীদের সংখ্যা জান্নাতীদের সংখ্যা থেকে বেশি হবে। হয়তো নৈকট্যশীল মালাক (ফেরেশতা) ও হুরদের থাকার মাধ্যমে জান্নাতীদের সংখ্যা বাড়বে।
(أَرْجُو أَنْ تَكُونُوا نِصْفَ أَهْلِ الْجَنَّةِ» فَكَبَّرْنَا) ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন: হাদীসে এ নির্দেশনা আছে যে, ইয়াজুজ-মাজুজেরা এ হুমকির মধ্যে শামিল। আর ইয়াজুজ-মাজুজ ছাড়া অন্য পূর্ববর্তী উম্মতরাও এর মধ্যে শামিল। অতএব যখন মোট জান্নাতীদের অর্ধেক পূর্ববর্তী উম্মাতের উপরে সমবেত হবে তখন তাদের এক হাজারের জন্য একজন করেই হবে। সম্ভবত এ হাদীসটির উম্মতে মুহাম্মাদীর দুই-তৃতীয়াংশ জান্নাতে যাওয়ার বর্ণিত হাদীসের পূর্বের হাদীস। কারণ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, জান্নাতীদের একশত বিশটি কাতার হবে। তন্মধ্যে আশিটি হবে উম্মতে মুহাম্মাদীর ও চল্লিশটি হবে বাকী উম্মাতের। আর এটাও হতে পারে যে, তাদের অর্ধেক প্রথমে প্রবেশ করবে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৮: সৃষ্টির সূচনা ও কিয়ামতের বিভিন্ন অবস্থা (كتاب أَحْوَال الْقِيَامَة وبدء الْخلق)