৫৫২৪

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - শিঙ্গায় ফুৎকার

৫৫২৪-[8] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন জনৈক ইয়াহূদী পাদ্রি নবী (সা.) -এর কাছে এসে বলল, হে মুহাম্মাদ! আমরা (তাওরাতে) পেয়েছি যে, আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের দিন আকাশমণ্ডলীকে এক আঙ্গুলের উপর স্থাপন করবেন। জমিনকে এক আঙ্গুলের উপর, পর্বতমালা ও গাছসমূহকে এক আঙ্গুলের উপর, পানি এবং কাদা-মাটিকে এক আঙ্গুলের উপর, আর অন্যান্য সমস্ত সৃষ্টিজগতকে এক আঙ্গুলের উপর রাখবেন। অতঃপর এ সমস্ত কিছুকে নাড়া দিয়ে বলবেন, আমিই বাদশাহ, আমিই আল্লাহ! ইয়াহুদী পাদ্রির কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সা.) এই বিস্ময়ে হয়ে হেসে ফেললেন, তিনি যেন তার কথার সত্যতা স্বীকার করলেন। অতঃপর তিনি (সা.) কুরআনের এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন- (وَ مَا قَدَرُوا اللّٰهَ حَقَّ قَدۡرِهٖ ٭ۖ وَ الۡاَرۡضُ جَمِیۡعًا قَبۡضَتُهٗ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ وَ السَّمٰوٰتُ مَطۡوِیّٰتٌۢ بِیَمِیۡنِهٖ ؕ سُبۡحٰنَهٗ وَ تَعٰلٰی عَمَّا یُشۡرِکُوۡنَ) - “আল্লাহ তা’আলার যতটুকু সম্মান করা দরকার ছিল তারা ততটুকু সম্মান করেনি, অথচ কিয়ামতের দিন সম্পূর্ণ পৃথিবী তাঁর মুষ্টিতে থাকবে এবং আকাশমণ্ডলী ডান হাতে গুটানো থাকবে। তিনি পবিত্র, তারা যাকে শরীক করে তিনি তার উর্ধ্বে"- (সূরা আয যুমার ৩৯: ৬৭)। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب النفخ فِي الصُّور )

وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: جَاءَ حَبْرٌ مِنَ الْيَهُودِ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ إِنَّ اللَّهَ يُمْسِكُ السَّمَاوَاتِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى أُصْبُعٍ وَالْأَرَضِينَ عَلَى أُصْبُعٍ وَالْجِبَالَ وَالشَّجَرَ عَلَى أُصْبُعٍ وَالْمَاءَ وَالثَّرَى عَلَى أُصْبُعٍ وَسَائِرَ الْخَلْقِ علىأصبع ثُمَّ يَهُزُّهُنَّ فَيَقُولُ: أَنَا الْمَلِكُ أَنَا اللَّهُ. فَضَحِكَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَعَجُّبًا مِمَّا قَالَ الْحَبْرُ تَصْدِيقًا لَهُ. ثُمَّ قَرَأَ: (وَمَا قَدَرُوا اللَّهَ حَقَّ قَدْرِهِ وَالْأَرْضُ جَمِيعًا قَبْضَتُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَالسَّماوَاتُ مَطْوِيَّاتٌ بِيَمِينِهِ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى عَمَّا يشركُونَ) مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (4811) و مسلم (19 / 2786)، (7046) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

وعن عبد الله بن مسعود قال: جاء حبر من اليهود الى النبي صلى الله عليه وسلم فقال: يا محمد ان الله يمسك السماوات يوم القيامة على اصبع والارضين على اصبع والجبال والشجر على اصبع والماء والثرى على اصبع وساىر الخلق علىاصبع ثم يهزهن فيقول: انا الملك انا الله. فضحك رسول الله صلى الله عليه وسلم تعجبا مما قال الحبر تصديقا له. ثم قرا: (وما قدروا الله حق قدره والارض جميعا قبضته يوم القيامة والسماوات مطويات بيمينه سبحانه وتعالى عما يشركون) متفق عليه متفق علیہ ، رواہ البخاری (4811) و مسلم (19 / 2786)، (7046) ۔ (متفق عليه)

ব্যাখ্যা: ইয়াহুদী ‘আলিমের কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সা.) বিস্মিত হয়ে হাসলেন এটা তার কথাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার জন্য নয় বরং তাকে সত্যায়ন করার জন্য এবং তার কথার সঠিকতাকে জানার জন্য। (وَمَا قَدَرُوا اللَّهَ) এর অর্থ মানুষ আল্লাহকে যেভাবে চেনা দরকার সেভাবে চেনে না। যেভাবে সম্মান করা প্রয়োজন। সেভাবে সম্মান দেখায় না এবং যেভাবে তার উপাসনা করা উচিত সে মতো উপাসনা করে না। এ হাদীস দ্বারা আল্লাহ তা'আলার আঙ্গুলের অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়। যেমনভাবে কুরআন ও হাদীস থেকে তাঁর হাতের প্রমাণ রয়েছে। এর পূর্বেও বলা হয়েছে যে, আল্লাহর গুণাবলি সংক্রান্ত হাদীসগুলোর ব্যাপারে সালাফে সালিহীনদের ‘আক্বীদাহ্ এই যে, তারা এসব হাদীসকে প্রকাশ্য অর্থের উপর গ্রহণ করেন এবং তার উপর ঈমান আনেন।
আল্লাহ তা'আলার আকৃতিতে আল্লাহ তা'আলার ওপর সোপর্দ করেন এবং সাদৃশ্য প্রদান থেকে বিরত থাকেন। কোন কোন যুক্তিবিদ বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইয়াহুদী ‘আলিমের কথাকে রদ করার জন্য হেসেছিলেন, কিন্তু এ কথা ঠিক নয়। কারণ ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্উদ-সহ বড় বড় ফকীহ সাহাবী স্বয়ং এ রিওয়ায়াতে সত্যায়ন করেছেন। যদি তিনি (সা.) তার রূপদান করাকে বাধা দিতেন তাহলে নবী (সা.) এ আয়াত পাঠ করতেন না। অতএব পরিষ্কারভাবে বুঝা গেল যে, ঐ এসব যুক্তিবাদীরা চিন্তাভাবনা না করে মনের বশে পড়ে যা ইচ্ছা বলেছেন। এ ব্যাপারে সঠিক কথা হলো, আল্লাহ তা'আলার নাম ও গুণাবলি কী কী তা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত। অর্থাৎ যেসব নাম ও গুণাবলি কুরআন ও হাদীসে এসেছে সেগুলো স্বীকার করা এবং যা প্রমাণিত নয় তা না বলা উচিত। (মিশকাতুল মাসাবীহ মুম্বাই ছাপা, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৩৭৮)।

ক্বাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন: রাসূলুল্লাহ (সা.) স্বীয় আঙ্গুলকে মুষ্টিবদ্ধ করলেন এবং সম্প্রসারিত করলেন আসমান ও জমিনকে মুষ্টিবদ্ধ ও সম্প্রসারিত করা হবে শুধুমাত্র মাখলুকের সাথে এর উদাহরণ দেয়ার জন্য।
তিনি আরো বলেন: আল্লাহ তা'আলার গুণাবলি সম্পর্কিত মুশকিল হাদীসগুলোর দ্বারা নবী (সা.)-এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে আল্লাহই অধিক অবগত। আমরা আল্লাহ ও তার গুণাবলির উপর বিশ্বাস রাখি। তার সাথে কোন কিছুর সাদৃশ্য দেই না। কারণ কুরআন মাজীদে বর্ণিত হয়েছে,
(لَیۡسَ کَمِثۡلِهٖ شَیۡءٌ ۚ وَ هُوَ السَّمِیۡعُ الۡبَصِیۡرُ) - “কোন কিছুই তাঁর সাদৃশ্য নয়, তিনি সব শোনেন, সব দেখেন”- (সূরাহ আশ শূরা ৪২: ১১)। আর রাসূলুল্লাহ (সা.) যা বলেছেন এবং তাঁর কাছ থেকে যা নিশ্চিত হয়েছেন তা সঠিক ও সত্য। তার জ্ঞান সম্পর্কে আমরা যতটুকু জানব তা মহান আল্লাহরই অনুগ্রহে আর যা আমাদের নিকটে অস্পষ্ট থাকবে তার উপর আমরা ঈমান আনব। আর এর প্রকৃত জ্ঞানকে মহান আল্লাহর। নিকটে সোপর্দ করব। (শারহুন নাবাবী ১৭ খণ্ড, হা. ২৭৮৮)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৮: সৃষ্টির সূচনা ও কিয়ামতের বিভিন্ন অবস্থা (كتاب أَحْوَال الْقِيَامَة وبدء الْخلق)