৫৫২১

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - শিঙ্গায় ফুৎকার

৫৫২১-[১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: দুটি ফুঁকের মধ্যখানে দূরত্ব হবে চল্লিশ। লোকেরা প্রশ্ন করল, হে আবূ হুরায়রাহ্! চল্লিশ দিন? তিনি বললেন, আমি উত্তর দিতে অপারগ। (অর্থাৎ আমি জানি না) তারা প্রশ্ন করল, চল্লিশ মাস? তিনি বললেন, আমি উত্তর দিতে অস্বীকার করি। লোকেরা প্রশ্ন করল, চল্লিশ বছর? তিনি বললেন, আমি জবাব দিতে অস্বীকার করি। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, তখন মৃত দেহগুলো এমনভাবে জীবিত হয়ে উঠবে, যেমনিভাবে (বৃষ্টির পানিতে) ঘাস-লতা ইত্যাদি গজিয়ে উঠে। অতঃপর তিনি (সা.) বলেছেন, মেরুদণ্ডের নিম্নাংশের একটি হাড় ছাড়া মানবদেহের সকল কিছুই মাটিতে গলে বিলীন হয়ে যাবে এবং কিয়ামতের দিন সেই হাড্ডি হতে গোটা দেহের পুনর্গঠন করা হবে। (বুখারী ও মুসলিম)
আর মুসলিম-এর অপর এক বর্ণনায় আছে, তিনি (নবী সা.) বলেছেন: মাটি আদম সন্তানের প্রতিটি অংশ খেয়ে ফেলবে, তবে তার মেরুদণ্ডের নিম্নাংশ খাবে না। তা হতেই মানবদেহ সৃষ্টি করা হয়েছে এবং (কিয়ামতের দিন) তা হতে তাকে পত্তন করা হবে।

الفصل الاول (بَاب النفخ فِي الصُّور )

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا بَيْنَ النَّفْخَتَيْنِ أَرْبَعُونَ» قَالُوا: يَا أَبَا هُرَيْرَةَ أَرْبَعُونَ يَوْمًا؟ قَالَ: أَبَيْتُ. قَالُوا: أَرْبَعُونَ شَهْرًا؟ قَالَ: أَبَيْتُ. قَالُوا: أَرْبَعُونَ سَنَةً؟ قَالَ: أَبَيْتُ. «ثُمَّ يَنْزِلُ اللَّهُ مِنَ السَّمَاءِ مَاءٌ فَيَنْبُتُونَ كَمَا يَنْبُتُ الْبَقْلُ» قَالَ: «وَلَيْسَ مِنَ الْإِنْسَانِ شَيْءٌ لَا يَبْلَى إِلَّا عَظْمًا وَاحِدًا وَهُوَ عَجْبُ الذَّنَبِ وَمِنْهُ يُرَكَّبُ الْخَلْقُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ. وَفِي رِوَايَةٍ لِمُسْلِمٍ قَالَ: «كُلُّ ابْنِ آدَمَ يَأْكُلُهُ التُّرَابُ إِلَّا عَجْبَ الذَّنَبِ مِنْهُ خُلِقَ وَفِيهِ يركب»

متفق علیہ ، رواہ البخاری (4814) و مسلم (141 / 2955، (7414) و الروایۃ الثانیۃ 142 / 2955)، (7415) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

عن ابي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ما بين النفختين اربعون» قالوا: يا ابا هريرة اربعون يوما؟ قال: ابيت. قالوا: اربعون شهرا؟ قال: ابيت. قالوا: اربعون سنة؟ قال: ابيت. «ثم ينزل الله من السماء ماء فينبتون كما ينبت البقل» قال: «وليس من الانسان شيء لا يبلى الا عظما واحدا وهو عجب الذنب ومنه يركب الخلق يوم القيامة» . متفق عليه. وفي رواية لمسلم قال: «كل ابن ادم ياكله التراب الا عجب الذنب منه خلق وفيه يركب» متفق علیہ ، رواہ البخاری (4814) و مسلم (141 / 2955، (7414) و الروایۃ الثانیۃ 142 / 2955)، (7415) ۔ (متفق عليه)

ব্যাখ্যা: (مَا بَيْنَ النَّفْخَتَيْنِ) দু' ফুঁকের মাঝে অর্থাৎ মেরে ফেলার ফুক ও জীবিত করার ফুঁকের মাঝে ব্যবধান হবে চল্লিশ।
(أَبَيْتُ) অস্বীকার করলাম। অর্থাৎ আমি জবাব দানে অপারগ হলাম। কারণ আমি জানি না কোনটি সঠিক। কাযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এর অর্থ হলা দু ফুকের মধ্যবর্তী সময়ের ব্যবধান চল্লিশ বলতে কী বুঝানো হয়েছে তা আমি জানি না, সেটা চল্লিশ দিন, না চল্লিশ মাস, নাকি চল্লিশ বছর? তাই আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ওপরে মিথ্যা বলা থেকে এবং যা আমি জানি না সেটা সম্পর্কে বর্ণনা থেকে বিরত থাকলাম। ফাতহুল বারী ভাষ্যকার বলেন, (أَبَيْتُ) এর অর্থ হলো চল্লিশ সংখ্যা থেকে উদ্দেশ্য দিন, না মাস, না বছর তা নিশ্চিতভাবে বলতে রাযী হলাম না বরং আমি নিশ্চিতভাবে বললাম যে, তা শুধু চল্লিশই ছিল।
(فَيَنْبُتُونَ) বৃষ্টিতে সৃষ্টজীবের দেহগুলো গজিয়ে উঠবে। এ কথা সুস্পষ্ট যে, এ ঘটনা ঘটবে দ্বিতীয় ফুৎকার দেয়ার পরে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
(كُلُّ ابْنِ آدَمَ يَأْكُلُهُ) বানী আদম-এর দেহের সকল অংশকেই মাটি খেয়ে ফেলবে শুধু একটি হাড্ডি ব্যতীত। এটা বিশেষ হাড্ডি। যেমন বিশেষভাবে নবী-রাসূলদের দেহকে মাটিতে খাওয়া আল্লাহ তা'আলা হারাম করেছেন।
(عَجْبَ الذَّنَبِ) আইন বর্ণে যবর ও জিম বর্ণে সুকূন যোগে এটা এমন সূক্ষ্ম-মিহি হাড্ডি যা পৃষ্ঠদেশের সর্বনিন্মে অবস্থিত। আর সেটা হলো মেরুদণ্ডের হাড়ের নীচের মাথা। আদম সন্তানের এই হাড্ডি সর্বপ্রথম সৃষ্টি করা হয়। আর এ অংশটুকু অবশিষ্ট থেকে যায় যাতে তার উপর সৃষ্টজীবকে পুনরায় গঠন করা যায়। (ফাতহুল বারী ১৮ খণ্ড, হা. ২৯৫৫)

মিশকাতের (উর্দু অনুবাদে) ব্যাখ্যায় অনুরূপ লিখা হয়েছে, (عَجْبَ الذَّنَبِ) এমন হাড্ডিকে বলা হয় যেখান থেকে জানোয়ারদের লেজ বের হয়। মানব শরীরের এই হাড্ডিকে নিতম্বের হাড় বলা হয়। মানুষের সমস্ত দেহ মাটিতে মিশে যাবে কিন্তু এ হাড্ডি ব্যতীত। মায়ের পেটে মানুষকে সৃষ্টি করার সময় প্রথমে এখান থেকে শুরু করা হয়। কিয়ামতের সময় এ হাড্ডি থেকে দেহ গঠন করা শুরু হবে। সমস্ত দেহের অঙ্গগুলো এর সাথে যুক্ত হয়ে যেমন দেহ ছিল তেমনভাবে প্রস্তুত হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ - মুম্বাই ছাপা, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৩৭৬)।

মিরকাত ভাষ্যকার বলেন, কোন হাদীসে এসেছে, এ অংশকে সর্বপ্রথম সৃষ্টি করা হয় এবং এ অংশ সর্বশেষ জীর্ণ করা হয়। এর রহস্য হলো এটা মানবদেহের ভিত্তি। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৮: সৃষ্টির সূচনা ও কিয়ামতের বিভিন্ন অবস্থা (كتاب أَحْوَال الْقِيَامَة وبدء الْخلق)