৫২২৭

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

৫২২৭-[৭৩] মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁকে (শাসক নিযুক্ত করে) যখন ইয়ামান পাঠালেন, তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁকে উপদেশ দিতে দিতে তার সঙ্গে বের হলেন। এ সময় মুআয ছিলেন সওয়ারীতে আর রাসূলুল্লাহ (সা.) চলছিলেন পায়ে হেঁটে, সওয়ারী হতে নীচে। (উপদেশাবলী হতে) অবসর হয়ে তিনি (সা.) বললেন : হে মু’আয! সম্ভবত এ বছরের পর তুমি আর আমার সাক্ষাৎ পাবে না। এমনও হতে পারে তুমি আমার মাসজিদ ও আমার কবরের পার্শ্ব দিয়ে অতিক্রম করবে। তখন মু’আয (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) -এর বিচ্ছেদ চিন্তায় ভারাক্রান্ত হয়ে কাঁদতে লাগলেন। অতঃপর তিনি (সাঃ) মদীনার দিকে তাকালেন এবং তাকে সম্মুখে রেখে বললেন : নিশ্চয় ঐ সমস্ত লোকেরাই আমার নিকট অধিক ভালো যারা আল্লাহভীরু, পরহেজগার। তারা যে কেউ হোক এবং যেখানেই থাকুক না কেন? [উপরিউক্ত চারটি হাদীস ইমাম আহমাদ (রহিমাহুল্লাহ) রিওয়ায়াত করেছেন]

اَلْفصْلُ الثَّالِثُ

وَعَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: لَمَّا بَعَثَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى الْيَمَنِ خَرَجَ مَعَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُوصِيهِ وَمُعَاذٌ رَاكِبٌ وَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَمْشِي تَحْتَ رَاحِلَتِهِ فَلَمَّا فَرَغَ قَالَ: يَا مُعَاذُ إِنَّكَ عَسَى أَنْ لَا تَلْقَانِي بَعْدَ عَامِي هَذَا وَلَعَلَّكَ أَنْ تَمُرَّ بِمَسْجِدِي هَذَا وَقَبْرِي فَبَكَى مُعَاذٌ جَشَعًا لِفِرَاقِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ الْتَفَتَ فَأَقْبَلَ بِوَجْهِهِ نَحْوَ الْمَدِينَةِ فَقَالَ: «إِنَّ أَوْلَى النَّاسِ بِيَ الْمُتَّقُونَ مَنْ كَانُوا وَحَيْثُ كَانُوا» رَوَى الْأَحَادِيث الْأَرْبَعَة أَحْمد

اسنادہ حسن ، رواہ احمد (5 / 235 ح 22402) [و ابن حبان (الاحسان : 1647)] ۔
(صَحِيح)

وعن معاذ بن جبل رضي الله عنه قال: لما بعثه رسول الله صلى الله عليه وسلم الى اليمن خرج معه رسول الله صلى الله عليه وسلم يوصيه ومعاذ راكب ورسول الله صلى الله عليه وسلم يمشي تحت راحلته فلما فرغ قال: يا معاذ انك عسى ان لا تلقاني بعد عامي هذا ولعلك ان تمر بمسجدي هذا وقبري فبكى معاذ جشعا لفراق رسول الله صلى الله عليه وسلم ثم التفت فاقبل بوجهه نحو المدينة فقال: «ان اولى الناس بي المتقون من كانوا وحيث كانوا» روى الاحاديث الاربعة احمد اسنادہ حسن ، رواہ احمد (5 / 235 ح 22402) [و ابن حبان (الاحسان : 1647)] ۔ (صحيح)

ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ এই মু'আয (রাঃ)-কে ইয়ামানে কাযী অথবা ওয়ালী বা গভর্নর করে প্রেরণ করেছিলেন। মু'আয (রাঃ) বাহনে ছিলেন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তার নীচেই পায়ে হেঁটে চলছিলেন, এটা আপাতত আদবের খেলাফ মনে হলেও কাজটি ছিল রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নির্দেশক্রমে, মূলত এটা ছিল মু'মিনদের প্রতি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) -এর কোমলতা ও হৃদ্যতা প্রকাশের অন্যতম একটি নমুনা।
(يَا مُعَاذُ إِنَّكَ عَسَى أَنْ لَا تَلْقَانِي) “হে মুআয! এ বছর পর তুমি আর আমার সাক্ষাৎ পাবে না।” (عَسٰى) শব্দটি প্রিয় বিষয়ের ক্ষেত্রে তথা আকাক্ষা ও প্রত্যাশা এবং অপ্রিয় ও অপছন্দনীয় বস্তুর (الاشفاق) তথা উদ্বেগ- উৎকণ্ঠা প্রকাশের জন্য ব্যবহার হয়ে থাকে। (لَعَلَّ) শব্দটি অনুরূপ আকাঙ্ক্ষা এবং উদ্বেগ উভয় অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে, তবে এটা সাধারণত সম্ভাবনার ক্ষেত্রে ব্যবহার হয় যা (لَيْتَ)-এর বিপরীত। অর্থাৎ (لَيْتَ)-এর আকাক্ষা অসম্ভবের ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে, যেমন-( لَيْتَ الشَّبَابَ يَعُودُ) যৌবন যদি ফিরে আসত!
রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কথা শুনে মু'আয (রাঃ) ধৈর্যহারা হয়ে পড়লেন এবং কাঁদলেন। (جشع) শব্দের অর্থ ভীত হওয়া অধৈর্য হওয়া। নিহায়াহ্ গ্রন্থে বলা হয়েছে, (الْجَشَعُ أَجْزَعُ لِفِرَاقِ الْإِلْفِ) অর্থাৎ কোন ভালোবাসার মানুষের বিচ্ছেদ বিরহে অস্থির ও অধৈর্য হয়ে পড়া। যেমন মু'আয (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর জন্য হয়েছিলেন।

রাসূলুল্লাহ (সা.) মু'আয (রাঃ) থেকে মুখ মদীনার দিকে করলেন। এ মুখ ফিরানোর কারণ সম্ভবত যাতে মুআয-এর কান্না তাকে দেখতে না হয়। কেননা মু'আয-এর কান্না রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কান্নার কারণ হতে পারে। আর সেখানে এক কঠিন হৃদয়বিদারক পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে যেতে পারে। অথচ একদিন না একদিন তাকে দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতেই হবে। তাই তিনি (সা.) কার্যতভাবে তাকে সান্ত্বনা দিলেন এবং কতিপয় ওয়াসিয়্যাতের মাধ্যমে তার কষ্ট ভুলানোর প্রয়াস গ্রহণ করলেন। তিনি (সা.) তাকে বললেন, তুমি তো আমাকে এবং মদীনাহ্ ছেড়ে চলে যাচ্ছ, যখন তুমি আবার ফিরবে মদীনাকে দেখতে পাবে কিন্তু আমাকে দেখতে পাবে না। তিনি (সা.) তাকে মূলত এদিকে ইশারা করেন যে, নাবীগণ এবং মুত্তাকীগণ চিরস্থায়ী ঘরে সমবেত হবেন। সেদিন আমার সবচেয়ে নিকটে থাকবে মুত্তাক্বীগণ, তারা আমার শাফা'আত পেয়েও ধন্য হবে। তারা চাই ‘আরবী হোক, চাই আজমী হোক, সাদা হোক কিংবা কালো হোক, সম্ভ্রান্ত-দরিদ্র যেই হোক কেন। আর তারা মক্কায় থাক কিংবা মদীনায়, ইয়ামান, কূফা, বসরা যেখানেই থাকুক না কেন। অতএব তোমার নিকট থেকে আমার বাহ্যিক এই দূরত্ব বা বিচ্ছেদ কোন ক্ষতির কিছু নেই। আত্মিক নৈকট্যতাই প্রকৃত নৈকট্যতা আর তা তাক্বওয়ার ভিত্তিতেই বিবেচিত হয়ে থাকে। রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রকারান্তে তাকে তাক্বওয়ার উপদেশই প্রদান করছিলেন। এটা পরবর্তী উম্মতের জন্যও ছিল সান্ত্বনার উপদেশ। আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, মু'আয (রাঃ)-এর প্রতি উপদেশ ছিল এই যে পরবর্তী বছরে তিনি মদীনায় ফিরে এসে রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে না পেয়ে যেন বিলাপ না করেন। (মিক্বাতুল মাফাতীহ; আল লুম্‌'আহ্ ৮ম খণ্ড, ৪৫১ পৃ.; আল কাশিফ ১০ম খণ্ড, ৩৩০৮ পৃ.)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৬: মন-গলানো উপদেশমালা (كتاب الرقَاق)