পরিচ্ছেদঃ ৩৪. হজ্জের সুন্নাত (পদ্ধতি) সম্পর্কে
১৮৮৭. জাফর ইবনে মুহাম্মাদ আল-বাকের (রহঃ) থেকে তার পিতার সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা জাবির ইবনু আবদুল্লাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা’র নিকট গেলাম। আমরা তার নিকট উপস্থিত হলে তিনি (সাক্ষাতপ্রার্থী) লোকদের পরিচয় জানতে চান। এভাবে আমার পরিচয় জিজ্ঞেস করলে আমি বলি যে, আমি আলী ইবনুল হুসাইনের পুত্র মুহাম্মাদ। ফলে তিনি (স্নেহভরে) আমার দিকে তার হাত বাড়িয়ে আমার পরিচ্ছদের উপর দিকের বোতাম, অতঃপর নিচের বোতাম খুললেন, অতঃপর তার মুখ আমার বুকের মাঝে রাখলেন (চুমু খেলেন)। আমি তখন উঠতি বয়সের যুবক। যাহোক, এরপর তিনি বলেন, হেভ্রাতুষ্পুত্র! তোমাকে মোবারকবাদ জানাই। তুমি যা জানতে চাও জিজ্ঞেস করো।
আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, এ সময় তিনি (বার্ধক্যজনিত কারণে) দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেছিলেন। ইতোমধ্যে নামাযের ওয়াক্ত হলো। তিনি নিজেকে একটি চাদরে আবৃত করে উঠে দাঁড়ালেন। তিনি যখনই চাদরের প্রান্তভাগ নিজ কাঁধের উপর রাখতেন, তা (আকারে) ছোট হওয়ার কারণে তাঁর দিকেই ফিরে আসলো (নিচে পড়ে যেতে লাগল)। তার আরেকটি বড় চাদর তার পাশেই আলনায় রাখা ছিল। তিনি আমাদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন। অতঃপর আমি বললাম, আপনি আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসা্ল্লাম-এর (বিদায়)হাজ্জ সম্পর্কে অবহিত করুন।
তখন তিনি তার হাত দিয়ে নয় (৯) সংখ্যার মত গিঁঠ বানিয়ে বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নয় বছর (মদীনায়) অবস্থান করেন এবং (এ সময়কালের মধ্যে) হজ্জ করেননি। অতঃপর দশম বর্ষে লোকেদের মধ্যে হাজ্জের ঘোষণা করালেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (এ বছর) হাজ্জে যাবে। সুতরাং মদীনায়অসংখ্য লোকের সমাগম হলো। তাদের প্রত্যেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুসরণ করতে এবং তাঁর অনুরূপ আমল করতে আগ্রহী ছিল। অতএব (তিনি রওয়ানা হলে) আমরাও তাঁর সাথে রওয়ানা হলাম। আমরা যুল-হুলাইফানামক স্থানে পৌঁছলে আসমা বিনতে উমাইস মুহাম্মাদ ইবনে আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম-কে প্রসব করলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট লোক পাঠিয়ে জানতে চাইলেন, এখন আমি কী করবো?
তিনি বললেনঃ তুমি গোসল করো, এক খন্ড কাপড়দিয়ে পট্টি বাঁধো এবং ইহরামের পোশাক পরিধান করো।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে (ইহরামের দু’ রাক’আত) সালাত আদায় করলেন, অতঃপর ’কাসওয়া’ নামক উষ্ট্রীতে আরোহণ করলেন। অবশেষে ’বাইদা’ নামক স্থানে তাঁর উষ্ট্রী যখন তাঁকে নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো, তখন আমি (জাবির) সামনের দিকে যতদূর দৃষ্টি যায় তাকিয়ে দেখলাম, লোকে লোকারণ্য, কতক সওয়ারীতে এবং কতক পদব্রজে অগ্রসরহচ্ছে। ডান দিকে, বাঁ দিকে এবং পেছনেও একই দৃশ্য। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝখানে ছিলেন এবং তাঁর উপর কুরআন নাযিল হচ্ছিল। একমাত্র তিনিই এর আসল তাৎপর্য জানেন। তিনি আল্লাহর তাওহীদ সম্বলিত এই তালবিয়া পাঠের মাধ্যমে শুরু করলেনঃ “লাব্বাইকা আল্লাহুম্মালাব্বাইকা, লাববাইকা লা শারীকা লাকা লাব্বাইকা, ইন্নাল-হামদা ওয়ান-নিয়’মাতা লাকাওয়াল-মুলকা লা শারীকা লাকা’’ (আমি তোমার দরবারে হাজির আছি হে আল্লাহ, আমি তোমার দরবারে হাজির, আমি তোমার দরবারে হাজির। তোমার কোন শরীক নাই, আমি তোমার দরবারে উপস্থিত। নিশ্চয় সমস্ত প্রশংসা, সমস্ত নিয়ামত তোমারই এবং রাজত্বও, তোমার কোন শরীক নাই)।
কিন্তু লোকেরা উপরোক্ত তালবিয়া পাঠ করলো যা (আজও) তারাপাঠ করে, (অর্থাৎ লোকেরা তাঁর তালবিয়ার সাথে কিছু শব্দ বাড়িয়ে বলে), কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বাধা দেননি। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর আপন (উপরোক্ত) তালবিয়াই পাঠ করতে থাকেন, এভাবে আমরা তাঁর সাথে বাইতুল্লাহ আসা পর্যন্ত।
জাবির রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমরা হজ্জ ছাড়া অন্য কিছুর নিয়াত করিনি, আমরা উমরার কথাও জানতাম না। অবশেষে আমরা তাঁর সাথে বাইতুল্লাহ শরীফে পৌঁছলে তিনি রুকন (হাজরে আসওয়াদ) চুম্বন করলেন, অতঃপর (প্রথম) তিনবার রমল করে (দ্রুত গতিতে) তাওয়াফ করলেনএবং চারবার স্বাভাবিক গতিতে। অতঃপর তিনি মাকামে ইবরাহীমে পৌঁছে তিলাওয়াত করলেনঃ ’’তোমরা ইবরাহীমের দাঁড়াবার স্থানকে নামাযেরস্থানরূপে গ্রহণ করো।’’ (সূরা বাকারাঃ ১২৫)
তিনি মাকামে ইবরাহীমকে তাঁর ও বাইতুল্লাহর মাঝখানে রেখে (দুই রাক’আত) সালাত আদায় করলেন। (জাফর বলেন) আমার পিতা (মুহাম্মাদ) বলতেন, আমি যতদূর জানি, তিনি (জাবির) বরং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেনঃ তিনি দু’ রাক্আত সালাতে “ক্বুল হুয়াল্লাহু আহাদ” (সূরা ইখলাস: ১) “ক্বুল ইয়া আইয়্যূহাল কাফিরূণ।” (সূরা কাফিরূন: ১) পড়েছেন।
অতঃপর তিনি রুকনে (হাজরে আসওয়াদে) ফিরে এলেন এবং তাতে চুমা দিলেন। অতঃপর তিনি দরজা দিয়ে সাফা পাহাড়ের দিকে বের হলেন এবং সাফায় উপস্থিত হয়ে তিলাওয়াত করলেনঃ ’’নিশ্চয় সাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয় আল্লাহর নিদের্শন সমূহের অন্যতম।’’ (সূরা বাকারাঃ ১৫৮) এবং (বললেন:) “আল্লাহ তাআলা যা দিয়ে আরম্ভ করেছেন আমরাও তা দিয়ে আরম্ভ করবো।” এ বলে তিনি সাফা পাহাড় থেকে শুরু করলেন এবং তার এতোটা উপরে আরোহণ করলেন যে, বাইতুল্লাহ শরীফ দেখতে পেলেন।
এরপর তিনি (কিবলামুখী হয়ে) আল্লাহরএকত্ব ও বড়ত্ব ঘোষণা করলেন এবং এ দোয়া পড়লেনঃ ’’লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকা লাহু, লাহুল-মুলকু ওয়া লাহুল-হামদু ইউহয়ী ওয়া ইউমীতু ওয়া হুওয়া আলা কুল্লিশাইয়্যিন কাদীর। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু আনজাযা ওয়া’দাহু ওয়ানাসারা আবদাহু ওয়া হাযামাল আহযাবা ওয়াহদাহু।’’ (অর্থ: আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই, তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নাই, তাঁর জন্য রাজত্ব এবং তাঁর জন্য সমস্ত প্রশংসা, তিনি জীবিত করেন আবার তিনিই মৃত্যু দান করেন। তিনি প্রতিটি জিনিসের উপর শক্তিমান। আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই, তিনি এক, তিনি নিজের প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করেছেন, নিজের বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং একাই সমস্ত সম্মিলিত শক্তিকে পরাভূত করেছেন)।
মাঝখানে অনুরূপ আরো কিছু দোয়া পড়লেন। তিনি এ দোয়া তিনবার পড়লেন অতঃপর তিনি নেমে মারওয়া পাহাড়ের দিকে অগ্রসর হলেন, যাবত না তাঁর পদদ্বয় ’বাতনুল ওয়াদী’ (উপত্যকার সমতল ভূমি) তে গিয়ে ঠেকলো।’ আব্দুল্লাহ ইবনু আব্দুর রহমান (দারেমী) বলেন, এর অর্থ, তিনি রমল করলেন (দ্রুত চললেন) যাবত না তার পদদ্বয় ’বাতনুল ওয়াদী’ (উপত্যকা) অতিক্রম করলেন। মারওয়া পাহাড়ে উঠার সময় হেঁটে উঠলেন, অতঃপর এখানেওতাই করলেন, যা তিনি সাফা পাহাড়ে করেছিলেন। শেষ তাওয়াফে তিনি মারওয়া পাহাড়ে পৌঁছে (লোকেদের সম্বোধন করে) বললেনঃ যদি আমি আমার করণীয় সম্পর্কে আগে বুঝতে পারতাম, যা পরে বুঝতে পারলাম, তাহলে আমি সাথে করে কোরবানীর পশু আনতাম না এবং (হজ্জের) ইহরামকে উমরায় পরিবর্তিত করতাম। অতএব তোমাদের মধ্যে যার সাথে কোরবানীর পশু নাই, সে যেন ইহরাম খুলে ফেলে এবং একে উমরায় পরিণত করে।”
এ সময় সুরাকা ইবনে মালেক ইবনে জু’শুম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু দাঁড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এ ব্যবস্থা কি আমাদের এ বছরের জন্য, না সর্বকালের জন্য? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হাতের আংগুলগুলো পরস্পরের ফাঁকে ঢুকিয়ে দু’বার বললেনঃ “উমরা হাজ্জের মধ্যে প্রবেশ করলো।” “না, বরং সর্বকালের জন্য। না, বরং সর্বকালের জন্য।”
এ সময় আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ইয়ামান হতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য কোরবানীর পশু নিয়ে এলেন এবং যারা ইহরাম খুলে হালাল হয়ে গিয়েছিলো, ফাতিমা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহাকেও তাদের অন্তর্ভুক্ত দেখতে পেলেন। তিনি রঙ্গীনকাপড় পরিহিত ছিলেন এবং চোখে সুরমা দিয়েছিলেন। আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তার একাজ অপছন্দ করলেন। ফাতিমা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বললেন, আমার পিতা আমাকে এরূপ করার নির্দেশ দিয়েছেন। (রাবী বলেন) এরপর আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু (ইরাকে অবস্থানকালে) বলতেন, তখন আমি (অসন্তুষ্ট অবস্থায়) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্থিত হলাম ফাতিমা যা করেছে সে ব্যাপারে তাঁকে উত্তেজিত করতে চেষ্টা করতে এবং সে যা বলেছে সে সম্পর্কে মাসআলা জানার জন্যও। আমি তার এ কাজ অপছন্দ করলাম। তখন তিনি বললেনঃ “ফাতিমা ঠিকই বলেছে! তুমি হাজ্জের ইহরাম বাঁধার সময় কী করেছিলে?”
তিনি বলেন, আমি বলেছিলাম, হে আল্লাহ! আমি ইহরাম বাঁধলাম যে নিয়াতে ইহরাম বেঁধেছেন আপনার রাসূল।
তিনি বললেনঃ “আমার সাথে কোরবানীর পশু আছে, অতএব তুমি (আলী) ইহরাম খুলো না।”
তিনি (জাবির)বলেন, ’আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ইয়ামেন থেকে যেপশুপাল নিয়ে এসেছিলেন এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের সাথে করে যে পশুগুলো নিয়ে এসেছিলেন এর সর্বমোট সংখ্যা দাঁড়ায় একশত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং যাদের সাথে কোরবানীরপশু ছিল, তারা ব্যতীত আর সকলেই ইহরাম খুলে ফেলেন এবং চুল ছোট করলেন।
অতঃপর যখন তারবিয়ার দিন (৮ যিলহজ্জ) শুরু হলো, তিনি মিনার দিকে রওয়ানা হলে আমরা পুনরায় ইহরাম বাঁধলাম। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসা্ল্লাম সওয়ার হয়ে গেলেন এবং তথায় যোহর, আসর, মাগরিব, এশা ও ফজরের সালাত আদায় করলেন। অতঃপর তিনি সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত তথায় কিছুক্ষণ অবস্থান করলেন এবং তাঁর জন্য নামিরা নামক স্থানে গিয়ে একটি তাঁবু টানানোর নির্দেশ দিলেন, ফলে তা টানানো হলো। অতঃপর বাহনে আরোহন করে রওয়ানা হয়ে গেলেন।
কুরাইশগণ নিশ্চিত ছিল যে, তিনি মাশআরুল হারাম নামক স্থানে অবস্থান করবেন, যেমন কুরাইশগণ জাহিলী যুগে মুযদালিফায় যেমন করতো (মানহানি হওয়ার আশঙ্কায় তারা সাধারণের সাথে একত্রে অবস্থান করতো না)। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসা্ল্লাম সামনে অগ্রসর হতে থাকলেন যতক্ষণ না আরাফায় পৌঁছলেন। তিনি দেখতে পেলেন, নামিরায় তাঁর জন্য তাঁবু খাটানো হয়েছে। তিনি এখানে অবতরণ করলেন।
অবশেষে সূর্য (পশ্চিমাকাশে) ঢলে পড়লে তিনি তাঁর কাসওয়া নামক উষ্ট্রী সাজানোর নির্দেশ দিলে তা সাজানো হলো। অতঃপর তিনি (তাতে আরোহন করে) ’বাতনুল ওয়াদী’ (উপত্যকা) তে এলেন এবং লোকেদের উদ্দেশে ভাষণ দিলেন। তিনি বললেনঃ
’’তোমাদের জীবন ও সম্পদ তোমাদের পরস্পরের জন্যহারাম, যেমন হারাম (সম্মানিত) তোমাদের এই দিনটি, তোমাদের এই মাসে এবং তোমাদের এই শহরে।
জেনে রাখ! জাহিলী যুগের সকল জিনিস (মন্দ রীতি)রহিত হলো। জাহিলী যুগের রক্তের দাবি রহিত করা হলো। আমাদের (বংশের) রক্তের দাবির মধ্যে সর্বপ্রথম আমি রবীআ ইবনুল হারিসের রক্তের দাবি রহিত করলাম। সে সাদ গোত্রে শিশু অবস্থায় লালিত-পালিত হওয়াকালীন হুযাইল গোত্রের লোকেরা তাকে হত্যা করেছিল।
জাহিলী যুগের সূদও রহিত করা হলো। আমাদের বংশের প্রাপ্য সূদের মধ্যে সর্ব প্রথম আমি আবদুল মুত্তালিবের পুত্র আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-র প্রাপ্য সমুদয় সূদ রহিত করলাম।’’
আর তোমরা স্ত্রীলোকদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করবে। তোমরা তাদেরকে আল্লাহর আমানতে গ্রহণ করেছো এবং আল্লাহর কালামের মাধ্যমে তাদের লজ্জাস্থান নিজেদের জন্য হালাল করেছো। তাদের উপর তোমাদের অধিকার এই যে, তারা যেন তোমাদের বিছানা এমন কোন লোককে মাড়াতে না দেয় যাকে তোমরা অপছন্দ করো। যদি তারা অনুরূপ কাজ করে তবে তাদেরকে হাল্কাভাবে মারপিট করবে। আর তোমাদের উপর তাদের অধিকার এই যে, তোমরা ন্যায় সঙ্গতভাবে তাদের পোশাক ও ভরণপোষণের ব্যবস্থা করবে।’’
তোমাদেরকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে, তখন তোমরা কী বলবে?” তারা (উপস্থিত জনতা) বললেন, আমরা সাক্ষ্য দিবো যে, আপনি (আল্লাহর বাণী) পৌঁছে দিয়েছেন, আপনার কর্তব্য পালন করেছেন এবং সদুপদেশ দিয়েছেন।’
অতঃপর তিনি নিজের তর্জনী (শাহাদত আঙ্গুল) আকাশের দিকে উত্তোলন করে এবং জনতার প্রতি ইঙ্গিত করে বলেনঃ “হে আল্লাহ! আপনি সাক্ষী থাকুন, হে আল্লাহ, আপনি সাক্ষী থাকুন, আপনি সাক্ষী থাকুন।”
অতঃপর বিলালকে এক আযান ও এক ইক্বামাত(ইকামত/একামত) দানের জন্য আহবান করলেন এবং তিনি যোহরের সালাত আদায় করলেন। অতঃপর দাঁড়িয়ে গেলেন, এরপর আসরের সালাত আদায় করলেন এবং এতদুভয়ের মাঝে আর কোনো সালাত আদায় করেননি। এরপর তিনি (কাসওয়ার উপর) সওয়ার হয়ে আল মাওকিফ (অবস্থানস্থল)-এ এলেন, নিজের কাসওয়া নামক উষ্ট্রীর পেট পাথরের স্তুপের দিকে- (আর ইসমাঈল বলেছেন- ঝোপের দিকে করে দিলেন এবং পদব্রজে আসা লোকদের নিজের সামনে রেখে কিবলামুখী হয়ে দাঁড়ালেন। সূর্যের হলুদ আভা অদৃশ্য হয়ে সূর্য গোলকও সম্পূর্ণ অস্তমিত হয়ে গেল। তিনি উসামাকে তাঁর বাহনের পেছন দিকে বসালেন এবং কাসওয়ার নাসারন্ত্রের দড়ি সজোরে টান দিলেন, ফলে এর মাথা জিনপোষ স্পর্শ করলো এবং তা অগ্রযাত্রা শুরু করলো। তিনি তাঁর ডান হাতের ইশারায় বলেনঃ ’’(হে জনমন্ডলী!) শান্তভাবে, শান্তভাবে (ধীরে সুস্থে অগ্রসর হও)।’’ যখনই তিনি বালুর স্তূপের নিকট পৌঁছতেন, কাসওয়ার নাসারন্ধ্রের রশি কিছুটা ঢিল দিতেন, যাতে তা উপরদিকে উঠতে পারে।
এভাবে তিনি মুযদালিফায় পৌঁছলেন এবং এখানে এক আযানে ও দু’ ইকামতে মাগরিব ও ইশার নামায পড়লেন। অতঃপর তিনি শুয়ে ঘুমালেন যাবত না ফজরের ওয়াক্ত হলো। অতঃপর উষা পরিস্কার হয়ে গেলে তিনি আযান ও ইকামতসহ ফজরের নামায পড়লেন। অতঃপর কাসওয়ার পিঠে আরোহণ করে ’মাশআরুল-হারাম’ নামক স্থানে এসে থামলেন। আর তিনি কিবলামুখী হয়ে আল্লাহর নিকট দু’আ করলেন, তাকবীর, তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) পাঠ করলেন এবং একত্ব বর্ণনা করলেন। আকাশ যথেষ্ট পরিস্কার না হওয়া পর্যন্ত তিনি দাঁড়িয়ে এরূপ করতে থাকলেন। সূর্য উদয়ের পূর্বে তিনি আবার রওয়ানা হলেন এবং ফাযল ইবনে আব্বাসকে সওয়ারীতে তাঁর পিছনে বসালেন। সে ছিল সুদর্শন যুবক এবং তার মাথার চুল ছিল অত্যন্ত সুন্দর।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন অগ্রসর হলেন তখন একদল মহিলাদের বাহনও পাশ দিয়ে চলছিল। ফাযল তাদের দিকে তাকাতে লাগলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের হাত ফাযলের চেহারার উপর রাখলেন। ফাযল আবার অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও অন্যদিক থেকে নিজের হাত (তার চেহারার উপর) রাখলেন। এভাবে তিনি ’বাতনে মুহাসসির’ নামক স্থানে পৌঁছলেন এবং সাওয়ারীর গতি কিছুটা দ্রুততর করলেন। তিনি মধ্যপথ দিয়ে অগ্রসর হলেন যা জামরাতুল কুবরায় গিয়ে পৌঁছেছে। তিনি বৃক্ষের নিকটের জামরায় এলেন এবং এখানে সাতটি কাঁকর নিক্ষেপ করলেন আর প্রতিটি কংকর নিক্ষেপকালে তিনি তাকবীর উচ্চারণ করলেন। এরপর তিনি ’বাতনিল ওয়াদী’ (উপত্যকার মধ্যভাগে) হতেও পাথর নিক্ষেপ করলেন।
এরপর যবেহের স্থানের দিকে অগ্রসর হয়ে সেখানে নিজ হাতে তেষট্টিটি পশু যবেহ করলেন। অতঃপর যে কয়টি অবশিষ্ট ছিল তা আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে যবেহ করতে দিলেন এবং ফলে তিনি সেগুলি যবেহ করলেন। তিনি নিজ পশুতে তাকে (’আলীকে)ও শরীক করলেন। অতঃপর তিনি প্রতিটি পশুর কিছু অংশ নিয়ে একত্রে রান্না করার নির্দেশ দিলেন। অতএব একটি পাত্রে সেগুলি নিয়ে রান্না করা হলো। অতঃপর তাঁরা উভয়ে এই মাংস থেকে আহার করলেন এবং ঝোল পান করলেন।অতঃপর তিনি সওয়ার হয়ে বাইতুল্লাহর দিকে রওয়ানা হলেন এবং বায়তুল্লাহয় পৌঁছে মক্কায় যোহরের সালাত পড়লেন। অতঃপর তিনি (নিজ গোত্র) বনূ আবদুল মুত্তালিবে এলেন। তারা লোকদেরকে যমযমের পানি পান করাচ্ছিল। তিনি বললেনঃ “হে আবদুল মুত্তালিবের বংশধর! পানি তোলো। আমি যদি আশঙ্কা না করতাম যে, পানি পান করানোর ব্যাপারে লোকেরা তোমাদের পরাভূত করবে, তাহলে আমি নিজেও তোমাদের সাথে পানি তুলতাম। তারা তাঁকে একবালতি পানি দিলো এবং তিনি তা থেকে কিছু পান করলেন।”[1]
بَاب فِي سُنَّةِ الْحَجِّ
أَخْبَرَنَا إِسْمَعِيلُ بْنُ أَبَانَ حَدَّثَنَا حَاتِمُ بْنُ إِسْمَعِيلَ عَنْ جَعْفَرِ بْنِ مُحَمَّدٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ قَالَ أَبُو جَعْفَرٍ دَخَلْنَا عَلَى جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ فَسَأَلَ عَنْ الْقَوْمِ حَتَّى انْتَهَى إِلَيَّ فَقُلْتُ أَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَلِيِّ بْنِ الْحُسَيْنِ بْنِ عَلِيٍّ فَأَهْوَى بِيَدِهِ إِلَى زِرِّيَ الْأَعْلَى وَزِرِّيَ الْأَسْفَلِ ثُمَّ وَضَعَ فَمَهُ بَيْنَ ثَدْيَيَّ وَأَنَا يَوْمَئِذٍ غُلَامٌ شَابٌّ فَقَالَ مَرْحَبًا بِكَ يَا ابْنَ أَخِي سَلْ عَمَّا شِئْتَ فَسَأَلْتُهُ وَهُوَ أَعْمَى وَجَاءَ وَقْتُ الصَّلَاةِ فَقَامَ فِي سَاجَةٍ مُلْتَحِفًا بِهَا كُلَّمَا وَضَعَهَا عَلَى مَنْكِبَيْهِ رَجَعَ طَرَفُهَا إِلَيْهِ مِنْ صِغَرِهَا وَرِدَاؤُهُ إِلَى جَنْبِهِ عَلَى الْمِشْجَبِ فَصَلَّى فَقُلْتُ أَخْبِرْنِي عَنْ حَجَّةِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ بِيَدِهِ فَعَقَدَ تِسْعًا فَقَالَ مَكَثَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تِسْعَ سِنِينَ لَمْ يَحُجَّ ثُمَّ أُذِّنَ فِي النَّاسِ بِالْحَجِّ فِي الْعَاشِرَةِ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَاجٌّ فَقَدِمَ الْمَدِينَةَ بَشَرٌ كَثِيرٌ كُلُّهُمْ يَلْتَمِسُ أَنْ يَأْتَمَّ بِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَيَعْمَلَ مِثْلَ عَمَلِهِ فَخَرَجْنَا مَعَهُ حَتَّى أَتَيْنَا ذَا الْحُلَيْفَةِ فَوَلَدَتْ أَسْمَاءُ بِنْتُ عُمَيْسٍ مُحَمَّدَ بْنَ أَبِي بَكْرٍ فَأَرْسَلَتْ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَيْفَ أَصْنَعُ فَقَالَ اغْتَسِلِي وَاسْتَثْفِرِي بِثَوْبٍ وَأَحْرِمِي فَصَلَّى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الْمَسْجِدِ ثُمَّ رَكِبَ الْقَصْوَاءَ حَتَّى اسْتَوَتْ بِهِ نَاقَتُهُ عَلَى الْبَيْدَاءِ فَنَظَرْتُ إِلَى مَدِّ بَصَرِي مِنْ بَيْنِ يَدَيْهِ مِنْ رَاكِبٍ وَمَاشٍ وَعَنْ يَمِينِهِ مِثْلُ ذَلِكَ وَعَنْ يَسَارِهِ مِثْلُ ذَلِكَ وَخَلْفَهُ مِثْلُ ذَلِكَ وَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَيْنَ أَظْهُرِنَا وَعَلَيْهِ يُنْزَلُ الْقُرْآنُ وَهُوَ يَعْرِفُ تَأْوِيلَهُ فَأَهَلَّ بِالتَّوْحِيدِ لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ لَا شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لَا شَرِيكَ لَكَ فَأَهَلَّ النَّاسُ بِهَذَا الَّذِي يُهِلُّونَ بِهِ فَلَمْ يَزِدْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَيْهِمْ شَيْئًا وَلَبَّى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَلْبِيَتَهُ حَتَّى إِذَا أَتَيْنَا الْبَيْتَ مَعَهُ قَالَ جَابِرٌ لَسْنَا نَنْوِي إِلَّا الْحَجَّ لَسْنَا نَعْرِفُ الْعُمْرَةَ حَتَّى إِذَا أَتَيْنَا الْبَيْتَ مَعَهُ اسْتَلَمَ الرُّكْنَ فَرَمَلَ ثَلَاثًا وَمَشَى أَرْبَعًا ثُمَّ تَقَدَّمَ إِلَى مَقَامِ إِبْرَاهِيمَ فَصَلَّى فَقَرَأَ وَاتَّخِذُوا مِنْ مَقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى فَجَعَلَ الْمَقَامَ بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْبَيْتِ وَكَانَ أَبِي يَقُولُ وَلَا أَعْلَمُهُ ذَكَرَهُ عَنْ جَابِرٍ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ كَانَ يَقْرَأُ فِي الرَّكْعَتَيْنِ قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ وَقُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ ثُمَّ رَجَعَ إِلَى الرُّكْنِ فَاسْتَلَمَهُ ثُمَّ خَرَجَ مِنْ الْبَابِ إِلَى الصَّفَا فَلَمَّا أَتَى الصَّفَا قَرَأَ إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللَّهِ أَبْدَأُ بِمَا بَدَأَ اللَّهُ بِهِ فَبَدَأَ بِالصَّفَا فَرَقِيَ عَلَيْهِ حَتَّى رَأَى الْبَيْتَ فَوَحَّدَ اللَّهَ وَكَبَّرَهُ وَقَالَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِي وَيُمِيتُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ أَنْجَزَ وَعْدَهُ وَنَصَرَ عَبْدَهُ وَهَزَمَ الْأَحْزَابَ وَحْدَهُ ثُمَّ دَعَا بَيْنَ ذَلِكَ فَقَالَ مِثْلَ هَذَا ثَلَاثَ مَرَّاتٍ ثُمَّ نَزَلَ إِلَى الْمَرْوَةِ حَتَّى إِذَا انْصَبَّتْ قَدَمَاهُ فِي بَطْنِ الْوَادِي قَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ الدَّارِمِيُّ يَعْنِي فَرَمَلَ حَتَّى إِذَا صَعِدْنَا مَشَى حَتَّى إِذَا أَتَيْنَا الْمَرْوَةَ فَفَعَلَ عَلَى الْمَرْوَةِ كَمَا فَعَلَ عَلَى الصَّفَا حَتَّى إِذَا كَانَ آخِرَ طَوَافٍ عَلَى الْمَرْوَةِ قَالَ إِنِّي لَوْ اسْتَقْبَلْتُ مِنْ أَمْرِي مَا اسْتَدْبَرْتُ لَمْ أَسُقْ الْهَدْيَ وَجَعَلْتُهَا عُمْرَةً فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ لَيْسَ مَعَهُ هَدْيٌ فَلْيُحِلَّ وَيَجْعَلْهَا عُمْرَةً فَقَامَ سُرَاقَةُ بْنُ مَالِكِ بْنِ جُعْشُمٍ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَلِعَامِنَا هَذَا أَوْ لِأَبَدِ أَبَدٍ فَشَبَكَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَصَابِعَهُ فِي الْأُخْرَى فَقَالَ دَخَلَتْ الْعُمْرَةُ فِي الْحَجِّ هَكَذَا مَرَّتَيْنِ لَا بَلْ لِأَبَدِ أَبَدٍ لَا بَلْ لَأَبَدِ أَبَدٍ وَقَدِمَ عَلِيٌّ بِبُدْنٍ مِنْ الْيَمَنِ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَوَجَدَ فَاطِمَةَ مِمَّنْ حَلَّ وَلَبِسَتْ ثِيَابَ صَبِيغٍ وَاكْتَحَلَتْ فَأَنْكَرَ عَلِيٌّ ذَلِكَ عَلَيْهَا فَقَالَتْ أَبِي أَمَرَنِي فَكَانَ عَلِيٌّ يَقُولُ ذَهَبْتُ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أُحَرِّشُهُ عَلَى فَاطِمَةَ فِي الَّذِي صَنَعَتْ مُسْتَفْتِيًا لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِيمَا ذَكَرَتْ فَأَنْكَرْتُ ذَلِكَ عَلَيْهَا فَقَالَ صَدَقَتْ مَا فَعَلْتَ حِينَ فَرَضْتَ الْحَجَّ قَالَ قُلْتُ اللَّهُمَّ إِنِّي أُهِلُّ بِمَا أَهَلَّ بِهِ رَسُولُكَ قَالَ فَإِنَّ مَعِيَ الْهَدْيَ فَلَا تَحْلِلْ قَالَ فَكَانَ جَمَاعَةُ الْهَدْيِ الَّذِي قَدِمَ بِهِ عَلِيٌّ مِنْ الْيَمَنِ وَالَّذِي أَتَى بِهِ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِائَةَ بَدَنَةٍ فَحَلَّ النَّاسُ كُلُّهُمْ وَقَصَّرُوا إِلَّا النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَنْ كَانَ مَعَهُ هَدْيٌ فَلَمَّا كَانَ يَوْمُ التَّرْوِيَةِ وَجَّهَ إِلَى مِنًى فَأَهْلَلْنَا بِالْحَجِّ وَرَكِبَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَصَلَّى بِنَا الظُّهْرَ وَالْعَصْرَ وَالْمَغْرِبَ وَالْعِشَاءَ وَالصُّبْحَ ثُمَّ مَكَثَ قَلِيلًا حَتَّى إِذَا طَلَعَتْ الشَّمْسُ أَمَرَ بِقُبَّةٍ مِنْ شَعَرٍ تُضْرَبُ لَهُ بِنَمِرَةَ ثُمَّ رَكِبَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَسَارَ لَا تَشُكُّ قُرَيْشٌ إِلَّا أَنَّهُ وَاقِفٌ عِنْدَ الْمَشْعَرِ الْحَرَامِ كَمَا كَانَتْ قُرَيْشٌ تَصْنَعُ فِي الْجَاهِلِيَّةِ فِي الْمُزْدَلِفَةِ فَسَارَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى أَتَى عَرَفَةَ فَوَجَدَ الْقُبَّةَ قَدْ ضُرِبَتْ بِنَمِرَةَ فَنَزَلَهَا حَتَّى إِذَا زَاغَتْ يَعْنِي الشَّمْسَ أَمَرَ بِالْقَصْوَاءِ فَرُحِّلَتْ لَهُ فَأَتَى بَطْنَ الْوَادِي فَخَطَبَ النَّاسَ وَقَالَ إِنَّ دِمَاءَكُمْ وَأَمْوَالَكُمْ حَرَامٌ كَحُرْمَةِ يَوْمِكُمْ هَذَا فِي شَهْرِكُمْ هَذَا فِي بَلَدِكُمْ هَذَا أَلَا إِنَّ كُلَّ شَيْءٍ مِنْ أَمْرِ الْجَاهِلِيَّةِ تَحْتَ قَدَمَيَّ مَوْضُوعٌ وَدِمَاءُ الْجَاهِلِيَّةِ مَوْضُوعَةٌ وَأَوَّلُ دَمٍ وُضِعَ دِمَاؤُنَا دَمُ رَبِيعَةَ بْنِ الْحَارِثِ كَانَ مُسْتَرْضَعًا فِي بَنِي سَعْدٍ فَقَتَلَتْهُ هُذَيْلٌ وَرِبَا الْجَاهِلِيَّةِ مَوْضُوعٌ وَأَوَّلُ رِبًا أَضَعُهُ رِبَا عَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ فَإِنَّهُ مَوْضُوعٌ كُلُّهُ فَاتَّقُوا اللَّهَ فِي النِّسَاءِ فَإِنَّمَا أَخَذْتُمُوهُنَّ بِأَمَانَةِ اللَّهِ وَاسْتَحْلَلْتُمْ فُرُوجَهُنَّ بِكَلِمَةِ اللَّهِ وَإِنَّ لَكُمْ عَلَيْهِنَّ أَنْ لَا يُوطِئْنَ فُرُشَكُمْ أَحَدًا تَكْرَهُونَهُ فَإِنْ فَعَلْنَ ذَلِكَ فَاضْرِبُوهُنَّ ضَرْبًا غَيْرَ مُبَرِّحٍ وَلَهُنَّ عَلَيْكُمْ رِزْقُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ وَأَنْتُمْ مَسْئُولُونَ عَنِّي فَمَا أَنْتُمْ قَائِلُونَ قَالُوا نَشْهَدُ أَنَّكَ قَدْ بَلَّغْتَ وَأَدَّيْتَ وَنَصَحْتَ فَقَالَ بِأُصْبُعِهِ السَّبَّابَةِ فَرَفَعَهَا إِلَى السَّمَاءِ وَيَنْكُتُهَا إِلَى النَّاسِ اللَّهُمَّ اشْهَدْ اللَّهُمَّ اشْهَدْ اللَّهُمَّ اشْهَدْ ثُمَّ أَذَّنَ بِلَالٌ بِنِدَاءٍ وَاحِدٍ وَإِقَامَةٍ فَصَلَّى الظُّهْرَ ثُمَّ أَقَامَ فَصَلَّى الْعَصْرَ لَمْ يُصَلِّ بَيْنَهُمَا شَيْئًا ثُمَّ رَكِبَ حَتَّى وَقَفَ فَجَعَلَ بَطْنَ نَاقَتِهِ الْقَصْوَاءِ إِلَى الصُّخَيْرَاتِ وَقَالَ إِسْمَعِيلُ إِلَى الشُّجَيْرَاتِ وَجَعَلَ حَبْلَ الْمُشَاةِ بَيْنَ يَدَيْهِ ثُمَّ اسْتَقْبَلَ الْقِبْلَةَ فَلَمْ يَزَلْ وَاقِفًا حَتَّى غَرَبَتْ الشَّمْسُ وَذَهَبَتْ الصُّفْرَةُ حَتَّى غَابَ الْقُرْصُ فَأَرْدَفَ أُسَامَةَ خَلْفَهُ ثُمَّ دَفَعَ وَقَدْ شَنَقَ لِلْقَصْوَاءِ الزِّمَامَ حَتَّى إِنَّهُ لَيُصِيبُ رَأْسُهَا مَوْرِكَ رَحْلِهِ وَيَقُولُ بِيَدِهِ الْيُمْنَى السَّكِينَةَ السَّكِينَةَ كُلَّمَا أَتَى حَبْلًا مِنْ الْحِبَالِ أَرْخَى لَهَا قَلِيلًا حَتَّى تَصْعَدَ حَتَّى أَتَى الْمُزْدَلِفَةَ فَصَلَّى بِهَا الْمَغْرِبَ وَالْعِشَاءَ بِأَذَانٍ وَإِقَامَتَيْنِ ثُمَّ اضْطَجَعَ حَتَّى إِذَا طَلَعَ الْفَجْرُ صَلَّى الْفَجْرَ بِأَذَانٍ وَإِقَامَةٍ ثُمَّ رَكِبَ الْقَصْوَاءَ حَتَّى وَقَفَ عَلَى الْمَشْعَرِ الْحَرَامِ وَاسْتَقْبَلَ الْقِبْلَةَ فَدَعَا اللَّهَ وَكَبَّرَهُ وَهَلَّلَهُ وَوَحَّدَهُ حَتَّى أَسْفَرَ جِدًّا ثُمَّ دَفَعَ قَبْلَ أَنْ تَطْلُعَ الشَّمْسُ وَأَرْدَفَ الْفَضْلَ بْنَ الْعَبَّاسِ وَكَانَ رَجُلًا حَسَنَ الشَّعْرِ أَبْيَضَ وَسِيمًا فَلَمَّا دَفَعَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَرَّ بِالظُّعُنِ يَجْرِينَ فَطَفِقَ الْفَضْلُ يَنْظُرُ إِلَيْهِنَّ فَأَخَذَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدَهُ فَوَضَعَهَا عَلَى وَجْهِ الْفَضْلِ فَحَوَّلَ الْفَضْلُ رَأْسَهُ مِنْ الشِّقِّ الْآخَرِ فَوَضَعَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدَهُ مِنْ الشِّقِّ الْآخَرِ حَتَّى إِذَا أَتَى مُحَسِّرَ حَرَّكَ قَلِيلًا ثُمَّ سَلَكَ الطَّرِيقَ الْوُسْطَى الَّتِي تُخْرِجُكَ إِلَى الْجَمْرَةِ الْكُبْرَى حَتَّى إِذَا أَتَى الْجَمْرَةَ الَّتِي عِنْدَهَا الشَّجَرَةُ فَرَمَى بِسَبْعِ حَصَيَاتٍ يُكَبِّرُ عَلَى كُلِّ حَصَاةٍ مِنْ حَصَى الْخَذْفِ ثُمَّ رَمَى مِنْ بَطْنِ الْوَادِي ثُمَّ انْصَرَفَ إِلَى الْمَنْحَرِ فَنَحَرَ ثَلَاثًا وَسِتِّينَ بَدَنَةً بِيَدِهِ ثُمَّ أَعْطَى عَلِيًّا فَنَحَرَ مَا غَبَرَ وَأَشْرَكَهُ فِي بُدْنِهِ ثُمَّ أَمَرَ مِنْ كُلِّ بَدَنَةٍ بِبَضْعَةٍ فَجُعِلَتْ فِي قِدْرٍ فَطُبِخَتْ فَأَكَلَا مِنْ لُحُومِهَا وَشَرِبَا مِنْ مَرَقِهَا ثُمَّ رَكِبَ فَأَفَاضَ إِلَى الْبَيْتِ فَأَتَى الْبَيْتَ فَصَلَّى الظُّهْرَ بِمَكَّةَ وَأَتَى بَنِي عَبْدِ الْمُطَّلِبِ وَهُمْ يَسْتَقُونَ عَلَى زَمْزَمَ فَقَالَ انْزِعُوا بَنِي عَبْدِ الْمُطَّلِبِ فَلَوْلَا يَغْلِبُكُمْ النَّاسُ عَلَى سِقَايَتِكُمْ لَنَزَعْتُ مَعَكُمْ فَنَاوَلُوهُ دَلْوًا فَشَرِبَ
তাখরীজ: মুসলিম, হাজ্জ ১২১৮; আমরা এর পূর্ণ তাখরীজ দিয়েছি মুসনাদুল মাউসিলী নং ২০২৭, ২১২৬, ৬৭৩৯; সহীহ ইবনু হিব্বান নং ৩৭৯১, ৩৮৪২, ৩৯৪৩, ৩৯৪৪ তে।