৪৪৬৩

পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - চুল আঁচড়ানো

৪৪৬৩-[৪৫] ’আবদুল্লাহ ইবনু জা’ফার (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জা’ফারের সন্তানদেরকে (জা’ফার -এর শাহাদাতের জন্য) শোক প্রকাশের তিনদিন সময় দিলেন। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের কাছে এলেন এবং বললেনঃ আজকের পর হতে তোমরা আর আমার ভাইয়ের জন্য কান্নাকাটি করবে না। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ আমার ভাইয়ের সন্তানদেরকে আমার কাছে ডেকে আনো। সে মতে আমাদেরকে আনা হলো। যেন আমরা কতকগুলো পাখির ছানা। অতঃপর বললেনঃ নাপিত ডেকে আনো। তিনি তাকে নির্দেশ দিলেন, সে আমাদের মাথা মুড়িয়ে দিলো। (আবূ দাঊদ ও নাসায়ী)[1]

وَعَن عبدِ الله بن جَعْفَرٍ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَمْهَلَ آلَ جَعْفَرٍ ثَلَاثًا ثُمَّ أَتَاهُمْ فَقَالَ: «لَا تَبْكُوا عَلَى أَخِي بَعْدِ الْيَوْمِ» . ثُمَّ قَالَ: «ادْعُوا لِي بَنِي أَخِي» . فَجِيءَ بِنَا كَأَنَّا أَفْرُخٌ فَقَالَ: «ادْعُوا لِي الْحَلَّاقَ» فَأَمَرَهُ فَحَلَقَ رؤوسنا. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ

وعن عبد الله بن جعفر: ان النبي صلى الله عليه وسلم امهل ال جعفر ثلاثا ثم اتاهم فقال: «لا تبكوا على اخي بعد اليوم» . ثم قال: «ادعوا لي بني اخي» . فجيء بنا كانا افرخ فقال: «ادعوا لي الحلاق» فامره فحلق رووسنا. رواه ابو داود والنساىي

ব্যাখ্যাঃ (أَمْهَلَ آلَ جَعْفَرٍ ثَلَاثًا) জা‘ফার (রাঃ) হলেন রসূলুল্লাহ এর চাচাতো ভাই আবূ ত্বালিব-এর পুত্র। মুতা‘ যুদ্ধে তিনি শাহাদাত বরণ করেন। তার শাহাদাতের পর তার পরিবারে শোক নেমে আসে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সবাইকে তিনদিন শোক পালনের অবকাশ দিলেন। স্বামীর জন্য স্ত্রী ব্যতীত অন্যদের জন্য তিনদিন শোক পালন করার অনুমোদন রয়েছে। তিনদিনের বেশি শোক পালন করা বৈধ নয়। বিভিন্ন হাদীস দ্বারা বিষয়টি প্রমাণিত। তাই রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জা‘ফার-এর পরিবারকে তিনদিন পর্যন্ত শোক পালনের অবকাশ দেন।

لَا تَبْكُوا عَلَى أَخِي بَعْدَ الْيَوْمِ আজকের পর আর আমার ভাইয়ের ওপর কেঁদো না। অর্থাৎ আজ তৃতীয় দিনের পর আর কাঁদা যাবে না। মুল্লা ‘আলী কারী বলেনঃ এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, কারো মৃত্যুতে তিনদিনের বেশি ক্রন্দন করা, চিন্তা করা, শোক প্রকাশ করা যাবে না। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

উল্লেখ্য যে, তিনদিনের বেশি ক্রন্দন বা চিন্তা করা যাবে না বলতে শোক পালনের উদ্দেশে এগুলো করা যাবে না বা ইচ্ছাকৃত শোক পালনকে কার্যকর রাখার জন্য এগুলো করা যাবে না। তবে মানুষের ইচ্ছার বাহিরে মন থেকে আপনিতেই যে দুঃখ বা কান্না বা চোখের পানি এসে যায় তা নিষেধের অন্তর্ভুক্ত নয়। কেননা এটা মানুষের নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। যেমন মৃত্যুর পর কান্নাকাটি করতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন। আবার অনেকের মৃত্যুতে তাঁর চোখ দিয়ে অশ্রু বয়ে গেছে। আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত-

أَنَّ النَّبِىَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَعٰى جَعْفَرًا وَزَيْدًا قَبْلَ أَنْ يَجِيءَ خَبَرُهُمْ وَعَيْنَاهُ تَذْرِفَانِ

‘‘জা‘ফার ও যায়দ-এর খবর আসার আগেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের মৃত্যুর খবর দেন, এমতাবস্থায় তার চোখ দিয়ে অশ্রু গড়াচ্ছিল।’’ (বুখারী হাঃ ৩৬৩০)

(كَأَنَّا أَفْرُخٌ) আমরা যেন পাখির বাচ্চা। "فَرْخٌ" হলো পাখির ছোট বাচ্চা। বহুবচন "أَفْرُخ"। পাখির বাচ্চার সাথে তাদেরকে তুলনা করার কারণ হলো তাদের চুলগুলো হয়ত পাখির প্রথম উদ্গত নরম চুলের ন্যায় ছিল। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৪১৮৮)

(فَحَلَقَ رُؤُوْسَنَا) অর্থাৎ সে তাদের মাথা কামিয়ে দিলেন। মাথা কামাই করে ফেলার দুই কারণ হতে পারে। এক : শোক পালন অবস্থায় চুল এলোমেলো থাকে, তিনদিনের মাথায় মাথা কামিয়ে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের শোকের নিদর্শন মিটিয়ে দিতে চাইলেন। কেননা তিনদিনের পর শোক পালন বৈধ নয়, যেমন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে নিষেধ দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ মনে করেন, চুল পুরো কামাই করার চেয়ে ছেড়ে দেয়া ভালো হওয়া সত্ত্বেও রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের চুল কামানোর কারণ হলো, তাদের মাতা আসমা স্বামীর শোকে বিভোর থাকায় তিনি বাচ্চার চুলের যত্ন নিতে পারছিলেন না। এতে তাদের চুলে ময়লা বা উঁকুন যেন না হয়ে যায় সে কারণেই রসূল তাদের ওপর দয়াশীল হয়ে তাদের চুল কামিয়ে দেন। ইবনুল মালিক বলেনঃ এ হাদীস থেকে প্রমাণিত যে, অভিভাবকের জন্য বাচ্চার চুল কামানো ও খৎনার ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ ঠিক আছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২২: পোশাক-পরিচ্ছদ (كتاب اللباس )