৩২৯২

পরিচ্ছেদঃ ১১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - খুল্‘ই (খুলা‘ তালাক) ও তালাক প্রসঙ্গে

৩২৯২-[১৯] মাহমূদ ইবনু লাবীদ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট জনৈক ব্যক্তি এসে বলল, তিনি তার স্ত্রীকে একসঙ্গে তিন তালাক দিয়েছেন। এটা শুনে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ভীষণভাবে রাগের সাথে দাঁড়িয়ে বললেন- আমি তোমাদের মধ্যে থাকাবস্থায় আল্লাহর কিতাব (শারী’আতের বিধান)-এর সাথে খেলা (অবজ্ঞা-অবহেলা) করছ? এ কথা শুনে জনৈক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমি কি তাকে হত্যা করব? (নাসায়ী)[1]

حَدِيث رِجَاله ثِقَات وَعَن مَحْمُود بن لبيد قل: أَخْبَرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ رَجُلٍ طَلَّقَ امْرَأَتَهُ ثَلَاثَ تَطْلِيقَاتٍ جَمِيعًا فَقَامَ غَضْبَانَ ثُمَّ قَالَ: «أَيُلْعَبُ بِكِتَابِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ وَأَنَا بَيْنَ أَظْهُرِكُمْ؟» حَتَّى قَامَ رَجُلٌ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَلَا أَقْتُلُهُ؟ . رَوَاهُ النَّسَائِيّ

حديث رجاله ثقات وعن محمود بن لبيد قل: اخبر رسول الله صلى الله عليه وسلم عن رجل طلق امراته ثلاث تطليقات جميعا فقام غضبان ثم قال: «ايلعب بكتاب الله عز وجل وانا بين اظهركم؟» حتى قام رجل فقال: يا رسول الله الا اقتله؟ . رواه النساىي

ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসের বর্ণনাকারী মাহমূদ ইবনু লাবীদ বানী আশহাল গোত্রের আনসারী ছিলেন, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময় জন্মগ্রহণ করেছেন এবং তার থেকে বেশ কিছু হাদীসও বর্ণনা করেছেন। ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহচার্য লাভ করেছেন। ইমাম হাকিম বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সহচার্যের কথা জানা যায় না। ইমাম মুসলিম তাকে তাবি‘ঈনদের মধ্যে উল্লেখ করেছেন। ইবনু ‘আব্দিল বার (রহঃ) বলেন, ইমাম বুখারীর কথাটি সঠিক।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, الطَّلَاقُ مَرَّتَانِ فَإِمْسَاكٌ بِمَعْرُوْفٍ أَوْ تَسْرِيْحٌ بِاحْسَانٍ

তালাক দুইবার মাত্র। অতঃপর স্ত্রীকে হয় বিধিমত রেখে দিবে, না হয় স্বহৃদয়তার সাথে মুক্ত করে দিবে।
এরপর আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ ‘‘অতঃপর সে যদি স্ত্রীকে তালাক দেয়, তবে সে তার জন্য বৈধ হবে না, যে পর্যন্ত না সে অন্য স্বামীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে।’’ (সূরা আল বাকারা ২ : ২২৯-৩০)

অতঃপর আল্লাহ বলেনঃ ‘‘তোমরা আল্লাহর আয়াতকে খেল-তামাশা হিসেবে গ্রহণ করো না।’’ (সূরা আল বাকারা ২ : ২৩১)

উপরে উল্লেখিত তিনটি আয়াত উল্লেখপূর্বক মুল্লা ‘আলী কারী (রহঃ) ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেন এভাবে,

التَّطْلِيقُ الشَّرْعِيُّ تَطْلِيقَةٌ بَعْدَ تَطْلِيقَةٍ عَلَى التَّفْرِيقِ دُونَ الْجَمْعِ وَالْإِرْسَالِ دَفْعَةً وَاحِدَةً

শারী‘আত তালাক হলো একটির পর একটি পৃথক পৃথকভাবে প্রদান করা, (দু’টি বা তিনটি) একত্রে প্রদান না করা। এজন্য ‘উলামাগণ সাধারণভাবে একত্রে তিন তালাক প্রদানকে অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যান করেছেন। কেননা এতে কুরআনে উল্লেখিত التَّطْلِيقُ الشَّرْعِيُّ এর যথাযথ সুযোগ থাকে না।

মুল্লা ‘আলী কারী (রহঃ) বলেনঃ অত্র হাদীস প্রমাণ করে যে, একত্রে তিন তালাক প্রদান করা হারাম। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর গোস্বা ও প্রত্যাখ্যান পাপের কারণ ছাড়া হয়নি। তিনি শুনে গোস্বায় অগ্নিশর্মা হয়ে দাঁড়িয়ে যান এবং বলে উঠেন: (أَيُلْعَبُ بِكِتَابِ اللّٰهِ) আমি তোমাদের মধ্যে বর্তমান থাকতেই আল্লাহর কিতাব নিয়ে খেল তামাশা? তিনি আরও বলেনঃ এটা বড় ধরনের অস্বীকার, বরং পূর্ণ চূড়ান্ত প্রত্যাখ্যান ও অস্বীকার।

‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ একত্রে তালাক প্রদান না করে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে পৃথক পৃথক ভাবে তালাক প্রদান করার হিকমাত বা গুরুত্ব হলো আল্লাহর কুরআনের এই আয়াতের দাবী বাস্তবায়ন। আল্লাহর বাণী : ‘‘আশা করা যায় আল্লাহ এর পরেও (অর্থাৎ ‘ইদ্দত মোতাবেক বা দুই ত্বলাকের পরও সমঝোতার) কোনো পথ বের করে দিতে পারেন।’’ (সূরা আত্ব তালাক ৬৫ : ০১)

স্বামী যখন তাকে ‘ইদ্দত অনুযায়ী তালাক দিয়ে পৃথক করে দিবেন আল্লাহ তখন তার রাগ-গোস্বাকে মুহববাত দ্বারা পরিবর্তন করে দিবেন। তার প্রতি ঘৃণার স্থলে ভালোবাসা সৃষ্টি করে দিবেন এবং চূড়ান্ত ত্বলাকের দৃঢ় ইচ্ছা বা সংকল্পকে আল্লাহ অনুতপ্তে পরিবর্তন করে দিবেন, ফলে সে তার স্ত্রীকে রজ্‘আহ্ বা প্রত্যাহার করে নিবে। ইমাম নববী (রহঃ) বলেনঃ কেউ যদি তার স্ত্রীকে বলে- ‘‘তুমি তিন তালাক’’ তার ব্যাপারে ইমাম ও ফুকাহাগণ মতবিরোধ করেছেন।

ইমাম মালিক, শাফি‘ঈ, আবূ হানীফাহ্, আহমাদ এবং জুমহূর সালাফ ও খলাফ বলেনঃ এ ক্ষেত্রে তিন তালাক-ই পতিত হবে। সহাবা তাবি‘ঈগণ থেকে শুরু করে সালাফ ও খলাফের কতিপয় মুহাক্কিক ‘উলামাহ্ বলেন, এ ক্ষেত্রে এক তালাক পতিত হবে। ইমাম ত্বাউস ও আহলুয্ যাহিরগণও এই মতের প্রবক্তা। এ মতের অনুকূলে একাধিক বিশুদ্ধ হাদীস রয়েছে। ৩২৮৩ নং হাদীসে এর কিঞ্চিৎ প্রমাণ পেশ করা হয়েছে।

ইবনু মুকাতিল এবং ইসহক-এর (এক বর্ণনা) মতে এ ক্ষেত্রে কোনো তালাক-ই পতিত হবে না। কারণ একত্রে তিন তালাক দেয়া হারাম এবং গুনাহের কাজ। আর সেই হারাম পদ্ধতিতে কোনো কাজ করলে তা কার্যকর হবে না। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩: বিবাহ (كتاب النكاح)