২৩৭৮

পরিচ্ছেদঃ ৩. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - আল্লাহ তা‘আলার রহমতের ব্যাপকতা

২৩৭৮-[১৫] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা কোন এক যুদ্ধে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ছিলাম। তিনি একদল লোকের পাশ দিয়ে গেলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কোন্ জাতি? তারা উত্তরে বলল, আমরা মুসলিম। জনৈকা মহিলা তখন তার পাতিলের নীচে আগুন ধরাচ্ছিল, তার সাথে ছিল তারই একটি শিশু সন্তান। হঠাৎ আগুনের একটি ফুলকি উপরের দিকে জ্বলে উঠলে তখনই সে তার সন্তানকে দূরে সরিয়ে দিলো। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে মহিলাটি এসে বলল, আপনিই কী আল্লাহর রসূল? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ। তখন সে বলল, আপনার জন্য আমার মাতাপিতা কুরবান হোক। বলুন! আল্লাহ তা’আলা কি সবচেয়ে বড় দয়ালু নন? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, অবশ্যই। মহিলাটি বলল, তবে আল্লাহ তা’আলা কি তাঁর বান্দাদের ওপর সন্তানের প্রতি মায়ের দয়ার চেয়ে বড় দয়ালু নন? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, অবশ্যই। তখন মহিলাটি বলল, মা তো কক্ষনো তার সন্তানকে আগুনে ফেলতে পারে না। মহিলার এ কথা শুনে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নীচের দিকে মাথা নুইয়ে কাঁদতে লাগলেন। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মাথা উঠিয়ে মহিলার দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে একান্ত অবাধ্য ছাড়া কাউকেও ’আযাব (শাস্তি) দেন না- যে আল্লাহর সাথে অবাধ্যতা করে ও যারা ’’লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ’’ (অর্থাৎ- আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা’বূদ নেই) বলতেও অস্বীকার করে। (ইবনু মাজাহ)[1]

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ: كُنَّا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي بَعْضِ غَزَوَاتِهِ فَمَرَّ بِقَوْمٍ فَقَالَ: «مَنِ الْقَوْمُ؟» قَالُوا: نَحْنُ الْمُسْلِمُونَ وَامْرَأَةٌ تَحْضِبُ بِقِدْرِهَا وَمَعَهَا ابْنٌ لَهَا فَإِذَا ارْتَفَعَ وَهَجٌ تَنَحَّتْ بِهِ فَأَتَتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: أَنْتَ رَسُولُ اللَّهِ؟ قَالَ: «نَعَمْ» قَالَتْ: بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي أَلَيْسَ اللَّهُ أَرْحَمَ الرَّاحِمِينَ؟ قَالَ: «بَلَى» قَالَتْ: أَلَيْسَ اللَّهُ أَرْحَمَ بِعِبَادِهِ مِنَ الْأُم على وَلَدهَا؟ قَالَ: «بَلَى» قَالَتْ: إِنَّ الْأُمَّ لَا تُلْقِي وَلَدَهَا فِي النَّارِ فَأَكَبَّ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَبْكِي ثُمَّ رَفَعَ رَأْسَهُ إِلَيْهَا فَقَالَ: إِنَّ اللَّهَ لَا يُعَذِّبُ مِنْ عِبَادِهِ إِلَّا الْمَارِدَ الْمُتَمَرِّدَ الَّذِي يَتَمَرَّدُ عَلَى اللَّهِ وَأَبَى أَنْ يَقُولَ: لَا إِلَهَ إِلَّا الله . رَوَاهُ ابْن مَاجَه

عن عبد الله بن عمر قال: كنا مع النبي صلى الله عليه وسلم في بعض غزواته فمر بقوم فقال: «من القوم؟» قالوا: نحن المسلمون وامراة تحضب بقدرها ومعها ابن لها فاذا ارتفع وهج تنحت به فاتت النبي صلى الله عليه وسلم فقال: انت رسول الله؟ قال: «نعم» قالت: بابي انت وامي اليس الله ارحم الراحمين؟ قال: «بلى» قالت: اليس الله ارحم بعباده من الام على ولدها؟ قال: «بلى» قالت: ان الام لا تلقي ولدها في النار فاكب رسول الله صلى الله عليه وسلم يبكي ثم رفع راسه اليها فقال: ان الله لا يعذب من عباده الا المارد المتمرد الذي يتمرد على الله وابى ان يقول: لا اله الا الله . رواه ابن ماجه

ব্যাখ্যা: (فَقَالَ: مَنِ الْقَوْمُ؟ قَالُوا: نَحْنُ الْمُسْلِمُونَ) যেন তারা ধারণা করেছে অথবা আশংকা করেছে যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে অমুসলিম ধারণা করেছেন। ইবনু হাজার ত্বীবীর অনুসরণার্থে বলেন, বাহ্যিক দিক হল, উত্তরে বলা, আমরা মুযার গোত্রের অথবা আমরা কুরায়শী গোত্রের অথবা আমরা ত্বই গোত্রের, অতঃপর তারা বাহ্যিকতা থেকে দূরে সরে পড়েছে এবং তারা সীমাবদ্ধভাবে সংবাদ প্রদান করেছে, অর্থাৎ- আমরা এমন সম্প্রদায় যে, আমরা ইসলামকে অতিক্রম করব না। ধারণাস্বরূপ যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে অমুসলিম ধারণা করেছেন। কারী বলেন, এটা কৃতিমতা। তিনি বলেন, তার উক্তি من القوم অর্থাৎ- তোমরা অথবা তারা কাফির শত্রুদের অন্তর্ভুক্ত নাকি মুসলিম প্রিয় লোকদের অন্তর্ভুক্ত।

(إِنَّ اللّٰهَ لَا يُعَذِّبُ مِنْ عِبَادِه) অর্থাৎ- তার সকল বান্দাদের মধ্য থেকে। সুতরাং এখানে সম্বন্ধ ব্যাপকতা বুঝানোর জন্য। ইমাম সিনদী (রহঃ) বলেন, তাঁর উক্তি لا يعذب অর্থাৎ- স্থায়ীভাবে শাস্তি দিবেন না। বাহ্যিক দিক হল, এরা ছাড়া কেউ জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। যেহেতু আলোচনা জাহান্নামে প্রবেশ করানো নিয়ে স্থায়ী হওয়া সম্পর্কে নয়। আর আল্লাহ সর্বাধিক ভাল জানেন। সামষ্টিকভাবে অবাধ্যতা কদর্যতা ও অশ্লীলতাকে বৃদ্ধি করে। আর তা অবাধ্য ব্যক্তির তুচ্ছতা, অবাধ্যতার মাধ্যমে যিনি অবাধ্য করেন তাঁর বড়ত্ব, অবাধ্যতার ক্ষেত্রে তাঁর দয়ার আধিক্যতার পরিমাণ অনুযায়ী হয়ে থাকে। সুতরাং ঐ কারণে তার বদলাও বড় আঁকড়ে দেন। অর্থাৎ- তা অবাধ্য বান্দার পরিস্থিতির দিকে লক্ষ্য করে এবং নিশ্চয়ই সে কোন জিনিস সৃষ্ট ও কোন জিনিস তার নির্ধারণ সে দিক লক্ষ করে। আকাশ জমিনের স্রষ্টার বড়ত্বের প্রতি লক্ষ্য করে যার নির্দেশে আকাশসমূহ প্রতিষ্ঠিত। তার নিয়ামতসমূহ ও দয়ার আধিক্যতার প্রতি লক্ষ্য করে যা সর্বনিম্ন অবাধ্যতাকে বড় করে তোলে পরিশেষে তা পাহাড়, সমুদ্রকে ছাড়িয়ে যায় এবং তা এমন এক বাস্তব অবস্থায় রূপ নেয় যার বদলা জাহান্নামের চিরস্থায়ী হওয়াকে আবশ্যক করে। যদি সম্মানিত, ক্ষমাশীল, অতি ক্ষমাশীল, দয়ালু সত্তার দয়া না হত তাহলে এ অবাধ্যের পরিস্থিতি কি হত যে পাথরসমূহের সাথে সাদৃশ্য যা সৃষ্টির মাঝে সর্বাধিক হীনতর। সুতরাং আল্লাহ এ সকল কিছু থেকে সুউচ্চ। আর এ সমস্ত কিছুর বাস্তবতা অদৃশ্যের জান্তা ছাড়া কেউ জানে না। অতঃপর হাদীসের বাহ্যিক দিক দাবী করছে যে, নবূওয়্যাতের অস্বীকারকারী তাওহীদী কালিমাহ্ যথার্থভাবে স্বীকার করে না। আর এটিই এখানে উদ্দেশ্য।

(أَنْ يَقُولَ: لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ) ‘‘আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই- এ কথা বলতে যে অস্বীকার করে’’ এ বাণীটুকু ঐ সন্তানের স্থানে হবে, যে তার মাকে বলে তুমি আমার মা না আমার মা অন্য কেউ; এমতাবস্থায় সে মাতার অবাধ্য হয় এবং মাকে কুকুর ও শুকরের আকৃতির সাথে পরিকল্পনা করে। এ মুহূর্তে কোন সন্দেহ নেই যে, মা তার থেকে এমন আচরণের কারণে দায়িত্বমুক্ত হয়ে যায়, তার ব্যাপারে সক্ষম হলে, তাকে শাস্তি দেয়। সারাংশ হল, নিশ্চয়ই কাফির ব্যক্তি দাসত্ব থেকে বহির্ভূত। সে আল্লাহর বান্দার নামে নামকরণ থেকে বহির্ভূত। আর এ কারণেই তাকে শাস্তি দেয়া হবে। আর আল্লাহ মূলত এমন নন যে, তাদের প্রতি অবিচার করবেন কিন্তু তারা নিজেরাই নিজের প্রতি অবিচার করে।


হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)