মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)
২২৮৭

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

মহান আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়া তা’আলার অনেকগুলো সুন্দর সুন্দর নাম রয়েছে এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,

وَلِلهِ الْأَسْمَآءُ الْحُسْنٰى فَادْعُوْهُ بِهَا وَذَرُوا الَّذِيْنَ يُلْحِدُوْنَ فِى اسْمَائِه

অর্থাৎ- ’’মহান আল্লাহ সুব্হানাহূ ওয়াতা’আলার অনেক সুন্দর সুন্দর নাম রয়েছে। সুতরাং তোমরা সেগুলোর মাধ্যমে আল্লাহকে ডাকো আর যারা আল্লাহর নামের বিকৃতি ঘটায় তাদেরকে বর্জন করো।’’ (সূরা আল আ’রাফ ৭ : ১৮০)

’আল্লামা কুরতুবী (রহঃ) বলেন, আল্লাহর নাম যদিও অনেকগুলো তথাপি তার সত্তাগত অস্তিত্ব অনেকগুলো নয়। বরং আল্লাহর সত্তা একটিই।

ইমাম হুলায়মী (রহঃ) বলেন, আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়াতা’আলার যত নাম পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে তা মোটামুটি ৫টি ’আক্বীদাহ্ সংক্রান্ত বিষয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে।

১. কিছু নাম রয়েছে যেগুলো معطلة সম্প্রদায়ের বিপরীত, অর্থাৎ- সে নামগুলো আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়াতা’আলার চিরস্থায়ী ও চিরঞ্জীবতার প্রমাণবাহী। যেমনঃالحي والباقي والوارث (আল হাইয়্যু, আল বা-ক্বী, আল ওয়া-রিস্)

২. কিছু নাম যা আল্লাহর তাওহীদের উপর তথা তিনি যে শির্ক থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত তার প্রমাণ বহন করে। যেমনঃالكافي والعلي والقادر (আল কা-ফী, আল ’আলিয়্যু, আল ক-দির)

৩. কিছু নাম রয়েছে যা (مشبهة ’মুশাব্বিহাহ্’ সম্প্রদায়ের বিপরীত) আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করে, অর্থাৎ- مشبهة এই সম্প্রদায়টি মহান আল্লাহকে বিভিন্ন কিছুর সাথে তুলনা করে থাকে কিন্তু আল্লাহ তা’আলা যে, কারো মতো নন তার প্রমাণেও কিছু নাম রয়েছে। যেমনঃ القدوس والمجيد والمحيط (আল কুদ্দুস, আল মাজীদ, আল মুহীত্ব)

৪. আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়াতা’আলা যে, সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা এ বিষয়ের প্রমাণ স্বরূপও কিছু নাম রয়েছে। যেমনঃالخالق والباري والمصور (আল খ-লিক্ব, আল বা-রী, আল মুসাব্বির)

৫. তিনিই যে, সবকিছুর আইনদাতা বিধানদাতা এবং একমাত্র পরিচালনাকারী এর প্রমাণেও কিছু নাম রয়েছে। যেমনঃالعليم والحكيم (আল ’আলীম, আল হাকীম) ইত্যাদি।


২২৮৭-[১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলার নিরানব্বই-এক কম একশ’টি নাম রয়েছে। যে ব্যক্তি এ নামগুলো মুখস্থ করবে সে জান্নাতে যাবে। অপর বর্ণনায় আছে, তিনি বিজোড়, (তাই) বিজোড়কে ভালবাসেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ لِلَّهِ تَعَالَى تِسْعَةً وَتِسْعِينَ اسْمًا مِائَةً إِلَّا وَاحِدًا مَنْ أَحْصَاهَا دَخَلَ الْجَنَّةَ» . وَفِي رِوَايَة: «وَهُوَ وتر يحب الْوتر»

عن ابي هريرة رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان لله تعالى تسعة وتسعين اسما ماىة الا واحدا من احصاها دخل الجنة وفي رواية وهو وتر يحب الوتر

ব্যাখ্যা: (إِنَّ لِلّٰهِ تَعَالٰى تِسْعَةً وَتِسْعِينَ اسْمًا) ‘আল্লামা খাত্ত্বাবী বলেছেনঃ হাদীসের এ অংশটি থেকে বুঝা যায় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘আলার পবিত্র নামসমূহের মধ্যে ‘‘আল্লাহ’’ নামটিই অন্যান্য নাম থেকে বেশী প্রসিদ্ধ। এ মর্মে অবশ্য কিছু বর্ণনাও আছে বটে যেখানে বলা হয়েছে ‘‘আল্লাহ’’ হচ্ছে মহান আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়াতা‘আলার ইসমে আ‘যম তথা সর্বাধিকা বড় মাহাত্ম্যপূর্ণ নাম।

আল্লামা ইবনু মালিক (রহঃ) বলেছেনঃ ‘‘আল্লাহ’’ নামটি মহান আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়াতা‘আলার স্বত্বাগত নাম, এটা গুণবাচক নাম নয়। ‘‘আল্লাহ’’ নামটি ব্যতীত অন্য যত নাম রয়েছে সবগুলো নামকে ‘‘আল্লাহ’’ নামের দিকে সম্পর্কিত করা হয়। যেমন- বলা হয়, ‘‘আল্ কারীম’’ এটা আল্লাহর নাম, ‘‘আর্ রহীম’’ এটা আল্লাহর নাম কিন্তু এ কথা বলা হয় না যে, ‘‘আল্লাহ’’ আর্ রহীম-এর বা আল্ কারীম-এর নাম। ‘আল্লামা ইবনু জারীর আত্ব ত্ববারী ও ‘আল্লামা ইমাম নাবাবী (রহঃ)-ও এমন ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন।

আল্লামা কুস্তুলানী (রহঃ) বলেছেন, আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়াতা‘আলা নাম ও গুণাবলীসমূহ যেহেতু তাওফীকি, অর্থাৎ- এগুলো জানার মাধ্যমটি ওহীর উপর নির্ভরশীল। কোন নাম বা গুণাবলী আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করতে হলে তা অবশ্যই কুরআন ও সহীহ হাদীসের মাধ্যমে প্রমাণিত হতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমাদের জ্ঞান যতই বেশী হোক না কেন এখানে জ্ঞানের বিন্দু পরিমাণ দখল নেই। এ ক্ষেত্রে ভুল করাটা এক জঘন্য ভুল হিসেবে গণ্য হবে। এ ক্ষেত্রে অনুমানভিত্তিক কোন কথা বলা ঠিক নয়।

আরো একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়াতা‘আলার নাম ও গুণাবলীর সংখ্যার ক্ষেত্রে কেউ কেউ (تسعة وتسعين ৯৯) আবার কেউ কেউ (بسبعة وسبعين ৭৭) অথবা (سبعة وتسعين ৯৭) অথবা (تسعة وسبعين ৭৯) এ বলেছেন, এটি আসলে লেখকের ভুল হয়েছে। কারণ এ সংখ্যাগুলো ‘‘আরাবীতে দেখতে একই রকম দেখায়, তাই বিষয়টি এলোমেলো হয়ে গেছে। তবে যে বর্ণনাটিতে مائة إلا واحدا তথা ১০০ থেকে একটি কম আছে সে বর্ণনাটি উপরোক্ত সন্দেহের অবসান ঘটিয়েছে এবং স্পষ্ট প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে যে, এ সংখ্যায় আসলে ৯৭, ৭৯, ৭৭ ইত্যাদি কোনটি নয় বরং সংখ্যাটি হলো ৯৯।

একটি মতবিরোধ ও তার সমাধানঃ অত্র হাদীসটি কি মহান আল্লাহর নামের সীমাবদ্ধতা তথা মহান আল্লাহর নাম ৯৯টিতে সীমাবদ্ধ এমন বুঝাচ্ছে? না-কি মহান আল্লাহর এতদ্ব্যতীত আরো নাম ও গুণাবলী রয়েছে? তবে এ ৯৯ নিরানব্বইটি মুখস্থ করলে এবং সেগুলো সম্পর্কে ‘আক্বীদাহ্-বিশ্বাস ঠিক রেখে যথাযথ ‘আমল করলে জান্নাতে যাওয়া যাবে- এ কথা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন। অধিকাংশ উলামায়ে কিরামের ফাতওয়াহ হচ্ছে দ্বিতীয় মতটি অর্থাৎ- আল্লাহর নাম ৯৯টিতে সীমাবদ্ধ নয় বরং তার আরো সুন্দর সুন্দর নাম ও গুণাবলী রয়েছে যা কোন সৃষ্টি জানে না।

যেমন- এ ব্যাপারে ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন যা ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ) তার মুসনাদে রিওয়ায়াত করেছেন আর ইমাম ইবনু হিব্বান সহীহ বলেছেন, হাদীসটি হলো, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :

أسألك بكل اسم هو لك سميت به نفسك أو أنزلته في كتابك أو علمته أحداً من خلقك أو استأثرت به في علم الغيب عندك.

অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট চাই তোমার নিজের জন্য তোমার রাখা নামের মাধ্যমে অথবা যেগুলো তুমি তোমার কিতাবে অবতীর্ণ করেছ সেগুলোর মাধ্যমে অথবা যা তোমার কোন বানদাকে শিখিয়েছে অথবা যেগুলো তুমি কাউকে জানাওনি সেগুলোর মাধ্যমে।

ইমাম মালিক (রহঃ) তার মুয়াত্ত্বা-তে কা‘ব আল্ আহবার থেকে বর্ণনা করেন, যে কা‘ব আল্ আহবার দু‘আর ক্ষেত্রে বলতেন,

وَأَسْاَلُكَ بِأَسْمَائِكَ الْحُسْنٰى مَا عَلِمْتُ مِنْهَا وَمَا لَمْ أَعْلَمْ.

অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট তোমার সুন্দর সুন্দর নামের মাধ্যমে দু‘আ করছি, যে নামগুলো আমি জানি আর যেগুলো জানি না সবগুলোর মাধ্যমে।

ইমাম ইবনু মাজাহ (রহঃ) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে হাদীস বর্ণনা করে বলেন, ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপস্থিতিতেও এরূপ দু‘আ করতেন।

‘আল্লামা খাত্ত্বাবী (রহঃ) বলেন, অত্র হাদীস দ্বারা প্রমাণ হলো আল্লাহর নাম ও গুণাবলী এগুলো এবং এর সংখ্যা ৯৯, কিন্তু এর অর্থ এটা নয় যে, এর উপর আরো কত নাম ও গুণাবলী আছে- এ হাদীস সেগুলোকে নিষেধ করছে। বিশেষ করে এগুলোর কথা উল্লেখ করার কারণ হলো এগুলো হচ্ছে বেশী ব্যবহৃত অর্থগতভাবে বেশী স্পষ্ট।

‘আল্লামা কুরতুবী তার আল্ মুফহাম ও ‘আল্লামা তুরবিশতী তার শারহে মাসাবীহ-তে এমনই বলেছেন। কেউ কেউ আল্লাহর নাম ও গুণাবলীর ক্ষেত্রে সংখ্যাধিক্য করেছেন।

এমনকি ইবনুল ‘আরাবী তার আত্ তিরমিযীর ব্যাখ্যায় কিছু ‘আলিম থেকে বর্ণনা করেছেন। যে, কিতাব সুন্নাহ থেকে প্রমাণিত আল্লাহর নাম ও গুণাবলীর সংখ্যা ১,০০০ (এক হাজার)।

আমি (‘উবায়দুল্লাহ মুবারাকপূরী) বলব, অনেকেই মহান আল্লাহর সুন্দর সুন্দর নাম ও গুণাবলীর সংখ্যা ৯৯-তে সীমাবদ্ধ করেছেন।

আল্লামা ইবনু হাযম (রহঃ) বলেন, যারা মহান আল্লাহর নাম ও গুণাবলীর সংখ্যা ৯৯-এর বেশী বলার পক্ষে তারা এ ক্ষেত্রে সীমাতিরিক্ত করে থাকেন। তিনি দলীল হিসেবে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা مائة إلا واحدا কে পেশ করেন। তিনি গবেষণা করে বলেন, যদি আল্লাহর নাম ৯৯-এর অধিক থাকত, তাহলে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম مائة إلا واحدا না বলে শুধুমাত্র (مائة ১০০) ব্যবহার করতেন।

অত্র হাদীসে আল্লাহর নাম ও গুণাবলী ৯৯-টিতে নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করার হিকমাহ্/রহস্য বর্ণনা করতে গিয়ে ‘উলামায়ে কিরাম বিভিন্ন কথা বলেছেন।

(১) ইমাম ফখরুদ্দীন আর্ রাযী বলেন, অধিকাংশ ‘আলিম বলেছেন, (أنه تعبد لا يعقل معناه) অর্থাৎ- এটা এমন ধরনের ‘ইবাদাত যার অর্থ বুঝার প্রয়োজন নেই।

(২) কেউ কেউ বলেছেন হাদীসে এরূপ কথা হলেও কুরআন কারীমে তা বর্ণনা করা হয়েছে।

(৩) অপর একদল ‘আলিম বলেন, আসমায়ে হুসনায় সংখ্যা ১০০, তবে একটি আল্লাহ কাউকে জানাননি আর সেটি হচ্ছে ইসমে আ‘যম।

(৪) তবে কেউ কেউ বলেছেন, আল্লাহর নাম ১০০টি- এ বিষয়টি স্পষ্ট আর ১০০ নম্বরটি হলো الله ‘‘আল্লাহ’’ নামটি ‘আল্লামা সুহায়লী এ কথা দৃঢ়তার সাথে বলেছেন। তিনি বলেছেন, জান্নাতের মর্যাদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে আল্লাহর নামও ১০০টি। মহান আল্লাহ বলেছেন,

وَلِلهِ الْأَسْمَآءُ الْحُسْنٰى فَادْعُوهُ بِهَا

‘‘আল্লাহর রয়েছে অনেক সুন্দর সুন্দর নাম যেগুলোর মাধ্যমে তোমরা তাকে ডাকো।’’ (সূরা আল আ‘রাফ ৭ : ১৮০)

(مَنْ أَحْصَاهَا) মুসলিম-এর এক বর্ণনায় (من حفظها) আছে, আর বুখারীর এক বর্ণনায় আছে (لا يحفظها أحد إلا دخل الجنة) যে কেউ এ নামগুলো মুখস্থ করবে সে জান্নাতে যাবে। ‘আল্লামা শাওকানী (রহঃ) বলেন, এ রিওয়ায়াতগুলো (مَنْ أَحْصَاهَا)-এর ব্যাখ্যাস্বরূপ, তাই إحصاء অর্থ الحفظ। আবার কেউ কেউ বলেছেন أَحْصَاهَا অর্থ হলো (قرأها كلمة كلمة كأنه يعدها) অর্থাৎ- শব্দে শব্দে পড়বে গণনার ন্যায়।

আবার কেউ কেউ বলেছেন, তার অর্থ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা, গবেষণা করা।

আবার কেউ কেউ বলেছেন, তার দাবী অনুপাতে ‘আমল করা। তবে প্রথম তাফসীরটিই প্রাধান্য, কারণ তা আভিধানিক দৃষ্টিকোণ থেকে বেশী মিল আছে।

‘আল্লামা ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন, ইমাম বুখারী (রহঃ) ও অনুরূপ আরো অনেক বিশ্লেষক বলেছেন إحصاء এর অর্থ الحفظ হওয়াই বেশী স্পষ্ট কারণ তা অপর হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। আল আযকার প্রণেতা বলেন, এটাই অধিকাংশ ‘আলিমের মতামত।

‘আল্লামা খাত্ত্বাবী (রহঃ) বলেন, الإحصاء এখানে কয়েকটি অর্থের সম্ভাবনা রাখে।

(১) সবগুলো নামই যপে কোনটি যেন বাদ না দেয়।

(২) الإحصاء অর্থ إلا طاقة তথা সামর্থ/সক্ষমতা। যেমন- আল্লাহ বলেন, عَلِمَ أَنْ لَنْ تُحْصُوهُ

অর্থাৎ- ‘‘নামগুলো যখন পড়বে তখন সাধ্যমত এর হাক্বীকাত সম্পর্কে চিন্তা করবে।’’ (সূরা আল মুযযাম্মিল ৭৩ : ২০)

যেমন- যখন الرزاق নাম ডাকবে তখন رزق তথা রিয্ক আল্লাহই দেন- এ কথা বিশ্বাস করবে।

(৩) الأسماء দ্বারা উদ্দেশ্য হলো العقل তথা জ্ঞান যেমন- ‘আরবদের কা‘বা فلان ذو حصاة অর্থাৎ- অমুক ব্যক্তি জ্ঞানী বুঝাতে, ‘‘আরবরা فلان ذو حصاة শব্দ ব্যবহার করে থাকে।

আবার কেউ বলেছেন, من أحصاها অর্থ হলো, عرفها অর্থাৎ- নামগুলো বুঝল আর যে এ নামগুলো বুঝাল সে মু’মিন না হয়ে থাকতে পারে না আর মু’মিন জান্নাতেই যাবে জাহান্নামে নয়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)
২২৮৮

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

২২৮৮-[২] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলার নিরানব্বইটি নাম রয়েছে। যে ব্যক্তি এ নামগুলো মুখস্থ করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। যে নামগুলোর মধ্যে একটি নাম আল্ল-হ- যিনি ছাড়া আর কোন মা’বূদ নেই। আর্ রহমান- দয়াময় বা মেহেরবান। যার দয়া বা মেহেরবানী সাড়া বিশ্বকে ছেয়ে আছে। আর্ রহীম- করুণা বা বিশেষ দয়ার অধিকারী, যে করুণা শুধু মু’মিনদের প্রতি করা হয়। আল মালিক- রাজাধিরাজ, বাদশাহ। আল কুদ্দূস- অতি পাক-পবিত্র, ধ্বংস বা কোন অপশক্তি তাঁকে স্পর্শ করতে পারে না। আস্ সালা-ম- শান্তিময় ও নিরাপদ, কোনরূপ অশান্তি তাঁকে ছুঁতে পারে না। আল মু’মিন- নিরাপত্তাদাতা বা নিরাপদকারী। আল মুহায়মিনু- রক্ষণাবেক্ষণকারী। আল ’আযীয- প্রভাবশালী, অন্যের ওপর বিজয়ী। আল জাব্বা-র- কঠিন-কঠোর, শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে সংশোধনকারী। আল মুতাকাব্বিরু- অহংকারের অধিকারী, যাঁর জন্য অহংকার করাই শোভা পায়।

আল খ-লিক্ব- স্রষ্টা। আল বা-রী- ত্রুটিহীন সৃষ্টিকারী। আল মুসাব্বির- প্রকল্পক ও নকশা অংকনকারী, ডিজাইনার। আল গাফফা-র- বড় ক্ষমাশীল, যিনি অপরাধ ঢেকে রাখেন এবং অসংখ্য অপরাধ ক্ষমা করতে দ্বিধাবোধ করেন না। আল কহহা-র- সকল বস্ত্ত যাঁর ক্ষমতার অধীন, অর্থাৎ- ক্ষমতা প্রয়োগে যাঁর কোন প্রতিবন্ধকতা নেই। আল ওয়াহহা-ব- বড় দাতা, যাঁর দান অসীম। আর্ রাযযা-ক- রিযকদাতা। আল ফাত্‌তা-হ- যিনি প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সৃষ্টির মীমাংসাকারী, বিপদমুক্তকারী। আল ’আলীম- বড় জ্ঞাতা, যিনি পূর্বাপর সবকিছু জানেন। আল, ক্ব-বিয- রিযক ইত্যাদির সংকোচনকারী। আল বা-সিত্ব- রিযকসহ ইত্যাদির সম্প্রসারণকারী। আল খ-ফিয- যিনি নীচে নামান। আর্ র-ফি’উ- যিনি উপরে উঠান। আল মু’ইযযু- সম্মান ও পূর্ণতা দানকারী। আল মুযিল্লু- অপমান ও অপূর্ণতা দানকারী। আস্ সামী’উ- সর্বশ্রোতা, উচ্চস্বর-নিম্বস্বর সকল স্বরের শ্রোতা। আল বাসীর- দর্শক, ছোট-বড় সকল বস্ত্তর।

আল হাকাম- নির্দেশ দানকারী, বিধানকর্তা। আল ’আদলু- ন্যায়বিচারক, যিনি যা উচিত তা-ই করেন। আল লাত্বীফ- যিনি সৃষ্টির যখন যা আবশ্যক তা করে দেন; অনুগ্রহকারী, সূক্ষ্মদর্শী বা যিনি অতি সূক্ষ্ম বিষয় সম্পর্কেও অবগত। আল খবীর- যিনি গুপ্ত রহস্যাদি সম্পর্কে অবগত। আল হালীম- ধৈর্যশীল, যিনি অপরাধ জেনেও সহজে শাস্তি দেন না। আল ’আযীম- বিরাট মহাসম্মানী। আল গাফূর- যিনি অপরাধ গোপন রাখেন এবং অতি জঘন্য অপরাধও ক্ষমা করেন। আশ্ শাকূর- কৃতজ্ঞ, যিনি অল্পে বেশী পুরস্কার দেন। আল ’আলীয়্যু- সর্বোচ্চ সমাসীন; সর্বোপরি। আল কাবীর- বিরাট, মহান, ধারণার ঊর্ধে বড়। আল হাফীয- বড় রক্ষাকারী, যিনি বান্দাদের সব বিষয় লক্ষ্য রাখেন। আল মুক্বীতু- খাদ্যদাতা; দৈহিক ও আত্মিক শক্তিদাতা। আল হাসীবু- যিনি অন্যের জন্য যথেষ্ট হন; যিনি যার জন্য যা যথেষ্ট তা দান করেন।

আল জালীলু- গৌরবান্বিত, মহিমান্বিত; যাঁর মহিমা অতুলনীয়। আল কারীমু- বড় দাতা, আশার অধিক দাতা; যিনি বিনা চাওয়ায় দান করেন। আর্ রক্বীবু- যিনি সকলের সকল বিষয় লক্ষ্য রাখেন এবং সর্বদা নখদর্পণে থাকেন। আল মুজীবু- উত্তরদাতা, যিনি ডাকে সাড়া দেন। আল ওয়া-সি’উ- সম্প্রসারণকারী; যাঁর দান, জ্ঞান, দয়া ও রাজ্য বিপুল ও সম্প্রসারিত। আল হাকীমু- প্রজ্ঞাবান তত্ত্বজ্ঞানী, যিনি প্রতিটি বিষয় উত্তমরূপে ও নিখুঁতভাবে সমাধা করেন। আল ওয়াদূদু- যিনি বান্দার কল্যাণকে পছন্দ করেন। আল মাজীদু- অসীম অনুগ্রহকারী। আল বা-’ইসু- প্রেরক, রসূল প্রেরণকারী, রিযক প্রেরণকারী, কবর থেকে হাশরে প্রেরণকারী। আশ্ শাহীদু- বান্দার প্রতিটি কাজের সাক্ষী, যিনি প্রকাশ্য বিষয় অবগত, আল হাক্কু- সত্য ও সত্য প্রকাশকারী, যিনি প্রজ্ঞা অনুসারে কাজ করেন। আল ওয়াকীলু- কার্যকারক, যিনি বান্দাদের কাজের যোগানদাতা। আল কবিয়্যু- শক্তিবান, শক্তির অধিকারী। আল মাতীনু- বড় ক্ষমতাবান, যার ওপর কারো কোন প্রকার ক্ষমতা নেই। আল ওয়ালিয়্যু- যিনি মু’মিনদের অভিভাবক, ভালবাসেন ও সাহায্য করেন।

আল হামীদু- প্রশংসিত, একমাত্র প্রশংসার যোগ্য। আল মুহসী- হিসাবরক্ষক, বান্দারা যা করে তিনি তার পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব রাখেন। আল মুব্‌দিউ- বিনা নমুনায় স্রষ্টা, যিনি মডেল না দেখে সৃষ্টি করেন। আল মু’ঈদু- মৃত্যুর পর পুনঃসৃষ্টিকারী। যার পুনঃ সৃষ্টি, যিনি বিনা মডেলে সৃষ্টি করেন। আল মুহীউ- পুনরায় জীবিতকারী, আল মুমীতু- পুনরায় মৃত্যু দানকারী, যার পুনরায় সৃষ্টি করার ক্ষমতা আছে। আল হাইয়্যু- চিরঞ্জীব, আল কইয়্যূমু- স্বয়ং প্রতিষ্ঠিত, চিরস্থায়ী। আল ওয়া-জিদু- যিনি যাই চান তাই পান। আল মা-জীদু- বড় দাতা। আল ওয়া-হিদুল আহাদু- একক ও অদ্বিতীয়, যাঁর কোন শারীক নেই। আস্ সামাদু- প্রধান, প্রভু; যিনি কারো মুখাপেক্ষী নন কিন্তু সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী। আল ক-দিরু- ক্ষমতাবান, যিনি ক্ষমতা প্রয়োগে কারো মুখাপেক্ষী নন। আল মুকতাদিরু- সকলের ওপর যাঁর ক্ষমতা রয়েছে, সার্বভৌম, যাঁর বিধান চরম। আল মুকদ্দিমু- যিনি যাকে চান নিকটে করেন এবং আগে বাড়ান। আল মুআখখিরু- যিনি যাকে চান দূরে রাখেন বা পিছনে করেন। আল আও্ওয়ালু- প্রথম, অনাদি। আল আ-খিরু- সর্বশেষ, অনন্ত। আয্ যা-হিরু- যিনি ব্যক্ত, প্রকট গুণে ও নিদর্শনে। আল বা-ত্বিনু- যিনি গুপ্ত সত্তাতে। আল ওয়া-লিয়্যু- অভিভাবক, মুরুব্বী।

আল মুতা’আ-লিয়্যু- সর্বোপরি। আল বাররু- মুহসিন, অনুগ্রহকারী। আত্ তাও্ওয়া-বু- তওবা্ কবূলকারী, যিনি অপরাধে অনুশোচনাকারীর প্রতি পুনঃঅনুগ্রহ করেন। আল মুনতাকিমু- প্রতিশোধ গ্রহণকারী। আল আফুব্বু- বড়ই ক্ষমাশীল। আর্ রঊফু- বড়ই দয়ালু। মালিকুল মুল্‌ক- রাজাধিরাজ, যাঁর রাজ্যে তিনি যা ইচ্ছা তা করতে পারেন। যুল্ জালা-লি ওয়াল ইকর-ম- মহিমা ও সম্মানের অধিকারী। আল মুকসিত্বু- অত্যাচার দমনকারী, উৎপীড়ক থেকে উৎপীড়িতের প্রতিশোধ গ্রহণকারী। আল জা-মি’উ- কিয়ামতে বান্দাদের একত্রকারী অথবা সর্বগুণের অধিকারী।

আল গনিয়্যু- বেনিয়াজ, যিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। আল মুগনিয়্যু- যিনি কাউকেও কারো মুখাপেক্ষী হতে বাঁচিয়ে রাখেন। আল মা-নি’উ- বিপদে বাধাদানকারী। আয্ যাররু- যিনি ক্ষতি করার ক্ষমতা রাখেন। আন্ না-ফি’উ- উপকারী, যিনি উপকারের ক্ষমতা রাখেন। আন্ নূরু- আলোকোজ্জ্বল, প্রভা, প্রভাকর। আল হা-দিয়ু- পথপ্রদর্শক (যারা তাঁর অনুসরণ করে তাদের)। আল বাদী’উ- অদ্বিতীয়, অনুপম অথবা যিনি বিনা আদর্শে গড়েন। আল বা-ক্বী- যিনি সর্বদা আছেন, সৃষ্টি ধ্বংসের পরেও যিনি থাকবেন। আল ওয়া-রিসু- উত্তরাধিকারী, সকল শেষ হবে আর তিনি সকলের উত্তরাধিকারী হবেন। আর্ রশীদু- কারো পরামর্শ বা জিজ্ঞাসু ছাড়া যাঁর কাজ উত্তম ও ভাল হয়। আস্ সাবূরু- বড়ই ধৈর্যশীল। (তিরমিযী, বায়হাক্বী-দা’ওয়াতুল কাবীর; তিরমিযী বলেন, হাদীসটি গরীব)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ لِلَّهِ تَعَالَى تِسْعَةً وَتِسْعِينَ اسْمًا مَنْ أَحْصَاهَا دَخَلَ الْجَنَّةَ هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَه هُوَ الرَّحْمَنُ الرَّحِيمُ الْمَلِكُ الْقُدُّوسُ السَّلَامُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ الْغَفَّارُ الْقَهَّارُ الْوَهَّابُ الرَّزَّاقُ الْفَتَّاحُ الْعَلِيمُ الْقَابِضُ الْبَاسِطُ الْخَافِضُ الرَّافِعُ الْمُعِزُّ الْمُذِلُّ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ الْحَكَمُ الْعَدْلُ اللَّطِيفُ الْخَبِيرُ الْحَلِيمُ الْعَظِيمُ الْغَفُورُ الشَّكورُ العَلِيُّ الكَبِيرُ الحَفيظُ المُقِيتُ الْحَسِيبُ الْجَلِيلُ الْكَرِيمُ الرَّقِيبُ الْمُجِيبُ الْوَاسِعُ الْحَكِيمُ الْوَدُودُ الْمَجِيدُ الْبَاعِثُ الشَّهِيدُ الْحَقُّ الْوَكِيلُ الْقَوِيُّ الْمَتِينُ الْوَلِيُّ الْحَمِيدُ الْمُحْصِي الْمُبْدِئُ الْمُعِيدُ الْمُحْيِي المُميتُ الحَيُّ القَيُّومُ الواجِدُ الماجِدُ الواحِدُ الأحَدُ الصَّمَدُ الْقَادِرُ الْمُقْتَدِرُ الْمُقَدِّمُ الْمُؤَخِّرُ الْأَوَّلُ الْآخِرُ الظَّاهِرُ الْبَاطِنُ الْوَالِي الْمُتَعَالِي الْبَرُّ التَّوَّابُ الْمُنْتَقِمُ العَفُوُّ الرَّؤوفُ مَالِكُ الْمُلْكِ ذُو الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ الْمُقْسِطُ الْجَامِعُ الْغَنِيُّ الْمُغْنِي الْمَانِعُ الضَّارُّ النَّافِعُ النُّورُ الْهَادِي الْبَدِيعُ الْبَاقِي الْوَارِثُ الرَّشِيدُ الصَّبُورُ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ والبيهقيُّ فِي الدَّعواتِ الْكَبِير. وَقَالَ التِّرْمِذِيّ: هَذَا حَدِيث غَرِيب

عن ابي هريرة رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان لله تعالى تسعة وتسعين اسما من احصاها دخل الجنة هو الله الذي لا اله هو الرحمن الرحيم الملك القدوس السلام المومن المهيمن العزيز الجبار المتكبر الخالق البارى المصور الغفار القهار الوهاب الرزاق الفتاح العليم القابض الباسط الخافض الرافع المعز المذل السميع البصير الحكم العدل اللطيف الخبير الحليم العظيم الغفور الشكور العلي الكبير الحفيظ المقيت الحسيب الجليل الكريم الرقيب المجيب الواسع الحكيم الودود المجيد الباعث الشهيد الحق الوكيل القوي المتين الولي الحميد المحصي المبدى المعيد المحيي المميت الحي القيوم الواجد الماجد الواحد الاحد الصمد القادر المقتدر المقدم الموخر الاول الاخر الظاهر الباطن الوالي المتعالي البر التواب المنتقم العفو الرووف مالك الملك ذو الجلال والاكرام المقسط الجامع الغني المغني المانع الضار النافع النور الهادي البديع الباقي الوارث الرشيد الصبور رواه الترمذي والبيهقي في الدعوات الكبير وقال الترمذي هذا حديث غريب

ব্যাখ্যা: (مَنْ أَحْصَاهَا) ‘আল্লামা শাওকানী (রহঃ) বলেছেন, এর অর্থ হলো যে ব্যক্তি এ নামগুলো মুখস্থ করলো তার অর্থ অনুধাবন করলো। কোন কোন বিশিষ্ট ‘আলিম বলেন, এর অর্থ হলো একটি একটি করে গণনা করলো।

ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেছেন, ইমাম বুখারী (রহঃ) সহ অনেকেই বলেছেন এর অর্থ হলো, মুখস্থ করলো, এটাই অধিকাংশদের কথা। আর এটাই সঠিক।

আবূ যায়দ আল বালখী (রহঃ) বলেছেন, মহান আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়াতা‘আলা পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন ব্যাখ্যায় ‘আমল করলে জান্নাতে যাওয়া যায় এমন কথা বলেছেন। সুতরাং এখানে এরূপ ৯৯টি নাম মুখস্থ করলেই সহজভাবে জান্নাতে যাওয়ার যে কথাটি বলা হয়েছে তার সম্পর্কে একটি প্রশ্ন থেকে যায়।

এ প্রশ্নের উত্তর হাফেয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেছেন, হাদীস যেহেতু সহীহ সেহেতু তা আমরা মেনে নিব। আল্লাহর অনুগ্রহ খুবই প্রশস্ত।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)
২২৮৯

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

২২৮৯-[৩] বুরায়দাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার এক ব্যক্তিকে বলতে শুনলেন, ’হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি এবং জানি যে, তুমিই আল্লাহ। তুমি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে আর কোন মা’বূদ নেই। তুমি এক ও অনন্য। তুমি অমুখাপেক্ষী ও স্বনির্ভর। যিনি কাউকে জন্মও দেননি। কারো থেকে জন্মও নন। যার কোন সমকক্ষ নেই।’ তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এ ব্যক্তি আল্লাহ তা’আলাকে তার ইস্‌মে আ’যম বা সর্বাধিক বড় ও সম্মানিত নামে ডাকল। এ নামে ডেকে তাঁর কাছে কেউ কিছু প্রার্থনা করলে, তিনি তাকে তা দান করেন এবং কেউ ডাকলে তিনি তার ডাকে সাড়া দেন। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ

وَعَن بُرَيْدَةَ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَمِعَ رَجُلًا يَقُولُ: اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ بِأَنَّكَ أَنْتَ اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ الْأَحَدُ الصَّمَدُ الَّذِي لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ فَقَالَ: «دَعَا اللَّهَ بِاسْمِهِ الْأَعْظَمِ الَّذِي إِذَا سُئِلَ بِهِ أَعْطَى وَإِذَا دُعِيَ بِهِ أَجَابَ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُد

وعن بريدة ان رسول الله صلى الله عليه وسلم سمع رجلا يقول اللهم اني اسالك بانك انت الله لا اله الا انت الاحد الصمد الذي لم يلد ولم يولد ولم يكن له كفوا احد فقال دعا الله باسمه الاعظم الذي اذا سىل به اعطى واذا دعي به اجاب رواه الترمذي وابو داود

ব্যাখ্যা: (الَّذِىْ إِذَا سُئِلَ بِه أَعْطٰى وَإِذَا دُعِىَ بِه أَجَابَ) কোন কোন ‘আলিম বলেছেন, السؤال অর্থ হলো বান্দার এ কথা বলা, হে আল্লাহ! আমাকে অমুক জিনিস দান করুন আল্লাহ তাকে তার কথা অনুপাতে দিয়ে দিলেন এর নাম হলো السؤال। পক্ষান্তরে دعاء হলো, বান্দা আল্লাহকে ডাক দিবেন এই বলে যে, হে আল্লাহ, হে রহমান! ইত্যাদি, আর তিনি তার ডাকে সাড়া দিবেন। তবে কোন কোন ‘আলিম এর মধ্যে কোন প্রকার পার্থক্য করেননি।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)
২২৯০

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

২২৯০-[৪] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে মসজিদে নাবাবীতে বসে ছিলাম। তখন জনৈক ব্যক্তি সালাত আদায় করছিল এবং সালাতের পর বলছিল, হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি। কারণ তোমারই জন্য সব প্রশংসা। তুমি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা’বূদ নেই। তুমিই সবচেয়ে বড় দয়ালু, বড় দাতা। তুমিই আসমান জমিনের স্রষ্টা। হে মর্যাদা ও দান করার মালিক! হে চিরঞ্জীব, হে প্রতিষ্ঠাতা! আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করি। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে আল্লাহকে ইস্মে আ’যম-এর সাথে ডাকে তিনি তাতে সাড়া দেন এবং যখন তাঁর কাছে প্রার্থনা করা হয় তখন তিনি তা দান করেন। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ

وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: كُنْتُ جَالِسًا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الْمَسْجِدِ وَرَجُلٌ يُصَلِّي فَقَالَ: اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ بِأَنَّ لَكَ الْحَمْدَ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ الْحَنَّانُ الْمَنَّانُ بَدِيعُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ يَا ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ أَسْأَلُكَ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «دَعَا اللَّهَ بِاسْمِهِ الْأَعْظَمِ الَّذِي إِذَا دُعِيَ بِهِ أَجَابَ وَإِذَا سُئِلَ بِهِ أَعْطَى» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ

وعن انس قال كنت جالسا مع النبي صلى الله عليه وسلم في المسجد ورجل يصلي فقال اللهم اني اسالك بان لك الحمد لا اله الا انت الحنان المنان بديع السماوات والارض يا ذا الجلال والاكرام يا حي يا قيوم اسالك فقال النبي صلى الله عليه وسلم دعا الله باسمه الاعظم الذي اذا دعي به اجاب واذا سىل به اعطى رواه الترمذي وابو داود والنساىي وابن ماجه

ব্যাখ্যা: হাদীসে উল্লেখিত দু‘আটি নাবীজী সাল্লাল্লাহু আলিহি ওয়াসাল্লাম ইসমে আ‘যম নামে আখ্যা দিয়েছেন। অন্য হাদীসে (لَاۤ إِلٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّوْمُ) (يَا حَيُّ يَا قَيُّوْمُ) -কেও ইসমে আ‘যম বলা হয়েছে বলে বর্ণিত আছে। মোট কথা হলো আমরা যদি আল্লাহর সুন্দর সুন্দর নামের মাধ্যমে ডাকি তাহলে তিনি আমাদের ডাকে সাড়া দিবেন। যেমনঃ তিনি বলেছেন, وَلِلّٰهِ الْأَسْمَآءُ الْحُسْنٰى فَادْعُوْهُ بِهَا অর্থাৎ- ‘‘আল্লাহর সুন্দর সুন্দর নাম রয়েছে তোমরা সেগুলোর মাধ্যমে তাকে ডাক।’’ (সূরা আল আ‘রাফ ৭ : ১৮০)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)
২২৯১

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

২২৯১-[৫] আসমা বিনতু ইয়াযীদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর ইস্‌মে আ’যম এই দু’ আয়াতের মধ্যে রয়েছে, ওয়া ইলা-হুকুম ইলা-হূ ওয়া-হিদ, লা- ইলা-হা ইল্লা- হুওয়ার রহমা-নুর রহীম

এছাড়াও সূরা আ-লি ’ইমরান-এর শুরুতে আলিফ লা-ম মী-ম আল্ল-হু লা- ইলা-হা ইল্লা- হুওয়াল হাইয়্যুল কইয়্যূম। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ, দারিমী)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ

وَعَنْ أَسْمَاءَ بِنْتِ يَزِيدَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: اسْمُ اللَّهِ الْأَعْظَمُ فِي هَاتَيْنِ الْآيَتَيْنِ: (وَإِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الرَّحْمَنُ الرَّحيمُ)
وفاتحة (آل عمرانَ)
: (آلم اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ)
رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَهْ وَالدَّارِمِيُّ

وعن اسماء بنت يزيد رضي الله عنها ان النبي صلى الله عليه وسلم قال اسم الله الاعظم في هاتين الايتين والهكم اله واحد لا اله الا هو الرحمن الرحيموفاتحة ال عمران الم الله لا اله الا هو الحي القيومرواه الترمذي وابو داود وابن ماجه والدارمي

ব্যাখ্যা: ‘আল্লামা শামী (রহঃ) বলেন, আমি আল্লাহর ইসমে আ‘যম খুজেছিলাম, তারপর কোন এক সময় তা পেয়ে যাই আর তা হলো, الْحَيُّ الْقَيُّومُ।

 ইমাম জাযরী তাঁর ‘হিসনুল মুসলিম’ কিতাবে বলেন, ইসমে আ‘যম হলো, اللّٰهُ لَا إِلٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ।

‘আল্লামা মুল্লা ‘আলী কারী হানাফী (রহঃ) বলেন, ইসমে আ‘যম হলো, لا إله إلا هو الرحمن الرحيم الحي القيوم।


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)
২২৯২

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

২২৯২-[৬] সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মাছওয়ালা নবী ইউনুস (আঃ) মাছের পেটে গিয়ে যখন দু’আ পড়েছিলেন তা হলো এই ’’লা- ইলা-হা ইল্লা- আন্তা সুবহা-নাকা ইন্নী কুনতু মিনায্ যোয়া-লিমীন’’ অর্থাৎ- ’’তুমি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা’বূদ নেই। তুমি পবিত্র, আমি হচ্ছি যালিম বা অত্যাচারী অপরাধী’’- (সূরা আম্বিয়া ২১:৮৭)।

যে কোন মুসলিমই যে কোন ব্যাপারে এ দু’আ পাঠ করবে, তার দু’আ নিশ্চয়ই গৃহীত হবে। (আহমদ, তিরমিযী)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ

وَعَنْ سَعْدَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:
دَعْوَةُ ذِي النُّونِ إِذا دَعَا رَبَّهُ وَهُوَ فِي بَطْنِ الْحُوتِ (لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظالمينَ)
لَمْ يَدْعُ بِهَا رَجُلٌ مُسْلِمٌ فِي شَيْءٍ إلاَّ استجابَ لَهُ . رَوَاهُ أَحْمد وَالتِّرْمِذِيّ

وعن سعد رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلمدعوة ذي النون اذا دعا ربه وهو في بطن الحوت لا اله الا انت سبحانك اني كنت من الظالمينلم يدع بها رجل مسلم في شيء الا استجاب له رواه احمد والترمذي

ব্যাখ্যা: (إلاَّ استجابَ) অর্থাৎ- আল্লাহর নাবী ইউনুস (আঃ) মৎস পেটে বসে যে দু‘আটি করেছিলেন তার মাধ্যমে, অর্থাৎ- لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّىْ كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِيْنَ এর মাধ্যমে কেউ দু‘আ করে তার দু‘আ আল্লাহ কবূল করে নিবেন।

জনৈক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রশ্ন করেছিলেন, হে আল্লাহর নাবী! এ দু‘আটি ইউনুস (আঃ)-এর জন্য খাস বা নির্দিষ্ট ছিল? তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি কুরআন পড়োনি? যেখানে আল্লাহ বলেছেনঃ

وَنَجَّيْنَاهُ مِنَ الْغَمِّ وَكَذٰلِكَ نُنْجِي الْمُؤْمِنِيْنَ

‘‘আমি তাকে মুক্তি দিলাম এমনিভাবে আমি মু’মিনদেরকে মুক্তি দিয়ে থাকি।’’ (সূরা আল আম্বিয়া ২১ : ৮৮)

অর্থাৎ- দু‘আটি আল্লাহর নাবী ইউনুস (আঃ)-এর জন্য খাস বা নির্দিষ্ট নয় তা সমস্ত মু’মিনের জন্য প্রযোজ্য।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)
২২৯৩

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

২২৯৩-[৭] বুরায়দাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ’ইশার সালাতের সময় মসজিদে প্রবেশ করলাম। তখন দেখি জনৈক ব্যক্তি (সালাতে) কুরআন পড়ছেন এবং তার নিজের গলার স্বর উচ্চ করছেন। আমি তখন বললাম, হে আল্লাহর রসূল! এভাবে (সালাতে) কুরআন পড়াকে কি আপনি রিয়া বা প্রদর্শনী বলবেন? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, না। বরং এ ব্যক্তি একজন বিনয়ী মু’মিন। বুরায়দাহ্ (রাঃ) বলেন, আবূ মূসা আল আশ্’আরীই কুরআন পড়ছিলেন এবং তা উচ্চস্বরে পড়ছিলেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কিরাআত শুনছিলেন। তারপর আবূ মূসা বসে এ দু’আ করতে লাগলেন, ’’হে আল্লাহ! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, তুমি আল্লাহ, তুমি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা’বূদ নেই, তুমি এক ও তুমি সকলের নির্ভরস্থল, অমুখাপেক্ষী। যিনি কাউকে জন্মও দেননি, কারো থেকে জন্মও নন এবং যার কোন সমকক্ষও নেই।’’

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, নিশ্চয়ই সে আল্লাহর ঐ নামের সাথে তাঁর কাছে প্রার্থনা করল, যে নাম ধরে যখন যা প্রার্থনা করা হয়, তখন তিনি তা দান করেন এবং ঐ নামের সাথে যখন তাঁকে ডাকে, তখন তিনি সে ডাকে সাড়া দেন। বুরায়দাহ্ (রাঃ) বলেন, তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি কি তাকে এটা বলব, যা আপনার কাছে শুনলাম? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ (বলো)। অতঃপর আমি তাঁকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছেন তা বলে শুনালাম। তখন আবূ মূসা (রাঃ) আমাকে বললেন, আজ থেকে আপনি আমার প্রিয় ভাই। কারণ আপনি আমাকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সব কথা শুনালেন। (রযীন)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ

عَنْ بُرَيْدَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: دَخَلْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَسْجِدَ عِشَاءً فَإِذَا رَجُلٌ يَقْرَأُ وَيَرْفَعُ صَوْتَهُ فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَتَقُولُ: هَذَا مُرَاءٍ؟ قَالَ: «بَلْ مُؤْمِنٌ مُنِيبٌ» قَالَ: وَأَبُو مُوسَى الْأَشْعَرِيُّ يَقْرَأُ وَيَرْفَعُ صَوْتَهُ فَجَعَلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَسَمَّعُ لِقِرَاءَتِهِ ثُمَّ جَلَسَ أَبُو مُوسَى يَدْعُو فَقَالَ: اللَّهُمَّ إِنِّي أُشْهِدُكَ أَنَّكَ أَنْتَ اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ أَحَدًا صَمَدًا لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أُحُدٍ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَقَدْ سَأَلَ اللَّهَ بِاسْمِهِ الَّذِي إِذَا سُئِلَ بِهِ أَعْطَى وَإِذَا دُعِيَ بِهِ أَجَابَ» قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أُخْبِرُهُ بِمَا سَمِعْتُ مِنْكَ؟ قَالَ: «نَعَمْ» فَأَخْبَرْتُهُ بِقَوْلِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ لِي: أَنْتَ الْيَوْمَ لِي أَخٌ صَدِيقٌ حَدَّثْتَنِي بِحَدِيثِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. رَوَاهُ رزين

عن بريدة رضي الله عنه قال دخلت مع رسول الله صلى الله عليه وسلم المسجد عشاء فاذا رجل يقرا ويرفع صوته فقلت يا رسول الله اتقول هذا مراء قال بل مومن منيب قال وابو موسى الاشعري يقرا ويرفع صوته فجعل رسول الله صلى الله عليه وسلم يتسمع لقراءته ثم جلس ابو موسى يدعو فقال اللهم اني اشهدك انك انت الله لا اله الا انت احدا صمدا لم يلد ولم يولد ولم يكن له كفوا احد فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم لقد سال الله باسمه الذي اذا سىل به اعطى واذا دعي به اجاب قلت يا رسول الله اخبره بما سمعت منك قال نعم فاخبرته بقول رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال لي انت اليوم لي اخ صديق حدثتني بحديث رسول الله صلى الله عليه وسلم رواه رزين

ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসে বুরায়দাহ্ (রাঃ) বলেনঃ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললাম, উল্লেখিত দু‘আপাঠকারী ব্যক্তি হলেন আবূ মূসা আল আশ্‘আরী (রাঃ)। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দু‘আ পাঠের উচ্চ আওয়াজ শুনে বললেন, যে ইসমে আ‘যমের মাধ্যমে দু‘আ করে আর ইসমে আ‘যমের মাধ্যমে দু‘আ করলে তা বিফলে যায় না বরং কবূল হয়।

‘উলামাহমগণ মতবিরোধ করেছেন, একদল বলেছেন, আল্লাহর সব নামই ইসমে আ‘যম-এর কোন সুনির্দিষ্টতা নেই। তবে অধিকাংশ ‘আলিমগণের মত হচ্ছে ইসমে আ‘যম সুনির্দিষ্ট যা উপরোক্ত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)
২২৯৪

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - তাসবীহ (সুবহা-নাল্ল-হ), তাহমীদ (আল হাম্‌দুলিল্লা-হ), তাহলীল (লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ) ও তাকবীর (আল্ল-হু আকবার)- বলার সাওয়াব

মহা পরাক্রমশালী, মহীয়ান আল্লাহর জিকির অধ্যায়ের ব্যাপক আলোচনার পর খাস আলোচনার অধ্যায়। উদ্দেশ্য ঐ সকল হাদীসগুলো বর্ণনা করা, যেগুলোতেاَللهُ أَكْبَر (আল্ল-হু আকবার),لَاۤ إِلٰهِ اِلَّا اللهُ (লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ), اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ (আলহামদুলিল্লা-হ), سُبْحَانَ اللهِ (সুবহা-নাল্ল-হ) বলার মর্যাদা ও পুণ্য সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে।

التسبيح (তাসবীহ)-এর অর্থ হল সেই সব ত্রুটি থেকে আল্লাহ তা’আলাকে পবিত্র সাব্যস্ত করা যা তাঁর সত্তার সাথে মানায় না।

সুতরাং সাধারণভাবে আল্লাহর জন্য অংশীদার, স্ত্রী, সন্তান, সমস্ত নিন্দনীয় বিষয়াবলী এবং নতুনত্ব সাব্যস্ত না হওয়া আবশ্যক হয়ে পড়েছে। কখনো তাসবীহকে ব্যবহার করে তার দ্বারা যিকিরের সকল শব্দকে উদ্দেশ্য করা হয় আবার কখনো নফল সালাতকে উদ্দেশ্য করা হয়।

ইবনুল আসীর বলেন, তাসবীহের মূল অর্থ হল সকল প্রকার ঘাটতি, ত্রুটি বা কমতি থেকে কোন কিছুকে পবিত্র সাব্যস্ত করা। অতঃপর তাসবীহকে এমন স্থানসমূহে প্রয়োগ করা হয়েছে, যে স্থানগুলো পরিব্যাপ্ত এর দিক থেকে তাসবীহ এর কাছাকাছি।


২২৯৪-[১] সামুরাহ্ ইবনু জুনদুব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সর্বোত্তম (মর্যাদাপূর্ণ) কালাম বা বাক্য হলো চারটি- (১) সুবহা-নাল্ল-হ [আল্লাহ পবিত্র], (২) ওয়াল হামদুলিল্লা-হ [আল্লাহর জন্য প্রশংসা], (৩) ওয়ালা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ [আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা’বূদ নেই], (৪) ওয়াল্ল-হু আকবার [আল্লাহ সর্বাপেক্ষা মহান]।

অন্য এক বর্ণনায় আছে, আল্লাহর নিকট সর্বাপেক্ষা প্রিয় বাক্য চারটি- (১) সুবহা-নাল্ল-হ, (২) আল হামদুলিল্লা-হ, (৩) লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ও (৪) ওয়াল্ল-হু আকবার। এ চারটি কালিমার যে কোন একটি প্রথমে (আগ-পিছ করে) বললে তাতে তোমার কোন ক্ষতি হবে না। (মুসলিম)[1]

بَابُ ثَوَابُ التَّسْبِيْحِ وَالتَّحْمِيْدِ وَالتَّهْلِيْلِ وَالتَّكْبِيْرِ

عَنْ سَمُرَةَ بْنِ جُنْدُبٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَفْضَلُ الْكَلَامِ أَرْبَعٌ: سُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ
وَفِي رِوَايَةٍ: أَحَبُّ الْكَلَامِ إِلَى اللَّهِ أَرْبَعٌ: سُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ لَا يَضُرُّكَ بِأَيِّهِنَّ بَدَأْتَ . رَوَاهُ مُسلم

عن سمرة بن جندب قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم افضل الكلام اربع سبحان الله والحمد لله ولا اله الا الله والله اكبروفي رواية احب الكلام الى الله اربع سبحان الله والحمد لله ولا اله الا الله والله اكبر لا يضرك بايهن بدات رواه مسلم

ব্যাখ্যা: (أَفْضَلُ الْكَلَامِ) অর্থাৎ- মানুষের কথা, পক্ষান্তরে আল্লাহর সকল কথাই সর্বোত্তম। আর বিশেষ সময়ে জিকির করা ছাড়া সাধারণত কুরআন নিয়ে ব্যস্ত হওয়াই সর্বোত্তম। আর বিশেষ সময়ের জিকির করা কুরআন নিয়ে ব্যস্ত থাকা অপেক্ষা উত্তম। সুতরাং (كلام) বা কথা দু’টি স্থানে ব্যবহৃত হয় একটি হুবহু কথা আরেকটি ব্যস্ত হওয়া, অর্থাৎ- সময় ব্যয় করা।

নাবাবী (রহঃ) বলেনঃ এ হাদীস এবং এর অনুরূপ হাদীসকে মানুষের কথার উপর প্রয়োগ করা হবে অন্যথায় কুরআনই সর্বোত্তম কালাম। এমনিভাবে কুরআন পাঠ করা সাধারণ তাসবীহ তাহলীল থেকে উত্তম। পক্ষান্তরে কোন সময় বা অবস্থাতে বর্ণিত দু‘আগুলো নিয়ে ব্যস্ত হওয়া সর্বোত্তম।

কারী বলেন, সর্বোত্তম কথা চারটি অর্থাৎ- মানুষের কথার মাঝে সর্বোত্তম কথা। (كلام) ‘‘কালাম’’ থেকে মানুষের কথা উদ্দেশ্য করার কারণ হল দু’টি। প্রথমত যেহেতু চতুর্থ নম্বর কালামটি কুরআনে পাওয়া যায়নি। আর কুরআনের বাণীর উপর অন্য বাণীকে প্রাধান্য দেয়া যাবে না।

আর দ্বিতীয়ত যেহেতু রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘‘এগুলো কুরআনের পর সর্বোত্তম কথা’’। আর এগুলো কুরআনেরই অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ - এদের অধিকাংশ তথা প্রথম তিনটি যদিও কুরআনে পাওয়া গেছে কিন্তু চতুর্থটি কুরআনে পাওয়া যায়নি। অতঃপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ‘‘আর এগুলো কুরআনের অন্তর্ভুক্ত’’- এ উক্তিটি আধিক্যের উপর নির্ভর করছে। ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেন, কারী ‘‘রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তি’’ দ্বারা মুসনাদে আহমাদে সামুরাহ্ হতে বর্ণিত হাদীসটি বুঝিয়েছেন যার ভাষ্য হল, ‘‘কুরআনের পর সর্বোত্তম কালাম চারটি আর এগুলো কুরআনেরই অন্তর্ভুক্ত তুমি এগুলোর যেটি শুরু করবে তা তোমার ক্ষতি করবে না’’।

এক মতে বলা হয়েছে, ‘‘এগুলো কুরআনের অন্তর্ভুক্ত’’- এ কথার মর্ম হল এ বাক্যগুলো কুরআনে আলাদাভাবে এসেছে একত্রিতভাবে আসেনি। যেহেতু কুরআনে বর্ণিত হয়েছে فَسُبْحَانَ اللّٰهِ حِينَ تُمْسُونَ ‘‘অতএব তোমরা আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর’’- (সূরা আর্ রূম ৩০:১৭)। (الحمد لله كثيرا) বাক্যটি এসেছে। আল্লাহর অপর বাণীতে এসেছে فَاعْلَمْ أَنَّهٗ لَاۤ إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ ‘‘কাজেই জেনে রেখ, আল্লাহ ছাড়া সত্যিকারের কোন ইলাহ নেই’’- (সূরা মুহাম্মাদ ৪৭:১৯)। পক্ষান্তরে (الله أكبر) উক্তি, এ গঠনে কুরআনে অবিদ্যমান। তবে এর অর্থটি নিম্নোক্ত আয়াতসমূহে পাওয়া যায়। আল্লাহর বাণী সূরা বানী ইসরাঈল ১৭:১১১ নং আয়াতে وَكَبِّرْهُ تَكْبِيرًا এবং সূরা আল মুদ্দাস্সির ৭৪:৩ নং আয়াতে وَرَبَّكَ فَكَبِّر হতে তা লাভ করা যায়। আর তা আল্লাহর বাণী সূরা আল ‘আনকাবূত ২৯:৪৫ নং আয়াতে وَلَذِكْرُ اللّٰهِ أَكْبَرُ وَاللهُ এবং অপর বাণী সূরা আত্ তাওবাহ্ ৯:৭২ নং আয়াত وَرِضْوَانٌ مِنَ اللّٰهِ أَكْبَرُ মূল কথা হল, এ ধারাবাহিকতায় সংগৃহীত কথাগুলো কুরআনের অন্তর্ভুক্ত না। এজন্যই জাযরী বলেন, এগুলো থেকে প্রত্যেকটি কুরআনে এসেছে।

কারী বলেন, সম্ভাবনা রাখছে- হাদীসে তাঁর উক্তি ‘‘সর্বোত্তম কালাম’’ কথাটি আল্লাহর কালামকেও অন্তর্ভুক্ত করবে, কেননা এগুলো শাব্দিকভাবে আল্লাহর কালামে পাওয়া যায় তবে চতুর্থটি ছাড়া, যেহেতু তা আল্লাহর কালামে অর্থগতভাবে বিদ্যমান। আর স্বাভাবিকভাবেও এগুলো সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ হওয়াকে অন্তর্ভুক্ত করছে। কেননা এগুলো ত্রুটি মুক্তকরণ, তাওহীদ গুণকীর্তন এবং প্রশংসাকে অন্তর্ভুক্ত করে এবং এগুলোর প্রতিটি শব্দই আল্লাহর কালামের মাঝে গণ্য। এগুলো থেকে প্রতিটি কুরআনের অন্তর্ভুক্ত- এ বর্ণনার আলোকে অর্থগতভাবে স্পষ্ট।

(وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ وَلَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ وَاللّٰهُ أَكْبَرُ) মা'নাবী বলেন, এ চারটি কালাম সর্বোত্তম এ কারণে যে, প্রত্যেক এমন গুণ যেগুলো আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত করা অসম্ভব সেগুলো থেকে আল্লাহর পবিত্র সাব্যস্ত হওয়াকে অন্তর্ভুক্ত করে এবং যে সব পূর্ণাঙ্গ গুণাবলী আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত হওয়া আবশ্যক সে সবের সাথে আল্লাহকে গুণান্বিত হওয়াকে, একত্ববাদের সাথে তাঁর একক হওয়াকে এবং মহত্বের সাথে বিশেষিত হওয়াকে অন্তর্ভুক্ত করে। এখানে আল্লাহর বড়ত্ব হওয়া থেকে দু’টি অর্থ লাভ করা গেছে। শায়খ ইযযুদ্দীন বিন ‘আবদুস্ সালাম বলেন, আল্লাহর উত্তম নামসমূহ যার মাধ্যমে তিনি তাঁর কিতাবে ও তাঁর রসূলের কিতাবে নিজের নামকরণ করেছেন। যেগুলো চারটিঃ কালিমার মাঝে প্রবিষ্ট আর এগুলো-ই কুরআনের (الباقيات الصالحات) দ্বারা উদ্দেশ্য। প্রথম কালিমাহ্ঃ (سبحان الله) ‘আরবদের ভাষাতেই এর অর্থ পবিত্র সাব্যস্তকরণ, দূর করা। এগুলো আল্লাহর গুণাবলী ও সত্তা থেকে ঘাটতি ও দোষ-ত্রুটি দূর করার সাথে সম্পৃক্ত। সুতরাং তার যে নামগুলো থেকে বিদূরীত হওয়ার অর্থ পাওয়া যাবে সেগুলো এ কালিমার অধীনে প্রবিষ্ট।

যেমন (القدوس) অর্থাৎ- যিনি প্রত্যেক দোষ-ত্রুটি থেকে পবিত্র এবং (السلام) যা প্রত্যেক বিপদ আপদ থেকে নিরাপদ। দ্বিতীয় শব্দঃ (الحمد لله) আর এটা আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলীর পূর্ণাঙ্গতা বর্ণনার সাথে সম্পৃক্ত। সুতরাং তাঁর যে নাম যেগুলো ইতিবাচককে অন্তর্ভুক্ত করবে যেমন (سميع - قدير- عليم- بصير) এগুলো দ্বিতীয় শব্দের অধীনে প্রবিষ্ট। আমরা (سبحان الله) উক্তির মাধ্যমে আমাদের অনুভূতি অনুযায়ী প্রত্যেক দোষ-ত্রুটি এবং আমাদের বুঝ অনুযায়ী প্রত্যেক ঘাটতিকে দূর করেছি। আর (الحمد لله) এর মাধ্যমে আমরা আমাদের জানা অনুযায়ী প্রত্যেক পূর্ণাঙ্গতা এবং অনুভূতি অনুযায়ী প্রত্যেক সম্মানকে সাব্যস্ত করেছি। আমরা যা দূর করেছি এবং যা সাব্যস্ত করেছি তার পেছনে মহা গুরুত্ব-মর্যাদা রয়েছে যা আমাদের থেকে অদৃশ্য এবং আমরা যা জানি না তাই আমরা সেগুলো আমাদের (الله أكبر) উক্তির মাধ্যমে সামষ্টিকভাবে বাস্তবরূপ দিব আর এটি তৃতীয় কালিমার অর্থ- আমরা যা নিষেধ করেছি ও যা সাব্যস্ত করেছি তার অপেক্ষা তিনি অধিক সম্মানিত।
আর এটিই হল রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আমি তোমার গুণকীর্তন পরিসংখ্যান করে শেষ করতে পারব না, তুমি তেমন যেমনটি তুমি নিজের প্রশংসা করেছ। অতঃপর তার নামসমূহ থেকে যা আমাদের জ্ঞান ও বুঝের পর পর্যায়ের মর্যাদাকে অন্তর্ভুক্ত করবে যেমন (الأعلى) এবং (التعالى) অর্থাৎ- সর্বোচ্চ। তাহলে তা আমাদের উক্তি (الله أكبر) এর অধীনে প্রবিষ্ট হবে। অতঃপর আমরা যখন অস্তিত্বের ক্ষেত্রে তার সদৃশ বা অনুরূপ কিছু সাব্যস্ত হওয়াকে নাফি করলাম তখন আমরা তা (لا إله الا الله) এ উক্তির মাধ্যমে সুনিশ্চিত করলাম। আর এটি চতুর্থ শব্দ। কেননা প্রভুত্ব উপাসত্বের উত্তরাধিকারের দিকে প্রত্যাবর্তনশীল। আর উপাসত্বের অধিকার রাখেন একমাত্র ঐ সত্তা ছাড়া আমরা যা বর্ণনা করেছি তার প্রতি যে ন্যায় বিচার করবে। সুতরাং তার নামসমূহ থেকে যা সামষ্টিকতার পূর্বক্ত বর্ণনাকে অন্তর্ভুক্ত করবে তা একক সত্তার ন্যায় যিনি এক, মর্যাদার অধিকারী অনুগ্রহের অধিকারী, আর তা আমাদের (لا إله الا الله) এর অধীনে প্রবিষ্ট। উপাসত্বের অধিকার কেবল ঐ সত্তা রাখে যার জন্য সুন্দর গুণাবলী ও ঐ সমস্ত পূর্ণাঙ্গ গুণাবলী নির্দিষ্ট যেগুলো বর্ণনাকারীগণ বর্ণনা করতে পারে না এবং গণনাকারীগণ গণনা করতে পারে না।

এভাবে আস্ সাবাকী ত্ববাকতে শাফি‘ঈয়্যাহ্ আল কুবরা-তে উল্লেখ করেছেন। (৫ম খণ্ড- ৮৬-৮৭ পৃষ্ঠা) হাদীসটিতে আছে, নিশ্চয়ই সর্বোত্তম কালাম এ চারটি কালাম। হাদীসটির বাহ্যিক দিক অচিরেই আগত আবূ যার (রাঃ) এর হাদীসের পরিপন্থী। যে হাদীসে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রশ্ন করা হল কোন কথা সর্বোত্তম? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, (سبحان الله وبحمده) আর অচিরেই ২য় পরিচ্ছেদে আগত জাবির-এর হাদীসেরও বিরোধিতা করছে যাতে আছে (لا إله الا الله) সর্বোত্তম জিকির। সাধারণভাবে আবূ যার-এর হাদীস তাসবীহ এর শ্রেষ্ঠত্বের উপরও প্রমাণ বহন করছে। আর সেটাও জাবির-এর হাদীসের বিপরীত। যা সাধারণভাবে (لا إله الا الله) এর শ্রেষ্ঠত্বের উপর প্রমাণ বহন করছে। কুরতুবী এভাবে সমন্বয় সাধন করেছেন যার সারাংশ হল, নিশ্চয়ই এ জিকিরগুলোর কতকের উপর যখন কতকে সাধারণভাবে ব্যবহার করা হবে (অর্থাৎ- সর্বোত্তম কালাম বা আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় কালামকে), তখন এগুলো দ্বারা উদ্দেশ্য হবে যখন এগুলো মুসলিমে বিদ্যমান সামুরার [সর্বাধিক প্রিয় কালাম চারটি এগুলোর যে কোনটি দ্বারা তুমি শুরু করবে তোমার কোন ক্ষতি করবে না আর তা হল سبحان الله و الحمد لله ولا إله الا الله الله أكبر] এ হাদীসের দলীল কর্তৃক তার সমগোত্রীয়দের সাথে মিলিত হবে। এ ক্ষেত্রে অর্থের উপর নির্ভরশীল হওয়ারও সম্ভাবনা রাখছে। সুতরাং যে এগুলোর কতকের উপর সীমাবদ্ধ থাকবে তার জন্য যথেষ্ট হবে। কেননা এগুলোর সারাংশ হল সম্মান প্রদর্শন করা, পবিত্র সাব্যস্তকরণ। যে তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা করল সে তাঁর বড়ত্ব সাব্যস্ত করল আর যে তাঁর বড়ত্ব বর্ণনা করল সে তার পবিত্রতা সাব্যস্ত করল। কেউ কেউ বলেছেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তি أَفْضَلُ الْكَلَامِ، أَفْضَلُ الذِّكْرِ لَا إِلٰهَ إِلَّا الله এবং আগত أَحَبُّ الْكَلَامِ এর পূর্বে একটি من অব্যয় উহ্য মানার মাধ্যমে সমন্বয় করা সম্ভব। কারণ أَفْضَلُ (সর্বোত্তম) ও أَحَبُّ (সর্বাধিক প্রিয়) শব্দদ্বয় অর্থের দৃষ্টিকোণ থেকে সমার্থক। ভাষ্যকার বলেন, মুসনাদে আহমাদে (৫ম খণ্ড, ১১ পৃষ্ঠা) বর্ণিত

(أربع من أطيب الكلام وهن من القرآن لا يضرك بأيهن بدأت سبحان الله والحمد لله ولا إله إلا الله والله أكبر)

হাদীসটি এ অভিমতটিকে শক্তিশালী করছে। যেহেতু সেখানে من অব্যয়টি প্রকাশ্য এসেছে। হাদীসে ঐ ব্যাপারে প্রমাণ আছে, নিশ্চয়ই এ চারটি কালিমাহ্ আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়, অচিরেই যা আসতেছে তা এর পরিপন্থী না আর তা হল (سبحان الله وبحمده) আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় কালাম। কেননা এখানে এ চারটিরই অন্তর্ভুক্ত।

(وفى رواية أحب الكلام إلى الله أربع) অর্থাৎ- চারটি কালিমাহ্।

(سبحان الله) অর্থাৎ- আমি প্রত্যেক এমন জিনিস থেকে তাঁর পবিত্র সাব্যস্ত হওয়াতে বিশ্বাসী যা তার সত্তার সৌন্দর্য ও তার গুণাবলীর পূর্ণাঙ্গতার সাথে বেমানান আর তা মুক্ত করার স্থল নিয়ে এসেছেন যা ঐ অবস্থার উপর প্রমাণ বহন করে যে, নিশ্চয়ই তিনি উত্তম নামসমূহ ও সুউচ্চ গুণাবলীর সাথে গুণান্বিত এবং শুকরিয়া ও গুণকীর্তন প্রকাশের জন্য উপযুক্ত। আর তা গুণ বর্ণনা করার স্থল আর এজন্যই তিনি (الحمد لله) বলেছেন।

এরপর তিনি যে তাঁর ইতিবাচক ও নেতিবাচক গুণাবলীতে একক এদিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন (لا إله إلا الله)। অতঃপর তিনি ঐ দিকে ইঙ্গিত করেছেন যে, তাঁর বড়ত্বের পরিধি এবং ইযার ও রিদার মহত্ত্বকে পরিকল্পনা করা যায় না। যা হাদীসে (الله أكبر) দ্বারা স্পষ্ট।

(لَا يَضُرُّكَ بِأَيِّهِنَّ بَدَأْتَ) অর্থাৎ- পাঠক তাসবীহগুলোর যে কোনটি দিয়ে শুরু করলে এগুলো পাঠের সাওয়াব সংরক্ষণে কোন ক্ষতি হবে না, কেননা কালিমাগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর মহত্ব ও পূর্ণতার যে অর্থ করা হয়েছে সেক্ষেত্রে এগুলোর প্রত্যেকটি স্বতন্ত্র। কিন্তু হাদীসে যেভাবে এসেছে সে ধারাবাহিকতাটিই উত্তম ও পূর্ণাঙ্গ। কারণ সেখানে প্রথমে আল্লাহর পবিত্রতা সাব্যস্তকরণ সূচক কালিমাহ্ سبحان الله এসেছে, পরে তাঁর প্রশংসাজ্ঞাপক কালিমাহ্ الحمد لله এসেছে। অতঃপর তাসবীহ ও তাহমীদযুক্ত কালিমাহ্ لا إله الا الله দ্বারা উভয়ের মাঝে সমন্বয় কর হয়েছে, এরপর তাঁর বড়ত্বজ্ঞাপক কালিমাহ্ الله أكبر দ্বারা শেষ করা হয়েছে।

ইবনুল মালিক বলেন, অর্থাৎ- সুবহা-নাল্ল-হ বা আলহামদুলিল্লা-হ বা লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ অথবা আল্ল-হু আকবার যে কোনটি দ্বারা তাসবীহ পাঠ শুরু করা বৈধ আছে। আর এটাই প্রমাণ করে যে, এগুলোর প্রতিটি বাক্যই স্বয়ংসম্পন্ন, উল্লেখিত সাজানো অনুযায়ী এগুলো উল্লেখ করা আবশ্যক না। তবে উল্লেখিত সাজানো অনুযায়ী উল্লেখ করা উত্তম।

শাওকানী বলেন, জানা উচিত যে, নিশ্চয়ই এ শব্দাবলীর মাঝে পতিত و এদের কতকে কতকের উপর আতফ করার জন্য আনা হয়েছে। যেমন অন্যান্য আতফ করা বিষয়াবলী। সুতরাং و ছাড়া এগুলোর উল্লেখ করা অতঃপর জিকিরকারী (سبحان الله الحمد لله ولا إله إلا الله الله أكبر) বলা অথবা এগুলো و সহ উল্লেখ হওয়া অতঃপর জিকিরকারী (سبحان الله الحمد لله ولا إله إلا الله الله أكبر) এভাবে বলা উল্লেখিত পদ্ধতিদ্বয়ের মাঝে প্রথমটি স্পষ্ট। কেননা নাবী রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে খবর দিয়েছেন তারা এভাবে বলবে। সুতরাং উক্ত বিষয়টি হবে উল্লেখিত (واو) ছাড়া পদ্ধতি। যেমন নাবী রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত সকল শিক্ষাসমূহ।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)
২২৯৫

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - তাসবীহ (সুবহা-নাল্ল-হ), তাহমীদ (আল হাম্‌দুলিল্লা-হ), তাহলীল (লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ) ও তাকবীর (আল্ল-হু আকবার)- বলার সাওয়াব

২২৯৫-[২] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সুবহা-নাল্ল-হ [আল্লাহ পবিত্র], ওয়াল হাম্‌দুলিল্লা-হ [আল্লাহর জন্য প্রশংসা], ওয়ালা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ [আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা’বূদ নেই], ওয়াল্ল-হু আকবার [আল্লাহ সর্বাপেক্ষা মহান] বলা, আমার কাছে সমগ্র বিশ্ব অপেক্ষাও বেশি প্রিয়। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ ثَوَابُ التَّسْبِيْحِ وَالتَّحْمِيْدِ وَالتَّهْلِيْلِ وَالتَّكْبِيْرِ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَأَنْ أَقُولَ: سُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ أَحَبُّ إِلَيَّ مِمَّا طَلَعَتْ عَلَيْهِ الشَّمْس . رَوَاهُ مُسلم

وعن ابي هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لان اقول سبحان الله والحمد لله ولا اله الا الله والله اكبر احب الي مما طلعت عليه الشمس رواه مسلم

ব্যাখ্যা: (أَحَبُّ إِلَىَّ مِمَّا طَلَعَتْ عَلَيْهِ الشَّمْسُ) অর্থাৎ- দুনিয়া এবং তাতে সম্পদ ও অন্যান্য যা কিছু আছে সবকিছু আছে সব কিছু অপেক্ষা উত্তম। একমতে বলা হয়েছে তা সকল সৃষ্টিজগৎ সম্পর্কে ইঙ্গিত। ইবনুল ‘আরাবী বলেন, এ সকল শব্দসমূহ এবং পৃথিবীর মাঝে শ্রেষ্ঠত্বের তুলনা করা হয়েছে। আর শ্রেষ্ঠত্বের তুলনা করার শর্ত হল, দু’টি বস্ত্ত মূল অর্থে এক হওয়া। অতঃপর একটি অপরটির উপর প্রাধান্য পায়। ইবনুল ‘আরাবী এর উত্তরে বলেন, যার সারাংশ হল নিশ্চয়ই أفعل ওযন দ্বারা কখনো মূল ক্রিয়াকে উদ্দেশ্য করা হয়; শ্রেষ্ঠত্বের তুলনা উদ্দেশ্য করা হয় না। যেমন আল্লাহর বাণী,

أَصْحَابُ الْجَنَّةِ يَوْمَئِذٍ خَيْرٌ مُّسْتَقَرًّا وَأَحْسَنُ مَقِيْلًا (সূরা আল ফুরকান ২৫ : ২৪) অর্থাৎ- সেদিন জান্নাতবাসীরা বাসস্থানের দিক দিয়ে উৎকৃষ্ট ও বিশ্রামস্থলের দিক দিয়ে মনোরম হবে। অর্থাৎ- উল্লেখিত আয়াতে জান্নাতের ক্ষেত্রে (أفعل) এর ওযন তুলনা করা হয়নি। অথবা সম্বোধনটি অধিকাংশ মানুষের অন্তরে যা আছে তার উপর প্রয়োগ হবে। কেননা অধিকাংশ মানুষ এ বিশ্বাস করে থাকে যে, দুনিয়ার মতো কোন কিছু নেই আর দুনিয়াটাই মূল উদ্দেশ্য। অতঃপর আল্লাহ খবর দিয়েছেন, নিশ্চয়ই জান্নাত তাঁর নিকট তোমরা যা ধারণা করে থাক তার অপেক্ষা উত্তম। নিশ্চয়ই তাঁর মতো কোন কিছু নেই বা তার অপক্ষো উত্তম কোন কিছু নেই। এক মতে বলা হয়েছে এ উদ্দেশ্য হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে যে, এ সকল শব্দাবলী আমার নিকট দুনিয়ার মালিক হয়ে তা দান করা অপেক্ষা উত্তম। সারাংশ হল এ শব্দাবলী বলার যে সাওয়াব দেয়া হয় তার পরিমাণ দুনিয়ার মালিক হওয়া, অতঃপর তা দান করা অপেক্ষা অধিক।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)
২২৯৬

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - তাসবীহ (সুবহা-নাল্ল-হ), তাহমীদ (আল হাম্‌দুলিল্লা-হ), তাহলীল (লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ) ও তাকবীর (আল্ল-হু আকবার)- বলার সাওয়াব

২২৯৬-[৩] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দৈনিক একশ’বার পড়বে ’সুবহা-নাল্ল-হি ওয়াবিহামদিহী’ (অর্থাৎ- আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করি তাঁর প্রশংসার সাথে)- তার গুনাহসমূহ যদি সমুদ্রের ফেনার মতো বেশি হয় তবুও তা মাফ করে দেয়া হবে। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ ثَوَابُ التَّسْبِيْحِ وَالتَّحْمِيْدِ وَالتَّهْلِيْلِ وَالتَّكْبِيْرِ

وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ قَالَ: سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ فِي يَوْمٍ مِائَةَ مَرَّةٍ حُطَّتْ خَطَايَاهُ وَإِنْ كَانَتْ مِثْلَ زَبَدِ الْبَحْرِ

وعنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من قال سبحان الله وبحمده في يوم ماىة مرة حطت خطاياه وان كانت مثل زبد البحر

ব্যাখ্যা: (سُبْحَانَ اللّٰهِ) অর্থাৎ- আমি যথার্থভাবে আমি তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা করছি, অর্থাৎ- আমি তাঁকে প্রত্যেক ঘাটতি থেকে পবিত্র সাব্যস্ত করতেছি।

(وَبِحَمْدِه) কারী বলেন, অর্থাৎ- আমি তাঁর প্রশংসা সহ পবিত্রতা বর্ণনা করছি।

(فِىْ يَوْمٍ) ইমাম ত্বীবী বলেন, অর্থাৎ- ব্যাপক সময়ে এতে নির্দিষ্ট কোন সময় জানা যায়নি। সুতরাং এ সময়সমূহ থেকে কোন সময়কে নির্দিষ্ট করা যাবে না।

মাযহার বলেন, শব্দ প্রয়োগের ব্যাপকতা থেকে বাহ্যত অনুভব করা যাচ্ছে, যে ব্যক্তি দিনে এটা একশতবার পাঠ করবে সে উল্লেখিত সাওয়াব পাবে চাই তা একসাথে পাঠ করুক বা আলাদাভাবে বিভিন্ন মাজলিসে পাঠ করুক। অথবা এগুলোর কতক দিনের প্রথমাংশে পাঠ করুক এবং কতক দিনের শেষাংশে পাঠ করুক। তবে উত্তম হল এগুলো দিনের প্রথমাংশে পরস্পরভাবে পাঠ করা।

(خَطَايَاهُ) অর্থাৎ- তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। কারী বলেন, গুনাহ বলতে সগীরাহ্ কাবীরাহ্ সকল গুনাহ সাব্যস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

‘আয়নী বলেন, অর্থাৎ- এমন গুনাহ যা আল্লাহর অধিকার সংক্রান্ত কেননা মানুষের অধিকারসমূহ অধিকারীর সন্তুষ্ট ছাড়া মাফ হয় না।

ইমাম বাজী বলেন, এগুলো পাঠকারী ব্যক্তির গুনাহ মোচনের কাফফারা স্বরূপ হয়ে যাবে। যেমন তাঁর বাণী, ‘‘নিশ্চয়ই পুণ্য কাজসমূহ পাপ কাজসমূহকে মিটিয়ে দেয়।’’ (সূরা হূদ ১১ : ১১৪)

(وَإِنْ كَانَتْ مِثْلَ زَبَدِ الْبَحْرِ) الزبد বলা হয় ফেনা বা ফেনা জাতীয় পদার্থকে যা প্রবল তরঙ্গের সময় পানির উপর ভেসে উঠে। এর মাধ্যমে আধিক্যতার দিকে ইঙ্গিত করা উদ্দেশ্য। কাযী ‘ইয়ায বলেন, (لا إله إلا الله) সম্পর্কে ৯ম অধ্যায়ের আবূ হুরায়রার হাদীসে ‘‘তার থেকে একশত গুনাহকে মিটিয়ে দেয়া হবে’’ এ উক্তির সাথে ‘‘যদিও তা সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হয় তথাপিও তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে’’- এ উক্তি (لا إله إلا الله) পাঠের উপর (سبحان الله) পাঠের শ্রেষ্ঠত্বকে জানিয়ে দিচ্ছে। অর্থাৎ- যেহেতু সমুদ্রের ফেনার সংখ্যা শত শত গুণ। অথচ (لا إله إلا الله) এর হাদীসে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি (لا إله إلاالله) এর ‘আমল করবে তার অপেক্ষা উত্তম ‘আমল আর কেউ করতে পারবে না। সুতরাং উভয়ের মাঝে এভাবে সমন্বয় সাধন করা যেতে পারে যে, উল্লেখিত (لا إله إلا الله) পাঠ সর্বোত্তম এবং তাতে পুণ্যসমূহ লিপিবদ্ধকরণ ও গুনাহসমূহ মিটানোর যে অতিরিক্ততা আছে তা, অতঃপর এ সত্ত্বেও দাস মুক্ত করার যে মর্যাদা নির্ধারণ করা হয়েছে এবং শয়তান থেকে রক্ষা পাওয়ার যে কথা বলা হয়েছে তা তাসবীহ পাঠের শ্রেষ্ঠত্ব ও তাঁর সমস্ত গুনাহ মিটিয়ে দেয়ার উপর এক অতিরিক্ত অর্জন। কেননা প্রমাণিত আছে, যে ব্যক্তি একটি দাস মুক্ত করবে আল্লাহ ঐ মুক্ত দাসের প্রতিটি অঙ্গের বিনিময়ে মুক্তকারীর একটি করে অঙ্গ জাহান্নাম থেকে মুক্ত করবেন। একটি দাস মুক্ত করার কারণে তার থেকে গুনাহ মোচনের বিশেষ সংখ্যা সীমাবদ্ধের পর ব্যাপকভাবে সমস্ত গুনাহ মোচন অর্জন হল। সেই সাথে শয়তান থেকে রক্ষা পাওয়া, অতিরিক্ত একশত মর্যাদা লাভের সাথে (لا إله إلا الله) পাঠের মাধ্যমে একের অধিক দাস মুক্ত করবে তার কোন গুনাহ থাকতে পারে না।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)
২২৯৭

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - তাসবীহ (সুবহা-নাল্ল-হ), তাহমীদ (আল হাম্‌দুলিল্লা-হ), তাহলীল (লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ) ও তাকবীর (আল্ল-হু আকবার)- বলার সাওয়াব

২২৯৭-[৪] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় একশ’বার পড়বে ’সুবহা-নাল্ল-হি ওয়াবিহামদিহী’ (অর্থাৎ- আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করি তাঁর প্রশংসার সাথে)- কিয়ামতের দিন তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ বাক্য নিয়ে কেউ উপস্থিত হতে পারবে না, সে ব্যক্তি ব্যতীত যে এর সমপরিমাণ বা এর চেয়ে বেশি পড়বে। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ ثَوَابُ التَّسْبِيْحِ وَالتَّحْمِيْدِ وَالتَّهْلِيْلِ وَالتَّكْبِيْرِ

وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ قَالَ حِينَ يُصْبِحُ وَحِينَ يُمْسِي: سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ مِائَةَ مَرَّةٍ لَمْ يَأْتِ أَحَدٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِأَفْضَلَ مِمَّا جَاءَ بِهِ إِلَّا أَحَدٌ قَالَ مِثْلَ مَا قَالَ أَوْ زَادَ عَلَيْهِ)

وعنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من قال حين يصبح وحين يمسي سبحان الله وبحمده ماىة مرة لم يات احد يوم القيامة بافضل مما جاء به الا احد قال مثل ما قال او زاد عليه

ব্যাখ্যা: (مَنْ قَالَ حِينَ يُصْبِحُ وَحِينَ يُمْسِىْ: سُبْحَانَ اللّٰهِ وَبِحَمْدِه مِائَةَ مَرَّةٍ) কারী বলেন, অর্থাৎ- সকাল সন্ধ্যায় যে ব্যক্তি এ তাসবীহ এর কতক সকালে এবং কতক সন্ধায় পাঠ করবে অথবা এগুলোর সবটুকু উভয় সময়ে পাঠ করবে আর এ অর্থটিই সর্বাধিক স্পষ্ট।

(إِلَّا أَحَدٌ قَالَ مِثْلَ مَا قَالَ أَوْ زَادَ عَلَيْهِ) লাম্‘আত গ্রন্থকার বলেন, অর্থ বর্ণনাতে কৌশল অবলম্বন করা আবশ্যক, অর্থাৎ- এভাবে বলা (তার মত এবং তার অপেক্ষা উত্তম ‘আমল কেউ করতে পারে না তবে যে ব্যক্তি তার মতো তাসবীহ পাঠ করবে সে তার মতো সাওয়াব লাভ করবে অথবা যে ব্যক্তি তার অপেক্ষা বেশি পাঠ করবে সে তার অপেক্ষা বেশি সাওয়াব লাভ করবে। আর আল্লাহই সর্বাধিক জ্ঞাত।

ইমাম ত্বীবী বলেন, উল্লেখিত তাসবীহ পাঠকারী যে ‘আমল করবে তা সর্বোত্তম ‘আমল ঐ সকল ‘আমল অপেক্ষা যা তাসবীহ পাঠকারী ছাড়া অন্য কেউ করবে। তবে যে ব্যক্তি তাসবীহ পাঠকারীর মতো ‘আমল করবে বা তার অপেক্ষা বেশি ‘আমল করবে তার কথা আলাদা।

এখন কেউ যদি বলে বৃদ্ধি করা কিরূপে বৈধ অথচ বিদ্বানগণ বলেছে, সংখ্যার ক্ষেত্রে শারী‘আতের সীমারেখা অতিক্রম করা বৈধ না? উত্তরে আমরা বলবঃ যখন হাদীস বৃদ্ধি পাওয়ার ধরণটি সুস্পষ্টভাবে বিবৃত হল তখন জানা গেল যে, এটি সে পর্যায়ের অন্তর্ভুক্ত না যেমন সালাতের রাক্‘আত বা অনুরূপ কিছুর সংখ্যা। সুতরাং সংখ্যাতে একেবারেই বৃদ্ধি করা বৈধ হবে না বিষয়টি এমনটি নয়। অথবা হাদীসে বৃদ্ধি করা থেকে কল্যাণকর কাজে বৃদ্ধি করা উদ্দেশ্য। অনুরূপ লাম্‘আতে আছে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)
২২৯৮

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - তাসবীহ (সুবহা-নাল্ল-হ), তাহমীদ (আল হাম্‌দুলিল্লা-হ), তাহলীল (লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ) ও তাকবীর (আল্ল-হু আকবার)- বলার সাওয়াব

২২৯৮-[৫] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দু’টি খুব সংক্ষিপ্ত বাক্য যা বলতে সহজ অথচ (সাওয়াবের) পাল্লায় ভারী এবং আল্লাহর নিকট পছন্দনীয়, তা হলো ’’সুবহা-নাল্ল-হি ওয়া বিহামদিহী, সুবহা-নাল্ল-হিল ’আযীম’’। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ ثَوَابُ التَّسْبِيْحِ وَالتَّحْمِيْدِ وَالتَّهْلِيْلِ وَالتَّكْبِيْرِ

وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: كَلِمَتَانِ خَفِيفَتَانِ عَلَى اللِّسَانِ ثَقِيلَتَانِ فِي الْمِيزَانِ حَبِيبَتَانِ إِلَى الرَّحْمَنِ: سُبْحَانَهُ الله وَبِحَمْدِهِ سُبْحَانَهُ الله الْعَظِيم

وعنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم كلمتان خفيفتان على اللسان ثقيلتان في الميزان حبيبتان الى الرحمن سبحانه الله وبحمده سبحانه الله العظيم

ব্যাখ্যা: (كَلِمَتَانِ) অর্থাৎ- দু’টি পূর্ণাঙ্গ বাক্য। আর (الكلمة) শব্দকে বাক্য বুঝানোর জন্য প্রয়োগ হয়। যেমন বলা হয় (كلمة الإخلاص) এবং (كلمة الشهادة)। সিনদী বলেন, হাদীসে (كلمة) দ্বারা আভিধানিক দৃষ্টিকোণ উদ্দেশ্য বা সমাজের মানুষ সাধারণত (كلمة) বলতে যা বুঝে থাকে তা উদ্দেশ্য। নাহুর দৃষ্টিকোণ উদ্দেশ্য না।

আলোচ্য হাদীসে বিধেয়কে উদ্দেশের আগে এনে শ্রোতার আগ্রহ আকর্ষণ করা হয়েছে। আর বিধেয়-এর বর্ণনার ক্ষেত্রে বাক্য যখনই দীর্ঘতা লাভ করবে তখন তাকে উদ্দেশের পূর্বে আনা উত্তম হবে। কেননা সুন্দর গুণাবলীর আধিক্যতা উদ্দেশের ব্যাপারে শ্রোতার আগ্রহ বৃদ্ধি করে। ফলে তা অন্তরে বদ্ধমূল হয় এবং গ্রহণযোগ্যতায় অধিক উপযোগী। সিনদী বলেন, বাহ্যিক দিক থেকে বুঝা যায় (كلمتان) উক্তিটি (سبحان الله) শেষ পর্যন্ত। এর খবর বা বিধেয়। তার দিকে শ্রোতার আগ্রহ সৃষ্টির জন্য তাকে উদ্দেশের আগে আনা হয়েছে।

(خَفِيفَتَانِ عَلَى اللِّسَانِ) অর্থাৎ- বাক্যদ্বয়ের অক্ষরসমূহ নরম হওয়ার দরুন জিহ্বাতে সহজেই উচ্চারিত হয়ে থাকে। কেননা বাক্যদ্বয়ে ‘আরবীয়দের নিকট পরিচিত কোন শক্ত অক্ষর নেই।

(ثَقِيلَتَانِ فِى الْمِيزَانِ) অর্থাৎ- প্রকৃতপক্ষেই তা সাওয়াবের পাল্লায় ভারী। হাফেয বলেন, ‘আমলের স্বল্পতা ও সাওয়াবের আধিক্যতার বর্ণনা দেয়ার্থে পাল্লাকে হালকা ও ভারত্বের মাধ্যমে বিশেষিত করা হয়েছে।

‘আল্লামা সিনদী বলেন, বাক্যদ্বয়ের উত্তম শৃঙ্খলা, অক্ষরের কমতি হওয়ার দরুন জিহ্বাতে এদের উচ্চারণে সহজতা থাকায় তা হালকা। হালকা হওয়ার অপর কারণ বাক্যদ্বয় আল্লাহর সম্মানিত নামকে অন্তর্ভুক্ত করেছে যার জিকিরে মেজাজ অনুগত হয়। আর আল্লাহর কাছে সম্মানের দিক থেকে বাক্যদ্বয়ের শব্দের বড়ত্বের কারণে তা দাড়িপাল্লায় ভারি। ইমাম ত্বীবী বলেন, ‘‘হালকা’’ কথাটিকে সহজ অর্থে প্রয়োগ করা হয়েছে। পক্ষান্তরে ভারি বলতে আহলুস্ সুন্নাহ এর কাছে মূল অর্থই উদ্দেশ্য, কেননা ‘আমলসমূহ মাপার সময় দাড়িপাল্লাতে অবয়ব দান করা হবে। আর মীযান বা দাড়িপাল্লা ঐ জিনিস কিয়ামতের দিন যার মাঝে বান্দাদের ‘আমলসমূহ ওযন দেয়া হবে। আর পাল্লার ধরণ সম্পর্কে অনেক উক্তি আছে তবে সর্বাধিক বিশুদ্ধ মত নিশ্চয়ই তা অনুভূতিশীল গঠনের কাটা বিশিষ্ট ও দু’টি পাল্লা বিশিষ্ট হবে। আল্লাহ তা‘আলা ‘আমলসমূহকে বাহ্যিক ওযনে পরিণত করবেন। এক মতে বলা হয়েছে, আমলের খাতাসমূহ ওযন করা হবে। পক্ষান্তরে ‘আমল হল সম্মান আর সম্মানকে ওযন করা অসম্ভব। কেননা সম্মান মূলত ওযনযোগ্য না। সুতরাং ‘আমলসমূহকে ভারত্ব বা হালকার সাথে গুণান্বিত করা যাবে না। আর একে সমর্থন করছে (بطاقة) তথা কার্ডের হাদীস। যা ইমাম তিরমিযী সংকলন করেছেন ও হাসান বলেছেন। ইমাম হাকিমও একে সংকলন করেছেন ও সহীহ বলেছেন। তার বর্ণনাতে আছে ‘‘অতঃপর খাতাসমূহ এক পাল্লাতে এবং কার্ড আরেক পাল্লাতে রাখা হবে’’।

আবার কারো মতে, ‘আমলসমূহকে অবয়ব দান করা হবে অতঃপর তা উত্তম আকৃতিতে আনুগত্যশীলদের ‘আমলে পরিণত হবে এবং নিকৃষ্ট আকৃতিতে পাপীদের ‘আমলে পরিণত হবে। এরপর ওযন দেয়া হবে। হাফেয বলেন, বিশুদ্ধ মতানুযায়ী ‘আমলসমূহকেই ওযন দেয়া হবে। ইবনু হিব্বান আবূ দারদা (রাঃ) থেকে একে মারফূ' সূত্রে বর্ণনা করেছেন তাতে আছে ‘‘কিয়ামতের দিন সচ্চরিত্র অপেক্ষা ভারী কোন জিনিস মীযানের পাল্লায় পরিমাপ করা হবে না’’।

‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেন, ‘আমল যেহেতু স্থির থাকে না বরং নিঃশেষ হয়ে যায়- এ ত্রুটি সাব্যস্ত করে ‘আমলসমূহ ওযন করা অসম্ভব হওয়ার ব্যাপারে কৃত উক্তি খুবই দুর্বল। বরং তা বাতিল। বর্তমানে প্রাকৃতিক বিদ্যার অধিকারীরা একে বাতিল বলে ঘোষণা দিয়েছে। আর তারা নিশ্চিত করেছে উক্তিসমূহ শেষ হয়ে যায় না বরং তা শূন্যে বিদ্যমান থাকে যাকে সংরক্ষণ করা সম্ভব। আর তারা কথা ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ইলেক্ট্রিক যন্ত্র আবিষ্কারের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। হাদীসে ঐ দিকে ইঙ্গিত রয়েছে যে, সকল দায়িত্ব অর্পণমূলক নির্দেশ কষ্টকর, আবার অন্তরের উপরেও ভারী। তবে এ ‘আমলসমূহ দাড়িপাল্লাতে ভারি হওয়া সত্ত্বেও নাফসের উপর সহজ হালকা, সুতরাং এ ক্ষেত্রে শিথিলতা উচিত না। আসারে (তথা সাহাবীদের উক্তি) আছে, ‘ঈসা (আঃ)-কে প্রশ্ন করা হল পুণ্য ভারি হবে এবং পাপ হালকা হবে, তার কারণ কি? উত্তরে তিনি বললেন, কেননা পুণ্যসমূহের তিক্ততা উপস্থিত এবং তার মিষ্টতা অনুপস্থিত থাকে, সুতরাং তা ভারি। অতএব তার ভারত্ব যেন তা বর্জনের ব্যাপারে তোমাকে উৎসাহিত না করে। পক্ষান্তরে পাপের মিষ্টতা উপস্থিত, তিক্ততা অনুপস্থিত (সাধারণত তা পরকালে দেয়া হয়ে থাকে) এজন্য পাপ তোমাদের ওপর হালকা, সুতরাং তার হালকা হওয়া তাতে জড়িয়ে পড়ার ব্যাপারে তোমাদের যেন উৎসাহিত না করে। কেননা পাপের কাজের মাধ্যমে কিয়ামতের দিন মীযানসমূহ হালকা হয়ে যাবে।

সিনদী বলেন, (حَبِيبَتَانِ إِلَى الرَّحْمٰنِ) এর অর্থ হল নিশ্চয়ই এ দু’টি বাক্য আল্লাহ তা‘আলার কাছে অধিক প্রিয় হওয়ার সাথে গুণান্বিত। অন্যান্য হাদীসগুলো থেকে যা বুঝা যাচ্ছে। যেমন আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় বাক্য হল (سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِه سُبْحَانَ اللهِ الْعَظِيْمِ)। অন্যথায় সকল জিকির আল্লাহর কাছে প্রিয়। এক মতে বলা হয়েছে, এ বাক্যদ্বয়ের পাঠকারী আল্লাহর কাছে প্রিয় হওয়া উদ্দেশ্য আর বান্দাকে আল্লাহর ভালবাসা বলতে বান্দার প্রতি কল্যাণ পৌঁছানোর ইচ্ছা করা এবং তাকে সম্মান দান করা। বাক্যে আল্লাহর উত্তম নামসমূহ থেকে রহমান নামকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে। কারণ এর দ্বারা বান্দার ওপর আল্লাহর রহমাতের প্রশস্ততা বর্ণনা করে দেয়া উদ্দেশ্য। যেমন অল্প কাজের জন্য তিনি অফুরন্ত প্রতিদান দিয়ে থাকেন। হাদীসে তাহমীদ বা আল্লাহর প্রশংসার বাণী পাঠ অপেক্ষা পবিত্রতা ঘোষণার বাণীতে অধিক মনোযোগ দেয়া হয়েছে আর তা আল্লাহকে পবিত্র সাব্যস্তকারীদের বিরোধিতাকারীর আধিক্যতার কারণে। আর এটা বুঝা গেছে আল্লাহর (سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِه سُبْحَانَ اللهِ الْعَظِيْمِ) এ বাণীতে আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা বারংবার করার কারণে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)
২২৯৯

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - তাসবীহ (সুবহা-নাল্ল-হ), তাহমীদ (আল হাম্‌দুলিল্লা-হ), তাহলীল (লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ) ও তাকবীর (আল্ল-হু আকবার)- বলার সাওয়াব

২২৯৯-[৬] সা’দ ইবনু আবূ ওয়াককাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে ছিলাম। এ সময় তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমাদের কেউ কি একদিনে এক হাজার নেকী অর্জন করতে সক্ষম? তার সাথে বসা লোকদের কেউ বললেন, আমাদের কেউ কিভাবে একদিনে এক হাজার নেকী আদায় করতে সক্ষম হবেন? তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, কেউ যদি একদিনে একশ’বার ’’সুবহা-নাল্ল-হ’’ পড়ে তাহলে এতে তার জন্য এক হাজার নেকী লেখা হবে অথবা তার এক হাজার গুনাহ মাফ করা হবে। (মুসলিম)[1]

সহীহ মুসলিমে মূসা আল জুহানী-এর সকল বর্ণনায়,أَوْ يُحَطُّ শব্দ উল্লেখ আছে عَنهُ শব্দটি নেই। তবে আবূ বকর আল বারকানী বলেন, শু’বাহ্, আবূ ’আওয়ানাহ্ এবং ইয়াহ্ইয়া ইবনু সা’ঈদ, কাত্তান, জুহানী হতে যেসব বর্ণনা করেছেন তাতে وَيُحَطُّ রয়েছে। এতে وَ -এর আগে ألفُ অক্ষরটি নেই। হুমায়দী-এর কিতাবেও অনুরূপ রয়েছে।

بَابُ ثَوَابُ التَّسْبِيْحِ وَالتَّحْمِيْدِ وَالتَّهْلِيْلِ وَالتَّكْبِيْرِ

وَعَنْ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ: قَالَ: كُنَّا عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «أَيَعْجِزُ أَحَدُكُمْ أَنْ يَكْسِبَ كُلَّ يَوْمٍ أَلْفَ حَسَنَةٍ؟» فَسَأَلَهُ سَائِلٌ مِنْ جُلَسَائِهِ: كَيْفَ يَكْسِبُ أَحَدُنَا أَلْفَ حَسَنَةٍ؟ قَالَ: «يُسَبِّحُ مِائَةَ تَسْبِيحَةٍ فَيُكْتَبُ لَهُ أَلْفُ حَسَنَةٍ أَوْ يُحَطُّ عَنهُ ألفُ خطيئةٍ» . رَوَاهُ مُسلم
وَفِي كِتَابه: فِي جَمِيعِ الرِّوَايَاتِ عَنْ مُوسَى الْجُهَنِيِّ: «أَوْ يُحَطُّ» قَالَ أَبُو بكر البرقاني وَرَوَاهُ شُعْبَةُ وَأَبُو عَوَانَةَ وَيَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ الْقطَّان عَن مُوسَى فَقَالُوا: «ويحُطُّ» بِغَيْر ألف هَكَذَا فِي كتاب الْحميدِي

وعن سعد بن ابي وقاص قال كنا عند رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال ايعجز احدكم ان يكسب كل يوم الف حسنة فساله ساىل من جلساىه كيف يكسب احدنا الف حسنة قال يسبح ماىة تسبيحة فيكتب له الف حسنة او يحط عنه الف خطيىة رواه مسلموفي كتابه في جميع الروايات عن موسى الجهني او يحط قال ابو بكر البرقاني ورواه شعبة وابو عوانة ويحيى بن سعيد القطان عن موسى فقالوا ويحط بغير الف هكذا في كتاب الحميدي

ব্যাখ্যা: (لَه أَلْفُ حَسَنَةٍ) কেননা একটি পুণ্য কর্ম সম্পাদনে তার দশগুণ সাওয়াব দেয়া হয়। আর এটি হল কুরআনে ‘‘যে ব্যক্তি একটি পুণ্য কাজ সম্পাদন করবে তার জন্য থাকবে সে পুণ্যের দশগুণ সাওয়াব আর যাকে ইচ্ছা তাকে আরও বেশি দান করেন’’- (সূরা আল আন্‘আম ৬ : ১৬)। এ উক্তি দ্বারা বর্ণিত সর্বনিম্ন গুণ বৃদ্ধি।

(أَوْ يُحَطُّ عَنهُ أَلْفُ خَطِيْئَةٍ) এটি মূলত আল্লাহর (‘‘নিশ্চয়ই পুণ্যসমূহ পাপকে দূর করে দেয়’’- সূরা হূদ ১১ : ১১৪) এ উক্তির কারণে। আর এতে ঐ ব্যাপারে ইঙ্গিত রয়েছে যে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত পুণ্য পাপসমূহকে মিটিয়ে দেয়। ইয়াহ্ইয়ার বর্ণনাতে কিছুটা ভিন্নতা সৃষ্টি হয়েছে। অতঃপর মুহাম্মাদ বিন বাশশার তিরমিযীতে তার থেকে ‘‘ওয়াও’’ বর্ণের মাধ্যমে বর্ণনা করেছেন আর ইমাম আহমাদ ‘আলিফ’ বর্ণের মাধ্যমে বর্ণনা করেছেন। আর আমার কাছে (‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী) দু’টি বর্ণনার একটিকে অপরটির উপর প্রাধান্য দেয়ার বিষয় স্পষ্ট হয়নি। সম্ভবত দু’টি বিষয়ের মাঝে সমন্বয় সাধন করা একটিকে অপরটির উপর প্রাধান্য দেয়া অপেক্ষা উত্তম। কারী মিরকাতে বলেন, ‘‘ওয়াও’’ কখনো ‘‘আও’’ অর্থে ব্যবহৃত হয়, সুতরাং উভয় বর্ণনার মাঝে কোন বৈপরীত্য নেই। হাদীসের ভাব এভাবে হবে, নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি এ তাসবীহগুলো পাঠ করবে এমতাবস্থায় তার গুনাহ না থাকলে তার জন্য এক হাজার পুণ্য লিখা হবে আর পাপ থাকলে কিছু পাপ মিটানো হবে এবং পুণ্য লিখা হবে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)
২৩০০

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - তাসবীহ (সুবহা-নাল্ল-হ), তাহমীদ (আল হাম্‌দুলিল্লা-হ), তাহলীল (লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ) ও তাকবীর (আল্ল-হু আকবার)- বলার সাওয়াব

২৩০০-[৭] আবূ যার গিফারী(রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করা হলো, কোন্ কালাম (বাক্য) সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ? এ কথা শুনে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, যে কালাম আল্লাহ তা’আলা তাঁর মালায়িকাহ’র (ফেরেশতাগণের) জন্য পছন্দ করেছেন তা হলো, ’সুবহা-নাল্ল-হি ওয়াবিহামদিহী’। (মুসলিম)[1]

بَابُ ثَوَابُ التَّسْبِيْحِ وَالتَّحْمِيْدِ وَالتَّهْلِيْلِ وَالتَّكْبِيْرِ

وَعَنْ أَبِي ذَرٍّ قَالَ: سُئِلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَيُّ الْكَلَامِ أَفْضَلُ؟ قَالَ: مَا اصْطَفَى اللَّهُ لِمَلَائِكَتِهِ: سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ . رَوَاهُ مُسلم

وعن ابي ذر قال سىل رسول الله صلى الله عليه وسلم اي الكلام افضل قال ما اصطفى الله لملاىكته سبحان الله وبحمده رواه مسلم

ব্যাখ্যা: (لِمَلَائِكَتِه) তিনি তার মালায়িকাহর (ফেরেশতাদের) জন্য যে জিকির নির্বাচন করেছেন এবং যার উপর অটল থাকতে তাদেরকে আদেশ করেছেন তা অধিক মর্যাদাযুক্ত হওয়ার কারণে। এ হাদীসে এমন কিছু নেই যা সীমাবদ্ধতার উপর প্রমাণ বহন করে। সুতরাং যা বলা হয়ে থাকে যে, হাদীস থেকে জানা যাচ্ছে নিশ্চয়ই ফেরেশতারা শুধুমাত্র এ বাণী দ্বারা কথা বলে থাকে তা বিদূরীত হল। যেহেতু মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা) থেকে আরও অনেক জিকির তাসবীহ, দু‘আ প্রমাণিত রয়েছে।

(سُبْحَانَ اللّٰهِ وَبِحَمْدِه) ইমাম ত্বীবী বলেন, এতে মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা) সম্পর্কে বর্ণনা প্রসঙ্গে মহান আল্লাহর বাণীঃ ‘‘আর আমরা আপনার প্রশংসা সহকারে আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করি ও সাব্যস্ত করি।’’

(সূরা আল বাকারাহ্ ২ : ৩০)

এ উক্তির দিকে ইঙ্গিত রয়েছে। আর (سُبْحَانَ اللّٰهِ وَبِحَمْدِه) বিগত হওয়া চারটি বাক্য (سبحان الله والحمد لله ولا إله إلا الله والله أكبر) এর সংক্ষিপ্ত রূপ হতে পারে, কেননা (سُبْحَانَ اللّٰهِ) আল্লাহর মর্যাদার সাথে উপযুক্ত না এমন বিষয় থেকে আল্লাহর সত্তাকে পবিত্র সাব্যস্ত করা, সকল অপূর্ণাঙ্গতা থেকে তার গুণাবলীকে পবিত্র সাব্যস্ত করা নিশ্চিত করে। সুতরাং এর মাঝে (لا إله إلا الله) এর অর্থ প্রবেশ করবে এবং তার (بحمده) উক্তি (الحمد لله) এর অর্থের ক্ষেত্রে স্পষ্ট। যা (الله أكبر) এর অর্থকে আবশ্যক করে নিচ্ছে, কেননা প্রত্যেক মর্যাদা এবং মর্যাদাসমূহ যখন আল্লাহর জন্য ও আল্লাহর তরফ থেকে হবে এবং এ থেকে কোন কিছু তিনি ছাড়া অন্য কারো থেকে হবে না তখন তার অপেক্ষা বড়ও কেউ হতে পারে না। যদি তুমি বল এর মাধ্যমে তো তাসবীহ তাহলীল অপেক্ষা উত্তম হওয়া আবশ্যক হয়ে পড়ছে? উত্তরে আমি বলব, এটা আবশ্যক হয়ে পড়ছে না। কেননা তাহলীল তাওহীদের ক্ষেত্রে স্পষ্ট পক্ষান্তরে তাসবীহ তাহলীলকে অন্তর্ভুক্তকারী।

হাদীসটিকে ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেছেন। মুসলিমের অপর এক বর্ণনাতে আছে আবূ যার (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি কি তোমাকে আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় বাক্য সম্পর্কে সংবাদ দিব না? আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় বাক্য সম্পর্কে সংবাদ দিন তখন তিনি বললেন, আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় বাক্য হল (سُبْحَانَ اللّٰهِ وَبِحَمْدِه)।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)
২৩০১

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - তাসবীহ (সুবহা-নাল্ল-হ), তাহমীদ (আল হাম্‌দুলিল্লা-হ), তাহলীল (লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ) ও তাকবীর (আল্ল-হু আকবার)- বলার সাওয়াব

২৩০১-[৮] উম্মুল মু’মিনীন জুওয়াইরিয়্যাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাতের পর খুব ভোরে তাঁর নিকট হতে বের হলেন। তখন জুওয়াইরিয়্যাহ্ নিজ সালাতের জায়গায় বসা। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন ফিরে আসলেন তখন সূর্য বেশ উপরে উঠে এসেছে। আর জুওয়াইরিয়্যাহ্ তখনো সালাতের জায়গায় বসে আছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে বললেন, আমি তোমার কাছ থেকে চলে যাওয়ার সময় যে অবস্থায় তুমি ছিলে, এখনো কি সে অবস্থায় আছ? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার কাছ থেকে যাওয়ার পর আমি মাত্র চারটি কালিমাহ্ তিনবার পড়েছি, যদি তুমি এ পর্যন্ত যা পড়েছ তার সাথে আমার পড়া কালাম ওযন দেয়া হয় তাহলে এর ওযনই বেশি হবে। (বাক্যগুলো হলো)

’সুবহা-নাল্ল-হি ওয়া বিহামদিহী, ’আদাদা খলকিহী, ওয়া রিযা- নাফসিহী, ওয়া যিনাতা ’আরশিহী, ওয়া মিদা-দা কালিমা-তিহী’’

(অর্থাৎ- আল্লাহ তা’আলার পূত-পবিত্রতা বর্ণনা করি তাঁর প্রশংসার সাথে, তাঁর সৃষ্টির সংখ্যা পরিমাণ, তাঁর সন্তুষ্টি পরিমাণ, তার ’আরশের ওযন পরিমাণ ও তাঁর বাক্যসমূহের সংখ্যা পরিমাণ।)। (মুসলিম)[1]

بَابُ ثَوَابُ التَّسْبِيْحِ وَالتَّحْمِيْدِ وَالتَّهْلِيْلِ وَالتَّكْبِيْرِ

وَعَن جوَيْرِية أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَرَجَ مِنْ عِنْدِهَا بُكْرَةً حِينَ صَلَّى الصُّبْحَ وَهِيَ فِي مَسْجِدِهَا ثُمَّ رَجَعَ بَعْدَ أَنْ أَضْحَى وَهِيَ جَالِسَةٌ قَالَ: «مَا زِلْتِ عَلَى الْحَالِ الَّتِي فَارَقْتُكِ عَلَيْهَا؟» قَالَتْ: نَعَمْ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَقَدْ قُلْتُ بَعْدَكِ أَرْبَعَ كَلِمَاتٍ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ لَوْ وُزِنَتْ بِمَا قُلْتِ مُنْذُ الْيَوْمِ لَوَزَنَتْهُنَّ: سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ عَدَدَ خَلْقِهِ وَرِضَاءَ نَفْسِهِ وَزِنَةَ عَرْشِهِ وَمِدَادَ كَلِمَاته . رَوَاهُ مُسلم

وعن جويرية ان النبي صلى الله عليه وسلم خرج من عندها بكرة حين صلى الصبح وهي في مسجدها ثم رجع بعد ان اضحى وهي جالسة قال ما زلت على الحال التي فارقتك عليها قالت نعم قال النبي صلى الله عليه وسلم لقد قلت بعدك اربع كلمات ثلاث مرات لو وزنت بما قلت منذ اليوم لوزنتهن سبحان الله وبحمده عدد خلقه ورضاء نفسه وزنة عرشه ومداد كلماته رواه مسلم

ব্যাখ্যা: (وَهِىَ جَالِسَةٌ) অর্থাৎ- সে তার সালাতের স্থানেই আছে। আবূ দাঊদের এক বর্ণনাতে আছে, অতঃপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হলেন এমতাবস্থায় জুওয়াইরিয়্যাহ্ তার সালাতের স্থানে ছিলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার যখন ফিলে আসলেন তখনও জুওয়াইরিয়্যাহ্ তার সালাত আদায়স্থলে ছিলেন। আহমাদ, তিরমিযী ও নাসায়ীর এক বর্ণনাতে আছে, নিশ্চয়ই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভোরে জুওয়াইরিয়্যাহ্’র পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন এমতাবস্থায় জুওয়াইয়রিয়্যাহ্ মসজিদে দু‘আ করছিলেন, এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অর্ধ দিবসের সময় তার পাশ দিয়ে অতিক্রম করেছেন।

ইবনু মাজাতে আছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুওয়াইরিয়্যাহ্’র পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন যখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ফজরের সালাত আদায় করলেন অথবা ফজরের সালাত আদায়ের পর। এমতাবস্থায় জুওয়াইরিয়্যাহ্ আল্লাহর জিকির করছিলেন, এরপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিরে আসলেন যখন বেলা উপরে উঠে গেল অথবা বলেছেন অর্ধ দিবসে, এমতাবস্থাতে জুওয়াইরিয়্যাহ্ ঐভাবেই ছিলেন।

(وَمِدَادَ كَلِمَاتِه) কেউ কেউ বলেছেন, এর অর্থ হল সংখ্যাতে তার সমান। আবার কারো মতে নিঃশেষ না হওয়ার ক্ষেত্রে তার সমান। কেউ কেউ এটি বলেছেন যে, আধিক্যতার ক্ষেত্রে তার সমান। مَدَدٌ-এর ন্যায় (المداد) শব্দটি ক্রিয়ামূল অর্থ আধিক্যতা।

নিহায়াহ্ গ্রন্থে আছে তার সংখ্যার সমান। কেউ কেউ বলেছেন, আধিক্যতার ক্ষেত্রে কাইল, ওযন, আযান বা সীমাবদ্ধকরণ ও পরিমাপকরণের অন্যান্য মানদণ্ডের মতো বা সমান একটি মাপ। এটা একটি উপমা পেশকরণ যার মাধ্যমে নিকটবর্তীকরণ উদ্দেশ্য করা হয়। কেননা কথা পরিমাপ ও ওযনের মাঝে প্রবেশ করে না। তা কেবল সংখ্যাতে প্রবেশ করে।

বিদ্বানগণ বলেন, এখানে সংখ্যার ব্যবহার রূপক। কেননা আল্লাহর বাণীসমূহ সংখ্যা এবং অন্য কিছু দ্বারা পরিসংখ্যান করা যায় না। উদ্দেশ্য আধিক্যতার ক্ষেত্রে বেশি করা, কেননা প্রথমে সৃষ্টির সংখ্যা সীমাবদ্ধ করে এমন অধিক সংখ্যা উল্লেখিত হয়েছে। অতঃপর এর অপেক্ষা আরও বড় কিছুর দিকে অগ্রসর হয়েছে এবং এর মাধ্যমে তাকে প্রকাশ করেছে। অর্থাৎ- কোন সংখ্যা দ্বারা যাকে পরিসংখ্যান করা যায় না। যেমন আল্লাহর বাণীসমূহ পরিসংখ্যান করা যায় না। একে ইমাম নাবাবী বর্ণনা করেছেন। লাম্‘আত প্রণেতা বলেন, এটা একটি দাবীকরণ এবং আধিক্যতাতে বেশিকরণ।

সিনদী বলেন, যদি তুমি বল নিশ্চয়ই তাসবীহ সর্বাধিক পবিত্র সত্তার সাথে উপযুক্ত না এমন সকল কিছু থেকে তাকে পবিত্র সাব্যস্তকরণ বুঝানো সত্ত্বেও উল্লেখিত সংখ্যার সাথে তাসবীহকে জড়িয়ে দেয়া কিরূপে বিশুদ্ধ হতে পারে? অথচ তা তার সত্তার ক্ষেত্রে একই বিষয় যা সংখ্যাকে গ্রহণ করে না। বক্তা থেকে তা প্রকাশের বিবেচনায় তাতে এ সংখ্যা বিবেচনা করা সম্ভব না। কেননা বক্তা এ ব্যাপারে ক্ষমতা রাখে না আর যদিও ঐ ব্যাপারে বক্তার সক্ষমতাকে ধরেও নেয়া হয় তাহলে অবশ্যই তাসবীহের সাথে এ সংখ্যার সম্পর্ক বিশুদ্ধ হবে না তবে বক্তা থেকে এ সংখ্যার মাধ্যমে এবং এ ব্যাপারে দৃঢ়তা প্রকাশের পর। পক্ষান্তরে (سبحان الله) একবার বললে এ সংখ্যা অর্জন হবে না। আমি বলব, সম্ভবত এ সীমাবদ্ধতাটি বক্তা থেকে এ সংখ্যার মাধ্যমে তাসবীহ প্রকাশ পাওয়া সর্বাধিক পবিত্র সত্তার অধিকারের লক্ষ্যের সাথে জড়িত।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)
২৩০২

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - তাসবীহ (সুবহা-নাল্ল-হ), তাহমীদ (আল হাম্‌দুলিল্লা-হ), তাহলীল (লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ) ও তাকবীর (আল্ল-হু আকবার)- বলার সাওয়াব

২৩০২-[৯] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দিনে একশ’বার পড়বে

’’লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহূ লা- শারীকা লাহূ লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুওয়া ’আলা- কুল্লি শাইয়িন কদীর’’

(অর্থাৎ- আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা’বূদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শারীক নেই, তাঁরই রাজত্ব, তাঁরই প্রশংসা এবং তিনি হচ্ছেন সকল বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান)

তার দশটি গোলাম মুক্ত করে দেয়ার সমপরিমাণ সাওয়াব হবে। তার জন্য একশ’ নেকী লেখা হবে, তার একশ’টি গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে, তার জন্য এ দু’আ ঐ দিনের সন্ধ্যা পর্যন্ত শয়তান হতে বেঁচে থাকার জন্য রক্ষাকবচ হবে এবং সে যে কাজ করেছে তার চেয়ে উত্তম কাজ অন্য কেউ করতে পারবে না, কেবল ঐ ব্যক্তি ছাড়া যে এর চেয়ে বেশী পড়বে। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ ثَوَابُ التَّسْبِيْحِ وَالتَّحْمِيْدِ وَالتَّهْلِيْلِ وَالتَّكْبِيْرِ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عَلَيْهِ وَسلم: من قَالَ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ فِي يَوْمٍ مِائَةَ مَرَّةٍ كَانَتْ لَهُ عَدْلَ عَشْرِ رِقَابٍ وَكُتِبَتْ لَهُ مِائَةُ حَسَنَةٍ وَمُحِيَتْ عَنْهُ مِائَةُ سَيِّئَةٍ وَكَانَتْ لَهُ حِرْزًا مِنَ الشَّيْطَانِ يَوْمَهُ ذَلِكَ حَتَّى يُمْسِيَ وَلَمْ يَأْتِ أَحَدٌ بِأَفْضَلَ مِمَّا جَاءَ بِهِ إِلَّا رَجُلٌ عَمِلَ أَكْثَرَ مِنْهُ

وعن ابي هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من قال لا اله الا الله وحده لا شريك له له الملك وله الحمد وهو على كل شيء قدير في يوم ماىة مرة كانت له عدل عشر رقاب وكتبت له ماىة حسنة ومحيت عنه ماىة سيىة وكانت له حرزا من الشيطان يومه ذلك حتى يمسي ولم يات احد بافضل مما جاء به الا رجل عمل اكثر منه

ব্যাখ্যা: (فِىْ يَوْمٍ مِائَةَ مَرَّةٍ) এক সাথে অথবা আলাদাভাবে। (عَنْهُ مِائَةُ سَيِّئَةٍ) ত্বীবী বলেন, এ হাদীসে (لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ) পাঠ করাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ গুনাহ মোচনকারী করা হয়েছে, পক্ষান্তরে তাসবীহ এর হাদীসে তাসবীহ পাঠ করাকে সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ গুনাহ মোচনকারী করা হয়েছে। সুতরাং তাসবীহ পাঠ করা সর্বোত্তম হওয়া আবশ্যক হয়ে পড়ছে। অথচ (لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ) পাঠের হাদীসে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ) পাঠকারী তা পাঠ করে যে সাওয়াব অর্জন করবে অন্য কোন ‘আমলকারী তার অপেক্ষা উত্তম ‘আমল করতে পারবে না। এ ব্যাপারে কাযী ‘ইয়ায উত্তর প্রদান করেছেন যে, এ হাদীসে উল্লেখিত (لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ) পাঠ সর্বোত্তম, কেননা এর প্রতিদান গুনাহসমূহ মোচন করা, দশজন দাস মুক্ত করা একশত পুণ্য সাব্যস্ত করা এবং শয়তান থেকে রক্ষা পাওয়াকে অন্তর্ভুক্ত করে। (حَتّٰى يُمْسِىَ) ইবনু হাজার এক বর্ণনাতে আছে, ঐ দিন রাত পর্যন্ত। অর্থাৎ- অবশিষ্ট দিন বা পূর্ণাঙ্গ দিন। কারী বলেন, পারস্পরিক বিপরীতমুখী এর বাহ্যিক দিক হল, যখন রাত্রে বলবে তখন (لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ) পাঠ ঐ ব্যক্তির জন্য ঐ রাতে সকালে উপনীত হওয়া পর্যন্ত শয়তান থেকে রক্ষা পাওয়ার কারণ হবে। অতঃপর হাদীসের ভাষ্য বর্ণনাকারী থেকে সংক্ষিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা রাখছে অথবা বিপরীত দিক স্পষ্ট হওয়ার কারণে তিনি তা ছেড়ে দিয়েছেন।

‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেনঃ হাফেয ফাতহুল বারীতে বলেছেন, তার উক্তি ‘‘আর سبحان الله পাঠ ঐ ব্যক্তির জন্য শয়তান থেকে বাঁচার কারণ হবে’’। ইবনুস্ সুন্নী এর ২৫ পৃষ্ঠাতে ‘আব্দুল্লাহ সা‘ঈদ-এর বর্ণনাতে আছে, ‘‘সেদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত তাকে সংরক্ষণ করবেন’’ তাতে একটু বেশি উল্লেখ করেছেন যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় অনুরূপ বলবে তার জন্যও অনুরূপ হবে।

ইমাম নাবাবী বলেন, হাদীসটি প্রয়োগের বাহ্যিক দিক হল নিশ্চয়ই হাদীসটিতে উল্লেখিত এ সাওয়াব ঐ ব্যক্তির জন্য অর্জন হবে যে ব্যক্তি এ (لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ) ঐ দিনে একশতবার বলবে চাই সে তা ধারাবাহিকভাবে বলুক, চাই বৈঠকসমূহে বিচ্ছিন্নভাবে বলুক চাই এর কতক দিনের শুরুতে পাঠ করুক আর কতক দিনের শেষে পাঠ করুক। তবে উত্তম হল এগুলো দিনের শুরুতে ধারাবাহিকভাবে এক সাথে পাঠ করা যাতে সমস্ত দিন শয়তান থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এমনিভাবে রাত্রের শুরুতে যাতে সমস্ত রাত শয়তান থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

(إِلَّا رَجُلٌ عَمِلَ أَكْثَرَ مِنْهُ) অর্থাৎ- এমন ব্যক্তি ছাড়া যে তার অপেক্ষা বেশি ‘আমল করবে সে তার উপর অধিক শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করবে। ইবনু ‘আবদুল বার বলেন, হাদীসটিতে ঐ ব্যাপারে অবহিতকরণ রয়েছে, যে একশত সংখ্যা যিকিরের ক্ষেত্রে শেষ সীমা এবং খুব কম লোকই এর বেশি বলতে পারবে। এ সংখ্যার উপর বৃদ্ধি করবে। তিনি ব্যতিক্রমের বর্ণনা দিয়েছেন যাতে এ ধারণা না হয় যে, এ সংখ্যার উপর বৃদ্ধি করা নিষেধ। যেমন ঊযূর ক্ষেত্রে বারবার ‘আমল করা। তবে উদ্দেশ্য এটিও হতে পারে যে, সকল প্রকারের পুণ্য হতে কেউ তার অপেক্ষা অধিক শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে পারবে না তবে ঐ ব্যক্তি ছাড়া যে এ ব্যাপারে তার অপেক্ষা বেশি ‘আমল করবে। কাযী ‘ইয়ায-এর কথা অনুরূপ। হাদীসে একশত সংখ্যায় জিকির উল্লেখ ঐ ব্যাপারে দলীল যে, তা উল্লেখিত সাওয়াবের শেষ সীমা।

ইমাম নাবাবী বলেন, হাদীসে দলীল রয়েছে যে, যদি কোন ব্যক্তি এ (لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ) দিনে একশতবার এর অধিক পাঠ করে তাহলে একশত সংখ্যার উপর ভিত্তি করে এ ব্যক্তির জন্য হাদীসটিতে উল্লেখিত সাওয়াব থাকবে এবং একশত এর উপর বৃদ্ধি করার কারণে তার জন্য আরো সাওয়াব থাকবে। আর এটা এমন সীমাবদ্ধ সংখ্যা না যা অতিক্রম করা থেকে নিষেধ করা হয়েছে এবং সে সীমা বৃদ্ধি করতে কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই অথবা বৃদ্ধি করলে মূলটিকেই বাতিল করে দিবে। যেমন পবিত্রতা অর্জনের সংখ্যার ক্ষেত্রে এবং সালাতের রাক্‘আতের সংখ্যার ক্ষেত্রে বৃদ্ধি করা যা মূলকে বাতিল করে দেয়। আরো সম্ভাবনা আছে কল্যাণকর ‘আমলে সংখ্যা বৃদ্ধি করা হুবহু (لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ) পাঠের সংখ্যা বৃদ্ধি করা না। বৃদ্ধি করা থেকে সাধারণ বৃদ্ধি করাও উদ্দেশ্য হতে পারে চাই তা (لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ) পাঠের সংখ্যা হোক অথবা (لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ) এর সাথে অন্যান্য কিছু বৃদ্ধি করা উদ্দেশ্য হোক। এ সম্ভাবনাটিই সর্বাধিক স্পষ্ট, আর আল্লাহই সর্বজ্ঞাত। বুখারী একে (সৃষ্টির সূচনা থেকে ইবলীসের বৈশিষ্ট্য) এতে এবং দা‘ওয়াতে উল্লেখ করেছেন এবং মুসলিমও তাতে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)
২৩০৩

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - তাসবীহ (সুবহা-নাল্ল-হ), তাহমীদ (আল হাম্‌দুলিল্লা-হ), তাহলীল (লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ) ও তাকবীর (আল্ল-হু আকবার)- বলার সাওয়াব

২৩০৩-[১০] আবূ মূসা আল আশ্’আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক সফরে আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ছিলাম। লোকেরা তখন উচ্চস্বরে তাকবীর বলছিল। (তাকবীর শুনে) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে লোকেরা! তোমরা তোমাদের নাফসের উপর রহম করো। কেননা তোমরা তাকবীরের মাধ্যমে কোন বধিরকে বা কোন অনুপস্থিত সত্তাকে ডাকছ না, তোমরা ডাকছ এমন সত্তাকে যিনি তোমাদের সব কথা শুনেন ও দেখেন। তিনি তোমাদের সাথেই আছেন। তোমরা যাঁকে ডাকছ তিনি তোমাদের প্রত্যেকের বাহনের গর্দান থেকেও বেশি নিকটে। আবূ মূসা আল আশ্’আরী বলেন, আমি তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে চুপে চুপে বলছিলাম ’’লা- হাওলা ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হ’’ (অর্থাৎ- আল্লাহর সাহায্য ছাড়া আমার কোন উপায় নেই)। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ’আবদুল্লাহ ইবনু কায়স! (আবূ মূসার ডাক নাম) আমি কি তোমাকে জান্নাতের ভাণ্ডারগুলোর একটি ভাণ্ডারের সন্ধান দেব না? আমি বললাম, অবশ্যই দেবেন, হে আল্লাহর রসূল! তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সেটা হলো ’’লা- হাওলা ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হ’’। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ ثَوَابُ التَّسْبِيْحِ وَالتَّحْمِيْدِ وَالتَّهْلِيْلِ وَالتَّكْبِيْرِ

وَعَنْ أَبِي مُوسَى الْأَشْعَرِيِّ قَالَ: كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي سَفَرٍ فَجَعَلَ النَّاسُ يَجْهَرُونَ بِالتَّكْبِيرِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا أَيُّهَا النَّاسُ ارْبَعُوا عَلَى أَنْفُسِكُمْ إِنَّكُمْ لَا تَدْعُونَ أَصَمَّ وَلَا غَائِبًا إِنَّكُمْ تَدْعُونَ سَمِيعًا بَصِيرًا وَهُوَ مَعَكُمْ وَالَّذِي تَدْعُونَهُ أَقْرَبُ إِلَى أَحَدِكُمْ مِنْ عُنُقِ رَاحِلَتِهِ» قَالَ أَبُو مُوسَى: وَأَنَا خَلْفَهُ أَقُولُ: لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ فِي نَفْسِي فَقَالَ: «يَا عَبْدَ اللَّهِ بْنَ قَيْسٍ أَلَا أَدُلُّكَ عَلَى كَنْزٍ مِنْ كُنُوزِ الْجَنَّةِ؟» فَقُلْتُ: بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ: «لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ»

وعن ابي موسى الاشعري قال كنا مع رسول الله صلى الله عليه وسلم في سفر فجعل الناس يجهرون بالتكبير فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم يا ايها الناس اربعوا على انفسكم انكم لا تدعون اصم ولا غاىبا انكم تدعون سميعا بصيرا وهو معكم والذي تدعونه اقرب الى احدكم من عنق راحلته قال ابو موسى وانا خلفه اقول لا حول ولا قوة الا بالله في نفسي فقال يا عبد الله بن قيس الا ادلك على كنز من كنوز الجنة فقلت بلى يا رسول الله قال لا حول ولا قوة الا بالله

ব্যাখ্যা: (كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللّٰهِ ﷺ فِىْ سَفَرٍ) অন্য এক বর্ণনাতে যুদ্ধের কথা আছে আর এ যুদ্ধ খায়বারের যুদ্ধ। যেমন এ ব্যাপারে বুখারীর বর্ণনাতে মাগাযী পর্বে খায়বারের যুদ্ধ অধ্যায়ে স্পষ্টভাবে এসেছে।

(فَجَعَلَ النَّاسُ يَجْهَرُونَ بِالتَّكْبِيرِ) অর্থাৎ- যখনই তারা উঁচু স্থানে আরোহণ করল তাকবীরের মাধ্যমে আওয়াজ উঁচু করতেছিল এবং আওয়াজ প্রকাশে বাড়াবাড়ি করতেছিল। তাকবীর দ্বারা উদ্দেশ্য (لا إله إلا الله الله أكبر) বলা। বুখারীর এক বর্ণনাতে আছে যখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বারে যুদ্ধ করলেন মানুষ উপত্যকার উপর উঠে দেখল অতঃপর (الله أكبر الله أكبر لا إله إلا الله) তাকবীরের মাধ্যমে তাদের আওয়াজ উঁচু করল।

(ارْبَعُوا عَلَى انْفُسِكُمْ) অর্থাৎ- তোমরা তোমাদের আওয়াজ নীচু করার মাধ্যমে নিজেদের প্রতি সদয় হও, নিজের উপর কষ্ট প্রয়োগ করো না। অর্থাৎ- তাকবীর প্রকাশে তোমরা বাড়াবাড়ি করো না। অথবা নাফসের প্রতি সদয় হওয়া, তার ওপর কঠোরতা আরোপ থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে তোমাদের নিজেদের ওপর অনুগ্রহ কর। কারী বলেন, নিজেদের প্রতি সদয় হও এবং তোমাদের ক্ষতি সাধন করে এমন আওয়াজ প্রকাশ করা থেকে বিরত থাক। এতে ঐ ব্যাপারে ইঙ্গিত রয়েছে যে, তারা আওয়াজ প্রকাশ ও উঁচু করার ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করেছিল। এতে সাধারণভাবে আওয়াজ উঁচু করা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক হয়ে পড়ছে না।

(لَا تَدْعُونَ أَصَمَّ وَلَا غَائِبًا) কিরমানী বলেন, তুমি যদি বল হাদীসে (ولا أعمى) টি বলা যথোপযুক্ত ছিল। তাহলে আমি বলব, অন্ধ ব্যক্তি দৃষ্টি দ্বারা অনুভব করা থেকে গায়ব বা অন্তরায় এবং অনুপস্থিত ব্যক্তি দৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তিকে না দেখার ক্ষেত্রে অন্ধ ব্যক্তির মতো। সুতরাং তা নাফিকে (নিষেধকে) আবশ্যক করে নিয়েছে যাতে তার প্রয়োগ পূর্ণাঙ্গ, ব্যাপক হয় এবং নিকটবর্তীকে বৃদ্ধি করে। (অর্থাৎ- অন্য এক বর্ণনাতে আসছে) কেননা অনেক শ্রবণকারী ও দর্শনকারী আছে অনুভূতি থেকে দূরে থাকার কারণ শুনতে পায় না, দেখতে পায় না। সুতরাং এর মাধ্যমে তিনি নিকটবর্তী হওয়াকে সাব্যস্ত করলেন যাতে চাহিদা এবং প্রতিবন্ধক না থাকা স্পষ্ট হয়ে যায়। আর নিকটবর্তী দ্বারা পরিসীমার নিকটবর্তীতাকে উদ্দেশ্য করেননি। বরং বিদ্যার মাধ্যমে নিকটবর্তী হওয়াকে উদ্দেশ্য করেছেন। হাফেয বলেন, আওয়াজ উঁচু করা থেকে নিষেধ করার কারণে বাহ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে (غائب) শব্দের প্রয়োগ অনুকূল হয়েছে। (سميعا بصيرا) অনুরূপভাবে বুখারীর বর্ণনাতে দু‘আ শেষে যখন উপরে আরোহণ করবে তখন দু‘আ অধ্যায়ে এবং কদর পর্বে এসেছে এবং বুখারীতে মাগাযী পর্বে (سميعا قريبا) এসেছে। এভাবে মুসলিমে তাওহীদে (سميعا بصيرا قريبا) এসেছে। তিনি লাম্‘আতে বলেন, তার (سميعا) উক্তির অনুকূল হওয়ার কারণে প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও তার (بصيرا) উক্তি বৃদ্ধি করার, কারণ শব্দদ্বয় অধিকাংশ স্থানে এক সাথে উল্লেখ হয়েছে। অথবা আওয়াজ প্রকাশ করা, উঁচু করার প্রয়োজন নেই- এ কথা বর্ণনা করে দেয়ার জন্য তা অতিরিক্ত করা হয়েছে। কেননা তিনি আওয়াজ প্রকাশ ও উঁচু না করলেও শোনেন, এ ছাড়াও তিনি তোমাদেরকে দেখেন এবং তোমাদের আকৃতি গঠনের অবস্থা তিনি জানেন।

ইমাম ত্বীবী বলেন, (بصيرا) উক্তি বৃদ্ধি করার উপকারিতা হল নিশ্চয়ই (السميع) এবং (البصير) শব্দদ্বয় (السميع الأعمى) হতে অধিক অনুভূতিশীল। ইবনু হাজার বলেন, (سميعا) শব্দটি (أصم) এর বিপরীতে নিয়ে আসা হয়েছে এবং (بصيرا) কে নিয়ে আসা হয়েছে, কেননা যিকিরের ক্ষেত্রে (السميع) কে আবশ্যকীয়। যাদের পরস্পরের মাঝে অনুভূতি সম্পর্ক আছে।

(وَهُوَ مَعَكُمْ) অর্থাৎ- ব্যাপকভাবে বিদ্যা, ক্ষমতা ও আয়ত্বের মাধ্যমে বিশেষভাবে অনুগ্রহ দয়ার মাধ্যমে। কারী বলেন, তোমরা যেখানেই থাক না কেন চাই প্রকাশ্যে থাক চাই গোপনে থাক তিনি তোমাদের অবস্থা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে, বিদ্যার মাধ্যমে তোমাদের সাথে আছে। আর বাহ্যিকভাবে এটি (ولا غائبا) এর বিপরীত। অতঃপর তিনি চূড়ান্ত মর্যাদার উপর প্রমাণ বহনকারী ‘‘সাথে’’ অর্থের বিশ্লেষণ (আর তোমরা যাকে আহবান করছ তিনি তোমাদের কারো বাহনের গর্দান অপেক্ষা অধিক নিকটবর্তী) এ উক্তিকে বৃদ্ধি করেছেন। আর এ বাক্যটি মুসলিম এককভাবে বর্ণনা করেছেন, বুখারী এটি উল্লেখ করেননি। আর এটি একটি উপমা পেশকরণ ও বুঝ শক্তির নিকটবর্তীকরণ, অন্যথায় তিনি শাহরগ (গ্রীবাদেশের প্রধান রগ) থেকেও অধিক নিকটবর্তী।

ইমাম নাবাবী বলেন, তার উক্তি (هُوَ مَعَكُمْ) অর্থাৎ- বিদ্যা ও আয়ত্বের মাধ্যমে তিনি তোমাদের সাথে আছেন এবং তার উক্তি (والذى تدعونه أقرب) শেষ পর্যন্ত বিগত হয়ে যাওয়া অর্থে ব্যবহৃত। এর সারাংশ হচ্ছে নিশ্চয়ই তা রূপক যেমন আল্লাহর বাণী, وَنَحْنُ أَقْرَبُ إِلَيْهِ مِنْ حَبْلِ الْوَرِيدِ অর্থাৎ- ‘‘আমি বিদ্যার মাধ্যমে তার শাহরগ হতেও অধিক নিকটবর্তী’’- (সূরা কাফ ৫০ : ১৬)। তার গোপনীয় বিষয় থেকে আমার কাছে কোন কিছু গোপন থাকে না। যেন তার সত্তা তার অপেক্ষা নিকটবর্তী, এর সারাংশ হল বিদ্যার নিকটবর্তী অপেক্ষা সত্তার নিকটবর্তী হওয়া বৈধ। ইমাম যাহাবী কিতাবুল উলুব্বি-তে আবূল হাসান আল আশ্‘আরী থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ যেভাবে ইচছা তার সৃষ্টির নিকটবর্তী হন, যেমন তিনি বলেন, (ونحن أقرب إليه من حبل الوريد)

তার উক্তি (فى نفسى) ইমাম বুখারী একে এককভাবে বর্ণনা করেছেন আর তা দা‘ওয়াতে ও তাওহীদে আছে। আর বুখারীতে মাগাযীতে আছে, আর আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাহনের পিছনে ছিলাম।

(يَا عَبْدَ اللّٰهِ) এটি আবূ মূসার নাম।

(أَلَا أَدُلُّكَ عَلٰى كَنْزٍ مِنْ كُنُوزِ الْجَنَّةِ؟) উক্ত জিকির পাঠ গচ্ছিত সম্পদ এভাবে যে, নিশ্চয়ই তা জিকির পাঠকারীর জন্য প্রস্ত্তত রাখা হবে এবং পাঠকারীর জন্য তা সাওয়াব হিসেবে সঞ্চয় করে রাখা হবে। যা ব্যক্তি জান্নাতে পাবে আর তা দুনিয়ার গচ্ছিত সম্পদের মতো সারাংশ, নিশ্চয়ই তা জান্নাতের সঞ্চয় বা জান্নাতের উৎকৃষ্ট অর্জন।

(لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللّٰهِ) বাক্যটি উহ্য উদ্দেশের বিধেয়। যার মূলরূপ (هو أو كنز الجنة)

অর্থাৎ- এ কালিমা পাঠ করাটাই জান্নাতের গচ্ছিত সম্পদ। আর তা হলঃ لا حول ولا قوة إلا بالله

ইমাম নাবাবী বলেনঃ বিদ্বানগণ বলেন, এর কারণ হল নিশ্চয়ই এটি আত্মসমর্পণ, নিজেকে আল্লাহর কাছে সঁপে দেয়া, তার আনুগত্য স্বীকার করা। নিশ্চয়ই তিনি ছাড়া কোন স্রষ্টা নেই, তার নির্দেশের কোন প্রত্যাখ্যানকারী নেই, নিশ্চয়ই বান্দা কোন জিনিসের ক্ষমতা রাখেন না। আর এখানে (كنز) এর অর্থ হল নিশ্চয়ই তা জান্নাতের সঞ্চয় করা পুণ্য আর তা উৎকৃষ্ট পুণ্য, যেমন গচ্ছিত সম্পদ তোমাদের সর্বোৎকৃষ্ট সম্পদ। অভিধানবেত্তাগণ বলেন, (الحول) এর অর্থ কৌশল করা, অর্থাৎ- আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কোন গতি নেই, কোন সক্ষমতা নেই, কৌশল নেই।

এক মতে বলা হয়েছে, এর অর্থ কল্যাণ অর্জনে আল্লাহ ছাড়া কোন পরিবর্তনকারী নেই, কোন ক্ষমতা নেই। একমতে বলা হয়েছে, আল্লাহর সংরক্ষণ ছাড়া তাঁর অবাধ্যতা থেকে পরিবর্তনকারী কেউ নেই আর তাঁর সাহায্য ছাড়া তাঁর আনুগত্যের ব্যাপারে কোন শক্তি নেই। এ মতটি ‘আবদুল্লাহ বিন মাস্‘ঊদ থেকে বর্ণিত আছে বাযযার গ্রন্থে যা মারফূ‘ সূত্রে। হাদীসটিকে ইমাম বুখারী জিহাদ, মাগাযী, দা‘ওয়াত, কদর ও তাওহীদে সংকলন করেছেন। মুসলিম কাছাকাছি শব্দে দা‘ওয়াতে। তবে উল্লেখিত বাচনভঙ্গি বুখারী, মুসলিমের কারো না বরং তথা বুখারী মুসলিমের উভয়ের সামষ্টিকতা থেকে গৃহীত।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)
২৩০৪

পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - তাসবীহ (সুবহা-নাল্ল-হ), তাহমীদ (আল হাম্‌দুলিল্লা-হ), তাহলীল (লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ) ও তাকবীর (আল্ল-হু আকবার)- বলার সাওয়াব

২৩০৪-[১১] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ’’সুবহা-নাল্ল-হিল ’আযীম ওয়া বিহামদিহী’’ (অর্থাৎ- মহান আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করি তাঁর প্রশংসার সাথে) পড়বে, তার জন্য জান্নাতে একটি খেজুর গাছ রোপণ করা হবে। (তিরমিযী)[1]

عَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ قَالَ سُبْحَانَ اللَّهِ الْعَظِيمِ وَبِحَمْدِهِ غُرِسَتْ لَهُ نَخْلَةٌ فِي الْجَنَّةِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ

عن جابر قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من قال سبحان الله العظيم وبحمده غرست له نخلة في الجنة رواه الترمذي

ব্যাখ্যা: (نَخْلَةٌ) অর্থাৎ- প্রত্যেকবার বলার কারণে একটি করে খেজুর বৃক্ষ লাগানো হয়। নাসায়ীর বর্ণনাতে খেজুর বৃক্ষের পরিবর্তে বৃক্ষের উল্লেখ এসেছে, তবে এ সাধারণ বর্ণনাটিকে খেজুর বৃক্ষের নির্দিষ্ট বর্ণনার উপর চাপিয়ে দিতে হবে। ফলে এ ক্ষেত্রে জান্নাতের রোপণ করা বৃক্ষটি খেজুর বৃক্ষ হিসেবে সাব্যস্ত হবে।

(فِى الْجَنَّةِ) যা উল্লেখিত জিকির পাঠকারীর জন্য প্রস্ত্তত থাকবে। উদ্ধৃত অংশ থেকে বুঝা যাচ্ছে নিশ্চয়ই খেজুর জান্নাতী ফলসমূহের অন্তর্ভুক্ত। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘‘উদ্যানদ্বয়ে থাকবে ফল-মূল, খেজুর ও আনার’’- (সূরা আর্ রহমান ৫৫ : ৬৮)। এখানে খেজুরকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে অধিক উপকার, উত্তম স্বাদ এবং এর প্রতি ‘আরববাসীদের ঝোঁক থাকার কারণে। বিদ্বানগণ আরো বলেছেন, এখানে কেবল খেজুর বৃক্ষকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে, কেননা তা সর্বাধিক উপরকারী ও উত্তম বৃক্ষ। আর এ কারণেই আল্লাহ মু’মিন এবং তার ঈমানের দৃষ্টান্ত খেজুর বৃক্ষ ও তার ফল দ্বারা দিয়েছেন। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘‘আপনি লক্ষ্য করেননি কিভাবে আল্লাহ একটি উত্তম বাণীর দৃষ্টান্ত দিয়েছেন’’- (সূরা ইব্রাহীম ১৪ : ২৪)। আর তা হল একত্ববাদের বাণী, ‘‘যেমন উত্তম বৃক্ষ’’- (সূরা ইব্রাহীম ১৪ : ২৪)। আর তা হল খেজুর বৃক্ষ।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)
২৩০৫

পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - তাসবীহ (সুবহা-নাল্ল-হ), তাহমীদ (আল হাম্‌দুলিল্লা-হ), তাহলীল (লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ) ও তাকবীর (আল্ল-হু আকবার)- বলার সাওয়াব

২৩০৫-[১২] যুবায়র (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক প্রভাত যাতে আল্লাহর বান্দারা উঠেন, তাতে একজন মালাক (ফেরেশতা) এরূপ আহবান করেন যে, ’’পবিত্র বাদশাহকে পবিত্রতার সাথে স্মরণ করো’’। (তিরমিযী)[1]

وَعَنِ الزُّبَيْرِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا مِنْ صَبَاحٍ يُصْبِحُ الْعِبَادُ فِيهِ إِلَّا مُنَادٍ يُنَادِي سَبِّحُوا الْمَلِكَ القدوس» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ

وعن الزبير قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ما من صباح يصبح العباد فيه الا مناد ينادي سبحوا الملك القدوس رواه الترمذي

ব্যাখ্যা: (الْمَلِكَ الْقُدُّوْسَ) অর্থাৎ- তিনি ছাড়া যা আছে তা থেকে তিনি পবিত্র। অর্থাৎ- তোমরা বিশ্বাস রাখ নিশ্চয়ই তিনি তা থেকে পবিত্র। এখানে পবিত্রতা সৃষ্টি করা উদ্দেশ্য না, কেননা তিনি স্থায়ীভাবে পবিত্র। অথবা তোমরা তাকে পবিত্রতা বর্ণনার মাধ্যমে স্মরণ কর। কারণ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘‘আর যে কোন বস্ত্ত তার প্রশংসা সহকারে পবিত্রতা বর্ণনা করে’’- (সূরা ইসরা ১৭ : ৪৪)। এ কারণে ইমাম ত্বীবী বলেন, তোমরা (سبحان الملك القدوس) বল অথবা (سبوح قدوس رب الملائكة والروح) বল। অর্থাৎ- (سبحان الله وبحمده سبحان الله العظيم) এ উক্তির ন্যায়। (سبحان الملك القدوس) এর ব্যাপারে মালায়িকাহর (ফেরেশতার) আহবান করা থেকে উদ্দেশ্য হল মানুষকে ঐ তাসবীহ পাঠের ব্যাপারে উৎসাহিত করা।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)
২৩০৬

পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - তাসবীহ (সুবহা-নাল্ল-হ), তাহমীদ (আল হাম্‌দুলিল্লা-হ), তাহলীল (লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ) ও তাকবীর (আল্ল-হু আকবার)- বলার সাওয়াব

২৩০৬-[১৩] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সর্বোত্তম জিকির হলো, ’’লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ’’ আর সর্বোত্তম দু’আ হলো, ’’আলহামদুলিল্লা-হ’’। (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ)[1]

وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَفْضَلُ الذِّكْرِ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَفْضَلُ الدُّعَاءِ: الْحَمْدُ لِلَّهِ . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَابْن مَاجَه

وعن جابر قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم افضل الذكر لا اله الا الله وافضل الدعاء الحمد لله رواه الترمذي وابن ماجه

ব্যাখ্যা: (أَفْضَلُ الذِّكْرِ: لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ) কেননা এটি তাওহীদ তথা একত্ববাদের বাণী আর কোন কিছু একত্ববাদের বাণীর সমপর্যায়ের হতে পারে না। আর তা কুফর ও ঈমানের মাঝে পার্থক্যকারী এবং তা ইসলামের সেই দরজা যা দিয়েই ইসলামে প্রবেশ করতে হয়। আর কেননা তা আল্লাহর সাথে অন্তরকে সর্বাধিক সংযুক্তকারী এবং অন্যকে সর্বাধিক অস্বীকারকারী আত্মাকে সর্বাধিক পবিত্রকারী, মনকে সর্বাধিক স্বচ্ছকারী, আত্মার ময়লাজনিত উদ্দেশ্যকে সর্বাধিক পরিষ্কারকারী এবং শয়তানকে সর্বাধিক বিতাড়নকারী।

ইমাম ত্বীবী বলেন, কতক বিশেস্নষক বলেন, (لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ)-কে সর্বশ্রেষ্ঠ জিকির এজন্য করা হয়েছে যে, কেননা গোপনে এমন কিছু নিন্দনীয় গুণাবলী সম্পর্কে তার প্রভাব রয়েছে যেগুলো জিকিরকারীর আভ্যন্তরীণ উপাস্যসমূহ। আল্লাহ বলেন, ‘‘আপনি কি লক্ষ্য করেছেন ঐ ব্যক্তির ব্যাপারে যে তার প্রবৃত্তিকে তার উপাস্য স্বরূপ গ্রহণ করেছে’’- (সূরা আল ফুরকান ২৫ : ৪৩)। সুতরাং (لَا إِلٰهَ) দ্বারা সকল উপাস্যকে প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে এবং (إِلَّا اللّٰهُ) দ্বারা এক উপাস্যকে সাব্যস্ত করা হচ্ছে। জিকির তার জবানের প্রকাশ্য দিক থেকে তার অন্তরের গভীরে প্রত্যার্বতন করছে, অতঃপর অন্তরে তা দৃঢ় হচ্ছে এবং তা তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গসমূহের উপর প্রভাব বিস্তার করছে, আর যে তার স্বাদ আস্বাদন করেছে সে এর মিষ্টতা পেয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, কেননা এ ছাড়া ঈমান বিশুদ্ধ হয় না। আর এ ছাড়া আরো যত জিকির আছে এটি তার অন্তর্ভুক্ত না।

(وَأَفْضَلُ الدُّعَاءِ: الْحَمْدُ لِلّٰهِ) সম্ভবত এখানে দু‘আ দ্বারা সূরা আল ফাতিহাহ্ পূর্ণাঙ্গ উদ্দেশ্য। যেন এ শব্দটি সূরা ফাতিহার কেন্দ্রের স্থানে আছে। ইমাম ত্বীবী বলেন, আল্লাহর বাণী (الحمد لله) তাঁর বাণী اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيْمَ ۝ صِرَاطَ الَّذِيْنَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ এর দিকে ইঙ্গিত বা ইশারা করা অধ্যায়ের আওতাভুক্ত হতে পারে। আর কোন দু‘আটি এর অপেক্ষা বেশি উত্তম, সর্বাধিক পূর্ণাঙ্গ ও সর্বাধিক জামি‘ হতে পারে? আবার এটিও হতে পারে যে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য স্বয়ং (الحمد لله) আর এর উপর ভিত্তি করে বলা হয়েছে। এখানে (الحمد لله) এর উপর দু‘আর প্রয়োগ রূপক অধ্যায়ের অন্তর্ভুক্ত। সম্ভবত একে সর্বোত্তম দু‘আ নির্ধারণ করা হয়েছে এ দৃষ্টিকোণ থেকে যে, তা সূক্ষ্ম চাওয়া যার পথ যথার্থ।

মাযহার বলেন, (حمد)-কে কেবল এজন্য দু‘আ বলা হয়েছে, কেননা তা আল্লাহর জিকির ও তাঁর থেকে প্রয়োজন অনুসন্ধান করা সম্পর্কে একটি ভাষ্য আর (حمد) উভয়কে অন্তর্ভুক্ত করে, কেননা যে আল্লাহর হাম্দ প্রকাশ করল সে কেবল তাঁর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করল। আর নিয়ামতের উপর (حمد) পেশ করা হলো অধিক চাওয়া। মহান আল্লাহ বলেন, ‘‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় কর তাহলে আমি তোমাদেরকে আরো বেশি দিব’’- (সূরা ইব্রাহীম ১৪ : ৭)।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ২০ পর্যন্ত, সর্বমোট ২১৮ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 3 4 5 6 · · · 8 9 10 11 পরের পাতা »