১৫৪৮

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - রোগী দেখা ও রোগের সাওয়াব

১৫৪৮-[২৬] উসামাহ্ ইবনু যায়দ (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ত্বা’ঊন বা মহামারী হলো এক রকমের ’আযাব। এ ত্বা’ঊন বনী ইসরাঈলের একটি দলের ওপর নিপতিত হয়েছিল। অথবা তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের আগে যারা ছিল তাদের ওপর নিপতিত হয়েছিল। তাই তোমরা কোন জায়গায় ত্বা’ঊন-এর প্রাদুর্ভাব ঘটেছে শুনলে সেখানে যাবে না। আবার তোমরা যেখানে থাকো, মহামারী শুরু হয়ে গেলে সেখান থেকে পালিয়ে বের হয়ে যেও না। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ عِيَادَةِ الْمَرِيْضِ وَثَوَابِ الْمَرَضِ

وَعَنْ أُسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الطَّاعُونُ رِجْزٌ أُرْسِلَ عَلَى طَائِفَةٍ مِنْ بَنِي إِسْرَائِيلَ أَوْ عَلَى مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ فَإِذَا سَمِعْتُمْ بِهِ بِأَرْضٍ فَلَا تَقْدَمُوا عَلَيْهِ وَإِذَا وَقَعَ بِأَرْضٍ وَأَنْتُمْ بِهَا فَلَا تَخْرُجُوا فِرَارًا مِنْهُ»

وعن اسامة بن زيد قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «الطاعون رجز ارسل على طاىفة من بني اسراىيل او على من كان قبلكم فاذا سمعتم به بارض فلا تقدموا عليه واذا وقع بارض وانتم بها فلا تخرجوا فرارا منه»

ব্যাখ্যা: (الطَّاعُوْنُ رِجْزٌ أُرْسِلَ عَلى طَائِفَةٍ مِنْ بَنِي إِسْرَائِيْلَ) মহামারী ‘আযাব যা বানী ইসরাঈলের কোন একটি দলের প্রতি প্রেরিত হয়েছিল। ত্বীবী বলেন, এরা তারা যাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা আদেশ করেছিলেন দরজার ভিতরে প্রবেশের সময় সাজদানত করে তারা তা বিরোধিতা করল। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, فَأَرْسَلْنَا عَلَيْهِمْ رِجْزًا مِنَ السَّمَاء ‘‘আমি তাদের ওপর আসমান হতে ‘আযাব পাঠিয়েছি।’’ (সূরাহ্ আল আ‘রাফ ৭ : ১৬২)

ইবনু মালিক বলেনঃ তাদের ওপর মহামারী ‘আযাব আল্লাহ পাঠিয়েছেন ফলে স্বল্প সময়ে চবিবশ হাজার তাদের বড় বড় নেতা গোছের লোক মারা গেছে।

(أَوْ عَلى مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ) অথবা তোমাদের পূর্বে যারা ছিল তাদের প্রতি।

হাফিয ইবনু হাজার বলেনঃ এটা বর্ণনাকারীর সন্দেহ ইবনু খুযায়মার বর্ণনায় সুস্পষ্ট শব্দ

(فإنه رجز سلط على طائفة من بني إسرائيل) এটা শাস্তি যা বানী ঈসরাঈলের ওপর পতিত হয়েছিল।

ত্ববারানীতে ঘটনা এভাবে বর্ণিত হয়েছে, একজন ব্যক্তি ছিল তার নাম বাল্‘আম তার দু‘আ কবূল হত আর মূসা (আঃ) বানী ইসরাঈলের ঐ ভূমিকে আক্রমণের অভিমুখী হলেন যেখানে বাল্‘আম অবস্থান করত বাল্‘আম-এর জাতিরা তার কাছে এসে বলল, আপনি আল্লাহর নিকট তাদেরকে (মূসার) বিরুদ্ধে বদ্দু‘আ করুন। সে বলল, না, আল্লাহ আমাকে নিষেধ করেছেন। অতঃপর তার নিকট উপঢৌকন নিয়ে আসলো উপঢৌকন সে কবূল করে তারা দ্বিতীয়বার আবেদন করল। সে বলল, না, আমার রব আমাকে নিষেধ করেছে এবং তাদের কথায় ভ্রূক্ষক্ষপ করলেন না। অতঃপর তারা বলল, যদি অস্বীকার করে তাহলে তাকে হত্যা করা হবে। পরিশেষে সে বদ্দু‘আ শুরু করল তাদের (মূসা ও তার জাতির) বিরুদ্ধে কিন্তু তার জিহ্বা বানী ইসরাঈলের বিরুদ্ধে বদ্দু‘আ আওড়াতে শুরু করল মূসা (আঃ)-এর জাতির পরিবর্তে তার জাতির ওপর, অতঃপর তাকে তারা ভৎর্সনা করতে লাগল। তারপর সে বলল, আমি তোমাদেরকে তাদের ধ্বংসের ব্যাপারে পথ বলে দিব।

হাদীস শেষ পর্যন্ত আর সেখানে রয়েছে বানী ইসরাঈলের ওপর মহামারী পতিত হয়েছিল। আর একদিনে সত্তর হাজার লোক মারা গিয়েছিল।

(فَإِذَا سَمِعْتُمْ بِه بِأَرْضٍ فَلَا تَقْدَمُوْا عَلَيْهِ) অতএব যখন তোমরা কোন স্থানে তা আরম্ভ হয়েছে বলে শ্রবণ করবে তাহলে তথায় যাবে না।

আর এটা এজন্য যে, তোমাদের নিজেদের প্রশান্তি ও শায়ত্বনের (শয়তানের) কুমন্ত্রণা হতে বাঁচার জন্য।

(فَلَا تَخْرُجُوْا فِرَارًا) তোমরা মহামারীর স্থান হতে পলায়ন করবে না, কেননা পলায়নটা ভাগ্য হতে পলায়ন এবং তার বিরোধিতা করা আর হাদীস প্রমাণ করে মহামারী স্থান হতে পলায়ন করা হারাম। অনুরূপ মহামারী স্থানে প্রবেশ করাও হারাম, কেননা নিষেধাজ্ঞাটা মূলত হারামের উপর প্রমাণ বহন করে। আর আহমাদে বর্ণিত ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর হাদীস, (الفار منها كالفار من الزحف) মহামারী হতে পলায়ন করা যুদ্ধের ময়দান হতে পলায়ন করার মতো।

হাফিয ইবনু হাজার বলেন, ‘আয়ায ও অন্যান্যরা ‘উলামারা মহামারী স্থান হতে বের হওয়া বৈধ বলে মন্তব্য করেছেন (তাদের জন্য যাদের আল্লাহর ওপর ভরসা দৃঢ় রয়েছে এবং বিশ্বাস বিশুদ্ধ)। আর এটা সাহাবীগণের মধ্যে একটি দলের অভিমত তাদের মধ্যে অন্যতম আবূ মূসা আল আশ্‘আরী ও মুগীরাহ্ বিন শু‘বাহ্। আর তাবি‘ঈনদের মধ্যে আসওয়াদ বিন হিলাল এবং মাসরূক।

আবার তাদের মধ্যে কারও অভিমত ও নিষেধাজ্ঞাটা বেঁচে থাকার জন্য, ঘৃণিত হারাম না। এদের বিরোধিতা করে জমহূররা বলেন, মহামারী হতে পলায়ন করাটা হারাম হাদীসের সুস্পষ্ট নিষেধের কারণে। আর এটাই শ্রেষ্ঠ ও প্রাধান্যকর। শাফি‘ঈ ও অন্যান্যদের নিকট এটা আর এর সমর্থনে হাদীস হল যা ইবনু খুযায়মাহ্ ও আহমাদে এসেছে,

حَدِيْثُ عَائِشَةَ مَرْفُوْعًا بِسَنَدٍ حَسَنٍ. قُلْتُ: يَارَسُوْلُ اللهِ! فَمَا الطَّاعُوْنُ؟ قَالَ: غَدَةٌ كَغَدَةِ الْبَعِيْرِ، اَلْمُقِيْمُ فِيْهَا كَالشَّهِيْدُ وَالْفَارُّ مِنْهَا كَالْفَارِّ مِنَ الزَّحَفِ.

‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর হাদীসে মারফূ‘ সূত্রে ভাল সানাদে আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! মহামারী কী? তিনি বললেন, মহামারী উটের মহামারীর বা মড়কের মতো সেখানে অবস্থানকারীর মর্যাদা শাহীদদের মতো আর সে স্থান হতে পলায়নকারী যুদ্ধের ময়দান হতে পলায়ন করার মতো।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز)