পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - রোগী দেখা ও রোগের সাওয়াব
অধিকাংশ লেখকবৃন্দ এর মধ্যে মুহাদ্দিসগণ ও ফুকাহারা জানাযাহ্ পর্বকে সালাতের পরে এনেছেন। কেননা মৃত ব্যক্তির সাথে গোসল, কাফন ইত্যাদি ক্রম করা হয় বিশেষ করে তার ওপর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করা হয় যেখানে তার জন্য কবরের ’আযাব হতে মুক্তি পাওয়ার উপকারিতা বিদ্যমান থাকে। কারো মতে মানুষের দু’ অবস্থা একটি জীবিত অপরটি মৃত অবস্থা আর প্রত্যেকটির সাথে সম্পর্ক থাকে ’ইবাদাত ও মু’আমিলাতের হুকুম-আহকাম। আর গুরুত্বপূর্ণ ’ইবাদাত হচ্ছে সালাত। সুতরাং যখন জীবিতকালীন সম্পর্কিত হুকুম-আহকাম হতে মুক্ত হল তখন মৃত্যুকালীন সম্পর্কিত বিষয়াদি আলোচনা করা হল তন্মধ্যে সালাত ও অন্যান্য বিষয়।
কারো মতে, জানাযার সালাত শুরু হয়েছে হিজরীর প্রথম বৎসরে, সুতরাং যারা মক্কায় মারা গেছে তাদের ওপর সালাত আদায় হয়নি।
১৫২৩-[১] আবূ মূসা আল আশ্’আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ক্ষুধার্থকে খাবার দিও, অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যেও, বন্দী ব্যক্তিকে মুক্ত করার ব্যবস্থা করো। (বুখারী)[1]
بَابُ عِيَادَةِ الْمَرِيْضِ وَثَوَابِ الْمَرَضِ
عَنْ أَبِي مُوسَى قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَطْعِمُوا الْجَائِعَ وَعُودُوا الْمَرِيض وفكوا العاني» . رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: ক্ষুধার্থকে খাদ্য দান করা ভাল অথবা ওয়াজিব যদি ক্ষুধার্থ ব্যক্তি ক্ষুধার জালায় কাতর হয়। কারও মতে সুন্নাহ। কাতর না হলে আর কাতর হলে ফারযে কিফায়াহ্। রুগ্নকে দেখাশোনা বা সেবা-শশ্রুসা করার লোক থাকে তাহলে দেখতে যাওয়া এবং খোঁজ-খবর নেয়া সুন্নাত আর যদি কেউ না থাকে তাহলে তত্ত্বাবধান করা ওয়াজিব। তবে ইমাম বুখারী আদেশসূচক ভাষ্য দ্বারা ওয়াজিব সাব্যস্ত করেছেন এবং অধ্যায় বেঁধেছেন بَابُ وُجُوْبِ عِيْادَةِ الْمَرِيْضِ ‘রোগী ব্যক্তিকে দেখাশুনা ও খোঁজ-খবর নেয়া ওয়াজিব’ অধ্যায়।
রোগী দেখার আদাব বা বৈশিষ্ট্যঃ
১। রোগীর পাশে বেশিক্ষণ অবস্থান না করা যাতে সে বিরক্ত হয় অর্থাৎ তার পরিবারের কষ্ট হয় আর যদি অবস্থান করা জরুরী হয়ে পড়ে তাহলে বাধা নেই।
২। রোগীর শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিবে এবং নম্র্ভাবে কথা বলবে ও সান্ত্বনা দিবে হতে পারে এর মাধ্যমে রোগী নিজেকে প্রাণবন্ততা ও নবশক্তি অনুভব করবে।
বন্দীকে মুক্ত করঃ মুসলিম বন্দীকে কাফিরের হাত থেকে মুক্তির ব্যবস্থা করা অথবা অন্যায়ভাবে আটককৃত বন্দীকে মুক্তির ব্যবস্থা করা। কারো মতে বন্দী মুক্তির ব্যবস্থা করা ফারযে কিফায়াহ্। কারো মতে অর্থ হল দাসমুক্ত করা।
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - রোগী দেখা ও রোগের সাওয়াব
১৫২৪-[২] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এক মুসলিমের ওপর আর এক মুসলিমের পাঁচটি হক বর্তায়। (১) সালামের জবাব দেয়া, (২) রোগ হলে দেখতে যাওয়া, (৩) জানাযায় শামিল হওয়া, (৪) দা’ওয়াত গ্রহণ করা ও (৫) হাঁচির জবাব দেয়া। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ عِيَادَةِ الْمَرِيْضِ وَثَوَابِ الْمَرَضِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: حَقُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ خَمْسٌ: رَدُّ السَّلَامِ وَعِيَادَةُ الْمَرِيضِ وَاتِّبَاعُ الْجَنَائِزِ وَإِجَابَةُ الدعْوَة وتشميت الْعَاطِس
ব্যাখ্যা: সালামের জবাব দেয়া ফারযে আইন একজন হলে আর জামা‘আতবদ্ধ হলে ফারযে কিফায়াহ্। জানাযায় অংশগ্রহণ বলতে সালাতুল জানাযাহ্ শেষে দাফনের উদ্দেশে লাশের পেছনে চলা। তবে এটা ফারযে কিফায়াহ্। দা‘ওয়াত কবূল করা শারী‘আত অনুমোদিত যদি কোন প্রকার শার‘ঈ বা অন্য কোন বাধা না থাকে আর এটা ওয়ালীমার চেয়েও ব্যাপক। হাঁচির জবাবে يَرْحَمُكَ الله বলবে যদি সে اَلْحَمْدُ لِلّهِ বলে।
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - রোগী দেখা ও রোগের সাওয়াব
১৫২৫-[৩] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুসলিমের ওপর মুসলিমের ছয়টি হক (অধিকার) আছে। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রসূল! এ অধিকারগুলো কি কি? জবাবে তিনি বলেন, (১) কোন মুসলিমের সাথে দেখা হলে, সালাম দেবে, (২) তোমাকে কেউ দা’ওয়াত দিলে, তা কবূল করবে, (৩) তোমার কাছে কেউ কল্যাণ কামনা করলে তাকে কল্যাণের পরামর্শ দেবে, (৪) হাঁচি দিলে তার জবাব ইয়ারহামুকাল্ল-হ বলবে, (৫) কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দেখতে যাবে, (৬) কারো মৃত্যু ঘটলে তার জানাযায় শরীক হবে। (মুসলিম)[1]
بَابُ عِيَادَةِ الْمَرِيْضِ وَثَوَابِ الْمَرَضِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «حَقُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ سِتٌّ» . قِيلَ: مَا هُنَّ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: «إِذَا لَقِيتَهُ فَسَلِّمْ عَلَيْهِ وَإِذَا دَعَاكَ فَأَجِبْهُ وَإِذَا اسْتَنْصَحَكَ فَانْصَحْ لَهُ وَإِذَا عَطَسَ فَحَمِدَ اللَّهَ فَشَمِّتْهُ وَإِذَا مَرِضَ فَعُدْهُ وَإِذَا مَاتَ فَاتَّبِعْهُ» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: نَصِيْحَة ‘নাসীহাহ্’ এর নাসীহাত কৃত ব্যক্তির জন্য কল্যাণ কামনা করা তিরমিযী ও নাসায়ীর বর্ণনা এসেছে যে, যখন অনুপস্থিত ও উপস্থিত থাকবে সকল অবস্থায় কল্যাণ কামনা করবে। এ হাদীস পূর্বের হাদীসের বিরোধী নয়, সংখ্যায় অতিরিক্তটি গ্রহণযোগ্য।
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - রোগী দেখা ও রোগের সাওয়াব
১৫২৬-[৪] বারা ইবনু ’আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সাতটি আদেশ ও সাতটি কাজ করতে নিষেধ করেছেন। তিনি আমাদেরকে আদেশ করেছেন- (১) রোগীর খোঁজ-খবর নিতে, (২) জানাযায় শরীক হতে, (৩) হাঁচির আলহামদুলিল্লা-হ’র জবাবে ইয়ারহামুকাল্ল-হ বলতে, (৪) সালামের জবাব দিতে, (৫) দা’ওয়াত দিলে তা কবূল করতে, (৬) কসম করলে তা পূর্ণ করতে, (৭) মাযলূমের সাহায্য করতে।
এভাবে তিনি আমাদেরকে (১) সোনার আংটি পরতে, (২) রেশমের পোশাক, (৩) ইস্তিবরাক [মোটা রেশম], (৪) দীবাজ [পাতলা রেশম] পরতে, (৫) লাল নরম গদীতে বসতে, (৬) ক্বাস্সী ও (৭) রূপার পাত্র ব্যবহার করতে। কোন কোন বর্ণনায়, রূপার পাত্রে পান করতে নিষেধ করেছেন। কেননা যে ব্যক্তি দুনিয়াতে রূপার পাত্রে পান করবে আখিরাতে সে তাতে পান করতে পারবে না। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ عِيَادَةِ الْمَرِيْضِ وَثَوَابِ الْمَرَضِ
وَعَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ قَالَ: أَمَرَنَا النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِسَبْعٍ وَنَهَانَا عَنْ سَبْعٍ أَمَرَنَا: بِعِيَادَةِ الْمَرِيضِ وَاتِّبَاعِ الْجَنَائِزِ وَتَشْمِيتِ الْعَاطِسِ وَرَدِّ السَّلَامِ وَإِجَابَةِ الدَّاعِي وَإِبْرَارِ الْمُقْسِمِ وَنَصْرِ الْمَظْلُومِ وَنَهَانَا عَنْ خَاتَمِ الذَّهَبِ وَعَنِ الْحَرِيرِ والْإِسْتَبْرَقِ وَالدِّيبَاجِ وَالْمِيثَرَةِ الْحَمْرَاءِ وَالْقَسِّيِّ وَآنِيَةِ الْفِضَّةِ وَفِي رِوَايَةٍ وَعَنِ الشُّرْبِ فِي الْفِضَّةِ فَإِنَّهُ مَنْ شَرِبَ فِيهَا فِي الدُّنْيَا لم يشرب فِيهَا فِي الْآخِرَة
ব্যাখ্যা: الْقَسِّيِّ ‘ক্বাসসী’ সহীহুল বুখারীতে পোশাক অধ্যায়ে এর ব্যখ্যা এসেছে যে এমন কারুকার্য খচিত রেশমী কাপড় যা শাম (সিরিয়া) অথবা মিসর হতে আনা হত (তৎকালে)। জাযারী বলেনঃ মিসর হতে আমদানীকৃত রেশমযুক্ত কাত্তানী তাঁত কাপড়। রূপার পাত্র হারাম সোনার পাত্র আরও বেশি হারাম। অন্য হাদীসে সুস্পষ্টভাবে তা হারাম করেছে। আর এটা হারাম অপচয় ও অহংকারের জন্য। খাত্ত্বাবী বলেন, এ বিষয়গুলো হুকুমের বিধানের ভিন্নতা রয়েছে। ‘আম, খাস এবং ওয়াজিব। সুতরাং সোনার আংটি অনুরূপ যা উল্লেখ্য রেশম ও দিবাজ পরিধান করা খাস করে পুরুষের জন্য হারাম। আর রৌপের পাত্র ‘আমভাবে পুরুষ, মহিলা সকলের জন্য হারাম, কেননা তা অপচয় ও অহংকারের পথ।
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - রোগী দেখা ও রোগের সাওয়াব
১৫২৭-[৫] সাওবান (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন মুসলিম তার অসুস্থ কোন মুসলিম ভাইকে দেখার জন্য যখন চলতে থাকে, সে ফিরে আসা পর্যন্ত জান্নাতের ফল আহরণ করতে থাকে। (মুসলিম)[1]
بَابُ عِيَادَةِ الْمَرِيْضِ وَثَوَابِ الْمَرَضِ
وَعَنْ ثَوْبَانَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ الْمُسْلِمَ إِذَا عَادَ أَخَاهُ الْمُسلم لم يزل فِي خُرْفَةِ الْجَنَّةِ حَتَّى يَرْجِعَ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
ব্যাখ্যা: (خُرْفَةٌ) এমন ফল যখন তা পাকে বা পরিপক্ক হয়।
এখানে উদ্দেশ্য হল রাস্তা তথা রুগীকে দেখতে যাওয়া ব্যক্তি এমন এক রাস্তায় হাঁটছে যে রাস্তা তাকে জান্নাতে পৌঁছাবে।
মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে রোগীকে দেখতে যাওয়া ব্যক্তি জান্নাতের বাগানে রয়েছে যতক্ষণ না ফিরে।
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - রোগী দেখা ও রোগের সাওয়াব
১৫২৮-[৬] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন বলবেন, হে বানী আদম! আমি অসুস্থ ছিলাম। তুমি আমাকে দেখতে আসোনি। সে বলবে, হে আমার রব! আমি তোমাকে কিভাবে দেখতে যাব? তুমি তো বিশ্বজাহানের রব! আল্লাহ বলবেন, তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ ছিল? তুমি তাকে দেখতে যাওনি। তুমি কি জানতে না যে, তুমি যদি তাকে দেখতে যেতে, আমাকে অবশ্যই তার কাছে পেতে। হে আদম সন্তান! আমি তোমার কাছে খাবার চেয়েছিলাম। তুমি আমাকে খাবার দাওনি। সে বলবে, হে আমার রব! আমি তোমাকে কিভাবে খাবার দিতাম? তুমি তো বিশ্বজাহানের রব। আল্লাহ বলবেন, তুমি কি জানো না, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাবার চেয়েছিল? তুমি তাকে খাবার দাওনি। তুমি কি জানতে না যে, সে সময় যদি তুমি তাকে খাবার দিতে তাহলে তা এখন আমার কাছে পেতে? হে বানী আদম! আমি তোমার কাছে পিপাসা নিবারণের জন্য পানি চেয়েছিলাম। তুমি পানি দিয়ে তখন আমার পিপাসা নিবারণ করোনি। সে বলবে, হে আমার রব! আমি কিভাবে তোমার পিপাসা নিবারণ করতাম? তুমি তো বিশ্বজাহানের রব। আল্লাহ বলবেন, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে পানি চেয়েছিল, তুমি তখন তাকে পানি দাওনি। যদি তুমি সে সময় তাকে পানি দিতে, তাহলে তা এখন আমার কাছে পেতে। (মুসলিম)[1]
بَابُ عِيَادَةِ الْمَرِيْضِ وَثَوَابِ الْمَرَضِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِن الله عز وَجل يَقُولُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ: يَا ابْنَ آدَمَ مَرِضْتُ فَلَمْ تَعُدْنِي قَالَ: يَا رَبِّ كَيْفَ أَعُودُكَ وَأَنْتَ رَبُّ الْعَالَمِينَ؟ قَالَ: أَمَّا عَلِمْتَ أَنَّ عَبْدِي فُلَانًا مَرِضَ فَلَمْ تَعُدْهُ؟ أَمَا عَلِمْتَ أَنَّكَ لَوْ عُدْتَهُ لَوَجَدْتَنِي عِنْدَهُ؟ يَا ابْنَ آدَمَ اسْتَطْعَمْتُكَ فَلَمْ تُطْعِمْنِي قَالَ: يَا رَبِّ كَيْفَ أُطْعِمُكَ وَأَنْتَ رَبُّ الْعَالَمِينَ؟ قَالَ: أَمَا عَلِمْتَ أَنَّهُ اسْتَطْعَمَكَ عَبْدِي فُلَانٌ فَلَمْ تُطْعِمْهُ؟ أَمَا عَلِمْتَ أَنَّكَ لَوْ أَطْعَمْتَهُ لَوَجَدْتَ ذَلِكَ عِنْدِي؟ يَا ابْنَ آدَمَ اسْتَسْقَيْتُكَ فَلَمْ تَسْقِنِي قَالَ: يَا رَبِّ كَيْفَ أَسْقِيكَ وَأَنْتَ رَبُّ الْعَالَمِينَ؟ قَالَ: اسْتَسْقَاكَ عَبْدِي فُلَانٌ فَلَمْ تَسْقِهِ أما إِنَّك لَو سقيته لوجدت ذَلِك عِنْدِي . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: (إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ يَقُوْلُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ) নিশ্চয় ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) দিন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, মালাকের যবান দ্বারা অথবা সরাসরি আল্লাহ নিজেই আদামের সন্তানদের ভৎর্সনা করবেন তাঁর বন্ধুদের অধিকার ক্ষুণ্ণ করার কারণে।
(يَا ابْنَ آدَمَ مَرِضْتُ فَلَمْ تَعُدْنِي) ‘‘আমি অসুস্থ ছিলাম। তুমি আমাকে দেখতে আসোনি।’’
মুল্লা ‘আলী ক্বারী বলেনঃ পীড়িত দ্বারা বান্দার পীড়িত উদ্দেশ্য নিয়েছেন আর আল্লাহ তা‘আলা নিজের দিকে সম্বোধনের উদ্দেশ্য হল ঐ বান্দার সম্মানের জন্য, অতঃপর তাকে নিজের মর্যাদার সাথে জড়িত করেছেন। মুদ্দা কথা যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশে অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যায় সে যেন আল্লাহরই সাক্ষাৎ করে।
(كَيْفَ أَعُوْدُكَ) আপনি কিভাবে অসুস্থ হবেন আর আমি দেখতে যাব। অথচ আপনি সমস্ত জগতের প্রতিপালক আর প্রতিপালক তো তিনিই যিনি বাদশা, নেতা, ব্যবস্থাপক, প্রতিপালক এবং নি‘আমাত দানকারী আর এ গুণাবলীগুলো অসুস্থতা, ক্ষতি, প্রয়োজন হওয়া, ধ্বংস হওয়া ইত্যাদীর বিপরীত।
(أَمَا عَلِمْتَ أَنَّكَ لَوْ عُدْتَه لَوَجَدْتَنِي عِنْدَه) তুমি কি জানতে না যে, তুমি যদি তাকে দেখতে যেতে নিশ্চয় আমাকে তার নিকট পেতে। তথা তুমি পেতে আমার সন্তুষ্টি, প্রতিদান ও করুণা। অনুরূপ সম্পূর্ণ হাদীসের অর্থ এটাই দাঁড়ায় যে, তুমি যদি খাওয়াতে আমার নিকট প্রতিদান পেতে। ত্বীবী বলেন, হাদীসের এ অংশ ইঙ্গিত করে যে, রোগীকে দেখতে যাওয়া অধিক পুণ্যের কাজ খাওয়া ও পান করানোর চেয়ে।
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - রোগী দেখা ও রোগের সাওয়াব
১৫২৯-[৭] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার একজন অসুস্থ বেদুঈনকে দেখতে গেলেন। আর কোন রোগীকে দেখতে গেলে তিনি বলতেন, ’ভয় নেই, আল্লাহ চান তো তুমি খুব শীঘ্রই ভাল হয়ে যাবে। এ রোগ তোমার পবিত্র হবার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।’ এ নিয়ম অনুযায়ী তিনি বেদুঈনকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, ’ভয় নেই, তুমি ভাল হয়ে যাবে। আল্লাহর ইচ্ছায় এটা তোমার পবিত্র হবার কারণ হয়ে যাবে।’ তাঁর কথা শুনে বেদুঈন বলল, কক্ষনো নয়। বরং এটা এমন এক জ্বর, যা একজন বৃদ্ধ লোকের শরীরে ফুঁটছে। এটা তাকে কবরে নিয়ে ছাড়বে। তার কথা শুনে এবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আচ্ছা, তুমি যদি তাই বুঝে থাক তবে তোমার জন্য তা-ই হবে। (বুখারী)[1]
بَابُ عِيَادَةِ الْمَرِيْضِ وَثَوَابِ الْمَرَضِ
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلَ عَلَى أَعْرَابِيٍّ يَعُودُهُ وَكَانَ إِذَا دَخَلَ عَلَى مَرِيضٍ يَعُودُهُ قَالَ: «لَا بَأْسَ طَهُورٌ إِنْ شَاءَ اللَّهُ» فَقَالَ لَهُ: «لَا بَأْسَ طَهُورٌ إِنْ شَاءَ اللَّهُ» . قَالَ: كَلَّا بَلْ حُمَّى تَفُورُ عَلَى شَيْخٍ كَبِيرٍ تزيره الْقُبُور. فَقَالَ: «فَنعم إِذن» . رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: কারও মতে বেদুঈন ব্যক্তির নাম ক্বায়স বিন আবূ হাযিম।
(لَا بَأْسَ) তথা তোমার ওপর এ অসুস্থে কোন আশংকা ও দুর্বলতা নেই। ইবনু হাজার বলেন, নিশ্চয় অসুস্থতা গুনাহকে মিটিয়ে দেয় যদি সুস্থতা অর্জিত হয় তাহলে দু’টি উপকার হয় আর তা না হলে গুনাহ মিটানোর মাত্রা আর বেশী অর্জিত হয়। (طَهُوْرٌ إِنْ شَآءَ اللّهُ) শব্দ দ্বারা দু‘আ প্রমাণিত হয় সংবাদ হয় না।
(فقا له) বেদুঈন লোকটি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে লক্ষ্য করে বলল, আপনি কি বলছেন পবিত্রতার কারণে হবে। (كَلَّا) কখনও না তথা পবিত্রতার কারণ হবে না। মুল্লা ‘আলী ক্বারী বলেন, বিষয়টি তেমন যা তুমি বল অথবা তুমি বলবে না যে তার কথা কুফরী হওয়া ও কুফরী না হওয়া উভয় সম্ভবনা রয়েছে। এর সমর্থনে বলা যায় যে, গ্রামটি বেদুঈন লোকটি কঠিনপ্রকৃতির ছিল তার ইচ্ছা ছিল না মুরতাদ হওয়া বা মিথ্যা বলার। আর সে হতাশা বা নিরাশার সীমানায় পৌঁছেনি।
(تَفُوْرُ عَلى شَيْخٍ كَبِيْرٍ) গরমের তীব্রতা প্রকাশ পাচ্ছিল তার শরীর যেন টগবগ করছিল যেমন পাতিল টগবগ করে। إِذًا হ্যাঁ তবে (তোমার জন্য) তা হবে।
ত্বীবী বলেন, আমি তোমাকে আমার এ বক্তব্য (لا بأس عليك) (তোমার কোন ভয় বা আশংকা নেই) দ্বারা পথ দেখাচ্ছি যে, তোমার জ্বর তোমাকে তোমার গুনাহ হতে পবিত্র করাবে, সুতরাং তুমি ধৈর্য ধারণ কর এবং এর জন্য আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর, অতঃপর তুমি অস্বীকার করলে কিন্তু নিরাশা ও কুফরী ব্যক্ত করলে তেমনটি হবে যেমনটি তুমি ধারণা করেছ। এটা দ্বারা নিজকে যথেষ্ট মনে করলে না বরং আল্লাহর নি‘আমাতকে প্রত্যাখ্যান করলে আর তুমি নি‘আমাতের মধ্যে ছিলে তাকে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাগতস্বরে বললেন ইবনু তীন বলেনঃ সম্ভবত রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বিরুদ্ধে বদ্দু‘আ স্বরূপ বলেছেন।
আবার কেউ বলেছেন, হতে পারে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানতে পেরেছেন যে, এ অসুখে মারা যাবে, সুতরাং তিনি দু‘আ করছিলেন এই জ্বর যেন তার গুনাহ দূরীভূত হওয়ার কারণ হয়; অতঃপর সে মারা গেল। হতে পারে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানতেন যে বেদুঈন লোকটি এমনটি জবাব দিবে। ত্ববারানীতে অতিরিক্ত শব্দ এসেছে-
أَنَّ النَّبِيَّ - ﷺ - قَالَ لِلْأَعْرَاِبِيِّ إِذَا أَبَيْتَ فَهِيَ كَمَا تَقُوْلُ قَضَاءُ اللهِ كَائِنٌ فَمَا أَمْسى مِنَ الْغَدِ إِلَّا مَيِّتًا.
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেদুঈন লোকটিকে বললেন, যখন তুমি প্রত্যাখ্যান করলে তেমনটি হবে যেমনটি তুমি ধারণা করেছ পরের দিন সন্ধায় লোকটি মারা গেছে।
হাদীসের শিক্ষাঃ
* বাদশার জন্য তার প্রজার কোন ব্যক্তি রুগী হলে তাকে দেখতে যাওয়া সম্মানহানী নয়, ‘আলিমের জন্য সম্মানহানী নয়, অজ্ঞ রুগী ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া বরং তাকে শিক্ষা দিবে স্মরণ করাবে যা তার উপকার আসবে এবং তাকে ধৈর্যের শিক্ষা দিবে যাতে আল্লাহ তা‘আলা প্রদত্ত ভাগ্যের প্রতি তার রাগ না জন্মে এর জন্য আল্লাহও রাগ না করে তার প্রতি এবং তাকে সান্ত্বনা দিবে ব্যথা হতে। বরং তাকে ঈর্ষা করাবে তার রোগের জন্য অন্যের প্রতি তার এবং তার পরিবারের ওপর মুসীবাত আসাতে।
* আর রুগী ব্যক্তির উচিত হবে সে সাক্ষাৎ প্রার্থীর উপদেশ ভালভাবে গ্রহণ করবে এবং যে এ সমস্ত উপদেশ দিবে চমৎকার জবাব তাকে দিবে।
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - রোগী দেখা ও রোগের সাওয়াব
১৫৩০-[৮] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদের কারো অসুখ হলে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ডান হাত রোগীর গায়ে বুলিয়ে দিয়ে বলতেন, হে মানুষের রব! এ ব্যক্তির রোগ দূর করে দিন। তাকে নিরাময় করে দিন। নিরাময় করার মালিক আপনিই। আপনার নিরাময় ছাড়া আর কোন নিরাময় নেই। এমন নিরাময় যা কোন রোগকে বাকী রাখে না। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ عِيَادَةِ الْمَرِيْضِ وَثَوَابِ الْمَرَضِ
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا اشْتَكَى مِنَّا إِنْسَانٌ مَسَحَهُ بِيَمِينِهِ ثُمَّ قَالَ: «أَذْهِبِ الْبَاسَ رَبَّ النَّاسِ وَاشْفِ أَنْتَ الشَّافِي لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ شِفَاءٌ لَا يُغَادِرُ سَقَمًا»
ব্যাখ্যা: হাদীসের ভাষ্য মতে ডান হাত দিয়ে রুগী ব্যক্তিকে মাসাহ করা ভাল এবং তার জন্য দু‘আ করা। ইমাম নাবাবী বলেনঃ কিতাবুল আযকারে আমি অনেক সহীহ দু‘আসমূহের বর্ণনা একত্রিত করেছি আর এই দু‘আটি হচ্ছে তন্মধ্যে রুগী ব্যক্তির জন্য রোগমুক্তি কামনা করে দু‘আ করা সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে এজন্য যে, অসংখ্য হাদীসে এসেছে রোগ গুনাহসমূহের কাফফারাহ্ তথা গুনাহসমূহকে মিটিয়ে দেয় এর প্রতিদান রয়েছে। এর জবাব মূলত দু‘আ একটি ‘ইবাদাত, কেননা তা সাওয়াব ও কাফফারার বিরোধী না দু’টিই অর্জিত হয় রোগের প্রথম অবস্থায় এবং তার উপর ধৈর্য ধরার মাধ্যমে দু‘আকারী উত্তমভাবে ব্যক্ত করে থাকেন, হতে পারে তার জন্য তার উদ্দেশ্য সফল হবে অথবা এর পরিবর্তে উপকার আসবে বা ক্ষতি দূরীভূত হবে। আর প্রত্যেকটিই আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহ।
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - রোগী দেখা ও রোগের সাওয়াব
১৫৩১-[৯] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন মানুষ তার দেহের কোন অংশে ব্যথা পেলে অথবা কোথাও ফোড়া কিংবা বাঘী উঠলে বা আহত হলে আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ঐ স্থানে তাঁর আঙ্গুল বুলাতে বুলাতে বলতেন, ’’বিসমিল্লা-হি তুরবাতু আরযিনা- বিরীক্বাতি বা’যিনা- লিইউশফা- সাক্বীমুনা- বিইযনি রব্বিনা-’’ (অর্থাৎ আল্লাহর নামে আমাদের জমিনের মাটি আমাদের কারো মুখের থুথুর সাথে মিশে আমাদের রোগীকে ভাল করবে, আমাদের মহান রবের নির্দেশে)। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ عِيَادَةِ الْمَرِيْضِ وَثَوَابِ الْمَرَضِ
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: كَانَ إِذَا اشْتَكَى الْإِنْسَانُ الشَّيْءَ مِنْهُ أَوْ كَانَتْ بِهِ قَرْحَةٌ أَوْ جُرْحٌ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِأُصْبُعِهِ: «بِسْمِ اللَّهِ تُرْبَةُ أَرْضِنَا بِرِيقَةِ بَعْضِنَا لِيُشْفَى سَقِيمُنَا بِإِذن رَبنَا»
ব্যাখ্যা: (بِسْمِ اللّهِ تُرْبَةُ أَرْضِنَا بِرِيقَةِ بَعْضِنَا) ‘আল্লাহর নামে আমাদের জমিনের মাটি আমাদের কারও থুথুর সাথে মিশে’ এটা প্রমাণ করে ঝাড়ফুঁকের সময় থুথু ফেলা বৈধ।
ইমাম নাবাবী বলেন, এখানে আমাদের জমিন দ্বারা উদ্দেশ্য জমিনের সমষ্টি তথা যে কোন জমিন।
কারও মতেঃ মদীনার জমিন নির্দিষ্ট কর খাস তার বারাকাতের জন্য। থুথু বলতে সামান্য থুথু।
(بَعْضُنَا) আমাদের কেউ বলতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদ্দেশ্য তাঁর থুথু শ্রেষ্ঠ হওয়ার জন্য, সুতরাং এটা তাঁর জন্যই খাস। এ বক্তব্যটিতে আপত্তি আছে।
নাবাবী বলেনঃ হাদীসের ভাষ্যমতে যে নিজের থুথু শাহাদাত আঙ্গুলে নিবে, অতঃপর তা মাটিতে রাখবে এবং তা হতে কিছু আঙ্গুলের সাথে মিশাবে, অতঃপর তা দ্বারা ক্ষতস্থানে বা পীড়িত স্থানে মাসাহ করবে আর মাসাহের সময় এই বাক্যগুলো (... بِسْمِ اللّهِ) পড়বে।
আমি ভাষ্যকার বলিঃ এটা মদীনার মাটি বা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে নির্ধারিত না বরং পৃথিবীর যে কোন জমিন ও সামান্য থুথু যে ঝাড়ফুঁক করবে। সুতরাং এমনটি করা বৈধ বরং এটা করা মুস্তাহাব ঝাড়ফুঁকের সময় প্রত্যেক স্থানে। কুরতুবী বরেন, হাদীসে দলীল হবার প্রমাণ করে যে কোন ব্যাখ্যায় ঝাড়ফুঁক বৈধ।
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - রোগী দেখা ও রোগের সাওয়াব
১৫৩২-[১০] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্থ হলে(مُعَوِّذَاتِ) ’’মু’আব্বিযা-ত’’ অর্থাৎ সূরাহ্ আন্ নাস ও সূরাহ্ আল ফালাক্ব পড়ে নিজের শরীরের উপর ফুঁ দিতেন এবং নিজের হাত দিয়ে শরীর মুছে ফেলতেন। তিনি মৃত্যুজনিত রোগে আক্রান্ত হলে আমি মু্বিব্বিযাত পড়ে তাঁর শরীরে ফুঁ দিতাম, যেসব মু’আব্বিযাত পড়ে তিনি নিজে ফুঁ দিতেন। তবে আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাত দিয়েই তাঁর শরীর মুছে দিতাম। (বুখারী, মুসলিম)[1]
মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেছেন, তাঁর পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে তিনি ’’মু’আব্বিযাত’’ পড়ে তার গায়ে ফুঁ দিতেন।
بَابُ عِيَادَةِ الْمَرِيْضِ وَثَوَابِ الْمَرَضِ
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا اشْتَكَى نَفَثَ عَلَى نَفْسِهِ بِالْمُعَوِّذَاتِ وَمَسَحَ عَنْهُ بِيَدِهِ فَلَمَّا اشْتَكَى وَجَعَهُ الَّذِي تُوُفِّيَ فِيهِ كُنْتُ أَنْفِثُ عَلَيْهِ بِالْمُعَوِّذَاتِ الَّتِي كَانَ يَنْفِثُ وَأَمْسَحُ بِيَدِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
وَفِي رِوَايَةٍ لِمُسْلِمٍ قَالَتْ: كَانَ إِذَا مَرِضَ أَحَدٌ مِنْ أَهْلِ بَيْتِهِ نَفَثَ عَلَيْهِ بِالْمُعَوِّذَاتِ
ব্যাখ্যা: (مُعَوِّذَاتِ) ‘‘মু‘আব্বিযা-ত’’ দ্বারা উদ্দেশ্য সূরাহ্ নাস, ফালাক্ব ও ইখলাস অথবা শুধুমাত্র সূরাহ্ নাস ও ফালাক্ব। আবার কারও মতে কুরআনের প্রত্যেক ঐ আয়াত আশ্রয় হিসেবে এসেছে যেমন আল্লাহর বাণীঃ
وَقُلْ رَبِّ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِيْنِ وَأَعُوْذُ بِكَ رَبِّ أَنْ يَحْضُرُوْنِ
‘‘বলুন, হে আমার পালনকর্তা! আমি শায়ত্বনের (শয়তানের) প্ররোচনা থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি এবং হে আমার পালনকর্তা! আমার নিকট তাদের উপস্থিতি থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি।’’ (সূরাহ্ আল মু’মিনূন ২৩ : ৯৭-৯৮)
(مَسَحَ عَنْهُ بِيَدِه) নিজের হাত দ্বারা শরীর মুছতেন। বুখারীতে অন্য হাদীসে মাসাহ করার পদ্ধতি সম্পর্কে এসেছে, ‘‘মা‘মার বলেন, আমি ইবনু শিহাবকে জিজ্ঞেস করি তিনি কিভাবে ফুঁ দিতেন, জবাবে বললেন তার দু’হাতে ফুঁ দিতেন, অতঃপর তা দ্বারা নিজের চেহারা মুছতেন।’’
অন্য বর্ণনায় এসেছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বিছানায় আসতেন সূরাহ্ ইখলাস নাস ও ফালাক্ব পড়ার মাধ্যমে হাতের দু’তালুতে ফুঁ দিতেন, অতঃপর তা দ্বারা তাঁর চেহারা আর তাঁর দু’হাত শরীরে যতদূর পর্যন্ত পৌঁছত মুছতেন। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, যখন ব্যথা অনুভব করতেন আমাকে বলতেন অনুরূপ যেন করি।
হাদীসে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহর কালাম দ্বারা ঝাড়ফুঁক করা ও ফুঁ দেয়া সুন্নাহ। নাবাবী বলেন, ঝাড়ফুঁকের সময় ফুঁ দেয়া মুস্তাহাব। এরূপ বৈধতার ব্যপারে সবাই ঐকমত্য পোষণ করেছেন আর এমনটি মুস্তাহাব মনে করেছেন সাহাবীরা, তাবি‘ঈরা ও তাদের পরবর্তী প্রজন্ম।
হাফিয ইবনু হাজার বলেনঃ ‘উলামারা ঝাড়ফুঁক বৈধ বলেছেন তিনটি শর্তের উপর
১। ঝাড়ফুঁকের শব্দ হবে আল্লাহর কালাম বা তার নাম ও গুণাবলীর মাধ্যমে আরবী ভাষায়
২। যে পড়বে সে যেন পঠিত বিষয়ের অর্থ বুঝতে পারে।
৩। এ বিশ্বাস রাখতে হবে ঝাড়ফুঁকের নিজস্ব কোন প্রভাব নেই বরং আল্লাহ তা‘আলা ভাল করবেন।
রবী‘ বলেনঃ আমি শাফি‘ঈকে ঝাড়ফুঁক সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি জবাবে বললেন, এতে বাধা নেই যদি আল্লাহর কিতাব দিয়ে ও এমন আল্লাহর যিকর-আযকার দিয়ে যা পরিচিত ঝাড়ফুঁক হয়।
আমি বললাম, ইয়াহূদীরা কি মুসলিমদেরকে ঝাড়ফুঁক করতে পারবে? জবাবে বললেন, হ্যাঁ তবে যদি ঝাড়ফুঁক করে আল্লাহর কিতাব ও যিকর-আযকার দিয়ে।
মুয়াত্ত্বায় রয়েছেঃ আবূ বাকর সিদ্দীক্ব (রাঃ) ইয়াহূদী মহিলাকে বললেন, যে মহিলা ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে ঝাড়ফুঁক করেছিল তুমি তাকে ঝাড়ফুঁক কর আল্লাহর কিতাব দিয়ে।
ইবনু ওয়াহ্ব মালিক হতে বর্ননা করে বলেন, তিনি ঘৃণা করতেন লোহা, লবণ এবং সুতায় গিরা দেয়া আর যা সুলায়মান-এর আংটিতে লেখা হত ইত্যাদি দ্বারা ঝাড়ফুঁক করা। আরো বলেন, পূর্ববর্তী লোকের এমন প্রথা ছিল না।
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - রোগী দেখা ও রোগের সাওয়াব
১৫৩৩-[১১] ’উসমান ইবনু আবুল ’আস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে তাঁর শরীরে অনুভূত একটি ব্যথার কথা জানালেন। এ কথা শুনে আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, যে জায়গায় তুমি ব্যথা অনুভব করো সেখানে তোমার হাত রাখো। তারপর তিনবার ’’বিসমিল্লা-হ’’ (অর্থাৎ আল্লাহর নামে) আর সাতবার বলো, ’’আ’ঊযু বি’ইযযাতিল্ল-হি ওয়া কুদ্রাতিহী মিন্ শার্রি মা- আজিদু ওয়াউহা-যির’’ (অর্থাৎ আমি আল্লাহর সম্মান ও তাঁর ক্ষমতার আশ্রয় নিচ্ছি, যা আমি অনুভব করছি ও আশংকা করছি তাঁর ক্ষতি হতে)।
’উসমান ইবনু আবুল ’আস বলেন, আমি তা করলাম। ফলে আমার শরীরে যে ব্যথা-বেদনা ছিল তা আল্লাহ দূর করে দিলেন। (মুসলিম)[1]
بَابُ عِيَادَةِ الْمَرِيْضِ وَثَوَابِ الْمَرَضِ
وَعَنْ عُثْمَانَ بْنِ أَبِي الْعَاصِ أَنَّهُ شَكَا إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَجَعًا يَجِدُهُ فِي جَسَدِهِ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ضَعْ يَدَكَ عَلَى الَّذِي يَأْلَمُ مِنْ جَسَدِكَ وَقُلْ: بِسْمِ اللَّهِ ثَلَاثًا وَقُلْ سَبْعَ مَرَّاتٍ: أَعُوذُ بِعِزَّةِ اللَّهِ وَقُدْرَتِهِ مِنْ شَرِّ مَا أَجِدُ وَأُحَاذِرُ . قَالَ: فَفَعَلْتُ فَأَذْهَبَ اللَّهُ مَا كَانَ بِي. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: তিরমিযী ও আবূ দাঊদ-এর বর্ণনায় এসেছে, (أَمْسَحَهُ بِيَمِيْنِكَ) তোমরা ডান হাত দিয়ে তাকে মুছ।
ইবনু মাজার বর্ণনায়, (إِجْعَلْ يَدَكَ الْيُمْنى عَلَيْهِ) তোমার ডান হাত তার উপর রাখ।
ত্বরাবানী ও হাকিম-এর বর্ণনায়, (ضَعْ يَمِيْنَكَ عَلَى الْمَكَانِ الَّذِيْ تَشْتَكِيْ فَامْسَحْ بِهَا سَبْعَ مَرَّاتٍ) তোমার ডান হাত বেদনার স্থানে রাখ এবং হাত দিয়ে সাতবার মুছ বা মাসাহ কর।
সুতরাং ডান হাত ব্যথার স্থানে রাখা দু‘আসহ মুস্তাহাব।
(قُلْ: بِسْمِ اللّهِ ثَلَاثًا) তুমি বিস্মিল্লা-হ তিনবার বল। শাওকানী বলেনঃ সংখ্যার বিষয়টি এ হাদীসে উত্থাপিত হওয়াটা নাবীদের একান্ত গুপ্ত বিষয় এর কারণ আমরা অনুসন্ধান করব না।
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - রোগী দেখা ও রোগের সাওয়াব
১৫৩৪-[১২] আবূ সা’ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। একবার জিবরীল (আঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বললেন, হে মুহাম্মাদ! আপনি কি অসুস্থতা বোধ করছেন? জবাবে তিনি বললেন, হ্যাঁ! জিবরীল (আঃ) বললেন, আপনাকে কষ্ট দেয় এমন সব বিষয়ে আল্লাহর নামে আপনাকে ঝাড়ফুঁক দিচ্ছি প্রত্যেক ব্যক্তির অকল্যাণ হতে। অথবা তিনি বলেছেন, প্রত্যেক বিদ্বেষী চোখের অকল্যাণ হতে। আল্লাহ আপনাকে আরোগ্য করুন। আল্লাহর নামে আপনাকে ঝাড়ছি। (মুসলিম)[1]
بَابُ عِيَادَةِ الْمَرِيْضِ وَثَوَابِ الْمَرَضِ
وَعَن أبي سعيد الْخُدْرِيّ أَن جِبْرِيلَ أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ أَشْتَكَيْتَ؟ فَقَالَ: «نَعَمْ» . قَالَ: بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيكَ مِنْ شرك كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ اللَّهُ يَشْفِيكَ بِسم الله أرقيك. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: (بِسْمِ اللّهِ أَرْقِيْكَ) ‘আল্লাহর নামে তোমাকে ঝাড়ফুঁক করছি’ বাক্যটি দু‘আর শুরুতে এবং শেষেও আনা হয়েছে মুবালাগার জন্য আর এদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে আল্লাহ ছাড়া আর কেউ উপকারকারী নেই।
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - রোগী দেখা ও রোগের সাওয়াব
১৫৩৫-[১৩] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান ও হুসায়ন (রাঃ)-কে এ ভাষায় দু’আ করে আল্লাহর হাতে সোপর্দ করতেন। তিনি বলতেন, ’আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালিমার মাধ্যমে প্রত্যেক শায়ত্বনের (শয়তানের) অনিষ্ট হতে, প্রত্যেক ধ্বংসকারী হিংস্র জন্তু জানোয়ারের ধ্বংস হতে, প্রত্যেক কুদৃষ্টিসম্পন্ন চোখ হতে তোমাদেরকে আল্লাহর আশ্রয়ে সোপর্দ করছি। তিনি আরো বলতেন, তোমাদের পিতা ইব্রাহীম (আঃ) এ কালিমার দ্বারা তাঁর সন্তান ইসমা’ঈল ও ইসহাককে আল্লাহর কাছে সোপর্দ করতেন। বুখারী; মাসাবীহ সংস্করণের অধিকাংশ স্থানে ’বিহা’ শব্দের জায়গায় بهما (বিহিমা-) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে দ্বিবচন শব্দে।[1]
بَابُ عِيَادَةِ الْمَرِيْضِ وَثَوَابِ الْمَرَضِ
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم يعوذ الْحسن وَالْحسن: «أُعِيذُكُمَا بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ» وَيَقُولُ: «إِنَّ أَبَاكُمَا كَانَ يعوذ بهما إِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ» . رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ وَفِي أَكْثَرِ نُسَخِ المصابيح: «بهما» على لفظ التَّثْنِيَة
ব্যাখ্যা: (بِكَلِمَاتِ اللّهِ) আল্লাহর কালাম দ্বারা উদ্দেশ্য ‘আমভাবে তার কালাম বা বাক্য। অথবা সূরাহ্ নাস ও ফালাক্ব অথবা কুরআনুল কারীম। কারও মতেঃ আল্লাহর নামসমূহ ও গুণাবলী দ্বারা। (تَامَّةِ) পরিপূর্ণ। উপকারী, আরোগ্যকারী, বারাকাতপূর্ণ, পুরাকারী যা হতে আশ্রয় চাওয়া হয় তা প্রতিরোধে।
জাযারী বলেনঃ আল্লাহর কালামের গুণ তামাম তথা পরিপূর্ণ ব্যবহৃত হয়েছে এজন্য যে, তার কালামে কোন দোষ ত্রুটি বলা বৈধ হবে না যেমনটি মানুষের কালামে বা ত্রুটি রয়েছে।
কারও মতে তামাম দ্বারা উদ্দেশে তা আশ্রয় প্রার্থনা করাকে উপকার দিবে এবং সকল প্রকার বিপদাপদ হতে রক্ষা করবে এবং এটাই যথেষ্ট হবে।
আহমাদ বিন হাম্বাল (بِكَلِمَاتِ اللّهِ التَّامَّةِ) (আল্লাহর পূর্ণ বাক্যসমূহ) দ্বারা দলীল গ্রহণ করেছেন যে, কুরআন সৃষ্ট না আর সৃষ্টজীবের বাক্যসমূহ ত্রুটিপূর্ণ। সুতরাং تمام গুণ নিয়ে আসা প্রমাণ আল্লাহর কালাম সৃষ্ট না। তিনি আরও প্রমাণ করেছেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন সৃষ্ট (বস্ত্ত বা জীব) দিয়ে আশ্রয় প্রার্থনা করেননি। প্রত্যেক শায়ত্বন (শয়তান) হতে তা মানব জাতির মধ্যে হতে পারে আবার জিন জাতির মধ্যে হতে পারে (هَامَّةٌ) যা পৃথিবীতে বিচরণ করে এবং মানুষকে কষ্ট দেয়। কারও মতেঃ বিষধর প্রাণী। আর শাওকানী বলেন, এটা বিষধরের চেয়ে ‘আম যেমন হাদীসে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন (أَيُؤْذِيْكَ هَوَامُّ رَأسِكَ) তোমার মাথার ব্যথা কি তোমাকে কষ্ট দিচ্ছে।
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - রোগী দেখা ও রোগের সাওয়াব
১৫৩৬-[১৪] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে বিপদগ্রস্ত করেন। (বুখারী)[1]
بَابُ عِيَادَةِ الْمَرِيْضِ وَثَوَابِ الْمَرَضِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ يُرِدِ اللَّهُ بِهِ خَيْرًا يُصِبْ مِنْهُ» . رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে বিপদগ্রস্ত করেন যাতে তাকে পরিচ্ছন্ন করে তুলেন তার গুনাহ হতে এবং তাকে মর্যাদা দান করেন।
অন্য হাদীসে এসেছে, আল্লাহ যখন কোন জাতিকে ভালবাসেন তখন তাদেরকে পরীক্ষা করেন, যে ধৈর্য ধারণ করে তার জন্য ধৈর্য আর যে অস্থিরতা প্রকাশ করে তার জন্য অস্থিরতা।
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - রোগী দেখা ও রোগের সাওয়াব
১৫৩৭-[১৫] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) ও আবূ সা’ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মুসলিমের ওপর এমন কোন বিপদ আসে না, কোন রোগ, কোন ভাবনা, কোন চিন্তা, কোন দুঃখ-কষ্ট হয় না, এমনকি তার গায়ে একটি কাঁটাও ফুটে না, যার দ্বারা আল্লাহ তার গুনাহগুলো মাফ না করেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ عِيَادَةِ الْمَرِيْضِ وَثَوَابِ الْمَرَضِ
وَعَن أبي هُرَيْرَة وَأبي سَعِيدٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَا يُصِيبُ الْمُسْلِمَ مِنْ نَصَبٍ وَلَا وَصَبٍ وَلَا هَمٍّ وَلَا حُزْنٍ وَلَا أَذًى وَلَا غَمٍّ حَتَّى الشَّوْكَةُ يُشَاكُهَا إِلَّا كَفَّرَ اللَّهُ بهَا من خطاياه»
ব্যাখ্যা: (نَصَبْ) বলতে শরীরে ক্ষত বা অন্যান্য কারণে যে ব্যথা ও দুর্বলতা হয়।
(وَصَب) বলতে এমন ব্যথা ও রোগ যা সর্বদা লেগে থাকে। هم وحزن বলতে হাফিয ইবনু হাজার বলেন, দু’টোই গোপনীয় রোগ। কারও মতে (هَمٌّ) বলতে এমন চিন্তা যা সামনে আসবে আর (حُزْنٌ) যা অতিবাহিত হয়েছে।
(أَذًى) কষ্ট ইতিপূর্বে যা গেছে সেগুলোর চেয়ে এটা ‘আম। কারও মতে এটা খাস তা হল অন্য লোকের পক্ষ হতে যা আসে (غَمٌّ) গোপন রোগ যা অন্তরকে সংকীর্ণ করে তোলে।
কারও মতে এমন চিন্তা যা অজ্ঞানের বা বেহুশের কাছাকাছি নিয়ে যায়। আর (حُزْنٌ) এর চেয়ে সহজ।
ইবনু হাজার বলেন, এ তিনটি শব্দ (هَمٌّ غَمٌّ حُزْنٌ)। (هَمٌّ) হল যা চিন্তা থেকে আসে এর কারণে তাকে কষ্ট দেয়।
(غَمٌّ) মুসীবাত যা অন্তরের জন্য হয়। (حُزْنٌ) বলতে কোন কিছু খোয়া বা হারিয়ে যাওয়ার কারণে যে শংকা তৈরি হয়।
(إِلَّا كَفَّرَ اللّهُ بهَا من خطاياه) সকল গুনাহ মিটিয়ে দেন দৃশ্যত সকল গুনাহ ‘আমভাবে কিন্তু জমহূর ‘উলামারা সগীরাহ্ গুনাহ খাস করেছেন। কেননা হাদীসে এসেছে, এক সালাত হতে অপর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) এক জুমু‘আহ্ হতে আরেক জুমু‘আহ্ এক রমাযান হতে আরেক রমাযান এর মাঝে যত গুনাহ হয় সেগুলো মিটিয়ে দেয় তবে কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ না। সুতরাং মুতলাক্ব তথা সাধারণ হাদীসগুলো তারা এ হাদীসের উপর সীমাবদ্ধ করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - রোগী দেখা ও রোগের সাওয়াব
১৫৩৮-[১৬] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে গেলাম। তিনি সে সময় জ্বরে ভুগছিলেন। আমি আমার হাত দিয়ে তাঁকে স্পর্শ করলাম এবং বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনার তো বেশ জ্বর! জবাবে তিনি বললেন, হ্যাঁ, তোমাদের দু’জনে যা ভোগ করে আমি তা ভুগছি।
’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, এর কারণ, আপনার জন্য দু’গুণ পুরস্কার রয়েছে? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হ্যাঁ। তারপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কোন মুসলিমের প্রতি যে কোন কষ্ট পৌঁছে থাক না কেন চাই তা রোগ হোক বা অপর কিছু হোক আল্লাহ তা’আলা তা দ্বারা তার গুনাহসমূহ ঝেড়ে দেন যেভাবে গাছ তার পাতা ঝাড়ে। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ عِيَادَةِ الْمَرِيْضِ وَثَوَابِ الْمَرَضِ
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: دَخَلْتُ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يُوعَكُ فَمَسِسْتُهُ بِيَدِي فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّكَ لَتُوعَكُ وَعْكًا شَدِيدًا. فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَجَلْ إِنِّي أُوعَكُ كَمَا يُوعَكُ رَجُلَانِ مِنْكُمْ» . قَالَ: فَقُلْتُ: ذَلِكَ لِأَنَّ لَكَ أَجْرَيْنِ؟ فَقَالَ: «أَجَلْ» . ثُمَّ قَالَ: «مَا مِنْ مُسْلِمٍ يُصِيبُهُ أَذًى مِنْ مَرَضٍ فَمَا سِوَاهُ إِلَّا حَطَّ اللَّهُ تَعَالَى بِهِ سَيِّئَاتِهِ كَمَا تَحُطُّ الشَّجَرَةُ وَرَقَهَا»
ব্যাখ্যা: ইবনু হাজার বলেনঃ হাদীসের সার নির্যাস হল যখন রোগ কঠিন হবে প্রতিদানও তেমন দ্বিগুণ হবে, এর পরেও তার ওপর রোগ বৃদ্ধি পেলে প্রতিদানও সবের্বাচ্চ পর্যায়ে পৌঁছবে এমনকি সকল গুনাহ মিটিয়ে যাবে।
অথবা অর্থঃ হ্যাঁ রোগ কঠিন হওয়ার কারণে মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে এবং গুনাহসমূহকে মিটিয়ে দেয়া হবে শেষ পর্যন্ত তার আর কোন গুনাহ থাকবে না। এমন মর্মার্থের দিকে সা‘দ-এর হাদীস প্রমাণ বহন করে যা দারিমী ও নাসায়ীতে এসেছে আর তা তিরমিযী ও ইবনু হিব্বান সহীহ বলে মন্তব্য করেছেন যেখানে বলা হয়েছে (حتى يمشي على الأرض وما عليه خطيئه) পৃথিবীতে সে চলবে (সুস্থ হবে) এমতাবস্থায় তার আর কোন গুনাহ থাকবে না।
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - রোগী দেখা ও রোগের সাওয়াব
১৫৩৯-[১৭] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বেশী রোগযন্ত্রণায় কষ্ট পেতে হয়েছে এমন কাউকে দেখিনি। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ عِيَادَةِ الْمَرِيْضِ وَثَوَابِ الْمَرَضِ
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: مَا رَأَيْتُ أَحَدًا الْوَجَعُ عَلَيْهِ أَشَدُّ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - রোগী দেখা ও রোগের সাওয়াব
১৫৪০-[১৮] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার বুক ও চিবুকের মাঝে মাথা রেখে মৃত্যুবরণ করেছেন। তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পর আর কারো মৃত্যু যন্ত্রণাকে আমি খারাপ মনে করি না। (বুখারী)[1]
بَابُ عِيَادَةِ الْمَرِيْضِ وَثَوَابِ الْمَرَضِ
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: مَاتَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَيْنَ حَاقِنَتِي وَذَاقِنَتِي فَلَا أَكْرَهُ شِدَّةَ الْمَوْتِ لِأَحَدٍ أَبَدًا بَعْدَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ
ব্যাখ্যা: বুখারীর অন্য বর্ণনায় এসেছে, (بين سحرى ونحري) আমার বুক ও গলার মাঝে। আর এ হাদীসের বিপরীত না যে হাদীসে রয়েছে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাথা আমার রানের উপর ছিল হতে পারে রান হতে উঠিয়ে আবার বুকের মধ্যে রেখেছেন।
(فَلَا أَكْرَه شِدَّةَ الْمَوْتِ لِأَحَدٍ أَبَدًا بَعْدَ النَّبِيَّ ﷺ ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৃত্যুর পর কারও মৃত্য কষ্টকে আর আমি খারাপ মনে করি না। অর্থাৎ মৃত্যুর কষ্টকে আমি অধিক গুনাহের কারণ মনে করতাম আরও ধারণা করতাম এটা হতভাগ্যের চিহ্ন এবং আল্লাহর নিকট লোকটির খারাপ অবস্থা আর এটা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৃত্যুর পূর্বে আর যখন আমি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৃত্যুর কষ্ট দেখলাম তখন বুঝতে পারলাম যে, মৃত্যুর কষ্ট হতভাগ্য হওয়া যা খারাপ মানুষ হওয়ার চিহ্ন অথবা খারাপ পরিণতি হবে এমনটি না। কেননা যদি এমনটি হত তাহলে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর মৃত্যুর কষ্ট হত না। বরং মৃত্যুর কঠিনতা মর্যাদা বৃদ্ধি ও প্রতিদান বহুগুণে হওয়া আর ব্যক্তিকে গুনাহ হতে পবিত্রকরণের কারণ। আর যখন বিষয়টি এমনই তখন আমি আর কারও মৃত্যুর কষ্টকে খারাপ মনে করি না এটা জানার পর।
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - রোগী দেখা ও রোগের সাওয়াব
১৫৪১-[১৯] কা’ব ইবনু মালিক (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মু’মিনের দৃষ্টান্ত হলো, ক্ষেতের তরতাজা ও কোমল শস্য শাখার মতো, যাকে বাতাস এদিক-ওদিক ঝুঁকিয়ে ফেলে। একবার এদিকে কাত করে। আবার সোজা করে দেয়। এভাবে তার আয়ু শেষ হয়ে যায়। আর মুনাফিক্বের দৃষ্টান্ত হলো শক্তভাবে দাঁড়িয়ে থাকা পিপুল গাছের মতো। একেবারে ভূমিতে উপড়ে পড়ার আগে এ গাছে ঝটকা লাগে না। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ عِيَادَةِ الْمَرِيْضِ وَثَوَابِ الْمَرَضِ
وَعَنْ كَعْبِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَثَلُ الْمُؤْمِنِ كَمَثَلِ الْخَامَةِ مِنَ الزَّرْعِ تُفَيِّئُهَا الرِّيَاح تصرعها مرّة وتعدلها أُخْرَى حَتَّى يَأْتِيهِ أَجَلُهُ وَمَثَلُ الْمُنَافِقِ كَمَثَلِ الْأَرْزَةِ الْمُجْذِيَةِ الَّتِي لَا يُصِيبُهَا شَيْءٌ حَتَّى يَكُونَ انْجِعَافُهَا مَرَّةً وَاحِدَة»
ব্যাখ্যা: (تُفَيِّئُهَا الرِّيَاح) বাতাস ডান ও বাম দিকে পরিবর্তন করে। তুবরিশতী বলেনঃ যখন উত্তরের বাতাস দক্ষিণ দিকে কোমল তৃণ হেলে পড়ে। আর দক্ষিণা বাতাস উত্তর দিকে হেলে পড়ে আর পূবের বাতাস হলে পশ্চিম দিকে হেলে পড়ে আর পশ্চিমা বাতাস হলে পূর্ব দিকে হেলে পড়ে।
ইবনু হাজার বলেনঃ বাতাস যদি প্রবল আকারে হয় তাহলে উত্তর দক্ষিণে হেলে পড়ে এবং পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। আর বাতাস যদি স্থির হয়ে থাকে স্থির অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকে।
মুহলিব বলেনঃ তুলনার কারণ হল মু’মিন ব্যক্তির নিকট যখনই আল্লাহর আদেশ আসে তখনই যে তার অনুগত হয় এবং তার প্রতি সন্তুষ্ট হয় তার জন্য যদি কল্যাণ আসে তাহলে খুশী হয় এবং যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আর যদি অকল্যাণ আসে তাহলে ধৈর্য ধারণ করে এবং কল্যাণ ও প্রতিদানের আশা করে। যখন এ (নি‘আমাত) দূরীভূত হয় তারপরে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশে অবিচল থাকে।
আবুল ফারাজ ইবনু জাওযী বলেনঃ মানুষেরা এ ব্যাপারে কয়েক প্রকার-
- তাদের মধ্যে কেউ বিপদাপদের প্রতিদানের অপেক্ষা করে তার ওপর বিপদ সহজ হয়।
- তাদের মধ্যে কেউ মনে করে, এই বিপদাপদ বাদশাহ তথা আল্লাহ তার রাজত্বে নিয়ন্ত্রণ করেন সুতরাং সে গ্রহণ করে এবং এতে অসন্তুষ্ট প্রকাশ করে না।
- আবার কেউ আল্লাহর ভালবাসায় বিপদাপদ উঠিয়ে নেয়ার আবেদন করা হতে যাকে বিরত রেখেছি। এটা ইতিপূর্বের চেয়ে বেশী ভাল।
- তাদের মধ্যে কেউ মুসীবাত আলিঙ্গন করাকে স্বাদ মনে করে এরা সর্বোচ্চ মর্যাদা সম্পূর্ণ, কেননা তারা আল্লাহর পছন্দই লালিত হয়ে উঠে।
(أَرْزَةِ) পরিচিত এক প্রকার গাছ যাকে বলা হয় أرْزُنْ যা এক প্রকার শক্ত কাঠ বিশিষ্ট বৃক্ষ (যা দ্বারা লাঠি তৈরি হয়) আর যে গাছটি অনেক দিন ধরে বেঁচে থাকে যা খুব বেশী পাওয়া যায় লিবিয়ার পাহাড়ে।
সাদৃশ্যের কারণ যে মুনাফিক্ব ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলা তাকে কোন কিছু হারান না (তার কোন কিছু খোয়া যায় না) বরং দুনিয়া তার জন্য সহজসাধ্য হয় যাতে আখিরাতে তার অবস্থা ভয়াবহ হয়। যখন আল্লাহ তার ধ্বংসের ইচ্ছে করেন তাকে তছনছ করে দেন তার মৃত্যু হয় কঠিন শাস্তি হিসেবে আর আত্মা বের হওয়ার সময় ভীষণ ব্যথা পায়।
কারও মতে মু’মিন ব্যক্তি দুনিয়ার বিপদাপদের সাক্ষাত পায় দুনিয়ার স্বল্প অংশ অর্জিত হয় বলে যে কোমল তৃণের ন্যায় যাকে বাতাস খুব এদিক সেদিক ঘুরায় তার কান্ড দুর্বল হওয়ার কারণে। কিন্তু মুনাফিক্ব এর বিপরীত।
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - রোগী দেখা ও রোগের সাওয়াব
১৫৪২-[২০] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মু’মিনের দৃষ্টান্ত হলো এক শস্য ক্ষেতের মতো। শস্য ক্ষেতকে যেভাবে বাতাস সবসময় ঝুঁকিয়ে রাখে, ঠিক এভাবে মু’মিনকে বিপদাপদ দোলায়। বালা-মুসীবত ঘিরে থাকে। আর মুনাফিক্বের দৃষ্টান্ত হলো, পিপুল গাছের মতো। পিপুল গাছ বাতাসের দোলায় ঝুঁকে না পড়লেও পরিশেষে শিকড়সহ উপড়ে যায়। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ عِيَادَةِ الْمَرِيْضِ وَثَوَابِ الْمَرَضِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَثَلُ الْمُؤْمِنِ كَمَثَلِ الزَّرْعِ لَا تزَال لاريح تميله وَلَا يزَال الْمُؤمن يصبيه الْبَلَاءُ وَمَثَلُ الْمُنَافِقِ كَمَثَلِ شَجَرَةِ الْأَرْزَةِ لَا تهتز حَتَّى تستحصد»
ব্যাখ্যা: হাদীসের মর্মার্থ হলঃ মু’মিনের শরীরে অনেক দুঃখ-যন্ত্রণা রয়েছে অথবা তার পরিবারে এবং তার সম্পদে আর যা গুনাহ মিটানো ও মর্যাদা বৃদ্ধির কারণ। পক্ষান্তরে মুনাফিক্ব ও কাফিরের ক্ষেত্রে দুঃখ-যন্ত্রণা মুসীবাত স্বল্প আর যদিও তা আসে তাহলে তার কোন গুনাহ মিটিয়ে যায় না বরং ক্বিয়ামাতে তার জন্য বড় শাস্তি নিয়ে আসে।