পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - মাসজিদ ও সালাতের স্থান
৭০২-[১৪] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঘরে অথবা (ব্যাস্ততার কারণে) কারো বাজারে সালাত আদায় করার চেয়ে মসজিদে জামা’আতের সাথে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করার সাওয়াব পঁচিশ গুণ বেশী। কারণ কোন ব্যক্তি ভালো করে (সকল আদাবের প্রতি লক্ষ্য রেখে) উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করে নিঃস্বার্থভাবে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করার জন্যই মসজিদে আসে। তার প্রতি ক্বদমের বিনিময়ে একটি সাওয়াবে তার মর্যাদা বেড়ে যায়, আর একটি গুনাহ কমে যায়। এভাবে মসজিদে পৌঁছা পর্যন্ত (চলতে থাকে)। সালাত আদায় শেষ করে যখন সে মুসল্লায় বসে থাকে, মালায়িকাহ্ অনবরত এ দু’আ করতে থাকেঃ ’হে আল্লাহ! তুমি তাকে মাফ করে দাও। হে আল্লাহ! তুমি তার ওপর রহমত বর্ষণ কর।’’ আর যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের কেউ সালাতের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে, সে সময়টা তার সালাতের সময়ের মধ্যেই পরিগণিত হবে।
আর এক বর্ণনার শব্দ হলো, ’যখন কেউ মসজিদে গেল, আর সালাতের জন্য অবস্থান করলো সেখানে, তাহলে সে যেন সালাতেই রইল। আর মালায়িকার দু’আর শব্দাবলী আরো বেশিঃ ’’হে আল্লাহ! এই বান্দাকে ক্ষমা করে দাও। তার তওবা্ ক্ববূল কর’’। এভাবে চলতে থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত সে অন্য কোন মুসলিমকে কষ্ট না দেয় বা তার উযূ ছুটে না যায়। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الْمَسَاجِدِ وَمَوَاضِعِ الصَّلَاةِ
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «صَلَاةُ الرَّجُلِ فِي الْجَمَاعَةِ تُضَعَّفُ عَلَى صَلَاتِهِ فِي بَيْتِهِ وَفِي سُوقِهِ خَمْسًا وَعِشْرِينَ ضِعْفًا وَذَلِكَ أَنَّهُ إِذَا تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ الْوُضُوءَ ثُمَّ خَرَجَ إِلَى الْمَسْجِدِ لَا يُخْرِجُهُ إِلَّا الصَّلَاةُ لَمْ يَخْطُ خُطْوَةً إِلَّا رُفِعَتْ لَهُ بِهَا دَرَجَةٌ وَحُطَّ عَنْهُ بِهَا خَطِيئَةٌ فَإِذَا صَلَّى لَمْ تَزَلِ الْمَلَائِكَةُ تُصَلِّي عَلَيْهِ مَا دَامَ فِي مُصَلَّاهُ اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَيْهِ الله ارْحَمْهُ وَلَا يَزَالُ أَحَدُكُمْ فِي صَلَاةٍ مَا انْتَظَرَ الصَّلَاةَ» . وَفِي رِوَايَةٍ: قَالَ: «إِذَا دَخَلَ الْمَسْجِدَ كَانَتِ الصَّلَاةُ تَحْبِسُهُ» . وَزَادَ فِي دُعَاءِ الْمَلَائِكَةِ: اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ اللَّهُمَّ تُبْ عَلَيْهِ. مَا لَمْ يُؤْذِ فِيهِ مَا لَمْ يُحْدِثْ فِيهِ
ব্যাখ্যা: রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণীঃ (عَلى صَلَاتِه فِى بَيْتِه وَفِىْ سُوْقِه) অর্থাৎ- যে ব্যক্তি অধিকাংশ সময় মসজিদে জামা‘আতে উপস্থিত না হয়ে একাকী বাড়ীতে বা বাজারে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে।
স্পষ্ট এটাই যে, উল্লেখিত সাওয়াব বৃদ্ধি হওয়াটা মসজিদে জামা‘আতের সাথে নির্দিষ্ট। সাধারণত বাড়িতে সালাত আদায় করাটা বাজারে সালাত আদায়ের চাইতে উত্তম। যেমন- হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, বাজার হচ্ছে শায়ত্বনের (শয়তানের) জায়গা। আর বাড়িতে অথবা বাজারে জামা‘আতের সাথে সালাত আদায় করা একাকী সালাত আদায় করার চাইতে উত্তম।
(لَا يُخْرِجُهاِلَّا الصَّلَاةُ) ‘‘তাকে সালাত ব্যতীত অন্য কিছুই বের করে না।’’ অর্থাৎ- ফরয সালাত জামা‘আতে আদায় করার সংকল্প করা।
(تُصَلِّىْ عَلَيْهِ) (তার ওপর দরূদ পড়েন) তার জন্য কল্যাণের দু‘আ, পাপ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা এবং রহমাত কামনা করেন।
(فِىْ مُصَلَّاهُ) সে তার সালাতের স্থানেই আছে। অর্থাৎ- মসজিদের ঐ স্থান যেখানে সে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করেছে। এমনভাবে সে যদি সালাতের জন্য অপেক্ষা করার নিয়্যাতে অন্য স্থানেও অবস্থান করে তাহলেও সে এরই অন্তর্ভুক্ত হবে।
(اَللّهُمَّ صَلِّ عَلَيْهِ) অর্থাৎ- সর্বক্ষণ মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) তার জন্য রহমাত কামনা করতে থাকেন এই বলে যে, হে আল্লাহ! তাকে অনুগ্রহ করো। ইমাম ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ রহমাত চাওয়াটা হয় ক্ষমা চাওয়ার পরে। কেননা মালায়িকাহ্’র সালাতই হচ্ছে তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা।
(مَا انْتَظَرَ الصَّلَاةَ) ‘‘যতক্ষণ যে সালাতের অপেক্ষা করে’’। অর্থাৎ- সালাতের অপেক্ষায় সে যতক্ষণ অবস্থান করে। সেটা মসজিদের যে স্থানেই হোক যেখানে সে সালাত আদায় করেছে অথবা মসজিদের অন্য কোন জায়গায় হোক। অন্য এক রিওয়ায়াতে এসেছে- যখন সে মসজিদে প্রবেশ করে তখন সালাত তাকে আটকে রাখে। অর্থাৎ- মাসজিদ থেকে বের হতে বাধা প্রদান করে। সালাত আদায়ের সময় পর্যন্ত তার জন্য সালাতটি বাধা দানকারী হয়ে থাকে। তবে সালাতের পরে যিকর অথবা ই‘তিকাফের জন্য মসজিদে অবস্থান করলে উক্ত সাওয়াব হবে না। যদিও এতে বিরাট ধরনের সাওয়াব রয়েছে।
(اَللّهُمَّ تُبْ عَلَيْهِ) হে আল্লাহ! তার তাওবাহ্ কবূল করো। তাকে তাওবাহ্ করার তাওফীক্ব দাও। অথবা তাকে এর উপর অটল রাখো।
(مَا لَمْ يُؤْذِ فِيْهِ) যতক্ষণ সেখানে কষ্ট না দেয়। অর্থাৎ- সর্বক্ষণ মালায়িকাহ্ তার জন্য দু‘আ করতে থাকে এবং তার কথা বা কাজ দ্বারা মাজলিসে মুসলিমদের কাউকে কষ্ট না দেয়।
অন্য মতে বলা হয়েছে, যতক্ষণ মালাককে কষ্ট না দেয়। আর মসজিদে অপবিত্রতার মাধ্যমে তাদের কষ্ট দেয়া হয়। মসজিদে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) ভাঙ্গার মাধ্যমে মালায়িকাহ্’র কষ্ট দেয়।
(مَا لَمْ يُحْدِثْ) যতক্ষণ উযূ (ওযু/ওজু/অজু) না ভাঙ্গে। আর এটা উযূ (ওযু/ওজু/অজু) ভঙ্গের যে কোন কারণ হতে পারে সাধারণভাবে অনিচ্ছা সত্ত্বেও।
হাফিয ইবনু হাজার বলেন, হাদীস প্রমাণ করে মসজিদে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) নষ্ট হয়ে যাওয়া নাক ঝাড়ার চেয়ে খারাপ, কেননা তার জরিমানা রয়েছে আর উযূ (ওযু/ওজু/অজু) ভঙ্গের জরিমানা নেই। বরং সে মালায়িকাহ্’র (ফেরেশতাগণের) ইসতিগফার ও দু‘আ কামনা হতে বঞ্চিত হয়।
হাদীস আরো প্রমাণ করে যে, অন্যান্য ‘আমলের চেয়ে সালাতের মর্যাদা বেশী। কেননা সালাত আদায়কারীর জন্য মালায়িকাহ্ রহমাত ও ক্ষমা চেয়ে আল্লাহর নিকট দু‘আ করে।