লগইন করুন
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - সমষ্টিগতভাবে মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬২০৬-[১১] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে বলতে শুনেছি, সা’দ ইবনু মু’আয-এর মৃত্যুতে ’আরশ কেঁপে উঠে।
অপর এক বর্ণনাতে আছে, সা’দ ইবনু মু’আয-এর মৃত্যুতে রহমানের ’আরশ কেঁপে উঠেছিল। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب جَامع المناقب)
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «اهْتَزَّ الْعَرْشُ لِمَوْتِ سَعْدِ بْنِ مُعَاذٍ» وَفِي رِوَايَةٍ: «اهْتَزَّ عَرْشُ الرَّحْمَنِ لِمَوْتِ سَعْدِ بن معَاذ» . مُتَّفق عَلَيْهِ متفق علیہ ، رواہ البخاری (3803) و مسلم (124 / 2466)، (6346) ۔ (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীসে বলা হয়েছে, (اهْتَزَّ الْعَرْشُ لِمَوْتِ سَعْدِ بْنِ مُعَاذٍ) অর্থাৎ সা'দ ইবনু মু'আয-এর মৃত্যুর কারণে রহমানের ‘আরশ কেঁপে উঠেছে।
এ বিষয়টির ব্যাখ্যা নিয়ে ‘আলিমদের মাঝে মতানৈক্য রয়েছে। কিছু ‘আলিম বলেন, সা'দ-এর রূহের আগমনের খুশিতে রহমানের ‘আরশ বাস্তবিকভাবেই কেঁপে উঠেছে। শারহুন নাবাবী গ্রন্থকার বলেন, এটিই হলো উত্তম কথা।
মাযিরী বলেন, এই মতের পক্ষে অনেকেই বলেন যে, এ বিষয়টি জ্ঞান দিয়েও বুঝা সম্ভব। কারণ ‘আরশের একটি অবয়ব আছে। যার কারণে নড়াচড়া করা তার পক্ষে সম্ভব। কিন্তু শুধুমাত্র এটি বলার দ্বারা সা'দ-এর মর্যাদা প্রকাশ পায় না যে, রহমানের ‘আরশ নড়ে উঠেছে। বরং সা’দ-এর মর্যাদা তখনই প্রকাশ পাবে। যখন বলা হবে যে, 'আরশের নড়াচড়াকে আল্লাহ মালায়িকার (ফেরেশতাদের) জন্য সা'দ-এর মৃত্যুর আলামত বানিয়েছেন।
কিছু ‘আলিম বলেন, রহমানের ‘আরশ বাস্তবিকভাবে কেঁপে উঠেনি। বরং হাদীসের এই কথা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো যে, আরশের বাসিন্দারা তথা ‘আরশ বহনকারী মালাক (ফেরেশতা) এবং অন্যান্য মালায়িকা কেঁপে উঠেছেন। এই বাক্যের মধ্যে (مُضَاف) তথা উহ্য রাখা হয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেন, জানাযার খাট কেঁপে উঠেছে।
পরের এ ব্যাখ্যাগুলো সবই বাতিল। কারণ ইমাম মুসলিম তাঁর কিতাবে যে স্পষ্ট বর্ণনাগুলো এনেছেন, সেগুলো প্রমাণ করে যে, প্রকৃতপক্ষেই রহমানের ‘আরশ কেঁপে উঠেছে। অতএব যারা এ ব্যাখ্যাগুলো দিয়েছেন তাদের কাছে হয়তো মুসলিমের বর্ণনাগুলো পৌছায়নি। প্রকৃত বিষয়ে আল্লাহই অধিক অবগত (মিরকাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী ৭ম খণ্ড, ১৪১ পৃ., হা. ৩৮০৩; শারহুন নাবাবী ১৬শ খণ্ড, ২১ পৃ. হা. ২৪৬৭)
মিরক্বাতুল মাফাতীহ প্রণেতা সা'দ ইবনু মু'আয সম্পর্কে বলেন, তিনি হলেন সা'দ ইবনু মু'আয আল আনসারী আল আশহাল আল আওসী। প্রথম ‘আকাবা ও দ্বিতীয় ‘আকাবার মাঝের সময়ে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। তার ইসলাম গ্রহণ করার কারণে ‘আবদুল আশহাল গোত্রও ইসলাম গ্রহণ করে। আনসারদের মধ্য থেকে সর্বপ্রথম তার বাড়ির লোকেরা ইসলাম গ্রহণ করে। রাসূলুল্লাহ (সা.) তার নাম দিয়েছিলেন (سَيِّدُ الْأَنْصَرِ) - তথা আনসারদের নেতা।
তিনি তাঁর সম্প্রদায়ের মাঝে নম্র-ভদ্র ও অনুসরণীয় ব্যক্তি ছিলেন। তিনি ছিলেন সম্মানিত মর্যাদাবান ও বড় মাপের একজন সাহাবী। বদর ও উহুদ যুদ্ধে তিনি দৃঢ়তার সাথে রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর পাশে ছিলেন। খন্দক যুদ্ধের সময় তার চোখের কোণে তীর লাগলে তিনি আহত হয়ে পড়েন। কিন্তু সেখান থেকে রক্ত পড়া আর বন্ধ হয়নি। যার ফলে এক মাস পর ৫ম হিজরীর যুল ক'আদাহ্ মাসে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৩৭ বছর। তাকে বাক্বী কবরস্থানে দাফন করা হয়। অনেক সাহাবী তার থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)।