লগইন করুন
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - সমষ্টিগতভাবে মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬২০০-[৫] ’আলকামাহ (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একবার সিরিয়া গেলাম এবং (সেখানকার মসজিদে) দু রাকআত সালাত আদায় করলাম। অতঃপর আমি দুআ করলাম, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে একজন সৎ সাথি জুটিয়ে দাও। তারপর আমি একদল লোকের কাছে এসে বসলাম। সহসা দেখলাম, একজন বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তি এসে আমার পাশেই বসলেন। আমি লোকেদেরকে প্রশ্ন করলাম, ইনি কে? তারা বলল, ইনি আবূদ দারদা (রাঃ)। তখন আমি বললাম, আমি আল্লাহ তা’আলার কাছে একজন সৎ সাথি মিলিয়ে দেয়ার জন্য দু’আ করেছিলাম। আল্লাহ তা’আলা আপনাকে আমার জন্য মিলিয়ে দিয়েছেন। তখন তিনি প্রশ্ন করলেন, তুমি কে? বললাম, আমি কূফার অধিবাসী। তখন তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে কি ইবনু উম্মু ’আবদ (অর্থাৎ ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’উদ) নেই? যিনি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জুতা, বালিশ ও উযূর পাত্র বহনকারী ছিলেন এবং তোমাদের মধ্যে কি ঐ লোক নেই? নবী (সা.) -এর মুখের দু’আয় আল্লাহ তা’আলা যে লোকটিকে শয়তান হতে পানাহ দিয়েছেন, অর্থাৎ ’আম্মার (ইবনু ইয়াসীর) (রাঃ)। আর তোমাদের মাঝে কি ঐ লোক নেই? যিনি ছাড়া [নবী (সা.) -এর] গোপন তথ্যাদি আর কেউই জানে না অর্থাৎ হুযায়ফাহ্ (রাঃ)। (বুখারী)
الفصل الاول (بَاب جَامع المناقب)
وَعَن علقمةَ قَالَ: قَدِمْتُ الشَّامَ فَصَلَّيْتُ رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ قُلْتُ: اللَّهُمَّ يَسِّرْ لِي جَلِيسًا صَالِحًا فَأَتَيْتُ قَوْمًا فَجَلَسْتُ إِلَيْهِمْ فَإِذَا شَيْخٌ قَدْ جَاءَ حَتَّى جَلَسَ إِلَى جَنْبِي قُلْتُ: مَنْ هَذَا؟ قَالُوا: أَبُو الدَّرْدَاءِ. قُلْتُ: إِنِّي دَعَوْتُ اللَّهَ أَنْ يُيَسِّرَ لِي جَلِيسًا صَالِحًا فَيَسَّرَكَ لِي فَقَالَ: مَنْ أَنْتَ؟ قُلْتُ: مِنْ أَهْلِ الْكُوفَةِ. قَالَ: أَو لَيْسَ عنْدكُمْ ابْن أمِّ عبد صَاحب النَّعْلَيْنِ وَالْوِسَادَةِ وَالْمَطْهَرَةِ وَفِيكُمُ الَّذِي أَجَارَهُ اللَّهُ مِنَ الشَّيْطَانِ عَلَى لِسَانِ نَبِيِّهِ؟ يَعْنِي عَمَّارًا أَوْ لَيْسَ فِيكُمْ صَاحِبُ السِّرِّ الَّذِي لَا يعلمُه غيرُه؟ يَعْنِي حُذَيْفَة. رَوَاهُ البُخَارِيّ رواہ البخاری (3742) ۔ (صَحِيح)
ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীসে আবূ দারদা (রাঃ) বললেন, (أَو لَيْسَ عنْدكُمْ ابْن أمِّ عبد) অর্থাৎ তোমাদের কাছে কি ইবনু উম্মু আবদ তথা ইবনু মাস'উদ নেই? এই প্রশ্ন দ্বারা আবূ দারদার উদ্দেশ্য হলো তিনি বুঝতে পেরেছেন যে, তারা ‘ইলম অন্বেষণ করার জন্য এসেছেন। তাই তিনি তাদেরকে বলে দিলেন যে, তাদের কাছেই তো এমন বড় বড় জ্ঞানী ব্যক্তিরা আছেন যাদেরকে ছাড়া অন্য কারো কাছে যাওয়ার প্রয়োজন। নেই।
উক্ত হাদীস থেকে এটিও বুঝা যায় যে, মুহাদ্দিসের একটি আদব হলো যে, তারা নিজের শহরের শায়খদের কাছে সব জ্ঞান না শিখে অন্য শহরে যায় না। (ফাতহুল বারী ৭ম খণ্ড, ১০৫ পৃ., হা. ৩৭৪২)
কাযী ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, ইবনু মাস'ঊদ (রাঃ)-এর সাথে বিভিন্ন গুণাবলি যুক্ত করে বুঝানো হয়েছে যে, তিনি সবসময় রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সেবা করতেন। বিভিন্ন বৈঠকে তার সাথে যেতেন এবং তার জুতা নিয়ে যেতেন এবং তার জুতা নিয়ে রাখতেন। আবার যখন বৈঠক শেষে রাসূলুল্লাহ (সা.) এই উঠে পড়তেন তখন তিনি তাঁর জুতা নিয়ে তাঁকে দিতেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন একা থাকতেন তখনও তিনি তাঁর সাথে থাকতেন। যখন রাসূলুল্লাহ (সা.) ঘুমাতে ইচ্ছা করতেন তখন তিনি তার বিছানা, বালিশ ঠিক করে দিতেন। তাঁর উযূর সময় উযূর পানি এনে দিতেন। মোটকথা হলো, তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সাথে এত অধিক সময় থেকেছেন যে, তাতে ধারণা হয়, তিনি অবশ্যই তার থেকে অনেক জ্ঞান শিখেছেন। অতএব শারী'আতের জ্ঞান শিখার জন্য তাঁর আর অন্য কারো কাছে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
মিরক্বাতুল মাফাতীহ প্রণেতা ‘আম্মার (রাঃ) সম্পর্কে বলেন, তিনি হলেন মাখযুম গোত্রের আযাদকৃত দাস ‘আম্মার ইবনু ইয়াসার আল ‘আব্বাসী। তিনি নুবুওয়্যাতের প্রাথমিক যুগেই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি ছিলেন ঐ সকল দুর্বল ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত যাদেরকে ইসলাম গ্রহণ করার কারণে মক্কায় অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। এমনকি মুশরিকরা তাকে আগুনে পুড়িয়েছে। সে সময় রাসূলুল্লাহ (সা.) তার পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন এবং তার শরীরে হাত বুলিয়ে বললেন, হে আগুন! তুমি ‘আম্মার-এর জন্য ঠাণ্ডা এবং শান্তিদায়ক হয়ে যাও যেমন ইব্রাহীম (আঃ)-এর জন্য হয়েছিলে। তিনি প্রথম হিজরতকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তিনি বদর সহ অনেক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) তার নাম দিয়েছিলেন আত্ তায়্যিবুল মুতায়্যিব। তিনি ৩৭ হিজরীতে ‘আলী ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ)-এর দলে থেকে সিফফীনের যুদ্ধে নিহত হন।
মৃত্যুর সময় তার বয়স ছিল ৯৩ বছর। তার থেকে ‘আলী ইবনু আব্বাস (রাঃ) ছাড়াও আরো অনেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন।
মিরকাতল মাফাতীহ প্রণেতা হুযায়ফাহ (রাঃ) সম্পর্কে বলেন, তিনি হলেন ইয়ামানের অধিবাসী। তার নাম হলো হুসায়ল। আর ইয়ামান হলো তার লকব এবং তার কুনিয়াত হলো হুযায়ফাহ্ আবূ আবদুল্লাহ আল ‘আব্বাসী।
তুহফাতুল আহওয়াযীতে বলা হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) তার কাছে মুনাফিকদের বিষয়ে বিভিন্ন গোপন কথা এবং এই উম্মতের মাঝে ভবিষ্যতে যা ঘটবে সে বিষয়ে অনেক গোপন কথা বলতেন।
তিনি মাদায়িনে ৩৫/৩৬ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। সেখানেই তার কবর রয়েছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
তুহফাতুল আহওয়াযীতে ‘আম্মার-এর মর্যাদা সম্পর্কে আরো হাদীস বর্ণিত হয়েছে। যেমন- ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে মারফু সূত্রে বর্ণিত। ‘আম্মারকে যদি দুটি বিষয়ে স্বাধীনতা দেয়া হয় তাহলে সে দুটির থেকে সঠিক বিষয়টি গ্রহণ করে। (তুহফাতুল আহওযায়ী ৯ম খণ্ড, ৩১৪ পৃ., হা. ৩৮২৩)।