৬১৮৫

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবী (সা.) -এর পবিত্র স্ত্রীগণের মর্যাদা

৬১৮৫-[২] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন জিবরীল (আঃ) নবী (সা.) -এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এই যে খাদীজাহ্ একটি পাত্র নিয়ে আসছেন। তাতে তরকারি এবং খাওয়ার সামগ্রী রয়েছে। তিনি (সা.) যখন আপনার কাছে আসবেন, তখন আপনি তাঁকে তাঁর রবের পক্ষ হতে এবং আমার পক্ষ হতে সালাম বলবেন এবং তাঁকে জান্নাতের মধ্যে মুক্তাখচিত এমন একটি ভবনের সুসংবাদ প্রদান করবেন, যেখানে না কোন হৈ-হুল্লোড় আছে আর না কোন দুঃখ রয়েছে। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَابُ مَنَاقِبِ أَزْوَاجِ)

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: أَتَى جِبْرِيلُ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «يَا رسولَ اللَّهِ هَذِهِ خَدِيجَةُ قَدْ أَتَتْ مَعَهَا إِنَاءٌ فِيهِ إِدام وَطَعَام فَإِذَا أَتَتْكَ فَاقْرَأْ عَلَيْهَا السَّلَامَ مِنْ رَبِّهَا وَمِنِّي وَبَشِّرْهَا بِبَيْتٍ فِي الْجَنَّةِ مِنْ قَصَبٍ لَا صَخَبَ فِيهِ وَلَا نَصَبَ» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ متفق علیہ ، رواہ البخاری (3820) و مسلم (71 / 2432)، (6273) ۔ (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীসে বলা হয়েছে, যখন খাদীজাহ্ (রাঃ) আপনার কাছে আসবে তখন তার প্রভুর পক্ষ থেকে এবং আমার পক্ষ থেকে আপনি তার কাছে সালাম পৌঁছে দিবেন। শারহে মুসলিম গ্রন্থকার বলেন, এ কথার মাধ্যমে খাদীজা (রাঃ)-এর বাহ্যিক মর্যাদা প্রকাশ করা হয়েছে। (শারহুন নাবাবী ১৫শ খণ্ড, ১৭৯ পৃ., হা. ২৪৩১)

ফাতহুল বারীতে বলা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন হেরা গুহায় ছিলেন তখন খাদীজাহ্ (রাঃ) তাঁর জন্য খাবার নিয়ে যেতেন। তারই ধারাবাহিকতায় একদিন খাবার নিয়ে যাওয়ার পূর্বমুহূর্তে জিবরীল (আঃ) এসে তাকে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার কাছে খাদীজাহ্ (রাঃ) খাবার ও তরকারির পাত্র নিয়ে আসছেন। অতএব যখন সে আপনার কাছে এসে যাবে তখন আপনি তার প্রতিপালক ও আমার পক্ষ থেকে সালাম জানাবেন।
তারপর যখন রাসূলুল্লাহ (সা.) খাদীজাহ (রাঃ) কে আল্লাহ ও জিবরীল (আঃ)-এর পক্ষ থেকে সালাম জানালেন তখন উত্তরে খাদীজাহ্ বললেন, (إِنَّ اللهَ هُوَ السَّلَامُ وَعَلَيْكَ يَا رَسُولَ اللهِ السَّلَمُ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ) নাসায়ীতে আরো অতিরিক্ত উল্লেখ করা হয়েছে, (وَعَلَى مَنْ سَمِعَ السَّلَامُ إِلَّا الشَّيْطَانَ)
‘আলিমগণ বলেন, খাদীজাহ্ (রাঃ)-এর সালামের উত্তরের মাধ্যমে বুঝা যায় যে, তার তাৎক্ষণিক বুঝ ছিল অনেক বেশি। তাই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, আল্লাহ হলেন নিজেই (السَّلَامُ) তথা শান্তিদাতা। তাহলে তার ওপর কিভাবে শান্তি বর্ষিত হবে। তাই তিনি বলেছেন, (إِنَّ اللهَ هُوَ السَّلَامُ) তথা নিশ্চয় আল্লাহই শান্তিদাতা।
কিন্তু ইসলামের প্রাথমিক যুগে অনেক সাহাবীই এ বিষয়টি বুঝতে পারেননি। তাই তারা সালাতে তাশাহুদের সময় বলতেন, (السَّلَامُ عَلَى اللهِ) তথা আল্লাহর ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। নবী (সা.) যখন বিষয়টি শুনলেন তখন বললেন, তোমরা (السَّلَامُ عَلَى اللهِ) বলো না। কেননা (السَّلَامُ) হলো আল্লাহরই একটি নাম। অতএব তোমরা আল্লাহর ক্ষেত্রে প্রশংসা জ্ঞাপন করো এবং তার জন্য অভিবাধন বর্ণনা করো। অতএব বলো, (التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ)

আবূ দাউদ ও নাসায়ীতে ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে খাদীজাহ্ (রাঃ) -এর মর্যাদা সম্পর্কে আরো হাদীস বর্ণিত হয়েছে। যেমন ইবনু আব্বাস (রাঃ) মারফু সূত্রে বর্ণনা করেন। জান্নাতী নারীদের মধ্যে সর্বোত্তম নারী হলেন খাদীজা বিনতু খুয়াইলিদ এবং ফাতিমাহ্ বিনতু মুহাম্মাদ। (ফাতহুল বারী ৭ম খণ্ড, ১৫৯ পৃ., হা. ৩৮২০)
মিরকাতে খাদীজাহ্ (রাঃ)-এর বাড়ির ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, তা হবে এমন বাড়ি যেখানে কোন শোরগোল চিল্লাচিল্লি ও কষ্ট-ক্লান্তি থাকবে না। আর তাতে এমন কোন কিছু থাকবে না যা জান্নাতের সুখময় জীবনযাপনের ক্ষেত্রে বাধা তৈরি করতে পারে।
কাযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, জান্নাতের বাড়িকে শোরগোল এবং কষ্ট ক্লেশ থেকে মুক্ত থাকার কথা বলা হয়েছে। কারণ দুনিয়াতে এমন কোন বাড়ি নেই যেখানে মানুষ বসবাস করে আর তাতে শোরগোল হয় না এবং কোন কষ্ট-ক্লেশ থাকে না। তা ছাড়াও দুনিয়ার বাড়ি তৈরি করতেও রয়েছে অনেক কষ্ট-ক্লান্তি। কিন্তু জান্নাতের বাড়ি এসব কিছু থেকেই মুক্ত।
‘আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, জান্নাতের বাড়ি তৈরি হয়েছে আল্লাহর () (হয়ে যাও) বলার মাধ্যমে। তাই তাতে কোন কষ্ট-ক্লান্তির বিষয় নেই। পক্ষান্তরে দুনিয়ার বাড়ি তৈরি করতে অনেক কষ্ট করতে হয়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ