৫৫৩৪

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - হাশর

৫৫৩৪-[৩] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: (কিয়ামতের দিন) তিন ধরনের মানবমণ্ডলীর হাশর হবে। জান্নাতের আকাক্ষী, জাহান্নাম হতে ভীত-সন্ত্রস্ত; আর একদল হবে এক উটে (সওয়ারীতে) দু’জন কোন একটিতে তিনজন, কোন এক উটে চারজন, আবার কোন এক উটে দশজন ধারাক্রমে আরোহণ করবে। অবশিষ্ট আরেক দল তাদেরকে আগুনে একত্রিত করবে। দিনের বেলায় তারা যেখানে অবস্থান করবে, আগুনও সেখানে তাদের সাথে অবস্থান করবে। তারা রাতে যেখানে অবস্থান করবে, আগুনও সেখানে তাদের সঙ্গে রাত্রে অবস্থান করবে। অনুরূপভাবে ভোরে ও সন্ধ্যায় তারা যেখানে থাকবে, আগুনও তাদের সঙ্গে সেখানে থাকবে। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب الْحَشْر)

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يُحْشَرُ النَّاسُ عَلَى ثَلَاثِ طَرَائِقَ: رَاغِبِينَ رَاهِبِينَ وَاثْنَانِ عَلَى بَعِيرٍ وَثَلَاثَةٌ عَلَى بَعِيرٍ وَأَرْبَعَةٌ عَلَى بَعِيرٍ وَعَشَرَةٌ عَلَى بَعِيرٍ وَتَحْشُرُ بَقِيَّتَهُمُ النَّارُ. تَقِيلُ مَعَهُمْ حَيْثُ قَالُوا وَتَبِيتُ مَعَهُمْ حَيْثُ باتو وَتُصْبِحُ مَعَهُمْ حَيْثُ أَصْبَحُوا وَتُمْسِي مَعَهُمْ حَيْثُ يمسوا . مُتَّفق عَلَيْهِ متفق علیہ ، رواہ البخاری (6522) و مسلم (59 / 2861)، (7202) ۔ (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

ব্যাখ্যা: (عَلَى ثَلَاثِ طَرَائِقَ) মানুষকে তিন স্তরে জমায়েত করা হবে। (رَاغِبِينَ رَاهِبِينَ) জান্নাতের আকাক্ষী এবং জাহান্নাম থেকে ভীত, এরা প্রথম উপায়ে আসবে।
(وَاثْنَانِ عَلَى بَعِيرٍ وَثَلَاثَةٌ عَلَى بَعِيرٍ وَأَرْبَعَةٌ عَلَى بَعِيرٍ وَعَشَرَةٌ عَلَى بَعِيرٍ) সহীহ মুসলিম-এর বর্ণনায় সবগুলোর পূর্বে (واو) রয়েছে। তবে বুখারীর বর্ণনায় শুধু প্রথমে (واو), আছে। দু' বর্ণনায় এরা দ্বিতীয় উপায়ে জমায়েত হবে।
(تَحْشُرُ بَقِيَّتَهُمُ النَّارُ) সহীহ মুসলিম-এর অপর বর্ণনাতে কিয়ামতের পূর্বের ঘটিত নিদর্শনাদির উল্লেখ রয়েছে। যেমন পশ্চিমদিকে সূর্যোদয় হওয়া। এর শেষে আছে এগুলোর শেষে বের হবে আগুন যা এডেনের গর্ত থেকে বের হবে এবং মানুষকে খেদিয়ে প্রস্থান করাবে। তাদের সাথে আগুন অবিচ্ছিন্নভাবে থাকবে। এরা তৃতীয় উপায়ে জমায়েত হবে। খত্তাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন: এ হাশর কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার পূর্বে হবে। মানুষদেরকে জীবিত অবস্থায় শামের দিকে জমা করা হবে। এদের ব্যাপার ইবনু আব্বাস (রাঃ) -এর হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে তারা খালি পায়ে বিবস্ত্র হয়ে পায়ে হেটে আসবে।
ক্বাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন: এই হাশর তথা জমায়েতটা হবে দুনিয়াতে কিয়ামতের পূর্বে। এটা হচ্ছে কিয়ামতের শেষ নিদর্শন, যা আলোচ্য হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয়। কারণ তাতে সকাল, সন্ধ্যা, রাত্রি যাপন ও কায়লূলাহ বা বিশ্রামের বিষয়ে উল্লেখ হয়েছে যা আখিরাতে থাকে না। আবার অন্য হাদীসে রয়েছে, যতক্ষণ হিজায থেকে আগুন বের না হবে ততক্ষণ কিয়ামত হবে না। মুসলিম ব্যতীত অন্য বর্ণনায় রয়েছে, যখন তোমরা এ আগুনের কথা শুনবে তখন তোমরা শামের উদ্দেশে বের হও এ যেন তিনি তাদেরকে কষ্ট দেয়ার পূর্বে এগিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন।

হুলায়মী ও গাযালী (রহিমাহুয়াল্লাহ) উল্লেখ করেন যে, এটা আখিরাতের হাশর। হুলায়মী বলেন, তিন ধরনের মানুষকে তিন উপায়ে আখিরাতে জমা করা হবে। প্রথম শ্রেণি হলো (أبرار) তথা নেককারগণ যারা আল্লাহর সাওয়াবের প্রত্যাশী বা রাগিবীন এবং ভয় ও আশার মধ্যে অবস্থানকারী বা রাহিবীন।
২য় শ্রেণি- মিশ্রিত ব্যক্তি যারা উটের উপরে আসবে। আর ৩য় শ্রেণি হলো কাফির, যাদেরকে আগুনে একত্রিত করবে। তাদের দলীল নাসায়ীতে রয়েছে, (يُحْشَرُالنَّاسُ يَوْمَ الْقِيَاماَةِ)
সিনদী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, অধিকাংশ বিদ্বানের মত হলো, এটা দুনিয়ার হাশর এবং কিয়ামতের সর্বশেষ নিদর্শন। এটাই উপযুক্ত মত, এতে কায়লূলাহ্ বা আরাম নেয়া অথবা অনুরূপ বিষয়ের উল্লেখ হয়েছে।
ইসমাঈলী আলোচিত আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর হাদীস ও ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর নগ্ন, খালি পা ও পব্ৰজের হাদীসের মাঝে সমন্বয় করেছেন এভাবে যে, হাশর থেকে ধর্তব্য হলো বিক্ষিপ্ত মানুষকে একত্রিত করা। যেটা মাখলুককে কবর থেকে খালি পায়ে বিবস্ত্র অবস্থায় বের করা, অতঃপর হাঁকিয়ে হিসাবের জন্য একত্রিত করা হবে। এ সময় মুত্তাকীদেরকে উটের উপর আরোহণ করে জমায়েত করা হবে। আবার অন্য কেউ এভাবে দুই বিপরীত হাদীসকে একত্রিত করেছেন যে, মানুষদের কবর থেকে উঠার বর্ণনা দেয়া হয়েছে ইবনু আব্বাস-এর হাদীসে, অতঃপর সেখান থেকে অবস্থানস্থলে যাওয়ার বিভিন্ন অবস্থা বর্ণিত হয়েছে আবূ হুরায়রাহ (রাঃ)-এর হাদীসে।
এ মতটিকে আরো শক্তিশালী করেছে আহমাদ, নাসায়ী ও বায়হাকীতে বর্ণিত আবূ যার (রাঃ)-এর হাদীস। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদেরকে বর্ণনা করেছেন যে, মানুষেরা কিয়ামতের দিন তিন দলে একত্রিত হবে- এক) কাপড় পরিহিত, আগ্রহী আরোহী দল। দুই) পদব্রজে চলা দল। তিন) এমন দল যাদেরকে মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) মুখের ভরে টেনে আনবেন। কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) খত্ত্বাবী (রহিমাহুল্লাহ)-এর মতকে সঠিক বলে আখ্যা দিয়েছেন। (ফাতহুল বারী ১১ খণ্ড, হা, ৬৫২২; নাসায়ী ২য় খণ্ড, হা. ২০৮৪)