৫৪৬৪

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - কিয়ামতের পূর্বলক্ষণসমূহ এবং দাজ্জালের বর্ণনা

৫৪৬৪-[১] হুযায়ফাহ্ ইবনু আসীদ আল গিফারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমরা পরস্পরে কথাবার্তা বলছিলাম, এমন সময় নবী (সা.) - আমাদের কাছে উপস্থিত হয়ে প্রশ্ন করলেন, তোমরা কি সম্পর্কে আলোচনা করছ? তারা বললেন, আমরা কিয়ামত সম্পর্কে আলোচনা করছি। সে সময় তিনি (সা.) বললেন, তোমরা দশটি নিদর্শন না দেখা পর্যন্ত কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবে না। আর তা হলো- ১. ধোয়া, ২. দাজ্জাল, ৩. চতুষ্পদ জন্তু, ৪. পশ্চিমাকাশ হতে সূর্য উদিত হওয়া, ৫. ঈসা ইবনু মারইয়াম আলায়হিস-এর (আকাশ হতে) অবতরণ, ৬. ইয়াজুজ ও মাজুজ আগমন, ৭,৮,৯, তিনটি ভূমিধস, পূর্বাঞ্চলে, পশ্চিমাঞ্চলে এবং আরব উপদ্বীপে; ১০. সর্বশেষে ইয়ামান হতে এমন এক অগ্নি বের হবে যা মানুষদেরকে তাড়িয়ে একটি সমবেত হওয়ার স্থান (সিরিয়ার) দিকে নিয়ে যাবে। অপর এক বর্ণনায় আছে, ’আদান (এডেন)-এর অভ্যন্তর থেকে আগুন বের হবে, যা মানুষদেরকে সমবেত হওয়ার স্থানের দিকে তাড়িয়ে নেবে এবং অন্য এক রিওয়ায়াতে দশম লক্ষণ সম্পর্কে বলা হয়েছে। এমন এক বাতাস প্রবাহিত হবে যা মানুষদেরকে (কাফিরদেরকে) সাগরে নিক্ষেপ করবে। (মুসলিম)

الفصل الاول (بَابُ الْعَلَامَاتِ بَيْنَ يَدَيِ السَّاعَةِ وَذِكْرِ الدَّجَّالِ)

عَن حذيفةَ بن أسيد الْغِفَارِيّ قَالَ: اطَّلَعَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَيْنَا وَنَحْنُ نَتَذَاكَرُ. فَقَالَ: «مَا تَذْكُرُونَ؟» . قَالُوا: نَذْكُرُ السَّاعَةَ. قَالَ: إِنَّهَا لَنْ تَقُومَ حَتَّى تَرَوْا قَبْلَهَا عَشْرَ آيَاتٍ فَذَكَرَ الدُّخَانَ وَالدَّجَّالَ وَالدَّابَّةَ وَطُلُوعَ الشَّمْسِ مِنْ مَغْرِبِهَا وَنُزُولَ عِيسَى بْنِ مَرْيَمَ وَيَأْجُوجَ وَمَأْجُوجَ وَثَلَاثَةَ خُسُوفٍ: خَسْفٌ بِالْمَشْرِقِ وَخَسْفٌ بِالْمَغْرِبِ وَخَسْفٌ بِجَزِيرَةِ الْعَرَبِ وَآخِرُ ذَلِكَ نَارٌ تَخْرُجُ مِنَ الْيَمَنِ تَطْرُدُ النَّاسَ إِلَى مَحْشَرِهِمْ . وَفِي رِوَايَةٍ: «نَارٌ تَخْرُجُ مِنْ قَعْرِ عَدَنَ تَسُوقُ النَّاسَ إِلَى الْمَحْشَرِ» . وَفِي رِوَايَةٍ فِي الْعَاشِرَةِ «وَرِيحٌ تُلْقِي النَّاسَ فِي الْبَحْر» . رَوَاهُ مُسلم رواہ مسلم (39 / 2901 ، 40 / 2901)، (7285 و 7286) ۔ (صَحِيح)

ব্যাখ্যা: (لَنْ تَقُومَ حَتَّى تَرَوْا قَبْلَهَا عَشْرَ آيَاتٍ) “তা ততক্ষণ পর্যন্ত সংঘটিত হবে না যতক্ষণ তোমরা দশটি নিদর্শন না দেখবে।”
(فَذَكَرَ الدُّخَانَ) অতঃপর তিনি (সা.) ধোঁয়ার কথা বললেন। আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, পবিত্র কুরআনে সূরা দুখানে এর বর্ণনা হয়েছে- “যখন আকাশ ধোয়ার ছেয়ে যাবে”- (সূরাহ আদ দুখা-ন ৪:১০)। আর এটা রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর যুগে প্রকাশ পেয়েছিল।
‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) বলেন- ধোঁয়া বলতে সেই অবস্থাকে বুঝানো হয়েছে যা দ্বারা কুরায়শরা আক্রান্ত হয়েছিল। কুরায়শরা দুর্ভিক্ষের কারণে তাদের মাঝে ও আকাশের মাঝে বাতাসকে ধোঁয়ার মতো দেখতে পেয়েছিল। ইবনু মাসউদ (রাঃ)-এর মতকে অনেকেই সমর্থন করেছেন। কিন্তু হুযায়ফাহ (রাঃ), বলেন- এটা হবে বাস্তব ধোঁয়া। কেননা নবী (সাঃ)-কে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, এটা পূর্ব থেকে পশ্চিম দিগন্ত ছেয়ে যাবে এবং ৪০ দিন অবস্থান করবে। মু'মিনগণ এর দ্বারা সর্দিতে আক্রান্ত হবে আর কাফিরগণ মাতাল হয়ে যাবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)

সহীহ মুসলিমের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, এই ধোয়া এখনো প্রকাশ পায়নি, কিয়ামতের পূর্বের প্রকাশ পাবে। অথবা উভয় সাহাবীর মতের সমন্বয়ে বলা যেতে পারে। এখানে দু' ধরনের ধোয়ার সম্ভাবনাই রয়েছে। (শারহুন নাবাবী ১৮/২৯০১)

(دَّابَّةَ) (দাব্বাহ্) বা জন্তু বলতে যা বুঝায় তা হলো পবিত্র কুরআনের ভাষায় (اَخۡرَجۡنَا لَهُمۡ دَآبَّۃً مِّنَ الۡاَرۡضِ تُکَلِّمُهُمۡ) “যখন প্রতিশ্রুত (কিয়ামত) সমাগত হবে, তখন আমি তাদের সামনে ভূগর্ভ থেকে একটি জীব নির্গত করব। সে মানুষের সাথে কথা বলবে।” (সূরা আন্ নামল ২৭: ৮২)
মুফাসসিরগণ বলেন, এটা হবে বিরাট এক জীব যা সাফা পাহাড়ের ফাটল থেকে বের হবে। ইবনুল মালিক বলেন, দাব্বা বা বড় জন্তুটি তিনবার প্রকাশ পাবে- ইমাম মাহদীর সময়ে, এরপর ‘ঈসা আলায়হিস সালাম-এর সময়ে, অতঃপর সূর্য পশ্চিমাকাশে উদয়ের পর।

(وَنُزُولَ عِيسَى بْنِ مَرْيَمَ عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَاسَّلَمُ) এবং ‘ঈসা আলায়হিস সালাম-এর অবতরণ। এখানে ইমাম মাহদীর কথা বলা হয়নি। মূলত ঈসা আলাইহিস সালাম ইমাম মাহদীর একই সময় অবতীর্ণ হবেন। ইমাম ত্ববারানী আওস ইবনু আওস থেকে মারফু সূত্রে উল্লেখ করেন, ‘ঈসা আলাইহিস সালাম দামিশকের একটি সাদা মিনারায় অবতরণ করবেন। ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, ইবনু মারইয়াম সিরিয়ার ‘লুদ' নামক স্থানে প্রবেশ করে দাজ্জালকে হত্যা করবেন। এরপর ইয়াজুজ ও মাজুজ বের হবে। হাদীসে ধারাবাহিকভাবে নিদর্শনগুলো উল্লেখ না করে সাধারণভাবে একত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। মূলত প্রথম নিদর্শন হবে ধোয়া, এরপর ‘ঈসা আলায়হিস সালাম-এর অবতরণ, এরপর ইয়াজুজ মাজুজ, অতঃপর দাব্বাহ্ বা ভূমি থেকে একটি বিরাট জন্তুর আত্মপ্রকাশ, সর্বশেষে সূর্য পশ্চিমাকাশে উদিত হওয়া। কেননা ‘ঈসা আলায়হিস সালাম-এর সময়ে মানুষ ইসলামে প্রবেশ করবে। যদি দাজ্জাল ও ‘ঈসা আলায়হিস সালাম-এর পূর্বে সূর্য পশ্চিমাকাশে উদিত হয় তাহলে তো ঈমান কবুলই হবে না। (মিরকাতুল মাফাতীহ)

(وَثَلَاثَةَ خُسُوفٍ) এবং তিনটি ভূমিধস হবে। একটি প্রাচ্যে, একটি প্রাশ্চাত্যে এবং একটি আরব উপদ্বীপে।
(وَآخِرُ ذَلِكَ نَارٌ تَخْرُجُ مِنَ الْيَمَنِ) এবং সর্বশেষ নিদর্শন হবে ইয়ামান দেশ থেকে আগুন বের হবে। আর মানুষকে হাশরের ময়দানের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাবে। বুখারীর বর্ণনায় এসেছে, হিজায থেকে দুটি আগুন বের হবে। দুদিক থেকে মানুষকে এক জায়গায় একত্রিত করবে। অথবা আগুনের সূচনা হবে ইয়ামানে
এবং শেষ হবে হিজাযে গিয়ে। অপর এক বর্ণনায়, দশম নিদর্শন আগুনের পরিবর্তে বাতাস বলা হয়েছে। অর্থাৎ- অগ্নি মিশ্রিত প্রচণ্ড বাতাস কাফিরদেরকে সাগরে নিয়ে ফেলবে। আর তা হবে কাফির ও পাপীদের একত্রিত হওয়ার স্থান। আর তখন সাগর আগুনে পরিণত হবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, (وَ اِذَا الۡبِحَارُ سُجِّرَتۡ) “যখন সমুদ্রগুলোকে প্রজ্বলিত করে উত্তাল করা হবে।” (সূরা আত্ তাকভীর ৮১: ৬)।
এর বিপরীত হবে মু'মিনদের আগুন। মূলত আগুন মু'মিনদের ভীতির কারণ হবে এবং চাবুকের ন্যায় তাদেরকে তাড়িয়ে হাশরের দিকে তাড়িয়ে নিবে। আল্লাহই এ ব্যাপারে অধিক জানেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)