লগইন করুন
পরিচ্ছেদঃ ১৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নম্রতা, লজ্জাশীলতা ও উত্তম স্বভাব
৫০৮৩-[১৬] আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেনঃ তুমি যখন যেভাবে থাকবে, আল্লাহ তা’আলাকে ভয় করবে। মন্দ কাজ হয়ে গেলে সাথে সাথেই ভালো কাজ করবে। কারণ ভালো কাজ মন্দকে মুছে ফেলে। আর মানুষের সাথে সদাচরণ করবে। (আহমাদ, তিরমিযী ও দারিমী)[1]
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১। তাকওয়া (অর্থাৎ: আল্লাহকে ভক্তিসহকারে ভয় করে তাঁর সঠিক ভক্ত হওয়ার বিষয়টি), বাস্তবায়িত হয়: প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা মোতাবেক আল্লাহর আদেশ পালনে রত থেকে এবং তাঁর নিষিদ্ধ বা বারণকৃত জিনিস থেকে বিরত থেকে নিজের আত্মাকে আল্লাহর শাস্তি থেকে রক্ষা ও যত্ন করার মাধ্যমে।
২। যে আচরণকে প্রকৃত ইসলাম এবং সঠিক বুদ্ধি ভালো বলে স্বীকৃতি দেয়, তাকেই বলে সচ্চরিত্র বা সৎস্বভাব। এবং সচ্চরিত্র বা সৎস্বভাবের প্রভাব হলো: কাউকে কষ্ট না দেওয়া, লোকের উপকার করা এবং বিপদে ধৈর্যধারণ করা।
৩। অধিকতর সৎকর্ম করলে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে পাপের ক্ষমা পাওয়া যায়। মানুষের জন্য মহান আল্লাহর এটি একটি বড় অনুগ্রহ।
৪। প্রকৃত ইসলাম হলো সচ্চরিত্রের একটি ধর্ম। তাই প্রকৃত ইসলাম ধর্ম মানুষকে তার জীবনের সকল ক্ষেত্রে সচ্চরিত্র এবং সৎস্বভাব বজায় রাখার উপদেশ প্রদান করে। সুতরাং ইসলামের প্রতি দাওয়াত প্রদান, শিক্ষাদান, প্রশিক্ষণ, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক জীবনের সকল বিষয়ে সচ্চরিত্র বজায় রাখা অপরিহার্য।
وَعَنْ أَبِي ذَرٍّ قَالَ: قَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اتَّقِ اللَّهَ حَيْثُمَا كُنْتَ وَأَتْبِعِ السَّيِّئَةَ الْحَسَنَةَ تَمْحُهَا وَخَالِقِ النَّاسَ بِخُلُقٍ حَسَنٍ» . رَوَاهُ أَحْمد وَالتِّرْمِذِيّ والدارمي
ব্যাখ্যাঃ (اتَّقِ اللهَ) অর্থাৎ যাবতীয় ওয়াজিব কাজ (আল্লাহ যা করার নির্দেশ দিয়েছেন তা) পালন করা এবং যাবতীয় নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকাকে তাকওয়া বলা হয়। কেননা তাকওয়া হলো দীনের মূল ভিত্তি। আর এরই দ্বারা বিশ্বাসের স্তর উন্নীত হয়।
(حَيْثُ مَا كُنْتَ) অর্থাৎ তুমি নির্জনে থাক বা নি‘আমাতের মাঝে থাক অথবা বিপদাপদে থাক সর্বদা তাকওয়া অবলম্বন করবে। কেননা মহান আল্লাহ তোমার গোপন বিষয় সম্পর্কে অবহিত যেরূপ তোমার প্রকাশ্য বিষয় তিনি অবহিত। সুতরাং তার আদেশ ও যে সব কাজ তাকে সন্তুষ্ট করে তা সংরক্ষণ করা তোমার একান্ত দায়িত্ব। পাশাপাশি তার রাগের ও অসন্তুষ্টির বিষয় হতেও বিরত থাকা কর্তব্য।
মহান আল্লাহ বলেনঃ وَاتَّقُوا اللهَ الَّذِىْ تَسَاءَلُونَ بِه وَالْأَرْحَامَ إِنَّ اللهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيبًا
‘‘তোমরা সেই আল্লাহকে ভয় করো যার নামে তোমরা পরস্পর পরস্পরের কাছে চাও ও আত্মীয়তার বন্ধন গড়ে তোলো, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের সকল বিষয় পর্যবেক্ষণ করেন।’’ (সূরাহ্ আন্ নিসা ৪ : ১)
(أَتْبِعِ السَّيِّئَةَ) অর্থাৎ তোমার থেকে সগীরাহ্ গুনাহ হয়ে যায়, অনুরূপভাবে কাবীরাহ্ গুনাহও। ‘আম বা সাধারণভাবে এটা বুঝা যায়। আর এ মতটি সাধারণ কতিপয় ‘উলামা বলেছেন। তবে জামহূর ‘উলামার মত হলো, কেবলমাত্র সগীরাহ্ বা ছোট গুনাহগুলো ক্ষমা হয়ে যাবে।
(الْحَسَنَةَ) হাদীসে হাসানাহ্ বলতে সালাত, সাদাকা অথবা ইস্তিগফার ইত্যাদির কথা বলা হয়েছে।
(وَخَالِقِ النَّاسَ بِخُلُقٍ حَسَنٍ) এখানে خُلُقْ শব্দটি المخالقة মাসদার থেকে আমর এর সীগাহ। اسم فاعل নয়। যার অর্থ হলো মানুষের সাথে মিলিত হও বা তাদের সাথে সদাচরণ কর। আর (خُلُقٍ حَسَنٍ) হলো সহাস্যমুখে মানুষের সাথে মিলিত হওয়া। লজ্জার ক্ষেত্রে লজ্জাশীলতা প্রদর্শন করা। দানক্ষেত্রে দান করা ও দুঃখ-কষ্ট সহ্য করা। কারণ এ সকল কাজ যে করে সে দুনিয়াতে সফলতা লাভ করতে পারে এবং পরকালে মুক্তি লাভ করে। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৯৮৭)