লগইন করুন
পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - জানাযার সাথে চলা ও সালাতের বর্ণনা
১৬৫৮-[১৩] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন এক কবরের কাছ দিয়ে গেলেন, যাতে রাতের বেলা কাউকে দাফন করা হয়েছিল। তিনি বললেন, একে কখন দাফন করা হয়েছে? সাহাবীগণ জবাব দিলেন গত রাতে। তিনি বললেন, তোমরা আমাকে খবর দাওনি কেন? সাহাবীগণ বললেন, আমরা তাকে অন্ধকার রাতে দাফন করেছি, তাই আপনাকে ঘুম থেকে জাগানো ভাল মনে করিনি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দাঁড়িয়ে গেলেন, আর আমরাও তাঁর পিছনে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়ালাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর জানাযার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]
الْمَشْيُ بِالْجَنَازَةِ وَالصَّلَاةُ عَلَيْهَا
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَرَّ بِقَبْرٍ دُفِنَ لَيْلًا فَقَالَ: «مَتَى دُفِنَ هَذَا؟» قَالُوا: الْبَارِحَةَ. قَالَ: «أَفَلَا آذَنْتُمُونِي؟» قَالُوا: دَفَنَّاهُ فِي ظُلْمَةِ اللَّيْلِ فَكَرِهْنَا أَنْ نُوقِظَكَ فَقَامَ فَصَفَفْنَا خَلفه فصلى عَلَيْهِ
ব্যাখ্যা: কবরস্থ ব্যক্তির নাম ছিল ত্বলহাহ্ ইবনু বারা ইবনু ‘উমায়র। তিনি আনসারদের সাথে মৈত্রী বা সন্ধি চুক্তিতে আবদ্ধ ছিলেন।
এ বিশুদ্ধ হাদীসসহ আরো কিছু হাদীস দ্বারা প্রমাণ পাওয়া যায় যে, রাত্রিবেলা দাফন করা বৈধ। খুলাফায়ে রাশিদীনের মধ্যে আবূ বাকর, ‘উমার (রাঃ) প্রমুখগণও রাত্রিতে দাফন করেছেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নন্দিনী ফাত্বিমাহ্ (রাঃ)-কেও ‘আলী (রাঃ) রাত্রিকালেই দাফন করেছেন।
ইমাম শাফি‘ঈ, মালিক, আহমাদ, (এর প্রসিদ্ধ মত) ইমাম আবূ হানীফাহ্, ইসহাক্ব (রহঃ) প্রমুখ ইমামসহ জমহূর ‘আলিমের মত ও মাযহাব এটাই।
পক্ষান্তরে ক্বাতাদাহ্, হাসান বসরী, সা‘ঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব প্রমুখ ‘আলিমগণের মতে রাত্রিকালে দাফন করা বৈধ নয়। ইবনু হাযম বলেন, একান্ত প্রয়োজন বা সমস্যা ছাড়া রাতে দাফন করা বৈধ নয়। এরা জাবির (রাঃ)-এর হাদীসকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করেন। জাবির (রাঃ)-এর হাদীসে আছে, এক ব্যক্তি ইন্তিকাল করলে লোকেরা তাকে রাতে দাফন করে ফেলেন। খবর শুনে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে রাতে দাফন করার কারণে তিরস্কার করলেন এবং বললেন, একান্ত বাধ্য না হলে রাতে দাফন করবে না। আর যখন কারো কাফন দিবে তাকে উত্তম কাফন দিবে।
জমহূরের পক্ষ থেকে এ হাদীসের প্রত্যুত্তরে বলা হয় যে, লোকেরা রাতের অন্ধকারে নিকৃষ্ট কাপড় দিয়েই তাকে দাফন করেছিল, তাই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের তিরস্কার করেন এবং রাতের বেলা কবর দিতে নিষেধ করেন। ইমাম ত্বহাবী (রহঃ) বলেন, সকল মুসলিম যাতে জানাযায় অংশগ্রহণ পূর্বক (জানাযাহ্ আদায়ের) ফাযীলাত লাভ করতে পারে তাই রাতের অন্ধকারে সামান্য কতিপয় লোক নিয়ে জানাযাহ্ আদায় করতে নিষেধ করা হয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, এ নিষেধাজ্ঞা প্রথম দিকে ছিল পরবর্তীতে অনুমতি প্রদান করা হয়েছে। অথবা জানাযাহ্ আদায় না করিয়েই রাতে দাফন করতে নিষেধ করা হয়েছে।
ক্ববরের উপর জানাযার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়ের বৈধতাও এ হাদীস থেকে প্রমাণিত। চাই তার জানাযাহ্ আদায় করে দাফন করা হোক চাই বিনা জানাযায় দাফন করা হোক। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অধিকাংশ আহলে ‘ইলম সাহাবী এবং বিজ্ঞ তাবি‘ঈ ও তৎপরবর্তী ইমাম মুজতাহিদ এ মতই অবলম্বন করেছেন। আবূ মূসা, ইবনু ‘উমার, ‘আয়িশাহ্, ‘আলী, ইবনু মাস্‘ঊদ, আনাস, সা‘ঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব, ক্বাতাদাহ্ প্রমুখ সাহাবী এবং তাবি‘ঈ হতে এতদসংক্রান্ত বর্ণনা রয়েছে।
ইমাম শাফি‘ঈ, আহমাদ, ইসহাক্ব, আওযা‘ঈ প্রমুখসহ সমস্ত হাদীসবিদ এ মতের-ই অনুসারী ছিলেন। এ বিষয়ে অনেক সহীহ ও হাসান হাদীস বিদ্যমান রয়েছে। পক্ষান্তরে ইমাম নাখ্‘ঈ, সাওরী, মালিক, আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) প্রমুখ বলেন, মাইয়্যিতের ওলী উপস্থিত থেকে জানাযাহ্ হয়ে গেলে ঐ ব্যক্তির পুনঃ জানাযাহ্ জায়িয নেই। আর এ অবস্থা ছাড়া ক্ববরের উপরও জানাযাহ্ বৈধ নয়। অনুরূপ জানাযাহ্ ছাড়া দাফন হয়ে থাকলে তার জন্যই কেবল ক্ববরের উপর জানাযাহ্ বৈধ অন্যথায় নয়।
কেউ কেউ বলেছেন, দাফনের পর ক্ববরের উপর সালাত আদায়ের বিষয়টি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য খাস ছিল। কিন্তু আল্লামা শাওকানী (রহঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য খাস হওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই দলীলের প্রয়োজন, কিন্তু এখানে তা নেই। ইমাম ইবনু হাযম বলেন, উল্লেখিত বাক্যে এমন দলীল নেই যে, এটা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য খাস ছিল। তাছাড়া অন্যের জন্য ক্ববরের উপর সালাত আদায়ের কোন নিষেধাজ্ঞাও নেই।
ক্ববরের উপর জানাযার সালাত কতদিন পর্যন্ত চলবে? এটা নিয়েও কিছুটা মতপার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।
ইমাম আহমাদ, ইসহাক্ব ও শাফি‘ঈর অনুসারীরা একমাসকাল পর্যন্ত সালাত আদায় বৈধ মনে করেন।
ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) বলেন, একমাত্র ওলী তিনদিন পর্যন্ত সালাত আদায় করতে পারবে। কিন্তু অন্যেরা আদায় করতেই পারবে না। নির্ভরযোগ্য একদল ‘উলামার মতে সর্বদাই ক্ববরের উপর জানাযার সালাত আদায় করা চলবে। কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুহাদায়ে উহুদের ক্ববরের উপর আট বছর পর জানাযাহ্ আদায় করিয়েছেন। এদের আরো যুক্তি হলো- সালাতুল জানাযার উদ্দেশ্য হলো মৃত ব্যক্তির জন্য দু‘আ। সুতরাং তা সর্বসময়ের জন্যই বৈধ, আর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারে কোন সময়ও নির্ধারণ করে দেননি।