১৬৫৪

পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - জানাযার সাথে চলা ও সালাতের বর্ণনা

১৬৫৪-[৯] ত্বলহাহ্ ইবনু ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আওফ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনু ’আব্বাস-এর পেছনে এক জানাযার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করেছি। তিনি এতে সূরাহ্ আল্ ফা-তিহাহ্ পড়েছেন এবং বলেছেন, আমি (স্বরবে) সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ এজন্য পড়েছি, যেন তোমরা জানতে পারো সূরাহ্ আল্ ফা-তিহাহ্ পড়া সুন্নাত। (বুখারী)[1]

الْمَشْيُ بِالْجَنَازَةِ وَالصَّلَاةُ عَلَيْهَا

وَعَنْ طَلْحَةَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَوْفٍ قَالَ: صَلَّيْتُ خَلْفَ ابْنِ عَبَّاسٍ عَلَى جَنَازَةٍ فَقَرَأَ فَاتِحَةَ الْكِتَابِ فَقَالَ: لِتَعْلَمُوا أَنَّهَا سُنَّةٌ. رَوَاهُ البُخَارِيّ

ব্যাখ্যা: জানাযার সালাতে সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ পাঠ করা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাহ বা চিরাচরিত নিয়ম। এ শাশ্বত সুন্নাহর ‘আমলকে সার্বজনীন করার জন্য বা তার অবহতির জন্য ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) জানাযার সালাতে জোরে জোরে সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ পাঠ করেছেন। এটা তার নিজের বক্তব্যেই প্রকাশ করেছেন। সুতরাং জানাযার সালাতে সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ পাঠ করতে হবে এ হাদীস তার প্রকৃষ্ঠ দলীল। (অসংখ্য সাহাবীদের মধ্যে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ পাঠ করলেন এবং সুন্নাত বলে দাবী করলেন এতে একজন সাহাবীও তার প্রতিবাদ অথবা বিরোধিতা করেননি, সুতরাং এটা ইজমায়ে সাহাবীর মর্যাদা রাখে)।

এছাড়াও বহু সাহাবী থেকে জানাযার সালাতে সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ পাঠের হাদীস বর্ণিত হয়েছে। মুনযিরী এর বিস্তারিত তথ্যাদি পেশ করেছেন।

ইমামদের মধ্যে আয়িম্মায়ে সালাসা তথা ইমাম শাফি‘ঈ, আহমাদ, ইসহাকসহ অসংখ্য ইমাম ও ফকীহ এ মতেরই অনুসারী ছিলেন।

ইমাম তুরকিমানী বলেনঃ হানাফীদের নিকট জানাযার সালাতের সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ পাঠ ওয়াজিবও নয় মাকরূহও নয়। মালিকীদের মতে এটা মাকরূহ। ইমাম মালিক বলেছেনঃ আমাদের মদীনায় এ ‘আমল প্রচলিত নয়। কিন্তু মুহাদ্দিসগণ ইমাম মালিক-এর এ কথার তীব্র প্রতিবাদ করে বলেছেন, আবূ হুরায়রাহ্, আবূ ‘উমামাহ্, সা‘ঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব প্রমুখসহ মদীনার বড় বড় সাহাবী, তাবি‘ঈ ও ফকীহ থেকে (সূরাহ্ আল ফা-তিহার) ক্বিরাআত (কিরআত) পাঠের ‘আমল পাওয়া সত্ত্বেও তিনি কিভাবে বললেন, এটা মদীনাবাসীর ‘আমল নয়? এরপরও কথা হলো এই যে, মদীনাবাসীদের কোন ‘আমল শারী‘আতের দলীল নয়।

ইবনু ‘আব্বাস-এর কথা- ‘এটা সুন্নাত’, এ সুন্নাহ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চিরাচরিত সুন্নাহ বা নিয়ম। সুন্নাহ মানে ফারযের (ফরযের/ফরজের) বিপরীত এমনটি নয়, এটা ইস্তিলাহে উরফী বা স্বভাবসিদ্ধ পরিভাষা। আশরাফ বলেছেন, সুন্নাহ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো যা বিদ্‘আতের বিপরীত। আল্লামা কুসতুলানী বলেনঃ সুন্নাহ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো এটা শার‘ঈ প্রণেতার পথ ও পন্থা। সুন্নাহ বলা এটা ওয়াজিব হওয়াকে নিষেধ করে না। ইমাম শাফি‘ঈ বলেনঃ অধিকাংশ ‘আলিমের নিকট কোন সাহাবীর সুন্নাহ দাবী এটা মারফূ' হাদীসের মর্যাদা রাখে। (ইবনু ‘আব্বাস-এর আরেকটি বর্ণনা ১৬৭৩ নং হাদীসে দেখুন)

জানাযার সালাতে সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ কোথায় পাঠ করতে হবে? এ হাদীসে তার উল্লেখ নেই। কিন্তু ইমাম শাফি‘ঈর কিতাবুল উম্ম, বায়হাক্বী, নাসায়ী প্রভৃতি হাদীস গ্রন্থে জাবির (রাঃ) প্রমুখাত হাদীসে স্পষ্টভাবেই বলা হয়েছে প্রথম তাকবীর দিয়েই সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ পাঠ করবে।

মুসন্নাফে ‘আবদুর রাযযাক্ব, নাসায়ী প্রভৃতি গ্রন্থে আবূ ‘উমামাহ্ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জানাযার সালাতে সুন্নাত হলো প্রথম তাকবীর দিয়ে উম্মুল কুরআন সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ পাঠ করবে। এরপর (তাকবীর দিয়ে) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর দরূদ পড়বে..... প্রথম তাকবীর ছাড়া ক্বিরাআত (কিরআত) পড়বেন।

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) জানাযায় ক্বিরাআত (কিরআত) পড়তেন না মর্মে যে কথাটি রয়েছে এর উপর ভিত্তি করে সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ বর্জন মোটেও সঠিক নয়। কেননা এটা ছিল তার ব্যক্তিগত ‘আমল। তাছাড়া তিনি ক্বিরাআত (কিরআত) পড়তেন না। তার অর্থ এই নয় যে, তিনি সূরাহ্ আল ফা-তিহাও পাঠ করতেন না বরং এর অর্থ হলো তিনি সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ ছাড়া অন্য কোন সূরাহ্ পাঠ করতেন না। উপরন্তু এটি নেতিবাচক কথা, আর সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ পাঠের হাদীসটি হলো ইতিবাচক; উসূলে হাদীস তথা হাদীস বিজ্ঞানের মূলনীতি হলো ইতিবাচক ও নেতিবাচক দু’টি হাদীস পরস্পর সাংঘর্ষিক হলে ইতিবাচক হাদীসটি প্রাধান্য পাবে। সর্বোপরি সাহাবীর কোন কথা বা ‘আমল রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শাশ্বত সুন্নাহকে বর্জন কিংবা রহিত করতে পারে না।

সমস্ত উম্মাতের ইজমা বা ঐকমত্য হলো, জানাযার সালাতও সালাতের অন্তর্ভুক্ত। এতে রয়েছে ক্বিবলামুখী হয়ে দাঁড়ানো, হাত বাঁধা, জামা‘আত হওয়া ইত্যাদি। সুতরাং অন্যান্য সালাতের ন্যায় এখানে ক্বিরাআত (কিরআত) পাঠও আবশ্যক। তাছাড়াও সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ পাঠের নির্দেশ ও ‘আমল সংক্রান্ত সুস্পষ্ট হাদীস যেখানে বিদ্যমান সেখানে সংশয় সন্দেহ আর কি থাকতে পারে?

জানাযাহ্ আদায়কালে সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ অন্যান্য দু‘আগুলো স্বরবে না নীরবে পড়বে এ নিয়ে কিছুটা মতপার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। ইবনু ‘আব্বাসের হাদীসের ভিত্তিতে কতিপয় ‘আলিম জোরে পাঠ করাকে মুস্তাহাব মনে করেন। কিন্তু জমহূর ইমাম ও মুহাদ্দিসের মতে নীরবে পাঠ করাটাই মুস্তাহাব। আরেকদল বলেন, জোরে আস্তে পড়া হলো ইমামের ইখতিয়ার সে জোরেও পড়তে পারে আস্তেও পড়তে পারে।

শাফি‘ঈ মাযহাবের কোন কোন ‘আলিম বলেছেনঃ জানাযাহ্ রাতে পড়লে জোরে ক্বিরাআত (কিরআত) পড়তে আর দিনে হলে আস্তে ক্বিরাআত (কিরআত) পড়বে।

‘আবদুর রহমান মুবারকপূরী বলেনঃ ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস-এর জোরে পড়ার বিষয়টি ছিল শিক্ষার জন্য, জোরে পড়াই যে সুন্নাত এ উদ্দেশ্য নয়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ