লগইন করুন
পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - জানাযার সাথে চলা ও সালাতের বর্ণনা
১৬৫২-[৭] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাবশার বাদশাহ নাজাশীর মৃত্যু সংবাদ তাঁর মৃত্যুর দিনই মানুষদেরকে জানিয়েছেন (অথচ তিনি মারা গিয়েছিলেন সুদূর হাবশায়)। তিনি সাহাবা (সাহাবা) কিরামকে নিয়ে ঈদগায় গেলেন। সেখানে সকলকে জানাযার সালাতের জন্য কাতারবদ্ধ করলেন এবং চার তাকবীর বললেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]
الْمَشْيُ بِالْجَنَازَةِ وَالصَّلَاةُ عَلَيْهَا
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَعَى لِلنَّاسِ النَّجَاشِيَّ الْيَوْمَ الَّذِي مَاتَ فِيهِ وَخرج بِهِمْ إِلَى الْمُصَلَّى فَصَفَّ بِهِمْ وَكَبَّرَ أَرْبَعَ تَكْبِيرَات
ব্যাখ্যা: হাবশার বাদশাহর উপাধী হলো নাজাশী। তার ‘আসল নাম আসহামা। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় থাকতে মুসলিমদের একটি দল তার রাজ্যে হিজরত করেছিলেন। এ বাদশাহ মুসলিম মুহাজিরদের খুব খাতির করেছিলেন। ৬ষ্ঠ অথবা ৭ম হিজরীতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ নাজাশীর নিকট ইসলামের দা‘ওয়াত পত্র দিয়ে সাহাবী ‘আমর ইবনু ‘উমাইয়্যাহ্ আয যামিরীকে প্রেরণ করেন।
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পত্র পেয়ে তিনি ভক্তি ভরে তা গ্রহণ করেন এবং তার চোখে মুখে লাগিয়ে চুম্বন করেন। পত্রের সম্মানে স্বীয় সিংহাসন অথবা খাটিয়া ছেড়ে সোজা মাটিতে বসে পরেন। তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চাচাত ভাই জা‘ফার ইবনু আবূ ত্বালিব-এর হাতে ইসলাম গ্রহণ করেন।
ওয়াকিদী, ইবনু সা‘দ, ইবনু জারীর প্রমুখ নির্ভরযোগ্য ঐতিহাসিকদের মতে তিনি নবম হিজরীর রজব মাসে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তাবূক যুদ্ধ থেকে ফিরে আসার পর স্বীয় রাজ্যেই ইন্তিকাল করেন।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওয়াহীর মাধ্যমে জানতে পেরে সাহাবীদের মধ্যে তার মৃত্যু সংবাদ ঘোষণা করেন এবং তার জন্য গায়িবী জানাযাহ্ আদায় করেন।
এ হাদীস দ্বারা মৃত সংবাদ ঘোষণা বৈধ সাব্যস্ত হয়। ইমাম বুখারী অধ্যায় বেঁধেছেনঃ
(بَابٌ الرَّجُلُ يَنْعى إِلى أَهْلِ الْمَيِّتِ بِنَفْسِه) (অধ্যায়ঃ মৃত ব্যক্তির পরিবার-পরিজনের নিকট তার মৃত্যু সংবাদ পৌঁছানো)
হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেনঃ এর দ্বারা প্রমাণিত, মৃত্যু সংবাদ ঘোষণা পুরোটাই নিষিদ্ধ নয়। তবে জাহিলী যুগের রীতি পদ্ধতিতে মৃত্যু সংবাদ ঘোষণা নিষেধ। সালাফদের একদল এ ব্যাপারে খুব বেশী কঠোরতা অবলম্বন করেছেন, এমনকি কেউ মৃত্যুবরণ করলে তা অন্যকে জানাতেও তারা অপ্রস্ত্তত। এ হাদীস দ্বারা দূরদেশে মৃত্যুবরণকারীর গায়িবী জানাযাহ্ আদায়ের বৈধতাও প্রমাণিত হয়।
তবে এতে মনীষীদের বেশ কয়েকটি মতামত রয়েছে। একদল বিনা শর্তে এটাকে বৈধ মনে করেন। ইমাম শাফি‘ঈ, আহমাদ এবং জমহূর সালাফ এ মতের-ই প্রবক্তা। ইবনু হাযম এমনকি এ কথাও বলেছেন, কোন একজন সাহাবী থেকেও এর বিরোধিতা বা নিষেধাজ্ঞা আসেনি।
দ্বিতীয় আরেকদল কোন শর্তেই এটা বৈধ মনে করেন না। এটা হানাফী এবং মালিকীদের মত।
তৃতীয় দলের মতে মৃত্যুর দিন-ই কেবল গায়িবী জানাযাহ্ বৈধ, দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলে তা বৈধ নয়।
চতুর্থ দলের বক্তব্য হলোঃ মৃত ব্যক্তি যদি ক্বিবলার দিকে থাকে তবে তার গায়িবী জানাযাহ্ বৈধ অন্যথায় নয়। ইবনু হিব্বান এ মতের অনুসারী।
পঞ্চম দলের মতে, মৃত ব্যক্তি যদি এমন দেশে থাকে যেখানে তার জানাযাহ্ আদায়ের কেউ নেই, যেমন নাজাশী, এ অবস্থায় তার গায়িবী জানাযাহ্ বৈধ অন্যথায় নয়। শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তায়মিয়্যাহ্ (রহঃ) এ মতটি গ্রহণ করেছেন।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাজাশীর জন্য গায়িবী জানাযাহ্ আদায় করিয়েছিলেন, এর প্রকৃতি ও বাস্তবতা নিয়ে মনীষীদের বক্তব্য হলো- ঐ সময় তার লাশ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে উপস্থিত করা হয়েছিল, তিনি তা প্রত্যক্ষ করে জানাযাহ্ আদায় করেছেন, তবে লোকেরা দেখতে পায়নি। অথবা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও লাশের মাঝের দূরত্বের ব্যবধান অথবা পর্দা উঠিয়ে দেয়া হয়েছিল। সুতরাং তিনি তার লাশ প্রত্যক্ষ করেই জানাযাহ্ আদায় করেছিলেন। কেউ বলেছেন, গায়িবী জানাযাহ্ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য খাস ছিল, অন্যের বেলায় বৈধ নয়।
এর প্রত্যুত্তরে মুহাদ্দিসগণ বলেছেন, এ খাসের কোন দলীল সাব্যস্ত হয়নি। এভাবে কথায় কথায় খাসের দাবী করলে শারী‘আতের অনেক আহকামের দ্বারই রুদ্ধ হয়ে যাবে।