৭০১

পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - মাসজিদ ও সালাতের স্থান

৭০১-[১৩] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাত ধরনের মানুষকে আল্লাহ তা’আলা সেদিন (কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন) তাঁর ছায়ার নীচে আশ্রয় দিবেন যেদিন আল্লাহর ছায়া ছাড়া আর কারো ছায়া থাকবে নাঃ (১) ন্যায়পরায়ণ শাসক, (২) সেই যুবক যে যৌবন বয়সে আল্লাহর ’ইবাদাতে কাটিয়েছে, (৩) যে ব্যক্তি মাসজিদ থেকে বের হয়ে এসে আবার সেখানে ফিরে যাওয়া পর্যন্ত মসজিদেই তার মন পড়ে থাকে, (৪) সেই দুই ব্যক্তি, যারা পরস্পরকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসে। যদি তারা একত্রিত হয় আল্লাহর জন্য হয়, আর যদি পৃথক হয় তাও আল্লাহর জন্যই হয়, (৫) সে ব্যক্তি, যে একাকী অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে আর আল্লাহর ভয়ে তার দু’ চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরে, (৬) সে ব্যক্তি, যাকে কোন উচ্চ বংশীয় সুন্দরী যুবতী কু-কাজ করার জন্য আহবান জানায়। এর উত্তরে সে বলে, আমি আল্লাহকে ভয় করি, (৭) সেই ব্যক্তি, যে আল্লাহর পথে গোপনে দান করে। যার বাম হাতও বলতে পারে না যে, তার ডান হতে কী খরচ করেছে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْمَسَاجِدِ وَمَوَاضِعِ الصَّلَاةِ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «سَبْعَة يظلهم الله تَعَالَى فِي ظِلِّهِ يَوْمَ لَا ظِلَّ إِلَّا ظِلُّهُ إِمَامٌ عَادِلٌ وَشَابٌّ نَشَأَ فِي عِبَادَةِ اللَّهِ وَرجل قلبه مُعَلّق بِالْمَسْجِدِ وَرَجُلَانِ تَحَابَّا فِي اللَّهِ اجْتَمَعَا عَلَيْهِ وَتَفَرَّقَا عَلَيْهِ وَرَجُلٌ ذَكَرَ اللَّهَ خَالِيًا فَفَاضَتْ عَيْنَاهُ وَرجل دَعَتْهُ امْرَأَة ذَات منصب وَجَمَالٍ فَقَالَ إِنِّي أَخَافُ اللَّهَ وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ فَأَخْفَاهَا حَتَّى لَا تَعْلَمَ شِمَالُهُ مَا تُنْفِقُ يَمِينُهُ»

ব্যাখ্যা: রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণীঃ (يَوْمَ لَا ظِلَّ اِلَّا ظِلُّه) এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) দিবসে লোক সকল প্রতিপালকের সামনে দন্ডায়মান হবে এবং সূর্যের তাপটা তাদের ওপর কঠিন আকার ধারণ করবে, ফলে তাদের ঘাম ঝরবে। আর সেখানে ‘আরশের ছায়া ছাড়া কোন ছায়া থাকবে না।

(فِي ظِلِّه) ‘‘ও তাঁর ছায়ায়’’-এর কয়েকটি মর্মার্থ হতে পারে।

* সম্মানের কারণে ‘আর্‌শ (আরশ) কে আল্লাহর দিকে সম্বোধন করা হয়েছে।

* ছায়া দ্বারা উদ্দেশ্য তত্ত্বাবধান, হিফাযাত, দায়িত্ব। যেমন বলা হয় فُلَانٌ فِىْ ظِلِّ الْمُلَكِ অমুক বাদশার তত্ত্বাবধানে রয়েছে।

* তার ‘আরশের ছায়া যেমন অন্য হাদীসে এসেছে।

(سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمُ اللهُ فِي ظِلِ عَرْشِه) সাত শ্রেণীর ব্যক্তিকে আল্লাহ তাঁর ‘আরশের ছায়ায় স্থান দিবেন।

(وَشَابٌّ نَشَأَ فِي عِبَادَةِ اللهِ) ঐ যুবক যে নিজের যৌবন আল্লাহর ‘ইবাদাতে কাটিয়েছে। যুবককে খাস করার কারণ হলো, যৌবন বয়সে প্রবৃত্তির চাহিদা বেশী প্রাধান্য পায়। সুতরাং এ অবস্থায় ‘ইবাদাতে ব্যাস্ত থাকা অধিকতর তাক্বওয়ার পরিচয় বহন করে। হাদীসে এসেছে, তোমার রব ঐ যুবককে পছন্দ করেন যার কোন অভিলাষ নেই।

পরস্পরকে ভালোবাসে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে। হাফিয ইবনু হাজার বলেনঃ তাদের এ ভালোবাসা দীনের জন্যই অটুট থাকে, দুনিয়ার কোন কারণে বিচ্ছিন্ন করে না। শুধুমাত্র মৃত্যুই বিচ্ছিন্ন করে।

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণীঃ (خَالِيًا) এমন ব্যক্তি, যে আল্লাহকে স্মরণ করে মানুষ থেকে নির্জনে তার জিহবা অথবা তার অন্তর দ্বারা আল্লাহকে স্মরণ করে।

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণীঃ (فَفَاضَتْ عَيْنَاهُ) তার দু’ চক্ষু প্রবাহিত হয়, অর্থাৎ- অশ্রু প্রবাহিত হয় তার অন্তরের নম্রতার দরুন। আর আল্লাহর মহত্ত্বতার প্রবল ভয়ের দরুন।

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণীঃ (وَرَجُلٌ دَعَتْهُ اِمْرَأَةٌ) এমন ব্যক্তি, যাকে কোন মহিলা ডাকে। অর্থাৎ- বংশ মর্যাদাসম্পন্ন কোন মহিলা যিনার জন্য তার নিজের দিকে ডাকে।

(فَقَالَ) ‘‘অতঃপর সে বলে’’, অর্থাৎ- অশ্লীলতার ব্যাপারে তার থেকে বাঁচার জন্য ধমকের স্বরে এবং তার থেকে ওজর পেশ করে। অথবা এর উদ্দেশ্য হচ্ছে তার অন্তর থেকে নিজেকে বাধা দেয়ার জন্য।

(إِنِّىْ أَخَافُ اللّهَ) ‘‘আমি আল্লাহকে ভয় করি’’। ‘ইয়ায (রহঃ) বলেনঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ক্ষেত্রে বংশীয় মর্যাদাওয়ালী ও সুন্দরী রমণীকে নির্দিষ্ট করেছেন। তার প্রতি অত্যধিক আগ্রহ ও তাকে পাওয়াটা কঠিন হওয়ার কারণে। আর সে এমন মহিলা যার মধ্যে বংশীয় মর্যাদা ও সুন্দর উভয়টির সমাবেশ ঘটেছে। বিশেষ করে নিজের দিকে নিজেই আহবানকারিণী। এ রকম মহিলা তার ইচ্ছা বা আকাঙক্ষায় পৌঁছার ক্ষেত্রে কষ্ট থেকে বিমুখ আর এক্ষেত্রে ধৈর্য ধারণ করাটা একমাত্র আল্লাহর ভয়ের জন্য হয়ে থাকে। আর এটাই হচ্ছে ঈমানের স্তর এবং মহান আনুগত্য। তাই আল্লাহ তা‘আলা তার নিজস্ব ছায়ায় আশ্রয় দেয়ার মাধ্যমে এ ব্যক্তিকে মর্যাদাবান করেছেন।

(لَا تَعْلَمَ شِمَالُه مَا تُنْفِقُ يَمِينُه) ‘ডান হাত যা দান করে বাম হাত তা জানে না।’ অর্থাৎ- অত্যন্ত গোপনে দান করে। ইবনু মালিক বলেনঃ এটা নফল দানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, কেননা ফরয যাকাত তো প্রকাশ্যেই আদায় করতে হয়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ