হাদিসটি ইমেইলে পাঠাতে অনুগ্রহ করে নিচের ফর্মটি পুরন করুন
security code
৬২১৮

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - সমষ্টিগতভাবে মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য

৬২১৮-[২৩] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: যদি হিজরত হত, তাহলে আমি আনসারদের একজন হতাম। যদি লোকজন কোন উপত্যকায় চলে, আর আনসারগণ অন্য কোন উপত্যকায় চলে, তবে অবশ্যই আমি আনসারদের উপত্যকায় চলব। আনসারগণ হলো ভিতরের পোশাকস্বরূপ আর অন্যান্য লোকেরা হলো বাইরের পোশাকস্বরূপ। আমার পরে অনতিবিলম্বে তোমরা পক্ষপাতিত্ব দেখতে পাবে। কাজেই তোমরা হাওযে কাওসারের কাছে আমার সাথে মিলিত হওয়া পর্যন্ত ধৈর্যধারণ করবে। (বুখারী)

الفصل الاول (بَاب جَامع المناقب)

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَوْلَا الْهِجْرَةُ لَكُنْتُ امْرَءًا مِنَ الْأَنْصَارِ وَلَوْ سَلَكَ النَّاسُ وَادِيًا وَسَلَكَتِ الْأَنْصَارُ وَادِيًا أَوْ شِعْبًا لَسَلَكْتُ وَادِيَ الْأَنْصَارِ وشعبها وَالْأَنْصَار شِعَارٌ وَالنَّاسُ دِثَارٌ إِنَّكُمْ سَتَرَوْنَ بَعْدِي أَثَرَةً فَاصْبِرُوا حَتَّى تَلْقَوْنِي عَلَى الْحَوْضِ» . رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ متفق علیہ ، رواہ البخاری (4330) و مسلم (139 / 1061)، (2446) ۔ (صَحِيح)

ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় শারহুস্ সুন্নাহ্ গ্রন্থে বলা হয়েছে। (لَوْلَا الْهِجْرَةُ لَكُنْتُ امْرَءًا مِنَ الْأَنْصَارِ) অর্থাৎ যদি হিজরতের মতো ঘটনা না ঘটতো তাহলে আমি আনসারদের একজন হতাম।
আনসারদের মধ্যে হওয়ার আকাক্ষা দ্বারা এখানে উদ্দেশ্য এটা নয় যে, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জন্ম যদি কুরায়শদের মধ্যে না হয়ে আনসারদের মধ্যে হত তাহলে ভালো হত। কেননা এটা হারাম। আর কেনইবা রাসূলুল্লাহ (সা.) এটা আকাক্ষা করবেন। তাঁর বংশই তো অনেক উঁচু ও সম্রান্ত। বরং তিনি (সা.) এর দ্বারা বুঝিয়েছেন এলাকাগত সম্পর্ককে যার অর্থ দাড়ায় যদি দীনের কারণে হিজরত করতে না হত এবং স্বদেশ ত্যাগ করতে না হত তাহলে আমি তোমাদের মতোই আনসার এলাকায় থাকতাম এবং তোমাদের নাম আনসার (সাহায্যকারী) নামেই পরিচিত হতাম। অর্থাৎ মানুষদেরকে সাহায্য করতাম।
কেউ কেউ বলেন, এ কথার মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ (সা.)- আনসারদের মর্যাদা বুঝিয়েছেন। কারণ হিজরত করার পর সবচেয়ে মর্যাদার কাজ হলো সাহায্য করা বা আনসার হওয়া। অতএব যদি হিজরতের ঘটনা না ঘটত তাহলে আল্লাহর কাছে এই সম্মান ও মর্যাদা কারণে রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজেও তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেতেন।
সারকথা হলো যদি হিজরতের কারণে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মর্যাদা আনসারদের থেকে বেশি না হত তাহলে তিনি তাদেরই একজন হয়ে যেতেন। এটি তাদের জন্য রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর পক্ষ থেকে বিনয় প্রকাশ। তিনি মানুষদেরকে উৎসাহিত করেছেন। যেন তারা আনসারদের সম্মান করে। কিন্তু তারা ঐ সকল মুহাজিরদের মর্যাদার স্তরে পৌছতে পারবে না, যাদেরকে তাদের বাড়ি-ঘর থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। আত্মীয়-স্বজন ও প্রিয় মানুষদের থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। স্বদেশ ভূমি ও নিজেদের ধন-সম্পদ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সন্তুষ্টির জন্য এবং দীন ইসলামকে উঁচু করার জন্য তারা যা করেছেন আল্লাহ তাতে তাদের ওপর সন্তুষ্ট হয়েছেন।
যদিও আনসারদের ত্যাগ ও কুরবানী সাহায্য ও সহযোগিতা, মমতা ও ভালোবাসা কোন অংশেই কম ছিল না। কিন্তু তারপরেও তারা নিজেদের প্রিয়জনদের সাথে, স্বদেশের মাটিতে থাকতে পেরেছেন। এজন্যই আনসারদের তুলনায় মুহাজিরদের মর্যাদা বেশি।
(لَسَلَكْتُ وَادِيَ الْأَنْصَارِ وشعبها) অর্থাৎ তাহলে অবশ্যই আমি আনসারদের উপত্যকায় বা তাদের গিরিপথে চলতাম।
ইমাম খত্ত্বাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, হিজায ভূমিতে আছে অনেক উপত্যকা ও গিরিপথ। যদি সকলে চলার কারণে পথ সংকুচিত হয়ে যায়। আর সে সময় যদি আনসারগণ একটি গিরিপথ বা উপত্যকা দিয়ে চলে তাহলে আমিও আনসারদের সাথেই সেই পথে চলবো।
অথবা এটিও হতে পারে যে, তিনি উপত্যকা দ্বারা মত বা সিদ্ধান্ত উদ্দেশ্য নিয়েছেন। যেমন- ‘আরবরা বলে থাকে (فُلَانٌ فِي وَادٍ وَأَنَافِي وَادٍ) অমুক (সে) ঐ উপত্যকায় আর আমি এই উপত্যকায় অর্থাৎ সে ঐ মতে আর আমি এই মতে।
অথবা এটিও হতে পারে যে, আনসারদের চালচলন, কথা-বার্তা ও আচার-ব্যবহার তাঁর কাছে অনেক ভালো লেগেছে। তাই তিনি তাদের সাথে থাকার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সা.) এটি বুঝাননি যে, তিনি তাদের অনুসরণ করবেন। কারণ রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজেই অনুসরণীয় ব্যক্তি। সকল মু'মিনের জন্য আবশ্যক হলো তার অনুসরণ করা।
(الْأَنْصَار شِعَارٌ وَالنَّاسُ دِثَارٌ) অর্থাৎ আনসারগণ হলো ভিতরের আবরণ আর অন্য লোকেরা হলো বাহিরের আবরণ। এখানে আনসারদেরকে ভিতরের আবরণ বলে বুঝানো হয়েছে যে, তাদের সাথে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর গভীর বন্ধুত্ব ও খাটি ভালোবাসি রয়েছে। যার মানে হলো তারা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর অনেক কাছের লোক। যেমন সন্তানেরা তাদের পিতার কাছের লোক হয়ে থাকে।
(إِنَّكُمْ سَتَرَوْنَ بَعْدِي أَثَرَةً) অর্থাৎ অচিরেই আমার পরে পক্ষপাতিত্বমূলক তোমরা রাষ্ট্র ব্যবস্থা দেখতে পাবে। সেই সময় তোমাদের শাসকেরা দুনিয়ার গনীমাত ও মালে ফাইয়ের ক্ষেত্রে তোমাদের ওপর অন্যদেরকে এবং নিজেদেরকে প্রাধান্য দিবে, তখন তোমরা ধৈর্যধারণ করবে হাওযে কাওসারে আমার সাথে তোমাদের সাক্ষাৎ হওয়া পর্যন্ত। তারপর তোমরা সেখান থেকে তোমাদের ক্ষতিপূরণ করে নিতে পারবে এমন হাওযে কাওসারের পানি পান করার মাধ্যমে যা পান করলে আর কখনো পিপাসার্ত হবে না। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ