পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - সমষ্টিগতভাবে মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬২০৪-[৯] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সময়ে এ চার ব্যক্তি পূর্ণ কুরআন মাজীদ মুখস্থ করেছিলেন- উবাই ইবনু কা’ব, মু’আয ইবনু জাবাল, যায়দ ইবনু সাবিত ও আবূ যায়দ। আনাস (রাঃ)-কে প্রশ্ন করা হলো, আবূ যায়দ কে? তিনি বললেন, আমার এক চাচা। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب جَامع المناقب)
وَعَن أنس قَالَ: جَمَعَ الْقُرْآنَ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَرْبَعَةٌ: أُبَيُّ بْنِ كَعْبٍ وَمُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ وَزَيْدِ بْنِ ثَابِتٍ وَأَبُو زَيْدٍ قِيلَ لِأَنَسٍ: مَنْ أَبُو زَيْدٍ؟ قَالَ: أحد عمومتي. مُتَّفق عَلَيْهِ متفق علیہ ، رواہ البخاری (3810) و مسلم (119 / 2460)، (6340) ۔ (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: হাদীসে উল্লেখিত চারজন ব্যক্তি দ্বারা আনাস (রাঃ) খাযরাজ গোত্রের চারজন ব্যক্তিকে বুঝিয়েছেন। যেহেতু মুহাজিরদের মাঝেও অনেকে কুরআন জমা করেছিলেন। কুরআন জমা করার বিষয়টি শুধু এই চারজনের মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিল না।
ফাতহুল বারীতে আবূ যায়দ-এর নামের ব্যাপারে কিছুটা মতানৈক্য উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন- ‘আলী ইবনু মাদীনী বলেন, তার নাম হলো আওস। ইয়াহইয়া ইবনু মাঈন বলেন, তার নাম হলো, সাবিত ইবনু যায়দ। আরো কেউ কেউ বলেন, তার নাম হলো সা'দ ইবনু উবায়দ ইবনু নুমান। ইমাম তবারানী (রহিমাহুল্লাহ) এই নামকেই বেশি সঠিক হিসেবে তার শায়খ আবূ বাকর ইবনু সদাক্বাহ থেকে উল্লেখ করেছেন। আবূ যায়দকেও কারী বলা হত। তিনি কাদিসিয়্যাতে ছিলেন এবং সেখানেই শাহাদাত বরণ করেন। তিনি ছিলেন ‘উমায়র ইবনু সা'দ-এর পিতা। ওয়াকিদী বলেন, তার নাম ছিল কায়স ইবনু সাকান। (ফাতহুল বারী ৭ম খণ্ড, ১৪৬ পৃ., হা. ৩৮১০)
মিরক্বাতুল মাফাতীহ প্রণেতা বলেন, উক্ত হাদীসের সারকথা হলো রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবদ্দশায় যারা পূর্ণ কুরআন মুখস্থ করেছেন তাদের মধ্য থেকে চারজন হলেন আনসার সাহাবী।
শারহুন নাবাবী গ্রন্থে মাযিরী বলেন, এই হাদীসকে কেন্দ্র করে কিছু নাস্তিক বলে থাকে যে, কুরআন তাওয়াতুর সূত্রে বর্ণিত হয়নি। তাদের এ কথার উত্তর দু’ভাবে দেয়া হয়ে থাকে।
এমন কোন বর্ণনা নেই যেখানে বলা হয়েছে যে, এই চারজন ছাড়া আর কেউ কুরআন জমা করেননি। বরং এমন অনেক বর্ণনা পাওয়া যায় যেখানে বলা হয়েছে যে, অনেক সাহাবী রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে কুরআন মুখস্থ করে জমা করেছেন। মাযিরী নিজেই তাদের মধ্য থেকে ১৫ জনের কথা উল্লেখ করেছেন। যারা মুখস্থ করার মাধ্যমে কুরআন জমা করেছিলেন। এছাড়াও সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, ইয়ামামার যুদ্ধের দিন সত্তর জন হাফিয শাহাদাত বরণ করেন। আর ইয়ামামার যুদ্ধ তো রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর মৃত্যুর কিছুদিন পরেই ঘটেছে।
তাহলে নিশ্চিত এটা বলা যায় যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর যুগেও অনেক হাফিয সাহাবী ছিলেন। তাদের মধ্য থেকে কিছু হাফিয সাহাবী ইমামার যুদ্ধে মারা গেছেন।
এছাড়া এ হাদীসে কুরআন জমাকারীদের মধ্যে আবূ বাকর ‘উমার, উসমান ও ‘আলী (রাঃ)-কে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। অথচ তারা সর্বপ্রকার কল্যাণের প্রতি ব্যাপক আগ্রহী ছিলেন। অতএব, এটা কিভাবে ধারণা করা যায় যে, এত আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও তারা কুরআন মুখস্থ করেননি।
এমনকি বর্তমানেও বিভিন্ন দেশে হাজার হাজার মানুষ কুরআন মুখস্থ করে আসছে। অতএব কুরআন তাওয়াতুর সূত্রে বর্ণিত হয়নি এমন দাবী একেবারেই ভ্রান্ত এবং অবান্তর।
দুই, যদি ধরেও নেয়া হয় যে, শুধুমাত্র এই চারজনই কুরআন মুখস্থ করে জমা করেছেন। তারপরেও এটি তাওয়াতুর সূত্রের পরিপন্থী নয়। কারণ তাওয়াতুর সূত্র হওয়ার জন্য এটি শর্ত নয় যে, প্রত্যেক স্তরে সকলে সকলের থেকে বর্ণনা করতে হবে। বরং প্রত্যেক স্তরে তাওয়াতুর সংখ্যক রাবী থাকলেই তা তাওয়াতুর হিসেবে গণ্য হবে। আর তাওয়াতুর সূত্র বা সনদ হওয়ার জন্য শর্ত হলো প্রত্যেক স্তরে তিনের অধিক রাবী থাকতে হবে। এখানে তো তিনের অধিক হিসেবে চারজন আছেই। অতএব, তাওয়াতুর হওয়ার ক্ষেত্রে কোন সন্দেহ নেই। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; শারহুন নাবাবী ১৬শ খণ্ড, ১৮-১৯ পৃ., হা. ২৪২৫)