পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - উসমান (রাঃ)-এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬০৭২-[৪] ’আবদুর রহমান ইবনু খব্বাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমি নবী (সা.)-এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। সে সময় তিনি (সা.) জায়শুল ’উসরাহ (তাবুক) যুদ্ধের সাহায্য-সহযোগিতা করার জন্য মানুষদেরকে উৎসাহ প্রদান করছিলেন। (তার উৎসাহবাণী শুনে) উসমান (রাঃ) উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর রাস্তায় গদি ও পালানসহ একশত উট আমার দায়িত্বে। এরপরও নবী (সা.) উৎসাহ প্রদান করতে লাগলেন, উসমান (রাঃ) আবার উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, আল্লাহর রাস্তায় গদি ও পালানযুক্ত দুইশত উট আমার দায়িত্বে। এরপরও নবী (সা.) সাহায্যের জন্য উৎসাহ প্রদান করলেন। উসমান (রাঃ) আবারও উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, আল্লাহর পথে গদি ও পালানযুক্ত তিনশত উট আমার দায়িত্ব। (বর্ণনাকারী বলেন) আমি দেখলাম, রাসূলুল্লাহ (সা.) এ কথা বলতে বলতে মিম্বার হতে অবতরণ করলেন এই ’আমলের পর ’উসমান যে ’আমলই করেন, তার জন্য তা ক্ষতিকর হবে না। এই ’আমলের পর ’উসমান যে ’আমলই করেন, তা তাঁর জন্য ক্ষতিকর হবে না। (তিরমিযী)
اَلْفصْلُ الثَّنِ (بَاب مَنَاقِب عُثْمَان)
وَعَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ خَبَّابٍ قَالَ: شَهِدْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يَحُثُّ عَلَى جَيْشِ الْعُسْرَةِ فَقَامَ عُثْمَانُ فَقَالَ: يَا رَسُول الله عَلَيَّ مِائَتَا بَعِيرٍ بِأَحْلَاسِهَا وَأَقْتَابِهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ ثُمَّ حَضَّ عَلَى الْجَيْشِ فَقَامَ عُثْمَانُ فَقَالَ: عَلَيَّ مِائَتَا بَعِيرٍ بِأَحْلَاسِهَا وَأَقْتَابِهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ ثُمَّ حَضَّ فَقَامَ عُثْمَانُ فَقَالَ: عَلَيَّ ثَلَاثُمِائَةِ بَعِيرٍ بِأَحْلَاسِهَا وَأَقْتَابِهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَأَنَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَنْزِلُ عَنِ الْمِنْبَرِ وَهُوَ يَقُولُ: «مَا عَلَى عُثْمَانَ مَا عَمِلَ بَعْدَ هَذِهِ مَا عَلَى عُثْمَانَ مَا عَمِلَ بَعْدَ هَذِهِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ سندہ ضعیف ، رواہ الترمذی (3700 وقال : غریب) * فرقد ابو طلحۃ مجھول و حدیث الترمذی (3701) یغنی عنہ ۔ (ضَعِيف)
ব্যাখ্যা: (وَهُوَ يَحُثُّ عَلَى جَيْشِ الْعُسْرَةِ) দ্বারা উদ্দেশ্য হলো তাবুক যুদ্ধ। তাকে এ নামে নামকরণের কারণ হলো তাবুক যুদ্ধের সময় প্রচণ্ড রোদ ছিল। দুর্ভিক্ষ চলছিল, পাথেয়, পানি ও যানবাহন এতই কম ছিল যে, তাদের বের হওয়া একেবারে অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। তাছাড়া অনেক সাহাবীর অন্তরে বক্রতা সৃষ্টি হলো। যখন শুনতে পেল শত্রুদের সৈন্য, শক্তি, সামর্থ্য মুসলিমদের তুলনায় অনেক বেশি।
কারী (রহিমাহুল্লাহ) আরো বলেন, নবী (সা.) -এর সাথে বদূরের যুদ্ধে ৩১৩ জন সৈন্য ছিল। উহুদ যুদ্ধে ছিল ৭০০ জন। হুদায়বিয়ার সন্ধির সময় ছিল ১৫০০ জন। মক্কাহ্ বিজয়ের সময় ছিল ১০,০০০ জন এবং হুনায়ন যুদ্ধে ছিল ১২,০০০ জন। নবী (সা.)-এর জীবনে এরাই ছিল সর্বশেষ সৈন্যবাহিনী।
(مِائَتَا بَعِيرٍ بِأَحْلَاسِهَا وَأَقْتَابِهَا) ইমাম তূরিবিশতী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, (أَحْلَاسِ) শব্দটি (حِلْس) এর বহুবচন যার অর্থ হলো এমন পাতলা কাপড় যা গদির নিচে দেয়া হয়। (أَقْتَابِ) শব্দটি (قَتَبٍ) এর বহুবচন। উটের কুঁজ পরিমাণ ছোট পালানকে (قَتَبٍ) বলা হয়।
(عَلَيَّ ثَلَاثُمِائَةِ بَعِيرٍ بِأَحْلَاسِهَا وَأَقْتَابِهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ) মুল্লা আলী ক্বারী (রহিমাহুল্লাহ)-এর কথটি ঠিক নয়। কেননা তিনি মোট ৩০০টি উট দান করেছিলেন। (তুহফাতুল আহওয়াযী ১০/৩৯৪০)
(مَا عَلَى عُثْمَانَ مَا عَمِلَ بَعْدَ هَذِهِ) প্রথম مَا টা নাফিয়া বা না-বোধক অর্থ প্রকাশ করে। দ্বিতীয় مَا টা মাওসূলাহ্। অতএব বাক্যের অর্থ হলো ‘উসমান (রাঃ)-এর কোন ক্ষতি হবে না এই ভালো ‘আমল করার পর সারাজীবন যে 'আমল-ই করুক না কেন। সামষ্টিক অর্থ হলো তার অতীতের পাপগুলো ক্ষমা হয়ে যাবে সাথে সাথে অতিরিক্ত হিসেবে আগত পাপগুলোও ক্ষমা হয়ে যাবে।
ব্যাখ্যাকার বলেন, আল্লাহর পথে এই বিশাল দান করার পর সে যেই ‘আমল করুক না কেন তার ওপর কোন দোষারোপ নেই। যদি مَا টা ইসমে মাওসূলাহ্ হয় তাহলে এ অর্থ হবে। আর যদি مَا টা মাসদারিয়া হয় তাহলে অর্থ হবে এই দানের পর উসমানের কোন নফল ‘আমল করার প্রয়োজন নেই। কেননা এই ভালো ‘আমল-ই তার সমস্ত না ‘আমলের স্থলাভিষিক্ত হবে।
ইমাম মুযহির (রহিমাহুল্লাহ) এ প্রসঙ্গে বলেন, এরপর হতে সে যদি কোন না ‘আমল না করে ফারয বাদে, তাহলে তার ওপর কোন দোষ নেই। কেননা ঐ ভালো ‘আমল তার সমস্ত নফলের জন্য যথেষ্ট।
ইমাম ইবনু শিহাব জুহরী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, তাবূক যুদ্ধে ‘উসমান (রাঃ) নয়শত ষাটটি উট ও চল্লিশটি ঘোড়া মোট ১০০০টি বাহন দান করেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ, তুহফাতুল আহওয়াযী ৯/৩৭০৯)।