পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা
৫৮৮৯-[২২] আবূ ইসহাক (সারিয়ী) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক লোক বারা’ ইবনু ’আযিব (রাঃ) কে প্রশ্ন করল, হে আবূ উমারাহ। হুনায়নের যুদ্ধের দিন কি তোমরা কাফিরদের মোকাবিলা হতে পলায়ন করেছিলে? উত্তরে তিনি বললেন, নিশ্চয় না, আল্লাহর শপথ! রাসূলুল্লাহ (সা.) পৃষ্ঠপ্রদর্শন করেননি। (অবশ্য) সাহাবীদের কতিপয় যুবক, যাদের কাছে তেমন বেশি কিছু হাতিয়ার ছিল না, তারা তীর নিক্ষেপকারী কাফিরদের মাঝে পড়ে গিয়েছিল। তারা তীরন্দাজীতে এত পটু ছিল যে, তাদের একটি তীরও জমিনে পড়ত না।
ফলে তাদের নিক্ষিপ্ত প্রতিটি তীর ঐ সকল যুবক (মুসলিম সৈনিকদের) ওপর পড়তে ভুল হত না। এ অবস্থায় (দুশমনের সামনে হতে পলায়ন করত) সে সমস্ত যুবকরা রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কাছে এসে পৌছল। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর একটি সাদা বর্ণের খচ্চরের উপর সওয়ার ছিলেন এবং আবূ সুফইয়ান ইবনু হারিস লাগাম ধরে তাঁর সামনে ছিলেন। এ সময় তিনি (সা.) খচ্চরের পৃষ্ঠ হতে নামলেন এবং বিজয়ের জন্য (আল্লাহর কাছে) মদদ ও সাহায্যের আবেদন করলেন। আর (এ পংক্তিটি) উচ্চারণ করলেন, “আমি যে নবী তা মিথ্যা নয়। আমি ’আবদুল মুত্ত্বালিব-এর সন্তান। অতঃপর তিনি মুসলিমদেরকে পুনরায় কাতারবদ্ধ করলেন। (মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب فِي المعجزا)
وَعَن أبي إِسْحَق قَالَ قَالَ رَجُلٌ لِلْبَرَاءِ يَا أَبَا عُمَارَةَ فَرَرْتُمْ يَوْمَ حُنَيْنٍ قَالَ لَا وَاللَّهِ مَا وَلِيُّ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَكِنْ خَرَجَ شُبَّانُ أَصْحَابِهِ لَيْسَ عَلَيْهِمْ كَثِيرُ سِلَاحٍ فَلَقَوْا قَوْمًا رُمَاةً لَا يَكَادُ يَسْقُطُ لَهُمْ سَهْمٌ فَرَشَقُوهُمْ رَشْقًا مَا يَكَادُونَ يُخْطِئُونَ فَأَقْبَلُوا هُنَاكَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى بَغْلَتِهِ الْبَيْضَاءِ وَأَبُو سُفْيَانَ بْنُ الْحَارِثِ يَقُودُهُ فَنَزَلَ وَاسْتَنْصَرَ وَقَالَ أَنَا النَّبِيُّ لَا كَذِبَ أَنَا ابْنُ عَبْدِ الْمُطَّلِبْ ثُمَّ صفهم. رَوَاهُ مُسلم. وللبخاري مَعْنَاهُ رواہ مسلم (78 / 1776)، (4615) و البخاری (2930) ۔ (صَحِيح)
ব্যাখ্যা : হুনায়নের যুদ্ধে মুসলিমগণ প্রথম দিকে কাফিরদের কাছে প্রায় পরাজিত হয়েছিলেন। এক্ষেত্রে বাহ্যিক কারণ হিসেবে দেখা যায়, হাওয়াযিন গোত্রের তিরন্দাজেরা অনেক মুসলিম সেনাকে তাদের টার্গেটে পরিণত করে ব্যাপক তীর নিক্ষেপ করে। এতে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে এবং শেষে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সাময়িক সময়ের জন্য পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
ফাতহুল বারীতে বলা হয়েছে, হাওয়াযিন একটি বড় ‘আরব গোত্রের নাম। সেই গোত্রে অনেকগুলো শাখা-উপশাখা রয়েছে। তাদেরকে হাওয়াযিন বলা হয় হাওয়াযিন ইবনু মানসূর ইবনু ‘ইকরামাহ ইবনু খাসফাহ নামক এক ব্যক্তির দিকে সম্পৃক্ত করে।
ইবনু হাজার আল আসক্বালানী (রহিমাহুল্লাহ) ফাতহুল বারী’তে উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় আরো কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করেছেন। সেগুলোর মধ্য হতে একটি হলো, যেমন- আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা মক্কা বিজয় করলাম। তারপর হুনায়নের যুদ্ধের জন্য অগ্রসর হলাম। অতঃপর মুশরিকরা একেবারে দেখার মতো সারিবদ্ধ হয়ে যুদ্ধের মাঠে দাঁড়িয়ে গেল। প্রথমে অশ্বারোহী বাহিনী। তাঁর পিছনে পদাতিক বাহিনী তার পিছনে ছিল নারীরা ও গবাদী পশু তথা মেষপাল, ছাগল, দুম্বা উট ইত্যাদি। আর আমরাও ছিলাম অনেক মানুষ। আমাদের ডান পাশে ছিল খালিদ ইবনু ওয়ালীদ-এর নেতৃত্বে আমাদের অশ্বারোহী বাহিনী। সেটি আমাদের পিছনে অবস্থান করছিল। যখনই সেই বাহিনী বের হয়ে আসলো তখনই ‘আরবের মুশরিকরা পালাতে লাগল। (ফাতহুল বারী হা, ৪১১৫)
মিরাত প্রণেতা উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যা দিয়েছেন যে, (خَدَجَ شُبَّانُ أَصْحَابِهِ) অর্থাৎ তাঁর সাহাবীদের মধ্য হতে কিছু যুবক যুদ্ধের মাঠ থেকে বের হয়ে গেল। এখানে কিছু যুবক দ্বারা উদ্দেশ্য হলো মুসলিমদের মধ্য হতে এমন কিছু যুবক যাদের তেমন কোন স্থায়িত্ব বা গাম্ভীর্জ ছিল না। তারা যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে আক্রমণের তীব্রতা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ না করেই ময়দান থেকে পলায়ন করে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)।
রাসূলুল্লাহ (সা.) হুনায়নের যুদ্ধে কাফির সেনাদের দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় খচ্চরে আরোহণ করে বলতে থাকেন (أَنَا النَّبِيُّ لَا كَذِبَ أَنَا ابْنُ عَبْدِ الْمُطَّلِبْ) অর্থাৎ আমি নবী, যাতে কোন মিথ্যা নেই। আমি ‘আবদুল মুত্তালিব-এর সন্তান।
এই পংক্তি সম্পর্কে ইবনু তীন (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এখানে (لَا كَذِبَ) এবং মধ্যে যবর দিয়ে পড়তে হবে। তাহলে এটি আর তখন কোন কবিতার ছন্দ মিলে থাকবে না। ফলে এই সম্পর্কে আর কারো কোন আপত্তিও থাকবে না যে, আল্লাহ তো বলেছেন যে, ...
(وَ مَا عَلَّمۡنٰهُ الشِّعۡرَ وَ مَا یَنۡۢبَغِیۡ لَهٗ…) অর্থাৎ “আর আমি তাকে কবিতা শিক্ষা দেয়নি এবং সেটি তার জন্য শোভনীয় নয়...”- (সূরাহ্ ইয়া-সীন ৩৬ : ৬৯)।
কিন্তু যদি তা সাকিন করে (لَا كَذْبَ) পড়া হয় তাহলে তা কবিতার ছন্দে এসে যায়। এজন্য ফাতহুল বারীতে এই সম্পর্কে কয়েকটি উত্তর দেয়া হয়েছে। যেমন-
১) এটি মূলত অন্য একজন কবির ছন্দ। যা তিনি লিখেছিলেন এভাবে যে, (أَنَا النَّبِيُّ لَا كَذِبَ أَنَا ابْنُ عَبْدِ الْمُطَّلِبْ) অর্থাৎ আপনি নবী যাতে কোন মিথ্যা নেই। আপনি ‘আবদুল মুত্ত্বালিব-এর সন্তান। রাসূল (সা.) এখানে তুমি এর জায়গায় ‘আমি’ তথা (أَنَا) যুক্ত করেছেন।
২) এটি একটি বিশেষ ধরনের পংক্তি। এটি কোন কবিতা না। কিন্তু এই উত্তরটি গ্রহণযোগ্য নয়।
৩) এটি কবিতা হিসেবে গণ্য হবে না যতক্ষণ না তার অংশ পূর্ণ হবে। যেহেতু এটি একটি অংশবিশেষ। তাই এটি কোন কবিতা নয়।
৪) এটি কবিতার ছন্দাকারেই বলা হয়েছে। কিন্তু এর দ্বারা এখানে কবিতা উদ্দেশ্য নয়।
উক্ত পংক্তিতে তিনি নিজেকে আবদুল মুত্ত্বালিব-এর পুত্র হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আবদুল্লাহ-এর পুত্র হিসেবে উল্লেখ করেননি। কারণ হলো, তার দাদা আবদুল মুত্তালিব ছিলেন মানুষের কাছে পরিচিত এবং প্রসিদ্ধ লোক। অন্যদিকে তার পিতা আবদুল্লাহ যুবক অবস্থায় মারা যান। তাই মানুষের কাছে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাননি। তাছাড়াও নিজেকে স্বীয় পূর্বপুরুষদের নামে পরিচিত করাটা ছিল আরবদের একটি ভালো রীতির অন্তর্ভুক্ত। (ফাতহুল বারী হা. ৪৩১৫)