পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির সূচনা ও নবী-রাসূলদের আলোচনা
৫৭১৭-[২০] ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সাথে মক্কাহ্ এবং মদীনার মধ্যবর্তী স্থানে ভ্রমণে ছিলাম। এ সময় আমরা একটি উপত্যকা অতিক্রম করছিলাম। তিনি প্রশ্ন করলেন, এটা কোন্ উপত্যকা? লোকেরা বলল, এটা ’আযরক’ উপত্যকা। তিনি বললেন, আমি যেন (মূসা আলায়হিস সালাম-এর) গায়ের রং ও মাথার চুলের কিছু বর্ণনা দিলেন এবং বললেন, তিনি যেন উভয় কানের মধ্যে অঙ্গুলি রেখে উঁচু আওয়াজে তালবিয়া পড়তে পড়তে এ উপত্যকা অতিক্রম করে আল্লাহর (ঘরের) দিকে ছুটে যাচ্ছেন। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর আমারা আরো কিছু দূর সামনে অগ্রসর হয়ে একটি গিরিপথে
এসে উপস্থিত হলাম। তিনি প্রশ্ন করলেন, এটা কোন গিরিপথ? লোকেরা বলল, এটা ’হারশা অথবা বলল ’লিফত। তখন তিনি বললেন, আমি যেন ইউনুস আলায়হিস সালাম-কে এমন অবস্থায় দেখতে পেয়েছি যে, তিনি একটি লালবর্ণের উষ্ট্রীর উপর সওয়ার, তার দেহে পরিহিত একটি পশমি জুব্বা, উষ্ট্রীর লাগাম খেজুর পাতার তৈরি, তিনি ’তালবিয়াহ’ উচ্চারণ করতে করতে এ ময়দান অতিক্রম করছেন। (মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب بدءالخلق وَذِكْرِ الْأَنْبِيَاءِ عَلَيْهِمُ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ)
وَعَن ابنِ عبَّاسٍ قَالَ: سِرْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَيْنَ مَكَّةَ وَالْمَدِينَةِ فَمَرَرْنَا بِوَادٍ فَقَالَ: «أَيُّ وَادٍ هَذَا؟» . فَقَالُوا: وَادِي الْأَزْرَقِ. قَالَ: «كَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَى مُوسَى» فَذَكَرَ مِنْ لَوْنِهِ وَشَعْرِهِ شَيْئًا وَاضِعًا أُصْبُعَيْهِ فِي أُذُنَيْهِ لَهُ جُؤَارٌ إِلَى اللَّهِ بِالتَّلْبِيَةِ مَارًّا بِهَذَا الْوَادِي . قَالَ: ثُمَّ سِرْنَا حَتَّى أَتَيْنَا عَلَى ثَنِيَّةٍ. فَقَالَ: «أَيُّ ثَنِيَّةٍ هَذِهِ؟» قَالُوا: هَرْشَى - أَوْ لِفْتُ -. فَقَالَ: «كَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَى يُونُسَ عَلَى نَاقَةٍ حَمْرَاءَ عَلَيْهِ جُبَّةُ صُوفٍ خِطَامُ نَاقَتِهِ خُلْبَةٌ مَارًّا بِهَذَا الْوَادِي مُلَبِّيًا» رَوَاهُ مُسلم رواہ مسلم (268 / 166)، (420) ۔ (صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (وَادِي الْأَزْرَقِ) আযরক উপত্যকা। হারামায়ন তথা মক্কাহ্ ও মদীনার মধ্যবর্তী একটি জায়গার নাম। যারকা বা নীলাভ রঙের কারণে জায়গাটিকে আযরক উপত্যকা বলা হয়। তবে নির্দিষ্ট কোন লোকের দিকে সম্পৃক্ত করেও নামকরণ করা হয়েছে বলে বলা হয়ে থাকে।
(وَاضِعًا أُصْبُعَيْهِ فِي أُذُنَيْهِ) “তার দুই আঙ্গুল তার দুই কানে রাখা ছিল।” এটা মূসা আলায়হিস সালাম-এর অবস্থার বিবরণ। অর্থাৎ রাসূল (সা.) যখন মূসা আলায়হিস সালাম-কে দেখেন তখন মূসা আলায়হিস সালাম-এর দুই হাত তার কানের মধ্যে রাখা ছিল।
(لَهُ جُؤَارٌ إِلَى اللَّهِ بِالتَّلْبِيَةِ) অর্থাৎ এই উপত্যকা দিয়ে মূসা হেঁটে যাওয়ার সময় তার তালবিয়াহ্ পাঠের ক্রন্দন শুনা যাচ্ছিল। ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, তালবিয়াহ্ পাঠের আওয়াজ শুনা যাচ্ছিল। উভয় অর্থের মাঝে কোন বৈপরীত্য নেই।
(هَرْشَى - أَوْ لِفْتُ) হারশা বা লিফত ঐ গিরিপথের নাম, যে গিরিপথের কথা রাসূল (সা.) জিজ্ঞেস করছিলেন, (أَيُّ ثَنِيَّةٍ هَذِهِ؟) অর্থাৎ এটা কোন গিরিপথ? এই গিরিপথও মক্কাহ্ মদীনার মাঝে অবস্থিত। গিরিপথটি হারশা বা লিফত এটি বর্ণনাকারীর সন্দেহ হতে পারে অথবা দুটোই তার নাম হতে পারে।
(مَارًّا بِهَذَا الْوَادِي مُلَبِّيًا) ব্যাকরণে (مرا) ও (ملبيا) শব্দ দুটো হাল। উভয় শব্দ দ্বারা ইউনুস আলায়হিস সালাম-এর অবস্থা বর্ণনা করা হচ্ছে। অর্থাৎ রাসূল (সা.) ইউনুস আলায়হিস সালাম-এর লাল উষ্ট্রির উপরে উষ্ট্রির লাগাম ধরে ঐ উপত্যকা চলছিলেন আর তালবিয়া পাঠ করছিলেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, যদি বলা হয়, তারা কিভাবে হজ্ করছিল এবং তালবিয়াহ্ পাঠ করছিল, অথচ তারা মৃত এবং আখিরাতের জীবন ‘আমলের জীবন নয়? এর কয়েকটি উত্তর হতে পারে:
[এক] তারা শহীদদের ন্যায়, বরং আরো শ্রেষ্ঠ। আর শহীদগণ আল্লাহ তা'আলার নিকট জীবিত। অতএব তারা হজ করা, সালাত আদায় করা এবং সাধ্যমত আল্লাহ তা'আলার নৈকট্য লাভের কাজ করা অস্বাভাবিক নয়, যদিও তারা ইহকালীন জীবনের আলোকে মৃত্যুবরণ করেছে এবং তাদের সময় শেষ হয়ে গেছে।
[দুই] তালবিয়াহ্ হচ্ছে দু'আ যা আখিরাতের ‘আমলের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তা'আলা বলেন, (دَعۡوٰىهُمۡ فِیۡهَا سُبۡحٰنَکَ اللّٰهُمَّ وَ تَحِیَّتُهُمۡ فِیۡهَا سَلٰمٌ ۚ وَ اٰخِرُ دَعۡوٰىهُمۡ اَنِ الۡحَمۡدُ لِلّٰهِ رَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ)
“সেখানে তাদের প্রার্থনা হলো, পবিত্র তোমার সত্তা হে আল্লাহ। আর শুভেচ্ছা হলো সালাম আর তাদের প্রার্থনার সমাপ্তি হয় সমস্ত প্রশংসা বিশ্বপ্রতিপালক আল্লাহর জন্য বলে।” (সূরা ইউনুস ১০ : ১০)
[তিন] এই ঘটনার মি'রাজের রাতের ঘটনা নাও হতে পারে, বরং এটি হয়তো রাসূল (সা.) -এর অন্য কোন দিনের স্বপ্নের ঘটনা। আর নবীদের স্বপ্ন সত্য। যেমন ইবনু উমার (রাঃ)-এর বর্ণনায় রয়েছে, রাসূল (সা.) বলেন, (بَيْنَمَا أَنَا نَائِمٌ رَأَيْتُنِي أَطُوفُ بِالْكَعْبَةِ) অর্থাৎ একদিন আমি ঘুমে আমাকে দেখছি, আমি কা'বাহ্ ত্বওয়াফ করছি...। (সহীহ মুসলিম অধ্যায়: ঈমান, অনুচ্ছেদ: মাসীহ ও দাজ্জালের আলোচনা, হা. ১৭১)
[চার] তারা জীবিত অবস্থায় এমন করতেন। জীবিত অবস্থায় তারা কিভাবে হজ্ করতেন এবং তালবিয়া পাঠ করতেন তা রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে দেখানো হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কথা “আমি যেন মূসাকে দেখছি” এই অর্থের প্রতি ইঙ্গিত করে। (নাবাবী ব্যাখ্যাগ্রন্থ- অধ্যায়: ঈমান, অনুচ্ছেদ: ইসরার আলোচনা)