পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - হিসাব-নিকাশ, প্রতিশোধ গ্রহণ ও মীযানের বর্ণনা
৫৫৫৯-[১১] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: কিয়ামতের দিন এমন এক লোককে (মুক্তি দেয়া হবে এভাবে যে, তাকে) জনসম্মুখে উপস্থিত করা হবে যার ’আমলনামা খোলা হবে নিরানব্বই ভলিউমে এবং প্রতিটি ভলিউম বিস্তীর্ণ হবে দৃষ্টির সীমা অবধি। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা তাকে প্রশ্ন করবেন, আচ্ছা বল দেখি, তুমি এর কোন একটিকে অস্বীকার করতে পারবে? অথবা আমার লেখক মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) কি তোমার প্রতি অবিচার করেছে? সে বলবে না; হে আমার প্রভু!
আল্লাহ তা’আলা প্রশ্ন করবেন, তবে কি তোমার পক্ষ হতে কোন ওযর পেশ করার আছে? সে বলবে, না; হে আমার রব! তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, হ্যাঁ, তোমার একটি পুণ্য আমার নিকট আছে। তুমি নিশ্চিত জেনে রাখ, আজ তোমার প্রতি কোন যুলম বা অবিচার করা হবে না। এরপর এক টুকরা কাগজ বের করা হবে, যাতে রয়েছে- (أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ) “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন ইবাদত পাওয়ার যোগ্য নেই এবং মুহাম্মাদ (সা.) তাঁর বান্দা ও রাসূল"।
অতঃপর আল্লাহ তা’আলা তাকে বলবেন, তোমার ’আমালের ওযন দেখার জন্য উপস্থিত হও। তখন সে বলবে, হে প্রভু! ঐ সমস্ত বিরাট বিরাট রেজিস্ট্রারের মোকাবিলায় এই এক টুকরা কাগজের মূল্যই বা কি আছে?
তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, তোমার ওপর কোন অবিচার করা হবে না। তিনি (সা.) বলেন, অতঃপর ঐ সকল রেজিস্ট্রারগুলো পাল্লার এক পালিতে এবং এ কাগজের টুকরাখানি আরেক পালিতে রাখা হবে। তখন দফতরগুলোর পালি হালকা হয়ে উপরে উঠে যাবে এবং কাগজের টুকরার পালি ভারী হয়ে নিচের দিকে ঝুঁকে থাকবে। মোটকথা, আল্লাহর নামের সাথে অন্য কোন জিনিস ওযন হতে পারবে না। (তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (باب الحساب و القصاص و المیزان)
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ اللَّهَ سيخلِّصُ رجلا من أُمّتي على رُؤُوس الْخَلَائِقِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَيَنْشُرُ عَلَيْهِ تِسْعَةً وَتِسْعِينَ سِجِلًّا كُلُّ سِجِلٍّ مِثْلَ مَدِّ الْبَصَرِ ثُمَّ يَقُولُ: أَتُنْكِرُ مِنْ هَذَا شَيْئًا؟ أَظَلَمَكَ كَتَبَتِي الحافظون؟ فَيَقُول: لَا يارب فَيَقُول: أَفَلَك عذر؟ قَالَ لَا يارب فَيَقُولُ بَلَى. إِنَّ لَكَ عِنْدَنَا حَسَنَةً وَإِنَّهُ لَا ظُلْمَ عَلَيْكَ الْيَوْمَ فَتُخْرَجُ بِطَاقَةٌ فِيهَا أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ فَيَقُولُ احْضُرْ وَزْنَكَ. فَيَقُولُ: يَا رَبِّ مَا هَذِهِ الْبِطَاقَةُ مَعَ هَذِهِ السِّجِلَّاتِ؟ فَيَقُولُ: إِنَّكَ لَا تُظْلَمُ قَالَ: فَتُوضَعُ السِّجِلَّاتُ فِي كِفَّةٍ وَالْبِطَاقَةُ فِي كِفَّةٍ فَطَاشَتِ السِّجِلَّاتُ وَثَقُلَتِ الْبِطَاقَةُ فَلَا يَثْقُلُ مَعَ اسْمِ الله شَيْء . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَابْن مَاجَه اسنادہ صحیح ، رواہ الترمذی (2639 وقال : حسن غریب) و ابن ماجہ (4300) ۔ (صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (إِنَّ اللَّهَ سيخلِّصُ) অর্থাৎ বের করবেন বা বাছাই করবেন সমস্ত সৃষ্টির সামনে এক ব্যক্তিকে এবং তাকে মুক্তি দিবেন। (تِسْعَةً وَتِسْعِينَ سِجِلًّا) আর তাদের ‘আমলনামার খাতা হবে নিরানব্বই ভলিউম, অর্থাৎ বড় খাতা। প্রত্যেক খাতার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ হবে মানুষের দৃষ্টি সীমার সমপরিমাণ। (كتبة) যা (كَاتِب) এর বহুবচন। এ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো (الْكِرَامُ الْكَاتِبُونَ) (সম্মানিত ফেরেশতাগণ)।
(فَتُخْرَجُ بِطَاقَةٌ) الْبِطَاقَة হলো ছোট্ট টুকরা, আর কোন কোন অভিধানে বলা হয়েছে, (كتبة) এর ওযনে (بِطَاقَه) অর্থ কাপড়ের ছোট টুকরা যাতে তার মূল্যমান লেখা থাকে।
(أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ) মুল্লা আলী ক্বারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এটা হতে পারে তার প্রথম উচ্চারিত কালিমাহ। অথবা অন্য সময়েরও হতে পারে যা তৎক্ষণাৎ গ্রহণযোগ্য ছিল।
(احْضُرْ وَزْنَكَ) অর্থাৎ তোমার আমালের ওযনের সময় তোমার এ ছোট্ট টুকরা নিরানব্বই খাতার সাথে ওযন করা হবে তখন তুমি হাযির থাকবে। যাতে তোমার ওপর যুলমহীনতা এবং অনুগ্রহের বাস্তবতা প্রকাশিত হয়।
(مَا هَذِهِ الْبِطَاقَةُ) এখানে (اسْمَ الْإِشَارَة) তুচ্ছতার অর্থে প্রয়োগ হয়েছে। যেন সে এতগুলো খাতার সঙ্গে তুচ্ছ এ টুকরাকে ওযন করা মেনে নিতে পারছে না। সে কারণে পুনরায় বলা হলো, তুমি এটাকে তুচ্ছ ভেব না। কারণ এটা মহান আল্লাহর নিকটে অনেক বড়। (شَقُلَتِ الْبِطَاقَةُ) অর্থাৎ টুকরাটি ভারী হয়ে গেল।
কেউ যদি প্রশ্ন করে, ‘আমলগুলো তো আকৃতিহীন বস্তু? যা ওযন করা সম্ভব নয়। কায়িক বস্তুকে পরিমাপ করা যায়। এর উত্তরে বলা যায় 'আমলনামা বা খাতাকে মাপা হবে যাতে আমলগুলো লিপিবদ্ধ থাকবে। এটা অবস্থাভেদে বিভিন্ন রকম হয়। অথবা আল্লাহ তাআলা কথা ও কাজসমূহকে কায়াসম্পন্ন বানাবেন, অতঃপর তা পরিমাপ করবেন। আকৃতিবিহীন বস্তুর ওযন নিয়ে প্রশ্ন উঠানো আজকাল অনর্থক, কেননা আধুনিক অনেক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে অনেক কায়া বা আকৃতিবিহীন বস্তুর ওযন সম্পন্ন হচ্ছে। যেমন শরীরের তাপমাত্রা, হৃদকম্পন, রক্তের চলাচল গতি ইত্যাদি পরিমাপের নির্ভুল পরিমাপ যন্ত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। মহান আল্লাহর নিকট কায়া ও আকৃতিবিহীন ‘আমল মাপা কি কোন ব্যাপার হলো? এতে গুনাহের চাইতে ‘ইবাদত ভারী হওয়ার কারণে ভালো ‘আমল ভারী হবে এবং মন্দ ‘আমল হালকা হয়ে উপরে উঠে যাবে। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৭ম খণ্ড, হা. ২৬৩৯; মিশকাতুল মাসাবীহ - মুম্বাই ছাপা, ৪র্থ খণ্ড, ৩৯৫ পৃ.)