হাদিসটি ইমেইলে পাঠাতে অনুগ্রহ করে নিচের ফর্মটি পুরন করুন
security code
৫৫২৫

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - শিঙ্গায় ফুৎকার

৫৫২৫-[৫] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে এ আয়াতের ব্যাখ্যা সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম (يَوْمَ تُبَدَّلُ الأرضُ غيرَ الأَرْض والسَّماواتُ) “যেদিন এ জমিনকে আরেক জমিনে রূপান্তরিত করা হবে এবং আকাশমণ্ডলীকে আরেক আকাশে”- (সূরাহ ইবরাহীম ১৪: ৪৮)। সেদিন সকল মানুষ কোথায় থাকবে? তিনি বললেন, ’পুলসিরাতের উপর। (মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب النفخ فِي الصُّور )

وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: سَأَلَتْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ قَوْلِهِ: (يَوْمَ تُبَدَّلُ الأرضُ غيرَ الأَرْض والسَّماواتُ) فَأَيْنَ يَكُونُ النَّاسُ يَوْمَئِذٍ؟ قَالَ: «عَلَى الصِّرَاطِ» . رَوَاهُ مُسلم رواہ مسلم (29 / 2791)، (7056) ۔ (صَحِيح)

ব্যাখ্যা: (تُبَدَّلُ الأرضُ...)  শারহুস্ সুন্নাতে রয়েছে (تُبَدَّلُ) বলা হয় কোন জিনিসের অবস্থার পরিবর্তন হওয়া এবং (إِبْدَال) বলা হয় কোন কিছুকে অন্য জায়গায় স্থাপন করা।
‘আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন: এ পরিবর্তন কখনো সত্তা বা অস্তিত্বে হয়ে থাকে। যেমন তোমার কথা (بَدَّلْتُ الدَّرَاهِمَ دَنَانِيرَ) আমি দিরহামকে দীনারে পরিবর্তন করলাম। আবার কখনো পরিবর্তন গুণের মধ্যে হয়ে থাকে। যেমন তোমার কথা (بَدَّلْتُ الْحَالَقَةَ خَاتَمًا) আমি আংটাকে আংটিতে রূপান্তরিত করলাম। যখন তুমি সেটাকে গলিয়ে আংটিতে পরিবর্তন করবে। জমিনের পরিবর্তন নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেন, এ পরিবর্তনটা আসমান-জমিনের গুণের মধ্যে হবে। যেমন শিঙ্গার প্রসিদ্ধ হাদীসে বর্ণিত আছে যে, নবী (সা.) বলেছেন: আল্লাহ তা'আলা জমিনকে সমতল করে উকাযী চামড়ার মতো টানবেন যাতে কোন উচু নীচু না থাকে। আবার কেউ বলেন, পরিবর্তনটা অস্তিত্বে হবে। তখন জমিনকে অন্য এক অপরিচিতরূপে পরিবর্তন করা হবে। আবদুল্লাহ ইবনু মাস'ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত একটি মারফু হাদীসে রয়েছে মানুষকে সাদা রঙের জমিনের উপর জমায়েত করা হবে তাতে খুনাখুনি ও পাপের কাজ হবে না। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

সাহল ইবনু সা'দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন: কিয়ামতের দিন মানুষকে চ্যাপ্টা ও গোলাকার রুটির মতো সাদা মাটির জমিনে একত্রিত করা হবে। যেখানে কারো কোন চিহ্ন থাকবে না। (সহীহুল বুখারী)

‘আমর ইবনু মায়মূন (রাঃ) বলেন: এ জমিন পরিবর্তিত হয়ে যাবে এবং তা হবে সাদা রূপার মতো যাতে থাকবে না কোন রক্তারক্তি, না থাকবে কোন পাপকর্ম। ইবনু জারীর (রহিমাহুল্লাহ)-এর বর্ণনায় রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: সেদিন জমিন রৌপ্যের ন্যায় সাদা বরণ ধারণ করবে। আরেক বর্ণনায় রয়েছে, ঐ দিন জমিন ময়দার ন্যায় সাদা হবে। ‘আলী (রাঃ) বলেন, সেদিন জমিন হবে রৌপ্যের এবং আসমান হবে স্বর্ণের। উবাই ইবনু কা'ব (রাঃ) বলেন, সেদিন আসমান বাগান হয়ে থাকবে।

‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্'উদ (রাঃ) বলেন, কিয়ামতের দিন সারা জমিন আগুন হয়ে যাবে। এর পিছনে থাকবে জান্নাত, যার নি'আমাতরাশি বাইরে থেকে দেখা যাবে। (তাফসীর ইবনু কাসীর ৪র্থ খণ্ড, মাকতাবাতুস্ সফা, সূরাহ্ ইবরাহীম ৪৮ আয়াতের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য)

(الصِّرَاطِ) জাহান্নামের উপরে অবস্থিত পুলকে সিরাত বলা হয়। যখন মানুষেরা হিসাবের জন্য অবস্থানস্থল ত্যাগ করার পর পুলের নিকট অন্ধকারে পৌছবে। যেমন ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন: রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে জিজ্ঞেস করা হলো যখন আসমান-জমিনকে পরিবর্তন করা হবে তখন মানুষেরা কোথায় থাকবে? উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তারা পুলের নিকট অন্ধকারের মধ্যে থাকবে। আর এ স্থানে মুনাফিকরা মু'মিনদের থেকে আলাদা হয়ে যাবে এবং মুমিনদের পিছে পড়বে ও মু'মিনরা এগিয়ে যাবে। তাদের মাঝে একটা দেয়ালের আড় হয়ে যাবে যাতে তারা মু'মিনদের নিকটে পৌছতে বাধাপ্রাপ্ত হয় । ইমাম বায়হাক্বী (রহিমাহুল্লাহ) মাসরূক-এর সূত্রে বর্ণনা করেন, আল্লাহ তা'আলা মানুষদেরকে কিয়ামতের দিন সমবেত করবেন, অতঃপর তাদেরকে স্বীয় ‘আমলের পরিমাণ অনুসারে নূর দান করবেন, কাউকে এর চাইতেও বেশি, কাউকে তার ডান হাতে খেজুর গাছের সমান দান করবেন, কাউকে তার ডান হাতে এর চাইতে কম। এমনকি সর্বশেষ জনকে তার পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলে নূর দান করা হবে যা একবার জ্বলে উঠবে আর একবার নিভে যাবে। যখন তা আলো দিবে তখন সে তার পা এগিয়ে নিবে। আর যখন নিভে যাবে সে দাড়িয়ে পড়বে। তারপর সে এবং অন্যরা পুলসিরাত পার হবে। পুল হবে তরবারির ধারের মত পিচ্ছিল ও স্খলনকারী।
তাদেরকে বলা হবে, তোমরা তোমাদের নূর অনুসারে পার হও। তাদের মধ্যে কেউ তারকা ছুটার গতির ন্যায়, কেউ বাতাসের গতির মতো, কেউ চোখের পলকে, আবার কেউ পুরুষদের দৌড়ের গতিতে। আবার কেউ ধীরে দৌড়ে পার হয়ে যাবে। তারা সবাই আমল অনুযায়ী পার হবে। এভাবে শেষে এক ব্যক্তি আসবে যার পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলের উপরে নূর থাকবে। এক হাত পড়ে যাবে আর এক হাত লেগে থাকবে এক পা পড়ে যাবে এবং এক পা লেগে থাকবে। আগুন তার পার্শ্বদেশকে ধরে ফেলবে। রাবী বলেন: অতঃপর তারা মুক্তি পাবেন। যখন তারা এখান থেকে রেহাই পাবে তখন তারা বলবে, আলহামদুলিল্লা-হ সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর যিনি আমাদেরকে তোমার কাছ থেকে মুক্তি দিয়েছেন তোমাকে দেখিয়ে দেয়ার পর। আর অবশ্যই আল্লাহ তা'আলা আমাদের এমন বস্তু দিয়েছেন যা আর কাউকে প্রদান করেননি। (হাকিম হা. ৩৪২৪, ৮৭৫১; শারহুল আকীদাতুত্ তহাবীয়া পৃ. ৩৪১-৪২)