পরিচ্ছেদঃ ৪৪/৪১. জা'ফার বিন আবূ ত্বালিব, আসমা বিনতু উমাইস এবং তাদের নৌকারোহীদের (রাঃ) মর্যাদা।
১৬২৭. আবু মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা ইয়ামানে থাকা অবস্থায় আমাদের কাছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হিজরতের খবর, পৌছল। তাই আমি ও আমার দু’ভাই আবু বুরাদা ও আবু রুহম এবং আমাদের কাওমের আরো মোট বায়ান্ন কি তিল্পান্ন কিংবা আরো কিছু লোকজনসহ আমরা হিজরতের উদ্দেশে বের হলাম। আমি ছিলাম আমার অপর দু’ভাইয়ের চেয়ে বয়সে ছোট। আমরা একটি জাহাজে উঠলাম। জাহাজটি আমাদেরকে আবিসিনিয়া দেশের (বাদশাহ) নাজ্জাশীর নিকট নিয়ে গেল। সেখানে আমরা জাফর ইবনু আবু তালিবের সাক্ষাৎ পেলাম এবং তাঁর সঙ্গেই আমরা থেকে গেলাম। অবশেষে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খাইবার বিজয়ের সময় সকলে এক যোগে (মদীনায়) এসে তার সঙ্গে মিলিত হলাম। এ সময়ে মুসলিমদের কেউ কেউ আমাদেরকে অর্থাৎ জাহাজে আগমনকারীদেরকে বলল, হিজরতের ব্যাপারে আমরা তোমাদের চেয়ে অগ্রগামী।
আমাদের সঙ্গে আগমনকারী আসমা বিন্ত উমাইস একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী হাফসার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসেছিলেন। তিনিও (তাঁর স্বামী জাফরসহ) নাজ্জাশীর দেশে হিজরতকারীদের সঙ্গে হিজরত করেছিলেন। আসমা (রাঃ) হাফসাহর কাছেই ছিলেন। এ সময়ে উমার (রাঃ) তাঁর ঘরে প্রবেশ করলেন। ’উমার (রাঃ) আমাকে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, ইনি কে? হাফসাহ (রাঃ) বললেন, তিনি আসমা বিনত উমাইস। উমার (রাঃ) বললেন, ইনি হাবশায় হিজরতকারিণী আসমা? ইনিই কি সমুদ্রগামিনী? আসমা (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ! তখন ’উমার (রাঃ) বললেন, হিজরতের ব্যাপারে আমরা তোমাদের চেয়ে আগে আছি। সুতরাং তোমাদের তুলনায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি আমাদের হক অধিক।
এতে আসমা (রাঃ) রেগে গেলেন এবং বললেন, কক্ষনো হতে পারে না। আল্লাহর কসম! আপনারা তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ছিলেন, তিনি আপনাদের ক্ষুধার্তদের খাবারের ব্যবস্থা করতেন, আপনাদের অবুঝ লোকদেরকে নসীহত করতেন। আর আমরা ছিলাম এমন এক এলাকায় অথবা তিনি বলেছেন এমন এক দেশে যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বহুদূরে এবং সর্বদা শত্ৰু বেষ্টিত হাবশা দেশে। আল্লাহ ও তাঁর রসূলের উদ্দেশেই ছিল আমাদের এ হিজরত। আল্লাহর কসম! আমি কোন খাবার খাবো না, পানি পান করব না, যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি যা বলেছেন তা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে না জানাব। সেখানে আমাদেরকে কষ্ট দেয়া হত, ভয় দেখানো হত। শীঘ্রই আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এসব কথা বলব এবং তাকে জিজ্ঞেস করব। তবে আল্লাহর কসম! আমি মিথ্যা বলব না, পেচিয়ে বলব না, বাড়িয়েও কিছু বলব না।
এরপর যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসলেন, তখন আসমা (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর নবী! ’উমার (রাঃ) এই কথা বলেছেন, তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কী উত্তর দিয়েছ? আসমা (রাঃ) বললেনঃ আমি তাকে এই এই বলেছি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (এ ব্যাপারে) তোমাদের চেয়ে ’উমার (রাঃ) আমার প্রতি অধিক হক রাখে না। কারণ ’উমার এবং তার সাথীরা একটি হিজরত লাভ করেছে, আর তোমরা যারা জাহাজে হিজরতকারী ছিলে তারা দু’টি হিজরত লাভ করেছে।
আসমা (রাঃ) বলেন, এ ঘটনার পর আমি আবু মূসা (রাঃ) এবং জাহাজযোগে হিজরতকারী অন্যদেরকে দেখেছি যে, তারা সদলবলে এসে আমার নিকট থেকে এ হাদীসখানা শুনতেন। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের সম্পর্কে যে কথাটি বলেছিলেন সে কথাটির চেয়ে তাঁদের কাছে দুনিয়ার অন্য কোন জিনিস অধিকতর প্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ ছিল না।
আবু বুরদাহ (রহঃ) বলেন যে, আসমা (রাঃ) বলেছেন, আমি আবু মূসা [আশ-আরী (রাঃ)]-কে দেখেছি, তিনি বারবার আমার নিকট হতে এ হাদীসটি শুনতে চাইতেন।
من فضائل جعفر بن أبي طالب وأسماء بنت عميس وأهل سفينتهم رضي الله عنهم
حديث أَبِي مُوسى وَأَسْمَاءَ بِنْتِ عُمَيْسٍ عَنْ أَبِي مُوسى رضي الله عنه، قَالَ: بَلَغَنَا مَخْرَجُ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَنَحْنُ بِالْيَمَنِ فَخَرَجْنَا مُهَاجِرِينَ إِلَيْهِ، أَنَا وَأَخَوَانِ لِي، أَنَا أَصْغَرُهُمْ، أَحَدُهُمَا أَبُو بُرْدَةَ، وَالآخَرُ أَبُو رُهْمٍ فِي ثَلاَثَةٍ وَخَمْسِينَ أَوِ اثْنَيْنِ وَخَمْسِينَ رَجُلاً مِنْ قَوْمِي فَرَكِبْنَا سَفِينَةً، فَأَلْقَتْنَا سَفِينَتُنَا إِلَى النَّجَاشِيِّ، بِالْحَبَشَةِ، فَوَافَقْنَا جَعْفَرَ بْنَ أَبِي طَالِبٍ فَأَقَمْنَا مَعَهُ حَتَّى قَدِمْنَا جَمِيعًا فَوَافَقْنَا النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، حِينَ افْتَتَحَ خَيْبَرَ وَكَانَ أُنَاسٌ مِنَ النَّاسِ يَقُولُونَ لَنَا: (يَعْنِي لأَهْلِ السَّفِينةِ) سَبَقْنَاكُمْ بِالْهِجْرَة وَدَخَلَتْ أَسْمَاءُ بِنْتُ عُمَيْسٍ، وَهِيَ مِمَّنْ قَدِمَ مَعَنَا، عَلَى حَفْصَةَ، زَوْجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، زَائِرةً وَقَدْ كَانَتْ هَاجَرَتْ إِلَى النَّجَاشِيِّ فِيمَنْ هَاجَرَ فَدَخَلَ عُمَرُ عَلَى حَفْصَةَ، وَأَسْمَاءُ عِنْدَهَا فَقَالَ عُمَرُ، حِينَ رَأَى أَسْمَاءَ: مَنْ هذِهِ قَالَتْ: أَسْمَاءُ بِنْتُ عُمَيْسٍ قَالَ عُمَرُ: الْحَبَشِيَّةُ هذِهِ الْبَحْرِيَّةُ هذِهِ قَالَتْ أَسْمَاءُ: نَعَم قَالَ: سَبَقْنَاكُمْ بِالْهِجْرَةِ، فَنَحْنُ أَحَقُّ بِرَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، مِنْكُمْ فَغَضِبَتْ، وَقَالَتْ: كَلاَّ وَاللهِ كُنْتمْ مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يُطْعِمُ جَائِعَكُمْ، وَيَعِظُ جَاهِلَكُمْ وَكُنَّا فِي دَارِ، (أَوْ) فِي أَرْضِ الْبُعَدَاءِ الْبُغَضَاءِ بِالْحَبَشَةِ وَذَلِكَ فِي اللهِ وَفِي رَسُولِهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَايْمُ اللهِ لاَ أَطْعَمُ طَعَامًا، وَلاَ أَشْرَبُ شَرَابًا، حَتَّى أَذْكُرَ مَا قُلْتَ لرَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَنَحْنُ كُنَّا نُؤْذَى وَنَخَافُ، وَسَأَذْكُرُ ذَلِكَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَأَسْأَلُهُ وَاللهِ لاَ أَكْذِبُ وَلاَ أَزِيغُ وَلاَ أَزِيدُ عَلَيْهِ فَلَمَّا جَاءَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَتْ: يَا نَبِيَّ اللهِ إِنَّ عُمَرَ قَالَ كَذَا وَكَذَا قَالَ: فَمَا قُلْتِ لَهُ قَالَتْ: قلْتُ لَهُ كَذَا وَكَذَا قَالَ: لَيْسَ بِأَحَقَّ بِي مِنْكُمْ وَلَهُ وَلأَصْحَابِهِ هِجْرَةٌ وَاحِدَةٌ وَلَكُمْ أَنْتُمْ، أَهْلَ السَّفِينَةِ هِجْرَتَانِ قَالَتْ: فَلَقَدْ رَأَيْتُ أَبَا مُوسى وَأَصْحَابَ السَّفِينَةِ يَأْتُونِي أَرْسَالاً، يَسْأَلُونِي عَنْ هذَا الْحَدِيثِ مَا مِنَ الدُّنْيَا شَيْءٌ هُمْ بِهِ أَفْرَحُ، وَلاَ أَعْظَمُ فِي أَنْفُسِهِمْ، مِمَّا قَالَ لَهُمُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ أَبُو بُرْدَةَ (رَاوِي الْحَدِيثِ) قَالَتْ أَسْمَاءُ: فَلَقَدْ رَأَيْتُ أَبَا مُوسى وَإِنَّهُ لِيَسْتَعِيدُ هذَا الْحَدِيثَ مِنِّي