পরিচ্ছেদঃ ১৮. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - আত্মসংযম ও কাজে ধীরস্থিরতা
৫০৬৭-[১৫] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ব্যয় নির্বাহের ব্যাপারে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা জীবন-যাপনের অর্ধেক, মানুষের প্রতি ভালোবাসা জ্ঞানের অর্ধেক এবং জ্ঞান অর্জনের উদ্দেশে সুন্দরভাবে প্রশ্ন করা বিদ্যার অর্ধেক।
[উপরোক্ত চারটি হাদীস ইমাম বায়হাক্বী (রহিমাহুল্লাহ) ’’শু’আবুল ঈমানে’’ বর্ণনা করেছেন।][1]
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الِاقْتِصَادُ فِي النَّفَقَةِ نِصْفُ الْمَعِيشَةِ وَالتَّوَدُّدُ إِلَى النَّاسِ نِصْفُ الْعَقْلِ وَحُسْنُ السُّؤَالِ نِصْفُ الْعِلْمِ» رَوَى الْبَيْهَقِيُّ الْأَحَادِيثَ الْأَرْبَعَةَ فِي شُعَبِ الْإِيمَانِ
ব্যাখ্যাঃ (الِاقْتِصَادُ فِي النَّفَقَةِ نِصْفُ الْمَعِيشَةِ) অর্থাৎ ব্যয় করার ক্ষেত্রে বা দান করার ক্ষেত্রে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা জীবন যাপনের অর্ধেক। এটা গ্রহণ করা হয়েছে মহান আল্লাহর বাণী থেকে। তিনি বলেন,
وَالَّذِينَ إِذَا أَنْفَقُوا لَمْ يُسْرِفُوا وَلَمْ يَقْتُرُوا وَكَانَ بَيْنَ ذٰلِكَ قَوَامًا
‘‘আর তারা যখন ব্যয় করে তখন অপব্যয় করে না, কৃপণতাও করেন না, আর তাদের পন্থা হয় এতদুভয়ের মধ্যবর্তী।’’ (সূরাহ্ আল ফুরকান ২৫ : ৬৭)
(نِصْفُ الْعَقْلِ) অর্থাৎ তার অর্ধেক জ্ঞান ব্যবহার করার কারণে, অথবা অর্ধেক জ্ঞান অর্জন করার কারণে। কারণ সৎ মুসলিম ব্যক্তির সাথে সাথী হওয়ার কারণে তার জ্ঞান অর্জিত হল। ব্যক্তি একা থাকার কারণে তার ‘আকল অর্ধেক ছিল। আর তার সাথীর ‘আকলের দ্বারা তার ‘আকল পূর্ণ হলো। এ কারণেই বলা হয়, عِلْمَانِ خَيْرٌ مِنْ عِلْمٍ وَاحِدٍ একজনের ‘ইলম থেকে দু’জনের ‘ইলম উত্তম। কতক জ্ঞানী ব্যক্তি তাদের কতিপয় ছাত্রকে বলতেন, ‘‘আমি ও তুমি পূর্ণ মানুষ। কারণ তুমি ক্বুরআনের হাফিয আর আমি ক্বুরআনের মুফাস্সির’’। সুতরাং বুঝা গেল যে, সৎ ব্যক্তির সান্নিধ্যে থাকলে ‘আকল বা জ্ঞান-বুদ্ধি বৃদ্ধি পায়।
(حُسْنُ السُّؤَالِ نِصْفُ الْعِلْمِ) অর্থাৎ সঠিক সুন্দর প্রশ্ন করাটাও গভীর জ্ঞান-প্রজ্ঞার নিদর্শন। এ প্রসঙ্গে একটি ঘটনা বর্ণিত আছে, একদিন ইমাম আবূ ইউসুফ (রহিমাহুল্লাহ)-এর মাজলিসে এক ছাত্র চুপ করে বসে ছিল। ফলে তিনি তাকে বললেন, তোমার কাছে কোন বিষয় বুঝতে কঠিন হলে তুমি আমাকে জিজ্ঞেস করো। লজ্জা করো না। কারণ লজ্জা করা ‘ইলম অর্জন করতে বাধা দেয়। ইমাম সিয়ামের সংজ্ঞা প্রসঙ্গের কথা বলছিলেন। সিয়ামের সময় হলো সুবহে সাদিক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত। তখন ছাত্র বলল, যদি সূর্যাস্তই না হয়। তখন ইফতার করবে কখন? তখন ইমাম বললেন, তুমি চুপ কর। কারণ তোমার কথা বলার চেয়ে চুপ থাকাই কল্যাণকর।
কতিপয় জ্ঞানী বলেন, জাহিল ব্যক্তি যখন কথা বলে তখন সে গাধার মতো। আর যখন সে চুপ থাকে তখন দেয়ালের মতো। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)