পরিচ্ছেদঃ সবর (ধৈর্যের) বিবরণ
(৩৫৩৪) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবূ ত্বালহা (রাঃ) এর এক ছেলে অসুস্থ ছিল। আবূ ত্বালহা (রাঃ) যখন কোন কাজে বাইরে চলে গেলেন তখন ছেলেটি মারা গেল। যখন তিনি বাড়ি ফিরে এলেন তখন জিজ্ঞাসা করলেন যে, ’আমার ছেলে কেমন আছে?’ ছেলেটির মা উম্মে সুলাইম (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বললেন, ’সে পূর্বের চেয়ে আরামে আছে।’ অতঃপর তিনি তাঁর সামনে রাতের খাবার হাজির করলেন। তিনি তা খেলেন। অতঃপর তার সঙ্গে যৌন-মিলন করলেন। আবূ ত্বালহা যখন এসব থেকে অবকাশপ্রাপ্ত হলেন, তখন স্ত্রী বললেন যে, ’(আপনার বাইরে চলে যাওয়ার পর শিশুটি মারা গেছে।) সুতরাং শিশুটিকে এখন দাফন করুন।’ সকাল হলে আবূ ত্বালহা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমতে হাজির হয়ে সমস্ত ঘটনা খুলে বললেন। তখন তিনি জিজ্ঞাসা করলেন যে, ’’তোমরা কি আজ রাতে মিলন করেছ?’’
তিনি বললেন, ’জী হ্যাঁ।’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ’’হে আল্লাহ! তুমি এ দুজনের জন্য বরকত দাও?’’ অতএব (তাঁর দু’আর ফলে নির্দিষ্ট সময়ে উম্মে সুলাইম) একটি পুত্র সন্তান প্রসব করলেন। (আনাস বলেন,) আমাকে আবূ ত্বালহা বললেন, ’তুমি একে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটে নিয়ে যাও।’ আর তার সঙ্গে কিছু খেজুরও পাঠালেন। তিনি বললেন, ’তার সঙ্গে কি কিছু আছে?’ আনাস (রাঃ) বললেন, ’জী হ্যাঁ! কিছু খেজুর আছে।’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেগুলো নিলেন এবং তা চিবালেন। অতঃপর তাঁর মুখ থেকে বের ক’রে শিশুটির মুখে রেখে দিলেন। আর তার নাম ’আব্দুল্লাহ’ রাখলেন। (বুখারী ৫৪৭০, মুসলিম ৬৪৭৬)
বুখারীর আর এক বর্ণনায় আছে, ইবনে উয়াইনাহ বলেন যে, জনৈক আনসারী বলেছেন, ’আমি এই আব্দুল্লাহর নয়টি ছেলে দেখেছি, তারা সকলেই কুরআনের হাফেয ছিলেন।’ (বুখারী ১৩০১)
মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে যে, আবূ ত্বালহার একটি ছেলে, যে উম্মে সুলাইমের গর্ভ থেকে হয়েছিল, সে মারা গেল। সুতরাং তিনি (উম্মে সুলাইম) তাঁর বাড়ির লোককে বললেন, ’তোমরা আবূ ত্বালহাকে তাঁর পুত্রের ব্যাপারে কিছু বলো না। আমি স্বয়ং তাঁকে এ কথা বলব।’ সুতরাং তিনি এলেন এবং (স্ত্রী) তাঁর সামনে রাতের খাবার রাখলেন। তিনি পানাহার করলেন। এ দিকে স্ত্রী আগের তুলনায় বেশী সাজসজ্জা করে তাঁর কাছে এলেন এবং তিনি তাঁর সঙ্গে মিলন করলেন। অতঃপর তিনি যখন দেখলেন যে, তিনি (স্বামী) খুবই পরিতৃপ্ত হয়ে গেছেন এবং যৌন-সম্ভোগ ক’রে নিয়েছেন, তখন বললেন, ’হে আবূ ত্বালহা! আচ্ছা আপনি বলুন! যদি কোন সম্প্রদায় কোন পরিবারকে কোন জিনিস (সাময়িকভাবে) ধার দেয়, অতঃপর তারা তাদের ধার দেওয়া জিনিস ফিরিয়ে নিতে চায়, তাহলে কি তাদের জন্য তা না দেওয়ার অধিকার আছে?’ তিনি জবাব দিলেন, ’না।’
অতঃপর স্ত্রী বললেন, ’আপনি নিজ পুত্রের ব্যাপারে আল্লাহর কাছে প্রতিদান পাওয়ার আশা রাখুন। (অর্থাৎ, আপনার পুত্রও আল্লাহর দেওয়া আমানত ছিল, তিনি তাঁর আমানত ফিরিয়ে নিয়েছেন।)’ আনাস (রাঃ) বলেন, (এ কথা শুনে) তিনি রাগান্বিত হলেন। অতঃপর তিনি বললেন, ’তুমি আমাকে কিছু না বলে এমনি ছেড়ে রাখলে, অবশেষে আমি সহবাস ক’রে যখন অপবিত্র হয়ে গেলাম, তখন তুমি আমার ছেলের মৃত্যুর সংবাদ দিলে!’ এরপর তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমতে হাজির হয়ে যা কিছু ঘটেছে তা বর্ণনা করলেন। তা শুনে তিনি দু’আ করলেন, ’হে আল্লাহ! তাদের দু’জনের জন্য এই রাতে বরকত দাও।’ সুতরাং (এই দু’আর ফলে) তিনি গর্ভবতী হলেন।
আনাস (রাঃ) বলেন, ’রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সফরে ছিলেন। উম্মে সুলাইম ও (তাঁর স্বামী আবূ ত্বালহা) তাঁর সঙ্গে ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অভ্যাস ছিল যে, যখন তিনি সফর থেকে মদীনায় আসতেন তখন তিনি রাতে আসতেন না। যখন এই কাফেলা মদীনার নিকটবর্তী হল, তখন উম্মে সুলাইমের প্রসববেদনা উঠল। সুতরাং আবূ ত্বালহা তাঁর খিদমতের জন্য থেমে গেলেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মদীনায়) চলে গেলেন।’ আনাস বলেন, ’আবূ ত্বালহা বললেন, ’’হে প্রভু! তুমি জান যে, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনা থেকে বাইরে যান, তখন আমি তাঁর সঙ্গে যেতে ভালবাসি এবং তিনি মদীনায় প্রবেশ করেন, তখন আমি তাঁর সঙ্গে প্রবেশ করতে ভালবাসি এবং তুমি দেখছ যে, (আমার স্ত্রীর) জন্য আমি থেমে গেলাম।’’
উম্মে সুলাইম বললেন, ’হে আবূ ত্বালহা! আমি পূর্বে যে বেদনা অনুভব করছিলাম এখন তা অনুভব করছি না, তাই চলুন।’ সুতরাং আমরা সেখান থেকে চলতে আরম্ভ করলাম। যখন তাঁরা দু’জনে মদীনা পৌঁছলেন, তখন আবার প্রসব বেদনা শুরু হল। অবশেষে তিনি একটি পুত্র সন্তান প্রসব করলেন। আমার মা আমাকে বললেন, ’যে পর্যন্ত তুমি একে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমতে না নিয়ে যাবে, সে পর্যন্ত কেউ যেন একে দুধ পান না করায়।’ ফলে আমি সকাল হতেই তাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমত নিয়ে গেলাম। অতঃপর আনাস (রাঃ) বাকী হাদীস বর্ণনা করলেন।
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ : كَانَ ابنٌ لأبي طَلْحَةَ يَشتَكِي فَخَرَجَ أبُو طَلْحَةَ فَقُبِضَ الصَّبيُّ فَلَمَّا رَجَعَ أَبُو طَلْحَةَ قَالَ : مَا فَعَلَ ابْنِي ؟ قَالَتْ أمُّ سُلَيم وَهِيَ أمُّ الصَّبيِّ : هُوَ أَسْكَنُ مَا كَانَ فَقَرَّبَتْ إليه العَشَاءَ فَتَعَشَّى ثُمَّ أَصَابَ منْهَا فَلَمَّا فَرَغَ قَالَتْ : وَارُوا الصَّبيَّ فَلَمَّا أَصْبحَ أَبُو طَلْحَةَ أَتَى رسولَ الله ﷺ فَأخْبَرَهُ فَقَالَ أعَرَّسْتُمُ اللَّيلَةَ؟ قَالَ : نَعَمْ قَالَ اللَّهُمَّ بَارِكْ لَهُمَا فَوَلَدَتْ غُلاماً فَقَالَ لي أَبُو طَلْحَةَ : احْمِلْهُ حَتّٰـى تَأْتِيَ بِهِ النَّبيَّ ﷺ وَبَعَثَ مَعَهُ بِتَمَراتٍ، فَقَالَ أَمَعَهُ شَيءٌ قَالَ : نَعَمْ تَمَراتٌ فَأخَذَهَا النَّبيُّ ﷺ فَمَضَغَهَا ثُمَّ أَخَذَهَا مِنْ فِيهِ فَجَعَلَهَا في فِيِّ الصَّبيِّ ثُمَّ حَنَّكَهُ وَسَمَّاهُ عَبدَ الله مُتَّفَقٌ عَلَيهِ وفي رواية للبُخَارِيِّ : قَالَ ابنُ عُيَيْنَةَ : فَقَالَ رَجُلٌ مِنَ الأَنْصارِ : فَرَأيْتُ تِسعَةَ أوْلادٍ كُلُّهُمْ قَدْ قَرَؤُوا القُرْآنَ يَعْنِي : مِنْ أوْلادِ عَبدِ الله المَولُودِ وَفي رواية لمسلمٍ : مَاتَ ابنٌ لأبي طَلْحَةَ مِنْ أمِّ سُلَيمٍ فَقَالَتْ لأَهْلِهَا : لاَ تُحَدِّثُوا أَبَا طَلْحَةَ بابْنِهِ حَتّٰـى أَكُونَ أَنَا أُحَدِّثُهُ، فَجَاءَ فَقَرَّبَتْ إِلَيْه عَشَاءً فَأَكَلَ وَشَرِبَ، ثُمَّ تَصَنَّعَتْ لَهُ أَحْسَنَ مَا كَانَتْ تَصَنَّعُ قَبْلَ ذلِكَ فَوَقَعَ بِهَا فَلَمَّا أَنْ رَأَتْ أَنَّهُ قَدْ شَبِعَ وأَصَابَ مِنْهَا قَالَتْ : يَا أَبَا طَلْحَةَ أَرَأَيتَ لو أنَّ قَوماً أعارُوا عَارِيَتَهُمْ أَهْلَ بَيتٍ فَطَلَبُوا عَارِيَتَهُمْ أَلَهُمْ أن يَمْنَعُوهُمْ ؟ قَالَ : لا فَقَالَتْ : فَاحْتَسِبْ ابْنَكَ قَالَ : فَغَضِبَ ثُمَّ قَالَ : تَرَكْتِني حَتّٰـى إِذَا تَلطَّخْتُ ثُمَّ أخْبَرتِني بِابْنِي؟! فانْطَلَقَ حَتّٰـى أَتَى رسولَ الله ﷺ فَأخْبَرَهُ بِمَا كَانَ فَقَالَ رسولُ الله ﷺبَارَكَ اللهُ في لَيْلَتِكُمَا قَالَ : فَحَمَلَتْ قَالَ : وَكانَ رسولُ الله ﷺ في سَفَرٍ وَهيَ مَعَهُ وَكَانَ رسولُ الله ﷺ إِذَا أَتَى المَدِينَةَ مِنْ سَفَرٍ لاَ يَطْرُقُهَا طُرُوقاً فَدَنَوا مِنَ المَدِينَة فَضَرَبَهَا المَخَاضُ فَاحْتَبَسَ عَلَيْهَا أَبُو طَلْحَةَ وانْطَلَقَ رسولُ الله ﷺ قَالَ : يَقُولَ أَبُو طَلْحَةَ : إنَّكَ لَتَعْلَمُ يَا رَبِّ أَنَّهُ يُعْجِبُنِي أنْ أخْرُجَ مَعَ رسولِ الله ﷺ إِذَا خَرَجَ وَأَدْخُلَ مَعَهُ إِذَا دَخَلَ وَقَدِ احْتَبَسْتُ بِمَا تَرَى تَقُولُ أُمُّ سُلَيْمٍ : يَا أَبَا طَلْحَةَ مَا أَجِدُ الَّذِي كُنْتُ أجدُ انْطَلِقْ فَانْطَلَقْنَا وَضَرَبَهَا المَخَاضُ حِينَ قَدِمَا فَوَلدَت غُلامَاً فَقَالَتْ لِي أمِّي : يَا أنَسُ لا يُرْضِعْهُ أحَدٌ حَتّٰـى تَغْدُو بِهِ عَلَى رسولِ الله ﷺ فَلَمَّا أصْبَحَ احْتَمَلْتُهُ فَانْطَلَقْتُ بِهِ إِلَى رسولِ الله ﷺ وَذَكَرَ تَمَامَ الحَدِيثِ