পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - তাসবীহ (সুবহা-নাল্ল-হ), তাহমীদ (আল হাম্দুলিল্লা-হ), তাহলীল (লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ) ও তাকবীর (আল্ল-হু আকবার)- বলার সাওয়াব
২৩১৫-[২২] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মি’রাজের রাতে ইব্রাহীম (আঃ)-এর সাথে আমার দেখা হলে তিনি আমাকে বললেন, হে মুহাম্মাদ! আপনি আপনার উম্মাতকে আমার সালাম বলবেন এবং খবর দিবেন যে, জান্নাত হলো সুগন্ধ মাটি ও সুপেয় পানিবিশিষ্ট। কিন্তু এতে কোন গাছপালা নেই (অর্থাৎ- জান্নাত হলো সমতল ভূমি)। এর গাছপালা হলো ’’সুবহা-নাল্ল-হি, ওয়ালহামদুলিল্লা-হি, ওয়ালা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াল্ল-হু আকবার’’। (তিরমিযী; তিনি বলেন, সানাদগত দিক থেকে হাদীসটি হাসান গরীব)[1]
وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَقِيتُ إِبْرَاهِيمَ لَيْلَةَ أُسَرِيَ بِي فَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ أَقْرِئْ أُمَّتَكَ مِنِّي السَّلَامَ وَأَخْبِرْهُمْ أَنَّ الْجَنَّةَ طَيِّبَةُ التُّرْبَةِ عَذْبَةُ الْمَاءِ وَأَنَّهَا قِيعَانٌ وَأَنَّ غِرَاسَهَا سُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ. وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ إِسْنَادًا
ব্যাখ্যা: (فَقَالَ) অর্থাৎ- ইব্রাহীম (আঃ) বলেন, এমতাবস্থায় তিনি স্বস্থানে সপ্তাকাশে বায়তুল মা‘মূর এর সাথে পিঠ হেলান দেয়াবস্থায় ছিলেন। (أَقْرِئْ أُمَّتَكَ مِنِّى السَّلَامَ) বলা হয়ে থাকে (أقرأ فلان فلانا السلام) এবং (أقرأ عليه السلام) অর্থাৎ- আমি তার ওপর সালাম পাঠ করছি, অর্থাৎ- সালাম তারই কাছে পৌঁছাচ্ছি।
(طَيِّبَةُ التُّرْبَةِ) কেননা তার মাটি মিস্ক আম্বার, জা‘ফরান এবং এদের অপেক্ষা সুগন্ধিময় কিছু নেই।
(قِيعَانٌ) যা (قاع) শব্দের বহুবচন, অর্থাৎ- বৃক্ষমুক্ত সমতল ভূমি।
(وَأَنَّ غِرَاسَهَا) অর্থাৎ- যা (غرس)-এর বহুবচন। কারী বলেন, তা এমন বস্ত্ত যা রোপণ করা হয় অর্থাৎ- জমিনের মাটি, বীজ হতে যা ঢেকে নেয় যাতে পরে তা গজায়। আর যখন ঐ মাটি উত্তম হবে এবং তার পানি মিষ্টি হবে তখন স্বভাবত চারা উত্তম হবে আর চারা বলতে উত্তম বাক্যাবলী আর এগুলো হল নিষ্ঠাপূর্ণ অবশিষ্ট কালিমাহ্, অর্থাৎ- তাদের জানিয়ে দিন এ বাক্যাবলী এবং এদের মতো আরো কিছুর উক্তিকারী জান্নাতে প্রবেশের কারণ এবং জান্নাতে তার বাসস্থানের বৃক্ষ অধিক হওয়ার কারণে, কেননা যখনই উক্তিকারী এগুলো বারংবার পাঠ করবে তখনই তার জন্য জান্নাতে তার পাঠের সংখ্যা পরিমাণ বৃক্ষ গজাবে।
তুরবিশতী বলেন, চারা কেবল উত্তম মাটিতে ভাল হয়ে থাকে। মিষ্টি পানি দ্বারা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। অর্থাৎ- আপনি তাদেরকে জানিয়ে দিন নিশ্চয়ই এ বাক্যাবলী এদের উক্তিকারীকে জান্নাতের উত্তরাধিকারী বানিয়ে দেয় এবং এগুলো অর্জনের চেষ্টাকারীর চেষ্টা নষ্ট হয় না, কেননা রোপণকারী সে তার গুদামজাত করা বস্ত্ত একত্র করে রাখে না। শায়খ দেহলবী বলেন, বিষয়টি জটিলতা সৃষ্টি করছে যে, নিশ্চয়ই আলোচনা ঐ কথার উপর প্রমাণ বহনকারী যে, নিশ্চয়ই জান্নাতের মাটি বৃক্ষ ও প্রাসাদমুক্ত যা প্রমাণিত জান্নাতের বিপরীত। এ ব্যাপারে উত্তর প্রদান করা হয়েছে যে, আলোচ্য বিষয়টি ঐ কথার উপর প্রমাণ বহন করছে না যে, এখনও সে জান্নাত বৃক্ষ ও প্রাসাদমুক্ত, বরং ঐ কথার উপর প্রমাণ বহন করছে যে, মূলত জান্নাত বৃক্ষ, প্রাসাদমুক্ত এবং বৃক্ষসমূহ তাতে কর্মের বদলা স্বরূপ রোপণ করা হয়। অথবা উদ্দেশ্য নিশ্চয়ই জান্নাতে বৃক্ষসমূহ যা ‘আমলের কারণে হয়েছে তা যেন ‘আমলের কারণে রোপণ করা হয়েছে।
ইমাম ত্বীবী বলেন, এ হাদীসে জটিলতা রয়েছে, কেননা হাদীসটি ঐ কথার উপর প্রমাণ বহন করছে যে, জান্নাতের জমিন বৃক্ষ, প্রাসাদমুক্ত। পক্ষান্তরে আল্লাহর বাণী (جنات تجرى من تحتها الأنهار) এবং অপর বাণী (أعدت للمتقين) ঐ কথার উপর প্রমাণ বহন করছে যে, নিশ্চয়ই জান্নাত বৃক্ষ, প্রাসাদমুক্ত না। কেননা জান্নাতকে জান্নাত নামকরণ করা হয়েছে তার ছায়া বিশিষ্ট ঘন বৃক্ষসমূহের ডাল-পালা ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকার কারণে এবং তা জান্নাতের গঠন ঢেকে নেয়া অর্থের উপর আবর্তনশীল হওয়ার কারণে আর নিশ্চয়ই তা তৈরি করে প্রস্ত্তত করে রাখা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে উত্তর হল নিশ্চয়ই জান্নাত বৃক্ষ, প্রাসাদমুক্ত ছিল, অতঃপর আল্লাহ তার কৃপা ও তার অনুগ্রহের প্রশস্ততার মাধ্যমে ‘আমলকারীদের ‘আমল অনুপাতে তাতে বৃক্ষ ও প্রাসাদ সৃষ্টি করেছেন। যা প্রত্যেক ‘আমলকারীর জন্য তার ‘আমল অনুযায়ী নির্দিষ্ট। অতঃপর নিশ্চয়ই আল্লাহ সাওয়াব দানের জন্য যাকে যে ‘আমলের জন্য সৃষ্টি করেছেন তার জন্য তা যখন সহজ করে দিলেন তখন ‘আমলকারীকে রূপকার্থে বৃক্ষ রোপণকারীর ন্যায় করে দিলেন। অর্থাৎ- (سبب) কে (مسبب) এর উপর প্রয়োগ করা হয়েছে।
আরো উত্তর দেয়া হয়েছে যে, হাদীসে ঐ ব্যাপারে প্রমাণ নেই যে, জান্নাত সম্পূর্ণরূপে বৃক্ষ ও প্রাসাদমুক্ত। কেননা জান্নাত বৃক্ষ ও প্রাসাদমুক্ত হওয়ার অর্থ হল জান্নাতের অধিকাংশ চারা রোপণ করা, এছাড়া বাকী যা আছে তা প্রশস্ত স্থান রোপণহীন যাতে ঐ বাণীর কারণে চারা রোপণ করা হয় যাতে বিনা কারণে প্রকৃত চারা রোপণ এবং ঐ বাণীর কারণে চারা রোপণ। ত্ববারানী অত্যন্ত দুর্বল সানাদে সালমান ফারিসী-এর হাদীস কর্তৃক বর্ণনা করেন যার শব্দ হল ‘‘তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, নিশ্চয়ই জান্নাতে বৃক্ষ, প্রাসাদহীন ভূমি রয়েছে, সুতরাং বেশি করে চারা রোপণ কর। তারা বলল, হে আল্লাহর রসূল! চারা রোপণ কি? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (سبحان الله والحمد لله ولا إله إلا الله والله أكبر)।’’