পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সদাক্বার মর্যাদা
১৯২৩-[৩৬] আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা পৃথিবী সৃষ্টি করার পর তা দুলতে লাগল। তখন পাহাড়গুলো সৃষ্টি করে সেগুলো পৃথিবীর উপর দাঁড় করিয়ে দিলেন। পৃথিবী স্থির হয়ে গেল। পাহাড়ের শক্তি দেখে মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) বিস্মিত হলেন। তারা জিজ্ঞেস করলেন, হে রাব্বুল আলামীন! আপনার সৃষ্টি জগতে পাহাড়ের চেয়ে শক্তিধর জিনিস আর কী আছে? আল্লাহ উত্তর দিলেন, হ্যাঁ, আছে। তা হলো লোহা। মালাকগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে রব! লোহার চেয়ে শক্তিধর কী কিছু আছে? আল্লাহ বললেন, হ্যাঁ, আগুন। মালাকগণ বললেন, পরওয়ারদিগার। আপনার সৃষ্টির মধ্যে আগুনের চেয়েও বেশী শক্তিধর কী? আল্লাহ তা’আলা বললেন, পানি। তারপর মালায়িকাহ্ জিজ্ঞেস করলেন, হে পরওয়ারদিগার! সৃষ্টির মধ্যে বাতাসের চেয়েও শক্তিধর কিছু আছে কী? আল্লাহ তা’আলা বললেন, হ্যাঁ, আছে। (আর তা হলো) আদম সন্তানের দান খায়রাত। ডান হাতে দান (এমনভাবে যে) বাম হাত হতেও গোপন করে থাকে। (তিরমিযী; তিনি বলেন, এ হাদীসটি গরীব।)[1]
মু’আয-এর হাদীস الصَّدَقَةُ تُطْفِئُ الْخَطِيئَةَ (অর্থাৎ দান-সদাক্বাহ্ (সাদাকা) পাপ মিটিয়ে দেয়) ’কিতাবুল ঈমান’-এ উল্লেখ করা হয়েছে।
وَعَن أنس بن مَالك عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَمَّا خَلَقَ اللَّهُ الْأَرْضَ جَعَلَتْ تَمِيدُ فَخَلَقَ الْجِبَالَ فَقَالَ بِهَا عَلَيْهَا فَاسْتَقَرَّتْ فَعَجِبَتِ الْمَلَائِكَةُ مِنْ شِدَّةِ الْجِبَالِ فَقَالُوا يَا رَبِّ هَلْ مِنْ خَلْقِكَ شَيْءٌ أَشَدُّ مِنِ الْجِبَالِ قَالَ نعم الْحَدِيد قَالُوا يَا رَبِّ هَلْ مِنْ خَلْقِكَ شَيْءٌ أَشَدُّ مِنَ الْحَدِيدِ قَالَ نَعَمِ النَّارُ فَقَالُوا يَا رب هَل من خلقك شَيْء أَشد من النَّار قَالَ نعم المَاء قَالُوا يَا رب فَهَل مِنْ خَلْقِكَ شَيْءٌ أَشَدُّ مِنَ الْمَاءِ قَالَ نَعَمِ الرِّيحُ فَقَالُوا يَا رَبِّ هَلْ مِنْ خَلْقِكَ شَيْءٌ أَشَدُّ مِنَ الرِّيحِ قَالَ نَعَمِ ابْن آدم تصدق بِصَدقَة بِيَمِينِهِ يخفيها من شِمَالِهِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ وَذُكِرَ حَدِيثُ مُعَاذٍ: «الصَّدَقَةُ تُطْفِئُ الْخَطِيئَةَ» . فِي كتاب الْإِيمَان
ব্যাখ্যা: আল্লাহ তা‘আলা যখন সর্বপ্রথম কা‘বার জমিন সৃষ্টি করলেন এবং সেটাকে উত্তপ্ত ও এর চতুস্পার্শে বিস্তৃত করলেন তখন সেটি পানির উপর একটি থালা বা ফলকের মতো হলো। তারপর সে জমিনটি খুব নাড়াচাড়া ও আন্দোলিত হওয়া শুরু করল। এমনকি মালায়িকাহ্ বলে উঠল, এ জমিন দ্বারা মানবজাতি উপকৃত হতে পারবে না। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা পাহাড় সৃষ্টি করে তা জমিনে স্থাপিত করলেন, যাতে করে জমিন তার নিজ স্থানে স্থির হয়, তার স্থান থেকে নাড়াচাড়া না করে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা আল কুরআনে বলেন,
وَأَلْقى فِي الْأَرْضِ رَوَاسِيَ أَنْ تَمِيْدَ بِكُمْ
অর্থাৎ ‘‘এবং তিনি পৃথিবীতে সুদৃঢ় পর্বত স্থাপন করেছেন, যাতে পৃথিবী তোমাদেরকে নিয়ে আন্দোলিত না হয়।’’ (সূরাহ্ আন্ নাহল ১৬ : ১৫)
মালায়িকাহ্ জিজ্ঞেস করলেন, হে রব! তোমার সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে পাহাড়ের থেকে অধিক শক্তিশালী কিছু আছে কি? আল্লাহ উত্তরে বললেন, হ্যাঁ, আছে, লোহা। কারণ লোহা দ্বারা পাথর ভাঙ্গা যায় এবং পাহাড়কে মূলোৎপাটিত বা অপসারণ করা যায়। মালায়িকাহ্ এরপর একই ধরনের প্রশ্ন করলে আল্লাহ উত্তর দিলেন, হ্যাঁ, লোহার থেকে অধিক শক্তিশালী হচ্ছে আগুন। কারণ আগুন লোহাকে গলিয়ে নরম করে ফেলে। আগুন থেকে অধিক শক্তিশালী হলো পানি। কারণ পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয়। পানি থেকে অধিক শক্তিশালী হলো বাতাস। কারণ বাতাস পানিকে বিভক্ত করে এবং শুকিয়ে ফেলে। ত্বীবী বলেন, বাতাস পানি ভর্তি মেঘমালাকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যায়।
হাদীসে উল্লিখিত বিভিন্ন পদার্থ ও এমনকি বাতাস হতে যে জিনিসটি অধিক শক্তিশালী তা হলো আদম সন্তানের ঐ দান যা সে ডান হাতে দান করে কিন্তু বাম হাত জানে না। এর কারণ হলো, দানের মধ্যে নিজ ইচ্ছার বিরোধিতা করতে হয়, (অর্থাৎ সাধারণত কোন ব্যক্তি চায় না তারই কষ্টার্জিত সম্পদ নগদ লাভ ছাড়া হাত ছাড়া করতে), নিজ (সম্পদ জমা করার) স্বভাবকে এবং শায়ত্বনকে দমন/পরাভূত করতে হয়। (কারণ মানুষের স্বভাব হলো সম্পদ জমানো এবং গণনা করা, আর শায়ত্বন (শয়তান) তো চায়-ই না যে, মানুষ আল্লাহর রাস্তায় কিছু দান করুক এবং তাঁর প্রিয় বান্দা হয়ে যাক।) উল্লেখ্য যে, এগুলো করা ব্যতীত দান করা সম্ভব হয়ে উঠে না।
দান করা অধিক শক্তিশালী হওয়ার কারণ এও হতে পারে যে, ব্যক্তির দান আল্লাহর রাগকে প্রশমিত করে। আর আল্লাহর রাগের মতো কঠিন-কঠোর কিছুই নেই। যখন আল্লাহ বাতাসের মাধ্যমে কারো উপর শাস্তি পাঠাতে চান এবং তখন কেউ যদি কাউকে কিছু দান করে তাহলে ঐ দানের কারণে ঐ শাস্তি প্রতিহত হবে। তাহলে প্রমাণিত হলো, দান বাতাস থেকেও শক্তিশালী।