পরিচ্ছেদঃ ৬১/২৩. নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বর্ণনা।
৩৫৪৯. বারাআ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চেহারা ছিল মানুষের মধ্যে[১] সর্বাপেক্ষা সুন্দর এবং তিনি ছিলেন সর্বোত্তম আখলাকের অধিকারী। তিনি বেশি লম্বাও ছিলেন না এবং বেঁটেও ছিলেন না। (মুসলিম ৪৩/২৫ হাঃ ২৩৩৭, আহমাদ ১৮৫৮২) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩২৮৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩২৯৪)
১। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নবুয়্যাতের আলামতসমূহের উপরে মহামতি ইমাম বুখারী (রহ.) সহীহ সানাদে প্রমাণিত কতিপয় নির্ভরযোগ্য হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সম্পর্কে যে সমুদয় বৈশিষ্ট্য ও নিদর্শনাবলী বর্ণনা করেছেন, তাতে এ কথা পরিষ্কারভাবেই প্রমাণিত হয় যে, মহানাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মানুষ ছিলেন। তিনি আল্লাহ তা‘আলার খাস নূরে তৈরী বা বিশেষ কোন নূরানী কায়দায় সৃষ্ট বা স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলাই মুহাম্মাদ নাম ধারণ করে মানবরূপে আত্মপ্রকাশ করেছেন এবম্বিধ যাবতীয় চিন্তা-চেতনা, আক্বীদাহ্-বিশ্বাস ও কথাবার্তা নিঃসন্দেহে বিভ্রান্তিকর তথা কুফরী কার্য বটে।
কেননা আল্লাহ তা‘আলা উপরোক্ত বিষয়ে স্বীয় কুরআন মাজীদের মাধ্যমেই বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে অন্য কারো কোন অতিরিক্ত চিন্তা-ভাবনা করার অবকাশ নেই। স–রা কাহফের শেষ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে লক্ষ্য করে এরশাদ করেছেন- (قُلْ إِنَّمَآ أَنَا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ) (الكهف: من الآية১১০)
হে নাবী! তুমি বলে দাও, আমি তোমাদের মতোই একজন মানুষ।(আল-কাহ্ফ ১১০ আয়াতাংশ) এ বিষয়ে অন্যত্র আরো এরশাদ হচ্ছে- (لَقَدْ مَنَّ اللهُ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ إِذْ بَعَثَ فِيْهِمْ رَسُوْلًا مِّنْ أَنْفُسِهِمْ الخ) (آل عمران: من الآية১৬৪)
অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদের প্রতি বিশেষ অনুগ্রহ করেছেন, যখন তিনি তাদের মধ্য হতেই (ফেরেশতা বা মানুষ নয় এমন কোন ভিন্ন জাতির মধ্য হতে প্রেরণ করেন নি বরং) একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন। সূরা আলে ইমরান, আয়াত নং- ১৬৪। উক্ত আয়াতে উল্লেখিত رسولا من أنفسهم এই শব্দ দু’টির ব্যাখ্যায় হানাফী মাযহাবের প্রসিদ্ধ তাফসীর গ্রন্থ তাফসীরে রুহুল মা‘আনীতে আল্লামা শাইখ শেহাবুদ্দীন আলুসী-আল্ হানাফী (রহ.) লিখেছেন- রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে মানুষ বলে জানা ও তাঁকে মানুষের সন্তান মানুষ বলেই গ্রহণ করা সহীহ হওয়ার জন্য একান্ত শর্ত। তাঁকে ফেরেশতা, জ্বিন, নূরের দ্বারা তৈরী এসব কিছু বলা যাবে না বা চিন্তাও করা যাবে না। যেমন রহুল মা‘আনীর নিুোদ্ধৃত ভাষ্যে পরিষ্কার করেই বলা হয়েছে -
هل العلم وبكونه صلى الله عليه وسلم بشر ومن العرب شرط في صحه الإيمان أو من فروض الكناية؟ فأجاب بأنه شرط في صحة الإيمان ثم قال فلو قال شخص أو من برسالة محمد صلى الله عليه وسلم إلآ جميع الخلق لكن لا أدري هل هة من البشر أو من الملائكة أو من الجن أو لا أدري هل هو من العرب أو العجم؟ فلا شك في كفره لتكذيبه القرآن
অর্থাৎ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মানুষ ছিলেন, কি আরবীয় মানুষ ছিলেন, এ বিষয়ে জ্ঞাত হওয়া এবং নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে মানুষ বলেই জানা ঈমানের জন্য শর্ত না; ফারযি কিফায়াহ (كفاية)? এর জবাব এই যে, উক্ত বিষয়টি ঈমানের জন্য শর্ত বটে। অতঃপর কেউ যদি বলে, নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সমস্ত মাখলুকের জন্য নাবী এটা বিশ্বাস করি, তবে তিনি মানুষ কি জ্বিন, কি ফেরেশতা, বা আরবের কি অনারবের এটা আমি জানি না। উক্ত ব্যক্তি নিঃসন্দেহে কাফের। কেননা সে কুরআনের ঘোষণাকে অস্বীকার করেছে। تفسير روح المعاني পৃষ্ঠা নং- ১১৩, ৪র্থ খণ্ড। অতএব এখানে লক্ষণীয় এই যে, কতিপয় বিভ্রান্ত লোক নিজেদেরকে হানাফী আল্-ক্বাদরী, আল্ চিশ্তী ইত্যাদি নাম দিয়ে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে অতিমাত্রায় ভক্তি ও শ্রদ্ধা দেখাতে গিয়ে তাঁকে আল্লাহ্ও আসনে বসিয়েছে। أحد (আহাদ) ও أحمد (আহমাদ)-এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে নিজেদের অজ্ঞতাবশতঃ এ ব্যাখ্যাও দিয়েছে, যে أحد ও أحمد এর মধ্যে মাত্র একটি মীমের পার্থক্য ছাড়া আর কোন পার্থক্য নেই। نعوذ بالله প্রকাশ থাকে। পাক-ভারত উপমহাদেশের বিদ‘আতীরা কুরআন ও সহীহ হাদীস বিরোধী সমস্ত কার্যাবলী চালু করে নিজেদের নাম দিয়ে রেখেছে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আহ্। এ যেন বেদানা ফলের মতোই অবস্থা। বেদানা ফল দানায় ভর্তি, অথচ নাম তার বেদানা তথাকথিত أهل السنة والجماعة (আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আহ্) নাম দিয়ে বিদ‘আতীরা এ পৃথিবীর এমন কোন বিদ‘আত নেই, যা এরা করছে না। যেমন কবর পূজা, পীর পূজা, মীলাদ, ওরশ ওরসেকূল, ইসালে সওয়াব, জশ্নে জুলুস, মিছিল, ঈদে মিলাদুন্নাবী ইত্যাদি ইত্যাদি।
উল্লেখ্য, এক শ্রেণীর বিদ‘আতীরা নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে মর্যাদা তথা অত্যধিক পরিমাণে শান-মান দেয়ার নামে এতোই সীমালঙ্ঘন করছে যে, (عالم الغيب) ‘আলিমুল গায়িব আল্লাহ তা‘আলার বিশেষ ক্ষমতা হলো এই যে, তিনি সমস্ত গায়িবী খবরা-খবর জানেন। এ বিষয়ে বিদ‘আতীদের আক্বীদাহ এই যে, নাউযুবিল্লাহ মহানাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও আল্লাহ তা‘আলার ন্যায় গায়িবী খবর জানতেন ও জানেন যা সরাসরি কুরআন, হাদীস, ইজমা, কিয়াস ও জমহারে ‘উলামাসহ হাকপন্থী সর্বশ্রেণীর মুসলিমদের আক্বীদাহ্র বিপরীত এ ব্যাপারে খোদ আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন- (وَعِنْدَهُ مَفَاتِحُ الْغَيْبِ لا يَعْلَمُهَا إِلاَّ هُو) (الأنعام: من الآية৫৯)
অদৃশ্য বিষয়সমূহের চাবিকাঠি আল্লাহর নিকটে, তিনি ব্যতীত উক্ত বিষয়াবলী আর কেউ জানে না। (সূরা আন‘আম ৫৯)
এ বিষয়ে ইমাম বুখারী (রহ.) বর্ণনা করেন-
عن سالم بن عبد الله عن أبيه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال : مفاتح الغيب خمس لا يعلمهن إلا الله، إن الله عنده علم الساعة وينـزل الغيث ويعلم ما في الأرحام وما تدري نفس ماذا تكسب غدا أو ما تدري نفس بأي ارض تموت إن الله عليم خبير تفسير ابن كثير (جزء الثاني)
অতীতকালের বিভ্রান্ত জাতিসমূহ তাদের নবীগণকে মাত্রাতিরিক্ত মর্যাদা দিতে গিয়ে আল্লাহ্র নামে র্শিক করেছিল। ইয়াহুদী ও খৃষ্টান জাতি ‘উযাইর ও ঈসা (আঃ)-দ্বয়কে আল্লাহ্র পুত্র বানিয়ে তাঁদের পূজা অর্চনা করতে শুরু করেছে এবং বর্তমানের বিভ্রান্ত মুসলিমদের একটা শ্রেণী উল্লেখিত জাতিদ্বয়কে ছাড়িয়ে গিয়ে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে আল্লাহ্র সাথে একাকার করে ফেলেছে বা বড়ই পরিতাপের বিষয় বটে। এ জাতির বিদ‘আতীদেরকে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সেই কালজয়ীবাণীটি স্মরণ করিয়ে দিতে চাই لاَ تُطْرُونِيْ كَمَا أَطْرَتْ النَّصَارَى ابْنَ مَرْيَمَ فَإِنَّمَا أَنَا عَبْدُهُ فَقُوْلُوْا عَبْدُ اللهِ وَرَسُوْلُهُ (البخاري : ৩৪৪৫)
নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেন- মারইয়াম তনয় ‘ঈসা (আঃ)কে নিয়ে খৃষ্টানরা যেভাবে বাড়াবাড়ি করছে তোমরা আমাকে নিয়ে সেভাবে বাড়াবাড়ি করো না, আমি কেবল একজন বান্দা। অতএব তোমরা আমাকে আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল বলে সম্বোধন করবে।
بَابُ صِفَةِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ سَعِيْدٍ أَبُوْ عَبْدِ اللهِ حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ مَنْصُوْرٍ حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيْمُ بْنُ يُوْسُفَ عَنْ أَبِيْهِ عَنْ أَبِيْ إِسْحَاقَ قَالَ سَمِعْتُ الْبَرَاءَ يَقُوْلُ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَحْسَنَ النَّاسِ وَجْهًا وَأَحْسَنَهُ خَلْقًا لَيْسَ بِالطَّوِيْلِ الْبَائِنِ وَلَا بِالْقَصِيْرِ