পরিচ্ছেদঃ ১০/১২. ফজরের সময় হবার পর আযান দেয়া।
৬২০. ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘উমার (রাযি.) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বিলাল (রাযি.) রাত থাকতে আযান দিয়ে থাকেন। কাজেই তোমরা (সাহরী) পানাহার করতে থাক; যতক্ষণ না ইবনু উম্মে মাক্তূম (রাযি.) আযান দেন।* (৬১৭) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫৮৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৫৯৩)
আধুনিক প্রকাশনীর ৫৮৫ নং হাদীসের টীকায় লিখেছেন যে, বিলাল (রাঃ) তাহাজ্জুদ সালাতের জন্য আযান দিতেন। কিন্তু কথাটি ভুল কারণ পরবর্তী হাদীস দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণ হচ্ছে যে, তাহাজ্জুদ সালাত আদায়কারী ব্যক্তির অবসর গ্রহণ ও ঘুমন্ত মানুষকে জাগ্রত করার জন্য (যাতে তারা সাহারী খেতে পারে) বিলাল (রাঃ) আযান দিতেন। আর যারা জাগ্রত অবস্থায় সাহারী খেতেন তারা যেন এই আযান শুনে সাহারী খাওয়া বন্ধ না করেন। মক্কাহ্ মদীনাহ্য় ফাজরের আযানের মাত্র আধা ঘণ্টা পূর্বে এ আযান এখনও চালু আছে। এবং এটা তাহাজ্জুদের আযান নয়। নাসায়ী, বাইহাকী, ইবনু খুযাইমাহ, ইবনুস সাকান থেকে হাদীস বর্ণিত হয়েছে। যাতে প্রমাণিত হয় যে, শুধুমাত্র প্রথম আযানে “আস্ সালাতু খাইরুম মিনান নাওম” আছে। আর দ্বিতীয়তে অর্থাৎ ফাজরের মূল আযানে নেই। বিস্তারিত দেখুন সুবুলুস সালাম ২য় খণ্ড ১৮৫ পৃষ্ঠা।
আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানী লিখিত তামামুল মিন্নাহ গ্রন্থের ১৪৬ পৃষ্ঠা থেকে ১৪৮ পৃষ্ঠায় দীর্ঘ আলোচনার শেষ পর্যায়ে এসে তিনি বলেছেন ঃ উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রমাণিত হচ্ছে যে, দ্বিতীয় আযানে তাসবীব বা আসসালাতু খাইরুম মিনান নাওম বলা বিদ‘আতÑসুন্নাত বিরোধী। সুন্নাতের বিরোধিতা আরো বেশি সাব্যস্ত হয় প্রথম আযানকে উৎখাত করে সে আযানের তাসবীব বা শব্দবিশেষ “আস্ সালাতু খাইরুম মিনান নাওমকে দ্বিতীয় আযানে যুক্ত করায়। আর বাড়াবাড়ি করে দ্বিতীয় আযানে সাব্যস্ত করা হয়। (তামামুল মিন্নাহ ১৪৮পৃঃ)
ইমাম তাহাবী প্রথম আযানে তাসবীব হওয়া সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচিত ইবনু ‘উমার ও আবূ মাহযূরাহর সুস্পষ্ট হাদীস দু’টি উল্লেখ করার পর বলেছেন। এটিই ইমাম আবূ হানীফাহ, ইমাম আবূ ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদের মত। (তামুমুল মিন্নাহ ১৪৮. পৃষ্ঠা)
আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানী সুন্নাহ বিরোধী আমল প্রচলন হওয়ার দু’টি কারণ উল্লেখ করেছেন ঃ এক ঃ ইসলামী দুনিয়ার অধিকাংশ মুয়াযযিন সুন্নাত বিরোধী আমল অব্যাহত রেখেছেন এবং খুব কম সংখ্যক আলিম এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। দুই ঃ অধিকাংশগণই এ বিষয়ে ব্যাখ্যা প্রদান ছাড়াই আলোচনা করেছেন। তাঁরা তাসবীব ফাজরের প্রথম আযানে যেমনটি স্পষ্টভাবে সহীহ হাদীসগুলোতে এসেছেÑ তেমনটি ব্যাখ্যা প্রদান করেননি। একমাত্র ইবনু রাসলান এবং সাম‘আনী অধিকাংশের বিরোধিতা করে সহীহ হাদীস অনুযায়ী ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন।
ঘুমের চেয়ে সালাত উত্তম এ কথাটি ফারয সালাতের ক্ষেত্রে প্রাযোজ্য নয়। কারণ ঘুমের সাথে ফারয সালাতের তুলনা হতে পারে না। এটি হতে পারে নফল সালাতের ক্ষেত্রে। কারণ উত্তমতার প্রসঙ্গ আনলে উভয়টি করা বৈধ হয়। এখানে ফারয সালাত বাদ দিয়ে ঘুমানো যাবে এমন কথা কেউ বলতে পারবেন না। এ থেকে বুঝা যাচ্ছে তাসবীব প্রথম আযানের সাথে সংশ্লিষ্ট দ্বিতীয়, আযানে নয়। যা বিভিন্ন দেশে চালু আছে। উল্লেখ্য সিরিয়া ও র্জদানের যে সব এলাকায় আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানীর দা‘ওয়াত ও তাবলীগের ব্যাপকা প্রচার লাভ করেছে সে সব জায়গায় এবং সুদানের সালাফীগণও (আনসারুস সুন্নাহ) ফাজরের দ্বিতীয় আযানে তাসবীব ব্যবহার করেন না।
শাইখ উসাইমিন “প্রত্যেক দুই আযানের মধ্যে সালাত রয়েছে” এ আম হাদীস দ্বারা তিনি উপরে বর্ণিত আযান বলতে সকালের আযানকে বুঝিয়েছেন। কারণ দ্বিতীয় আযানটি হচ্ছে ইকামাত। এ হাদীস দ্বারা তাসবীব ফাজরের দ্বিতীয় আযানে সাব্যস্ত করা অযৌক্তিক। কারণ ইকামাতকে যদি আযান হিসেবে ধরা হয় তাহলে সেটি ফাজরের ক্ষেত্রে তৃতীয় আযান, দ্বিতীয় নয়। যখন বিষয়টি ফাজরের আযানকে ঘিরেই তখন স্পষ্ট ভাবে যেখানে প্রথম বলা হয়েছে তখন দ্বিতীয় আযান হিসেবে দ্বিতীয় আযানকেই ধরতে হবে। তৃতীয়টিকে নয়। আর যারা “প্রত্যেক দুই আযানের মধ্যে সালাত রয়েছে” এই আম হাদীসের উপর আমল করতে গিয়ে ফাজরের তিনটি আযানকে অস্বীকার করবেন। তারা কি ৬২০ নং হাদীসের বিলাল (রাযি.) প্রথম আযান দেয়ার সময় পানাহার বন্ধ না করে উম্মু মাকতূমের ইকামাত পর্যন্ত পানাহার করে থাকেন।
এই আযান দেয়ার পূর্বে সতর্ক করার জন্য কোন কিছু বলা জায়িয নয়। ফাজরে অন্য মুয়াযিন আযান দিবে যাতে দুই আযানের পার্থক্য নিরূপণ করা যায়। শুধু তাই নয় প্রথম আযানে আস্সালাতু খাইরুম .... আছে যা উম্মে মাকতুমের আযানে ছিল না। (সুবুলুস সালাম) [ আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন ]
بَاب الْأَذَانِ بَعْدَ الْفَجْرِ
عَبْدُ اللهِ بْنُ يُوسُفَ أَخْبَرَنَا مَالِكٌ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ دِينَارٍ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِنَّ بِلَالاً يُنَادِي بِلَيْلٍ فَكُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّى يُنَادِيَ ابْنُ أُمِّ مَكْتُومٍ.
Narrated `Abdullah bin `Umar:
Allah's Messenger (ﷺ) said, "Bilal pronounces the Adhan at night, so keep on eating and drinking (Suhur) till Ibn Um Maktum pronounces the Adhan."