পরিচ্ছেদঃ (বিবাদমান) মানুষদের মধ্যে মীমাংসা (ও সন্ধি) করার গুরুত্ব
আল্লাহ তাআলা বলেন,
لاَ خَيْرَ فِيْ كَثِيْرٍ مِّنْ نَجْوَاهُمْ إِلاَّ مَنْ أَمَرَ بِصَدَقَةٍ أَوْ مَعْرُوْفٍ أَوْ إِصْلَاحٍ بَيْنَ النَّاسِ
অর্থাৎ, তাদের অধিকাংশ গোপন পরামর্শে কোন কল্যাণ নেই, তবে যে (তার পরামর্শে) দান খয়রাত, সৎকাজ ও মানুষের মধ্যে শান্তি স্থাপনের নির্দেশ দেয় (তাতে) কল্যাণ আছে। (সুরা নিসা ১১৪)
তিনি আরো বলেন,
وَالصُّلْحُ خَيْرٌ
অর্থাৎ, বস্তুতঃ আপোস করা অতি উত্তম। (ঐ ১২৮)
তিনি অন্যত্র বলেছেন,
فَاتَّقُوا اللهَ وَأَصْلِحُوا ذَاتَ بَيْنِكُمْ
অর্থাৎ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং নিজেদের মধ্যে সদ্ভাব স্থাপন কর। (সূরা আনফাল ১)
তিনি আরো বলেন,
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ فَأَصْلِحُوا بَيْنَ أَخَوَيْكُمْ
অর্থাৎ, সকল বিশ্বাসীরা তো পরস্পর ভাই ভাই, সুতরাং তোমরা তোমাদের দুই ভাই-এর মধ্যে সন্ধি স্থাপন কর। (সূরা হুজুরাত-৪৯: ১০)
(৩৪৩৩) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রতিদিন যাতে সূর্য উদয় হয় (অর্থাৎ প্রত্যেক দিন) মানুষের প্রত্যেক গ্রন্থির পক্ষ থেকে প্রদেয় একটি করে সাদকাহ রয়েছে। (আর সাদকাহ শুধু মাল খরচ করাকেই বলে না; বরং) দু’জন মানুষের মধ্যে তোমার মীমাংসা ক’রে দেওয়াটাও সাদকাহ, কোন মানুষকে নিজ সওয়ারীর উপর বসানো অথবা তার উপর তার সামান উঠিয়ে নিয়ে সাহায্য করাও সাদকাহ, ভাল কথা বলা সাদকাহ, নামাযের জন্য কৃত প্রত্যেক পদক্ষেপ সাদকাহ এবং রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস দূরীভূত করাও সাদকাহ।
عَنْ أَبِي هُرَيرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ كُلُّ سُلامَى مِنَ النَّاسِ عَلَيهِ صَدَقَةٌ كُلَّ يَومٍ تَطلُعُ فِيهِ الشَّمْسُ : تَعْدِلُ بَينَ الاثْنَينِ صَدَقةٌ وتُعِينُ الرَّجُلَ في دَابَّتِهِ فَتَحْمِلُهُ عَلَيْهَا أَوْ تَرفَعُ لَهُ عَلَيْهَا مَتَاعَهُ صَدَقَةٌ وَالكَلِمَةُ الطَيِّبَةُ صَدَقَةٌ وبكلِّ خَطْوَةٍ تَمشيهَا إِلَى الصَّلاةِ صَدَقَةٌ وتُميطُ الأذَى عَنِ الطَّريقِ صَدَقَةٌ مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
পরিচ্ছেদঃ (বিবাদমান) মানুষদের মধ্যে মীমাংসা (ও সন্ধি) করার গুরুত্ব
(৩৪৩৪) উম্মে কুলসুম বিনতে উক্ববাহ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, ঐ ব্যক্তি মিথ্যাবাদী নয়, যে মানুষের মধ্যে সদ্ভাব স্থাপন করার জন্য (বানিয়ে) ভাল কথা পৌঁছে দেয় অথবা ভাল কথা বলে।
মুসলিমের এক বর্ণনায় বর্ধিত আকারে আছে, উম্মে কুলসুম (রাঃ) বলেন, ’আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কেবলমাত্র তিন অবস্থায় মিথ্যা বলার অনুমতি দিতে শুনেছিঃ যুদ্ধের ব্যাপারে, লোকের মধ্যে আপোস-মীমাংসা করার সময় এবং স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের (প্রেম) আলাপ-আলোচনায়।’
وَعَن أمِّ كُلْثُومِ بِنتِ عُقْبَةَ بنِ أَبي مُعَيطٍ رَضِيَ الله عَنهَا قَالَتْ : سمِعتُ رَسُوْلَ الله ﷺ يَقُولُ لَيْسَ الكَذَّابُ الَّذِي يُصْلِحُ بَيْنَ النَّاسِ فَيَنْمِي خَيراً أَوْ يقُولُ خَيْراً مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
وَفي رِوَايَةِ مُسلِمٍ زِيَادَة قَالَتْ : وَلَمْ أسْمَعْهُ يُرْخِّصُ في شَيْءٍ مِمَّا يَقُولُهُ النَّاسُ إلاَّ في ثَلاثٍ تَعْنِي: الحَرْبَ وَالإِصْلاَحَ بَيْنَ النَّاسِ وَحَدِيثَ الرَّجُلِ امْرَأَتَهُ وَحَدِيثَ المَرْأةِ زَوْجَهَا
পরিচ্ছেদঃ (বিবাদমান) মানুষদের মধ্যে মীমাংসা (ও সন্ধি) করার গুরুত্ব
(৩৪৩৫) আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দরজার নিকট দু’জন বিবাদকারীর উচ্চ আওয়ায শুনতে পেলেন। তাদের মধ্যে একজন অপরজনকে কিছু ঋণ কমাবার এবং নম্রতা প্রদর্শন করার জন্য অনুরোধ করছিল। আর ঋণদাতা বলছিল, ’আল্লাহর কসম! আমি (এটা) করব না।’ অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে দু’জনের কাছে বেরিয়ে এসে বললেন, ’’সে ব্যক্তি কোথায়, যে আল্লাহর উপর কসম খাচ্ছিল যে, সে ভাল কাজ (ঋণ কম এবং নম্রতা) করবে না?’’ সে বলল, ’আমি, হে আল্লাহর রসূল! (এখন) সে (ঋণ কম করা অথবা সময় নেওয়া) যা পছন্দ করবে, আমি তাতেই রাজি।’
وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا قَالَتْ : سَمِعَ رسولُ الله ﷺ صَوْتَ خُصُومٍ بِالبَابِ عَاليةً أصْوَاتُهُمَا وَإِذَا أحَدُهُمَا يَسْتَوْضِعُ الآخَر وَيَسْتَرْفِقُهُ في شَيءٍ وَهُوَ يَقُولُ : وَاللهِ لاَ أفْعَلُ فَخَرجَ عَلَيْهِمَا رَسُوْلُ اللهِ ﷺ فَقَالَ أيْنَ المُتَأَلِّي عَلَى اللهِ لاَ يَفْعَلُ المَعْرُوفَ ؟ فَقَالَ : أَنَا يَا رسولَ اللهِ فَلَهُ أيُّ ذلِكَ أحَبَّ مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
পরিচ্ছেদঃ (বিবাদমান) মানুষদের মধ্যে মীমাংসা (ও সন্ধি) করার গুরুত্ব
(৩৪৩৬) আবুল আব্বাস সাহল ইবনে সা’দ সায়েদী (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, আমর ইবনে আউফ গোত্রের কিছু লোকের মাঝে কিছু ঝগড়া-বিবাদ ছিল। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাথে কিছু লোককে নিয়ে তাদের মধ্যে আপোষ-মীমাংসা ক’রে দেওয়ার জন্য সেখানে হাজির হলেন। সেখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আটকে গেলেন। অপর দিকে নামাযের সময় হয়ে গেল। সুতরাং বিলাল (রাঃ) আবূ বকর (রাঃ) এর নিকট এসে বললেন, ’রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আটকে গেছেন। এদিকে নামাযেরও সময় হয়ে গেছে। আপনি কি নামাযের লোকেদের ইমামতি করবেন?’ তিনি বললেন, ’হ্যাঁ, তুমি যদি চাও।’
অতঃপর বিলাল (রাঃ) নামাযের ইকামত দিলেন এবং আবূ বকর (রাঃ) এগিয়ে গিয়ে (তাহরীমার) তকবীর বললেন এবং লোকেরাও তকবীর বলল। ইতিমধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এলেন এবং কাতারগুলো অতিক্রম ক’রে (প্রথম) কাতারে এসে দাঁড়ালেন। (তা দেখে) লোকেরা হাততালি দিতে শুরু করল। আবূ বকর (রাঃ) নামাযরত অবস্থায় কোন দিকে তাকালেন না, কিন্তু লোকেদের অধিক মাত্রায় হাততালির কারণে তিনি তাকিয়ে দেখতে পেলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপস্থিত হয়েছেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে হাতের ইশারায় (নিজের জায়গায় থাকতে) নির্দেশ দিলেন। আবূ বকর (রাঃ) তাঁর হাত উপরে তুলে আল্লাহর প্রশংসা করলেন। তারপর কিবলার দিকে মুখ রেখে পিছনে ফিরে এসে কাতারে শামিল হলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সামনে গিয়ে লোকদের ইমামতি করলেন এবং নামায শেষ ক’রে লোকদের দিকে ফিরে বললেন, ’’হে লোক সকল! কি ব্যাপার যে, নামায অবস্থায় কিছু ঘটতে দেখে তোমরা হাততালি দিতে শুরু করলে?
(জেনে রেখো, নামাযে) হাততালি দেওয়া তো মহিলাদের কর্তব্য। নামায অবস্থায় কারো কিছু ঘটলে সে যেন ’সুবহানাল্লাহ’ বলে। কারণ, এটা শুনলে কেউ তার দিকে ভ্রূক্ষেপ না ক’রে পারবে না। হে আবূ বকর! তোমাকে যখন ইশারা করলাম, তখন ইমামতি করতে তোমার কিসের বাধা ছিল?’’ তিনি বললেন, ’আবূ কুহাফার ছেলের জন্য সঙ্গত ছিল না যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে লোকেদের ইমামতি করবে।’
وَعَنْ أَبِي العَبَّاسِ سَهلِ بنِ سَعدٍ السَّاعِدِيّ أنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ بَلَغَهُ أنَّ بَني عَمرِو بنِ عَوْفٍ كَانَ بَيْنَهُمْ شَرٌّ فَخَرَجَ رَسولُ الله ﷺ يُصْلِحُ بَينَهُمْ في أُنَاس مَعَهُ فَحُبِسَ رَسُوْلُ الله ﷺ وَحَانَتِ الصَّلاة فَجَاءَ بِلالٌ إِلَى أَبي بَكرٍ رَضِيَ الله عنهما فَقَالَ : يَا أَبا بَكْر إنَّ رَسُوْلَ الله ﷺ قَدْ حُبِسَ وَحَانَتِ الصَّلاةُ فَهَلْ لَكَ أنْ تَؤُمَّ النَّاس ؟ قَالَ : نَعَمْ إنْ شِئْتَ فَأقَامَ بِلالٌ الصَّلاةَ وتَقَدَّمَ أَبُو بَكْرٍ فَكَبَّرَ وَكَبَّرَ النَّاسُ وَجَاءَ رَسُول الله ﷺ يَمشي في الصُّفُوفِ حَتّٰـى قَامَ في الصَّفِّ فَأَخَذَ النَّاسُ في التَّصْفيقِ وَكَانَ أَبُو بكرٍ لاَ يَلْتَفِتُ في الصَّلاةِ فَلَمَّا أكْثَرَ النَّاسُ في التَّصْفيقِ الْتَفَتَ فإِذَا رَسُول الله ﷺ فَأَشَارَ إِلَيْه رسولُ الله ﷺ فَرَفَعَ أَبُو بَكْر يَدَهُ فَحَمِدَ اللهَ وَرَجَعَ القَهْقَرَى وَرَاءهُ حَتّٰـى قَامَ في الصَّفِّ فَتَقَدَّمَ رَسُول الله ﷺ فَصَلَّى للنَّاسِ فَلَمَّا فَرَغَ أقْبَلَ عَلَى النَّاسِ فَقَالَ أيُّهَا النَّاسُ مَا لَكُمْ حِينَ نَابَكُمْ شَيْءٌ في الصَّلاةِ أخَذْتُمْ في التَّصفيق إِنَّمَا التَّصفيق للنِّساء مَنْ نَابَهُ شَيْءٌ في صَلاتِهِ فَلْيَقُلْ : سُبْحَانَ الله فَإِنَّهُ لاَ يَسْمَعُهُ أحدٌ حِينَ يقُولُ : سُبْحَانَ الله إلاَّ الْتَفَتَ يَا أَبَا بَكْر : مَا مَنَعَكَ أنْ تُصَلِّي بالنَّاسِ حِينَ أشَرْتُ إلَيْكَ ؟ فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ: مَا كَانَ يَنْبَغي لابْنِ أَبي قُحَافَةَ أنْ يُصَلِّي بالنَّاسِ بَيْنَ يَدَيْ رَسُول الله ﷺ مُتَّفَقٌ عَلَيهِ