পরিচ্ছেদঃ উমার (রাঃ) এর মাহাত্ম্য
(২৮৩৬) ইবনে উমার (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর কাছে দু’আ ক’রে বলেছেন, ’হে আল্লাহ! আবূ জাহল ও উমার—এ দুইয়ের মধ্যে তোমার কাছে যে প্রিয়, তাকে দিয়ে ইসলামকে শক্তিশালী কর।’ সুতরাং তাঁর কাছে উমার প্রিয় ছিলেন। (তাই তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।) (আহমাদ ৫৬৯৬, তিরমিযী ৩৬৮১)
অন্য বর্ণনায় আছে, আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উমারের জন্য দু’আ ক’রে বলেছেন, ’’হে আল্লাহ! তুমি বিশেষ ক’রে উমারকে দিয়ে ইসলামকে শক্তিশালী কর।’’ (ইবনে মাজাহ ১০৫, সিঃ সহীহাহ ৩২২৫)
عَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اللَّهُمَّ أَعِزَّ الإِسْلاَمَ بِأَحَبِّ هَذَيْنِ الرَّجُلَيْنِ إِلَيْكَ بِأَبِى جَهْلٍ أَوْ بِعُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ قَالَ وَكَانَ أَحَبَّهُمَا إِلَيْهِ عُمَرُ
وفي رواية: عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اللَّهُمَّ اَعِزَّ الْإِسْلَامَ بِعُمَرَ بْنِ الْـخَطَّابِ خَاصَّةً
পরিচ্ছেদঃ উমার (রাঃ) এর মাহাত্ম্য
(২৮৩৭) আয়েশা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন, তোমাদের পূর্ববর্তী জাতির মধ্যে অনেক ’মুহাদ্দাষ’ (ইলহামপ্রাপ্ত) লোক ছিল। যদি আমার উম্মতের মধ্যে কেউ ’মুহাদ্দাষ’ থাকে, তাহলে সে হল উমার।
عَنْ عَائِشَةَ عَنِ النَّبِىِّ ﷺ أَنَّهُ كَانَ يَقُوْلُ قَدْ كَانَ يَكُونُ فِى الأُمَمِ قَبْلَكُمْ مُحَدَّثُونَ فَإِنْ يَكُنْ فِى أُمَّتِى مِنْهُمْ أَحَدٌ فَإِنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ مِنْهُمْ
পরিচ্ছেদঃ উমার (রাঃ) এর মাহাত্ম্য
(২৮৩৮) উমার বিন খাত্ত্বাব (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ’’আমি ঘুমন্ত অবস্থায় (স্বপ্নে) দেখলাম, আমার কাছে এক পেয়ালা দুধ আনা হল। আমি (তৃপ্ত হয়ে) তা পান করলাম। এমনকি আমি পরিতৃপ্তি আমার নখ দিয়ে বের হতে দেখলাম। অতঃপর তার অবশিষ্টাংশ উমার বিন খাত্ত্বাবকে দিলাম।’’
লোকেরা বলল, ’হে আল্লাহর রসূল! তার ব্যাখ্যা কী করলেন?’ তিনি বললেন, ’’ইলম।’’ (বুখারী ৮২, মুসলিম ৬৩৪১)
عَنْ عُمَرَ بْنِ الْـخَطَّابِ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ قَالَ بَيْنَا أَنَا نَائِمٌ إِذْ رَأَيْتُ قَدَحًا أُتِيتُ بِهِ فِيهِ لَبَنٌ فَشَرِبْتُ مِنْهُ حَتّٰـى إِنِّى لأَرَى الرِّىَّ يَجْرِى فِى أَظْفَارِى ثُمَّ أَعْطَيْتُ فَضْلِـىْ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ قَالُوا فَمَا أَوَّلْتَ ذٰلِكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ الْعِلْمَ
পরিচ্ছেদঃ উমার (রাঃ) এর মাহাত্ম্য
(২৮৩৯) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি ঘুমন্তাবস্থায় (স্বপ্নে) দেখলাম, কামীস-পরা লোকদেরকে আমার কাছে পেশ করা হল। অনেকের কামীস ছিল বুক বরাবর, অনেকের ছিল তার থেকে লম্বা অথবা খাটো। আর উমারকে আমার নিকট পেশ করা হল, তার দেহে ছিল এমন (লম্বা) কামীস, যা সে ছেঁচড়ে নিয়ে বেড়াচ্ছিল।
লোকেরা বলল, ’হে আল্লাহর রসূল! তার ব্যাখ্যা কী করলেন?’ তিনি বললেন, ’দ্বীন।’
عن أبي سَعِيدٍ الْخُدْرِىِّ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ بَيْنَا أَنَا نَائِمٌ رَأَيْتُ النَّاسَ يُعْرَضُونَ وَعَلَيْهِمْ قُمُصٌ مِنْهَا مَا يَبْلُغُ الثُّدِىَّ وَمِنْهَا مَا يَبْلُغُ دُونَ ذٰلِكَ وَمَرَّ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ وَعَلَيْهِ قَمِيصٌ يَجُرُّهُ قَالُوا مَاذَا أَوَّلْتَ ذٰلِكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ الدِّينَ
পরিচ্ছেদঃ উমার (রাঃ) এর মাহাত্ম্য
(২৮৪০) মিসওয়ার বিন মাখরামাহ (রাঃ) বলেন, উমারকে যখন ছুরিকাঘাত করা হল, তখন তিনি ব্যথা অনুভব করছিলেন। সে সময় ইবনে আব্বাস তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার উদ্দেশ্যে বললেন, ’হে আমীরাল মু’মিনীন! এমন হলেও আপনার দুঃখের কোন কারণ নেই। যেহেতু আপনি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহচর্য লাভ করেছেন এবং তাঁর সাহচর্যের হক ভালোরূপে আদায় করেছেন। অতঃপর আপনি তাঁকে এ অবস্থায় বিদায় দিয়েছেন, যখন তিনি আপনার প্রতি সন্তুষ্ট।
অতঃপর আপনি আবূ বাক্রের সাহচর্য লাভ করেছেন এবং তাঁর সাহচর্যের হক ভালোরূপে আদায় করেছেন। অতঃপর আপনি তাঁকে এ অবস্থায় বিদায় দিয়েছেন, যখন তিনি আপনার প্রতি সন্তুষ্ট।
অতঃপর আপনি তাঁর সাহাবাগণের সাহচর্য লাভ করেছেন এবং তাঁদের সাহচর্যের হক ভালোরূপে আদায় করেছেন। অতঃপর আপনি যদি তাঁদেরকে বিদায় দেন, তাহলে অবশ্যই এ অবস্থায় বিদায় দেবেন যে, তাঁরা আপনার প্রতি সন্তুষ্ট।’
উমার (রাঃ) বললেন, ’তুমি যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহচর্য ও সন্তুষ্টির কথা উল্লেখ করলে, তা তো আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে আমার প্রতি এক অনুগ্রহ, যা তিনি আমাকে দান করেছেন।
তুমি যে আবূ বকরের সাহচর্য ও সন্তুষ্টির কথা উল্লেখ করলে, তাও তো আল্লাহ জাল্লা যিকরুহর পক্ষ থেকে আমার প্রতি এক অনুগ্রহ, যা দিয়ে তিনি আমাকে দান করেছেন।
আর তুমি যে আমার অস্থিরতা লক্ষ্য করছ, তা তোমার কারণে এবং তোমার সঙ্গীদের কারণে। (যেহেতু ফিতনা আসন্ন।) আল্লাহর কসম! আমার যদি দুনিয়া ভরতি স্বর্ণ থাকত, তাহলে আল্লাহ আযযা অজাল্লাহর আযাব দেখার আগে তা থেকে বাঁচার জন্য মুক্তিপণ হিসাবে তা দান করতাম। (বুখারী ৩৬৯২)
عَنْ الْمِسْوَرِ بْنِ مَخْرَمَةَ قَالَ لَمَّا طُعِنَ عُمَرُ جَعَلَ يَأْلَمُ فَقَالَ لَهُ ابْنُ عَبَّاسٍ وَكَأَنَّهُ يُجَزِّعُهُ يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ وَلَئِنْ كَانَ ذَاكَ لَقَدْ صَحِبْتَ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ فَأَحْسَنْتَ صُحْبَتَهُ ثُمَّ فَارَقْتَهُ وَهُوَ عَنْكَ رَاضٍ ثُمَّ صَحِبْتَ أَبَا بَكْرٍ فَأَحْسَنْتَ صُحْبَتَهُ ثُمَّ فَارَقْتَهُ وَهُوَ عَنْكَ رَاضٍ ثُمَّ صَحِبْتَ صَحَبَتَهُمْ فَأَحْسَنْتَ صُحْبَتَهُمْ وَلَئِنْ فَارَقْتَهُمْ لَتُفَارِقَنَّهُمْ وَهُمْ عَنْكَ رَاضُونَ قَالَ أَمَّا مَا ذَكَرْتَ مِنْ صُحْبَةِ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ وَرِضَاهُ فَإِنَّمَا ذَاكَ مَنٌّ مِنْ اللهِ تَعَالٰـى مَنَّ بِهِ عَلَيَّ وَأَمَّا مَا ذَكَرْتَ مِنْ صُحْبَةِ أَبِـيْ بَكْرٍ وَرِضَاهُ فَإِنَّمَا ذَاكَ مَنٌّ مِنْ اللهِ جَلَّ ذِكْرُهُ مَنَّ بِهِ عَلَيَّ وَأَمَّا مَا تَرَى مِنْ جَزَعِي فَهُوَ مِنْ أَجْلِكَ وَأَجْلِ أَصْحَابِكَ وَاللهِ لَوْ أَنَّ لِي طِلَاعَ الْأَرْضِ ذَهَبًا لَافْتَدَيْتُ بِهِ مِنْ عَذَابِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ قَبْلَ أَنْ أَرَاهُ
পরিচ্ছেদঃ উমার (রাঃ) এর মাহাত্ম্য
(২৮৪১) আনাস (রাঃ) বলেন, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদ পাহাড়ে চড়লেন। সাথে ছিল আবূ বকর, উমার ও উসমান। উহুদ কেঁপে উঠল। তিনি নিজ পা দিয়ে আঘাত ক’রে বললেন, স্থির হও উহুদ! তোমার উপর নবী, সিদ্দীক ও দুই শহীদ ছাড়া অন্য কেউ নেই।
عَنْ أَنَسٍ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ صَعِدَ النَّبِيُّ ﷺ إِلٰـى أُحُدٍ وَمَعَهُ أَبُو بَكْرٍ وَعُمَرُ وَعُثْمَانُ، فَرَجَفَ بِهِمْ فَضَرَبَهُ بِرِجْلِهِ قَالَ اثْبُتْ أُحُدُ فَمَا عَلَيْكَ إِلَّا نَبِيٌّ أَوْ صِدِّيقٌ أَوْ شَهِيدَانِ
পরিচ্ছেদঃ উমার (রাঃ) এর মাহাত্ম্য
(২৮৪২) জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি স্বপ্নে দেখেছি, আমি জান্নাতে প্রবেশ করলাম। দেখলাম সেখানে আবূ তালহার স্ত্রী রুমাইসা রয়েছে। অতঃপর আমি পদধ্বনি শুনতে পেলাম। আমি বললাম, ’এটা কে?’ (কেউ) বলল, ’এটা বিলাল।’ আর একটি প্রাসাদ দেখলাম, তার আঙ্গিনায় রয়েছে একটি কিশোরী। আমি বললাম, ’এটা কার?’ বলল, ’উমারের।’ আমি ইচ্ছা হল তাতে প্রবেশ করে দেখি। কিন্তু তোমার ঈর্ষার কথা মনে করলাম।
এ কথা শুনে উমার (রাঃ) বললেন, ’আমার বাপণ্ডমা আপনার জন্য কুরবান হোক হে আল্লাহর রসূল! আমি আপনার প্রতিও ঈর্ষা করব কি?’
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ النَّبِـيُّ ﷺ رَأَيْتُنِي دَخَلْتُ الْجَنَّةَ فَإِذَا أَنَا بِالرُّمَيْصَاءِ امْرَأَةِ أَبِـيْ طَلْحَةَ وَسَمِعْتُ خَشَفَةً فَقُلْتُ مَنْ هٰذَا؟ فَقَالَ هٰذَا بِلَالٌ وَرَأَيْتُ قَصْرًا بِفِنَائِهِ جَارِيَةٌ فَقُلْتُ لِمَنْ هٰذَا؟ فَقَالَ لِعُمَرَ فَأَرَدْتُ أَنْ أَدْخُلَهُ فَأَنْظُرَ إِلَيْهِ فَذَكَرْتُ غَيْرَتَكَ فَقَالَ عُمَرُ: بِأَبِي وَأُمِّي يَا رَسُوْلَ اللهِ أَعَلَيْكَ أَغَارُ؟
পরিচ্ছেদঃ উমার (রাঃ) এর মাহাত্ম্য
(২৮৪৩) বুরাইদা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, একদা কোন যুদ্ধ থেকে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিজয়ী হয়ে ফিরে এলে একটি কৃষ্ণকায় দাসী এসে বলল, ’(হে আল্লাহর রসূল!) আমি নযর মেনেছিলাম যে, আপনি ভালভাবে ফিরে এলে আমি আপনার কাছে দুফ বাজাব।’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি যদি নযর মেনে থাকো, তাহলে তা পূরা কর। আর না মেনে থাকলে তা করো না। সুতরাং দাসীটি দুফ বাজাতে লাগল। ইতিমধ্যে আবূ বকর প্রবেশ করলেন। তখনও সে বাজাতে থাকল। অন্য কেউ এসে উপস্থিত হলেও সে বাজাতে থাকল। অবশেষে উমার প্রবেশ করলে দুফটাকে সে নিজ পিছনে লুকিয়ে কাপড়ে মুখও লুকাতে লাগল। তা দেখে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উমারের উদ্দেশ্যে বললেন, শয়তানও তোমাকে ভয় পায় হে উমার!
عن بُرَيْدَةَ أَنَّ أَمَةً سَوْدَاءَ أَتَتْ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ وَقَدْ رَجَعَ مِنْ بَعْضِ مَغَازِيهِ فَقَالَتْ إِنِّي كُنْتُ نَذَرْتُ إِنْ رَدَّكَ اللهُ صَالِحًا أَنْ أَضْرِبَ عِنْدَكَ بِالدُّفِّ قَالَ إِنْ كُنْتِ فَعَلْتِ فَافْعَلِي وَإِنْ كُنْتِ لَمْ تَفْعَلِي فَلَا تَفْعَلِي فَضَرَبَتْ فَدَخَلَ أَبُو بَكْرٍ وَهِيَ تَضْرِبُ وَدَخَلَ غَيْرُهُ وَهِيَ تَضْرِبُ ثُمَّ دَخَلَ عُمَرُ قَالَ فَجَعَلَتْ دُفَّهَا خَلْفَهَا وَهِيَ مُقَنَّعَةٌ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِنَّ الشَّيْطَانَ لَيَفْرَقُ مِنْكَ يَا عُمَرُ