পরিচ্ছেদঃ ১৬. প্রথম অনুচ্ছেদ - দানসমূহ

الْعَطَايَا শব্দটি عطية এর বহুবচন, উদ্দেশ্য শাসনকর্তাদের দান, তাদের অনুদান। গাযালী (রহঃ) ’’মিনহাজুল আবিদীন’’ গ্রন্থে বলেন, আপনি বলুন : এ সময়ে আপনি বাদশাহদের পুরস্কার গ্রহণে কি বলবেন? তাহলে জেনে রাখুন! এ ব্যাপারে বিদ্বানগণ মতানৈক্য করেছে। এক সম্প্রদায় বলেছে, প্রত্যেক ঐ সকল বস্তু যে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায় না যে, তা হারাম, ব্যক্তির পক্ষে তা গ্রহণ করার সুযোগ আছে। অন্যরা বলেন, যে বস্তুর ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায় না যে, তা হালাল তা গ্রহণ না করাই উত্তম। কেননা এ যুগে অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাদশাহদের সম্প্রদায়ের সাথে হারাম মিশে আছে এবং হালাল তাদের হাতে নেই, আর থাকলে অতি নগণ্য। অন্য সম্প্রদায় বলেন, বাদশাহদের অনুদানের ব্যাপারে যখন নিশ্চিত হওয়া যাবে না যে, তা হারাম, তখন তা ধনী, দরিদ্র সকলের জন্য বৈধ হবে, দায়ভার কেবল দাতার ওপর বর্তাবে। তারা বলে কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসকান্দারিয়ার বাদশাহ মুকাওকিসের উপটৌকন গ্রহণ করেছিলেন, আল্লাহ তা’আলার أَكَّالُونَ لِلسُّحْتِ ’’তারা হারাম খেতে অভ্যস্ত’’- (সূরা আল মায়িদাহ্ ৫ : ৪২) এ বাণী সত্ত্বেও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইয়াহূদীদের থেকে ধার গ্রহণ করেছিলেন। তারা বলেন, নিঃসন্দেহে সাহাবীদের একটি দল অন্ধকারাচ্ছন্ন দিনগুলো পেয়েছে। এমতাবস্থায় তারা তাদের থেকে ধার গ্রহণ করেছে, তাদের মাঝে রয়েছে আবূ হুরায়রাহ্, ইবনু ’আব্বাস, ইবনু ’উমার এবং আরো অনেকে। আর একদল বলেন, তাদের সম্পদ হতে সামান্যতম হালাল হবে না, ধনীর জন্যও না দরিদ্রের জন্যও না, কেননা তারা অন্যায় অবিচারের মাধ্যমে চিহ্নিত। তাদের সম্পদের অধিকাংশ হারাম, আর হুকুম অধিকাংশের জন্যই বর্তায়।

সুতরাং এ থেকে সে যেন আবশ্যকীয়ভাবে বিরত থাকে। অন্য এক দল বলেন, যে বস্তুর ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায় না যে, তা হারাম তা শুধুমাত্র দরিদ্রের জন্য হালাল। তবে দরিদ্র যদি জানে যে, তা হুবহু ছিনতাই করা সম্পদ, তখন সে সম্পদ একমাত্র মালিকের নিকট ফেরত দেয়া ছাড়া তার পক্ষে তা গ্রহণ করার সুযোগ নেই। বাদশাহর সম্পদ হতে গ্রহণ করাতে দরিদ্রের ওপর সংকীর্ণতা নেই, অতঃপর ফাকীরকে যদি দান করা হয়, তাহলে তা নিঃসন্দেহে দরিদ্রের পক্ষে গ্রহণ করার অধিকার রয়েছে। আর যদি তা মালে ফাই অথবা ভূমিকর অথবা উশর হয়, তাহলে সেখানে ফাকীরের অধিকার থাকবে অনুরূপভাবে বিদ্বানগণের জন্য। ’আলী বিন আবূ ত্বালিব বলেন, যে ব্যক্তি আনুগত্যের সাথে ইসলামে প্রবেশ করবে এবং প্রকাশ্য কুরআন পাঠ করবে, তার জন্য প্রত্যেক বছর বায়তুল মালে দু’শত দিরহাম থাকবে। এক বর্ণনাতে দু’শত দীনারের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। যদি দুনিয়াতে তা গ্রহণ না করে তাহলে পরকালে তা গ্রহণ করবে। আর বিষয়টি যখন এমনই তখন ফাকীর এবং বিদ্বান নিজ অধিকার হতে গ্রহণ করবে। তারা বলেন, সম্পদ যখন ছিনতাই করা সম্পদের সাথে মিশ্রিত হবে, তাকে আলাদা করা সম্ভব হবে না অথবা সম্পদ যখন ছিনতাই করা সম্পদ হবে তা মালিকের কাছে এবং মালিকের উত্তরাধিকারীদের কাছে ফিরিয়ে দেয়া সম্ভব না হবে, তখন বাদশাহর পক্ষে তা দান করে দেয়া ছাড়া তা হতে মুক্তি পাওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না। আল্লাহ এমন নন যে, তাকে দরিদ্রের ওপর দান করতে আদেশ করবেন এবং দরিদ্রকে তা গ্রহণ করতে নিষেধ করবেন অথবা তা গ্রহণ করতে অনুমতি দিবেন অথচ তা তার ওপর হারাম। সুতরাং দরিদ্রের তা গ্রহণের সুযোগ আছে, তবে যদি হুবহু ছিনতাই করা এবং হারাম সম্পদ হয় তাহলে তার জন্য তা গ্রহণ করার সুযোগ থাকবে না। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


৩০০৮-[১] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। ’উমার খায়বার যুদ্ধে (গনীমাতের) একখন্ড জমিন লাভ করলেন। অতঃপর তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি খায়বারে একখন্ড জমিন লাভ করেছি, তার চেয়ে উত্তম সম্পদ আমি আর কক্ষনো লাভ করিনি। হে আল্লাহর রসূল! এখন আমাকে এতে কি করতে বলেন? তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আপনি যদি চান তবে এর মূলস্বত্ব রক্ষা করে লভ্যাংশ দান করে দিতে পারেন। তাই ’উমার তা এরূপে দান করলেন যে, তার মূল বিক্রি করা যাবে না, হেবা (দান) করা যাবে না এবং তাতে উত্তরাধিকার প্রবর্তিত হবে না। তা (হতে উৎপাদিত ফল-ফসল) দান করা হবে অভাবগ্রস্তদের মাঝে, আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে, দাসমুক্তকরণে, আল্লাহর পথে (জিহাদে), মুসাফিরদের জন্য ও মেহমানদের জন্য। যে উক্ত জমিনের মুতাওয়াল্লী হবে সে জমা না করে তা হতে ন্যায্যভাবে খেতে বা (নিজ পরিবারকে) খাওয়াতে পারবে। এতে কোনো দোষ নেই। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْعَطَايَا

عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا أَنَّ عُمَرَ أَصَابَ أَرْضًا بِخَيْبَرَ فَأَتَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي أَصَبْتُ أَرْضًا بِخَيْبَرَ لَمْ أُصِبْ مَالًا قَطُّ أَنْفَسَ عِنْدِي مِنْهُ فَمَا تَأْمُرُنِي بِهِ؟ قَالَ: «إِنْ شِئْتَ حَبَسْتَ أَصْلَهَا وَتَصَدَّقْتَ بِهَا» . فَتَصَدَّقَ بِهَا عُمَرُ: إِنَّهُ لَا يُبَاعُ أَصْلُهَا وَلَا يُوهب وَلَا يُورث وَتصدق بهَا فِي الْفُقَرَاءِ وَفِي الْقُرْبَى وَفِي الرِّقَابِ وَفِي سَبِيلِ اللَّهِ وَابْنِ السَّبِيلِ وَالضَّيْفِ لَا جُنَاحَ عَلَى مَنْ وَلِيَهَا أَنْ يَأْكُلَ مِنْهَا بِالْمَعْرُوفِ أَوْ يُطْعِمَ غَيْرَ مُتَمَوِّلٍ قَالَ ابْنُ سِيرِينَ: غير متأثل مَالا

عن ابن عمر رضي الله عنهما ان عمر اصاب ارضا بخيبر فاتى النبي صلى الله عليه وسلم فقال: يا رسول الله اني اصبت ارضا بخيبر لم اصب مالا قط انفس عندي منه فما تامرني به؟ قال: «ان شىت حبست اصلها وتصدقت بها» . فتصدق بها عمر: انه لا يباع اصلها ولا يوهب ولا يورث وتصدق بها في الفقراء وفي القربى وفي الرقاب وفي سبيل الله وابن السبيل والضيف لا جناح على من وليها ان ياكل منها بالمعروف او يطعم غير متمول قال ابن سيرين: غير متاثل مالا

ব্যাখ্যা: (فَمَا تَأْمُرُنِىْ بِه؟) অর্থাৎ- এ ব্যাপারে আপনি আমাকে কি নির্দেশ করছেন? কেননা আমি তা আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করতে ইচ্ছা করেছি, এমবতাবস্থায় আমি জানি না কোন্ পন্থায় তা আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করব।

(وَتَصَدَّقْتَ بِهَا) অর্থাৎ- সে জমির আয়, অর্জিত শস্যদানা ও ফলফলাদি দান কর। (لَا يُبَاعُ أَصْلُهَا وَلَا يُوْهَبُ وَلَا يُوْرَثُ وَتُصُدِّقَ بِهَا فِى الْفُقَرَاءِ) অর্থাৎ- সে জমির আয় হতে অর্জিত বস্তু দরিদ্রদের মাঝে দান করে দিতে হবে, তথা মদীনার নিঃস্বদের মাঝে অথবা আহলে সুফ্ফার মাঝে কিন্তু সে জমি বিক্রয় ও দান করা নিষিদ্ধ।

(وَاٰتِ ذَا الْقُرْبٰى) উদ্দেশ্য রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটবর্তী, অথবা তাঁর নিজের নিকটবর্তী, তবে বাহ্যিক দিক হলো- তাদের ধনী, দরিদ্র সকলে এ হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। (وَفِى الرِّقَابِ) অর্থাৎ- ঐ সকল দাস যারা তাদের ঋণ আদায়ের ব্যাপারে চুক্তিবদ্ধ এবং এর বিনিময়ে দাসদেরকে ক্রয় করে তাদেরকে মুক্ত করে দেয়াও উদ্দেশ্য হতে পারে। (وَفِىْ سَبِيلِ اللّٰهِ) নিবেদিত যোদ্ধা বা হাজী (وَابْنِ السَّبِيلِ) মুসাফির ব্যক্তি, যদিও তিনি নিজ দেশে ধনী হন।

(قَالَ ابْنُ سِيرِينَ - رَحِمَهُ اللّٰهُ تَعَالٰى - : غَيْرَ مُتَأَثِّلٍ مَالًا) অর্থাৎ- তা থেকে নিজের জন্য কোনো পুঁজি জমাবেন না। নববী (রহঃ) বলেন, এতে ওয়াক্ফের মৌলিকভাবে বিশুদ্ধতার ব্যাপারে দলীল আছে। আর তা জাহিলী কালিমাসমূহের বিরোধী। আর মুসলিমগণ ঐ ব্যাপারে একমত। এতে আরও আছে- ওয়াক্ফ করা বস্তু বিক্রি করা যায় না, দান করা যায় না এবং তার উত্তাধিকারীও হওয়া যায় না। তাতে কেবল ওয়াকফকারীর শর্তানুপাতে উপকার লাভ করা যায়। এতে ওয়াকফকারীর শর্তসমূহ বিশুদ্ধ। আরও রয়েছে ওয়াকফের মর্যাদা আর তা হলো চলমান দান। আরো রয়েছে ঐ বস্তু দান করা শ্রেষ্ঠ যা ব্যক্তি ভালোবাসে। ‘উমার (রাঃ)-এর প্রকাশ্য শ্রেষ্ঠত্ব, বিভিন্ন বিষয়ে কল্যাণকামী ও শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারীর পরামর্শের শ্রেষ্ঠত্ব, কল্যাণের পন্থাসমূহ। এতে আরও আছে, খায়বার অঞ্চল বলপূর্বক বিজয় করা হয়েছিল এবং বিজয়ীরা তার মালিক হয়েছিল, তা বণ্টন করেছিল, তাদের অংশসমূহের উপর তাদের মালিকানা অব্যাহত ছিল। আরও আছে আত্মীয়তার সম্পর্ক ঠিক রাখা এবং তাদের জন্য ওয়াকফ করার মর্যাদা। (মিরকাতুল মাফাতীহ, শারহে মুসলিম ১১/১২শ খন্ড, হাঃ ১৬৩৩)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ১৬. প্রথম অনুচ্ছেদ - দানসমূহ

৩০০৯-[২] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ’উমরা বা ভোগ দখলস্বত্ব দান করা জায়িয। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْعَطَايَا

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «الْعُمْرَى جَائِزَةٌ»

وعن ابي هريرة عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: «العمرى جاىزة»

ব্যাখ্যা: ইমাম বুখারী তাঁর বুখারীতে «الرقبى» শব্দ দ্বারা অধ্যায় বেঁধেছেন এবং তার অধীনে «العمرى» জীবনস্বত্বদান সম্পর্কিত দু’টি হাদীস নিয়েছেন, যেমন তিনি মনে করছেন «العمرى» এবং «الرقبى» উভয়ে প্রতিশব্দ। আর এটা জুমহূরের অভিমত। ইমাম মালিক, আবূ হানীফাহ্ এবং মুহাম্মাদ «الرقبى»-কে নিষেধ করেছেন। আর আবূ ইউসুফ জুমহূরের অনুসরণ করেছেন। আর নাসায়ী বিশুদ্ধ সানাদে ইবনু ‘আব্বাস কর্তৃক মাওকূফ সূত্রে বর্ণনা করেন, (الْعُمْرٰى وَالرُّقْبٰى سَوَاءٌ) অর্থাৎ-‘উমরা এবং রুকবা সমান। নাসায়ীতে ইসরাঈল-এর সূত্রে বর্ণিত আছে, তিনি ‘আব্দুল কারীম হতে, আর তিনি ‘আত্বা হতে বর্ণনা করেন। নিশ্চয় ‘আত্বা বলেন, ‘‘আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘উমরা এবং রুকবা করতে নিষেধ করেছেন, আমি বললাম, রুকবা কি? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, কোনো ব্যক্তি আরেক ব্যক্তিকে বলবে, এটা তোমার জন্য তোমার বেঁচে থাকা পর্যন্ত। যদি তোমরা এমন কর তাহলে তা বৈধ। এভাবে তিনি একে মুরসালরূপে বর্ণনা করেছেন, তিনি একে ইবনু জুরায়জ-এর সানাদেও বর্ণনা করেছেন, তিনি ‘আত্বা হতে, তিনি হাবীব বিন আবূ সাবিত হতে, তিনি ইবনু ‘উমার হতে মারফূ‘ সূত্রে বর্ণনা করেন, ‘‘কোনো ‘উমরা নেই, কোনো রুকবা নেই, যে ব্যক্তি কাউকে কোনো বস্তু ‘উমরা এবং রুকবা হিসেবে দিবে সেটা ঐ ব্যক্তির জন্য তার জীবদ্দশাতে এবং তার মৃত্যুর পর মালিকানা সাব্যস্ত হবে।’’ এর বর্ণনাকারীগণ নির্ভরশীল তবে হাবীব এ হাদীসটি ইবনু ‘উমার হতে শ্রবণের ক্ষেত্রে মতানৈক্য করা হয়েছে।

অতঃপর নাসায়ী এক সানাদে একে স্পষ্ট করে দিয়েছেন, অন্য সানাদে এর অর্থ এসেছে, মা’ওয়ার্দী (রহঃ) বলেন, ‘‘নিষেধাজ্ঞা কি দিক নির্দেশনা করছে?’’ এ ব্যাপারে তারা মতানৈক্য করেছে। স্পষ্ট হলো- নিষেধাজ্ঞা হুকুম অভিমুখী হচ্ছে। একমতে বলা হয়েছে, জাহিলী শব্দের এবং রহিত হওয়া হুকুমের মুখাপেক্ষী হচ্ছে। আর একমতে বলা হয়েছে- যা থেকে নিষেধ করা হয়েছে তা সম্পাদন করা যতক্ষণ পর্যন্ত উপকারে আসবে ততক্ষণ পর্যন্ত ‘‘নাহী’’ তার নিষেধাজ্ঞার বিশুদ্ধতাকে বাধা দিবে। পক্ষান্তরে যা থেকে নিষেধ করা হয়েছে তার বিশুদ্ধতা তথা তাতে যখন জড়িত হওয়া ব্যক্তির ওপর ক্ষতিকারক হবে, তখন ‘‘নাহী’’ তার অর্থাৎ নিষেধাজ্ঞার বিশুদ্ধতাকে বাধা দিবে না। যেমন ঋতুর সময়ে তালাক দেয়া, আর জীবনস্বত্ব দান করার বিশুদ্ধতা জীবনস্বত্ব দানকারীর ওপর ক্ষতিকারক, কেননা বিনিময় ব্যতিরেকে তার মালিকানা দূর হয়ে যায়। এ সকল কিছু ঐ ক্ষেত্রে যখন নিষেধাজ্ঞাকে হারাম অর্থের উপর চাপিয়ে দেয়া হবে। অতঃপর নিষেধাজ্ঞাকে যদি মাকরূহ অর্থের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়, তাহলে এ ব্যাপারে প্রমাণ বহন করবে না, স্পষ্ট আলামাত হলো, এর হুকুম বর্ণনায় হাদীসের শেষে যা বর্ণনা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে তাঁর (الْعُمْرٰى جَائِزَةٌ) ‘‘জীবনস্বত্ব দান করা বৈধ’’ এ উক্তি স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তিরমিযীতে আবুয্ যুবায়র-এর সানাদে আছে, তিনি জাবির থেকে বর্ণনা করেন, জাবির একে মারফূ‘ সূত্রে বর্ণনা করেছেন। (ফাতহুল বারী ৫ম খন্ড, হাঃ ২৬২৬)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ১৬. প্রথম অনুচ্ছেদ - দানসমূহ

৩০১০-[৩] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয় ’উমরা বা জীবনস্বত্ব যাকে দেয়া হয়েছে, তার ওয়ারিসগণই তা উত্তরাধিকাররূপে পাবে। (মুসলিম)[1]

بَابُ الْعَطَايَا

وَعَنْ جَابِرٌ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِنَّ الْعُمْرَى مِيرَاثٌ لِأَهْلِهَا» . رَوَاهُ مُسلم

وعن جابر عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: «ان العمرى ميراث لاهلها» . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তি, ‘‘যে কোনো ব্যক্তি জীবনস্বত্ব দান করবে, তাহলে সে জীবনস্বত্ব দান তার জন্য এবং তার পরবর্তীর জন্য, কেননা জীবনস্বত্ব যাকে দান করা হয়েছে, তা যে দান করেছে তার কাছে আর ফিরে আসবে না, কেননা সে এমন এক দান করেছে যাতে উত্তরাধিকারী পতিত হয়েছে।’’ অন্য বর্ণনাতে আছে- ‘‘যে ব্যক্তি জীবনস্বত্ব দান করবে, সেক্ষেত্রে জীবনস্বত্ব দান তার জন্য এবং তার পরবর্তীর জন্য ..... শেষ পর্যন্ত। অন্য বর্ণনায় আছে- ‘‘জাবির বলেন, জীবনস্বত্ব দান কেবল আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আগত) কথাটি বলার মাধ্যমে বৈধ করেছেন; আর ত হলো, এটা তোমার জন্য ও তোমার পরবর্তীদের জন্য। আর যখন বলবে, এটা তোমার বেঁচে থাকা পর্যন্ত তোমার জন্য, তাহলে নিশ্চয় তা তার মালিকের দিকে প্রত্যাবর্তন করবে। জাবির হতে অন্য বর্ণনাতে এসেছে- ‘‘নিশ্চয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘‘জীবনস্বত্ব দান ঐ ব্যক্তির জন্য যাকে তা দান করা হয়েছে।’’ অন্য বর্ণনাতে এসেছে, ‘‘জীবনস্বত্ব দান ঐ ব্যক্তির জন্য বৈধ।’’ অন্য বর্ণনাতে আছে, ‘‘জীবনস্বত্ব দান উত্তবাধিকারীর।’’ আমাদের সাথীগণ এবং অন্যান্য বিদ্বানগণ বলেন, জীবনস্বত্ব দানের উদাহরণ এরূপ: যেমন কোনো ব্যক্তি বলল, আমি তোমাকে এ বাড়ীটি জীবনস্বত্ব স্বরূপ দান করলাম। অথবা একে আমি তোমার বয়স পর্যন্ত, অথবা তোমার জীবন পর্যন্ত অথবা তোমার জীবন-যাপন করা পর্যন্ত অথবা তোমার জীবিত থাকা পর্যন্ত অথবা তোমার অবশিষ্ট থাকা পর্যন্ত তোমার জন্য নির্ধারণ করে দিলাম অথবা এমন আরো শব্দ বলা যা পূর্বের বর্ণিত শব্দের অর্থ প্রদান করে।

(العقب) এর দ্বারা উদ্দেশ্য মানুষের সন্তান এবং তাদের বংশধর।

আমাদের সাথীবর্গ বলেন, (الْعُمْرٰى) এর তিন অবস্থা।

প্রথমতঃ ‘‘আমি তোমাকে এ বাড়িটি দান করলাম, অতঃপর তুমি যখন মারা যাবে তখন তা তোমার উত্তরাধিকারী, অথবা পরবর্তীদের জন্য সাব্যস্ত হবে।’’ এ কথা বলা বিনা মতানৈক্যে এটা বিশুদ্ধ হবে। এ শব্দের মাধ্যমে তাকে এ বাড়ীটির তদারকির মালিক বানিয়ে দেয়া হবে, আর তা হলো দান তবে দীর্ঘ ইবারতের মাধ্যমে। অতঃপর যাকে দেয়া হয়েছে সে যখন মারা যাবে তখন বাড়ীটি তার উত্তরাধিকারীদের বলে গণ্য হবে। আর মৃত ব্যক্তির যদি উত্তরাধিকারী না থাকে, তাহলে বায়তুল মালের জন্য। কোনো অবস্থাতেই তা দানকারীর দিকে ফিরে আসবে না, এটা ইমাম মালিক-এর মতের খেলাফ।

দ্বিতীয়তঃ ‘‘আমি একে তোমার বয়স পর্যন্ত তোমার জন্য করে দিলাম।’’ এ কথার উপর সীমাবদ্ধ থাকা। এ ছাড়া অন্য কথা না বলা। এটি বিশুদ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে ইমাম শাফি‘ঈ-এর দু’টি মত আছে। সে দু’টি মতের মাঝে সর্বাধিক বিশুদ্ধ হলো- নতুন মত, তা বিশুদ্ধ হওয়া। এর হুকুম প্রথম অবস্থার হুকুম। আর অপরটি হলো- প্রবীণ মত, নিঃসন্দেহে তা বাতিল।

আমাদের কতক সাথীবর্গ বলেন, প্রবীণ মত হলো- নিশ্চয় বাড়ীটি যাকে জীবনস্বত্ব স্বরূপ দান করা হয়েছে, তার জীবিত থাকা পর্যন্ত বাড়ীটি তার জন্য হবে। অতঃপর সে যখন মারা যাবে তখন বাড়ীটি দানকারীর কাছে অথবা দানকারীর উত্তরাধিকারীদের কাছে ফিরে আসবে। কেননা বাড়ীটির সাথে সে তার জীবিত থাকাকে নির্দিষ্ট করেছে। আবার কেউ বলেন, প্রবীণ মত হলো- বাড়ীটি এক প্রকারের ধারস্বরূপ। দাতা যখন ইচ্ছা করবে তখন তা ফিরিয়ে নিবে। অতঃপর দাতা যখন মারা যাবে, তখন বাড়ীটি দাতার উত্তরাধিকারীদের কাছে ফিরে আসবে।

তৃতীয়তঃ বাড়ীটি আমি তোমার বয়স পর্যন্ত নির্দিষ্ট করলাম, অতঃপর তুমি যখন মৃত্যুবরণ করবে তখন তা আমার কাছে ফিরে আসবে। আর আমি যদি মৃত্যুবরণ করি তাহলে তা আমার উত্তরাধিকাদের কাছে ফিরে আসবে। এ অবস্থায় বিশুদ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের সাথীবর্গের কাছে মতানৈক্য রয়েছে, তাদের কেউ একে বাতিল সাব্যস্ত করেছে। তাদের কাছে সর্বাধিক বিশুদ্ধ হলো, এ অবস্থার বিশুদ্ধ হওয়া এবং এর হুকুম প্রথম অবস্থার হুকুম। তারা সাধারণ বিশুদ্ধ হাদীসগুলোর উপর নির্ভর করেছে। যেমন- (الْعُمْرٰى جَائِزَةٌ) জীবনস্বত্ব দান বৈধ এবং এর মাধ্যমে তার বিশৃঙ্খল শর্তসমূহের ক্বিয়াস হতে সরে গেছে। (শারহে মুসলিম ১১/১২শ খন্ড, হাঃ ১৬২৫)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ১৬. প্রথম অনুচ্ছেদ - দানসমূহ

৩০১১-[৪] উক্ত রাবী [জাবির (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তিকে জীবনস্বত্ব দেয়া হয় তা তার ও তার উত্তরাধিকারীদের জন্য, যাকে দেয়া হয়েছে সেটা তারই হয় এবং যে দিয়েছে তার দিকে (পুনরায়) ফিরে আসে না। কারণ সে এমনভাবে দান করেছে যাতে (গ্রহীতার) উত্তরাধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْعَطَايَا

وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَيُّمَا رَجُلٍ أُعْمِرَ عمرى لَهُ ولعفبه فَإِنَّهَا الَّذِي أعطيها لَا ترجع إِلَى الَّذِي أَعْطَاهَا لِأَنَّهُ أَعْطَى عَطَاءً وَقَعَتْ فِيهِ الْمَوَارِيث»

وعنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ايما رجل اعمر عمرى له ولعفبه فانها الذي اعطيها لا ترجع الى الذي اعطاها لانه اعطى عطاء وقعت فيه المواريث»

ব্যাখ্যা: সহীহ মুসলিমে আবূ সালামাহ্ হতে যুহরীর বর্ণনাতে আছে- ‘‘যে কোনো ব্যক্তিকে জীবনস্বত্ব দান করা হবে তা তার জন্য এবং তার পরবর্তীদের জন্য। কেননা জীবনস্বত্ব দান ঐ ব্যক্তির জন্য সাব্যস্ত হয় যাকে তা দান করা হয়েছ, যে তা দান করেছে তার কাছে তা ফিরে আসবে না, কেননা সে এমন দান করেছে যাতে উত্তরাধিকারিত্ব সংঘটিত হয়েছে।’’ এ শব্দ যুহরী হতে মালিক-এর সূত্রে বর্ণিত আছে, এতে অনুরূপ যুহরী হতে ইবনু জুরায়জ-এর সূত্রে আছে আর এতে যুহরী হতে লায়স-এর সানাদে আছে, আর ‘‘তাতে তার হক আছে এবং তা যাকে জীবনস্বত্ব দান করা হয়েছে তার জন্য এবং তার পরবর্তীদের জন্য।’’ এ কথাটি মাকতূ‘ বা বিচ্ছিন্ন এবং তার শেষে কোনো কারণ উল্লেখ করেননি। মুসলিমে যুহরী হতে মা‘মার-এর সূত্রে আছে, ‘‘জীবনস্বত্ব দান কেবল এটা আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগত কথা বলার মাধ্যমে বৈধ করেছেন আর তা হলো- এটা তোমার জন্য এবং তোমার পরবর্তীদের জন্য। অতঃপর যখন ব্যক্তি বলবে, ‘‘তোমার জীবন-যাপন পর্যন্ত এটা তোমার জন্য’’ তখন তা মালিকের দিকে ফিরে আসবে। মা‘মার বলেনঃ যুহরী এ ব্যাপারে ফতোয়া দিত, আর তিনিও কারণ উল্লেখ করেননি। (ফাতহুল বারী ৫ম খন্ড, হাঃ ২৬২৫)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ১৬. প্রথম অনুচ্ছেদ - দানসমূহ

৩০১২-[৫] উক্ত রাবী [জাবির (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবনস্বত্বের অনুমতি দিয়েছেন এভাবে যে, দাতা এরূপ বলবে- ’এটা তোমার ও তোমার উত্তরাধিকারীদের জন্য’; কিন্তু যে এভাবে বলবে, ’এটা তোমার জন্য যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি বেঁচে থাকবে’, তখন তা তার দাতার কাছে ফিরে যাবে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْعَطَايَا

وَعَنْهُ قَالَ: إِنَّمَا الْعُمْرَى الَّتِي أَجَازَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِن يَقُول: هِيَ لعقبك فَأَمَّا إِذَا قَالَ: هِيَ لَكَ مَا عِشْتَ فَإِنَّهَا ترجع إِلَى صَاحبهَا

وعنه قال: انما العمرى التي اجاز رسول الله صلى الله عليه وسلم ان يقول: هي لعقبك فاما اذا قال: هي لك ما عشت فانها ترجع الى صاحبها

ব্যাখ্যা: (إِنَّمَا الْعُمْرَى الَّتِىْ أَجَازَ) ফাতহুল ওয়াদূদ গ্রন্থকার বলেন, এটা জাবির বিন ‘আব্দুল্লাহ-এর ইজতিহাদ। সম্ভবত তিনি এটা (أَيّمَا رَجُل أَعْمَرَ رَجُلًا عُمْرٰى لَه) অর্থাৎ- ‘‘যে কোনো ব্যক্তিকে জীবনস্বত্ব দান করা হবে তা তার জন্য এবং তার পরবর্তীর জন্য’’। এ হাদীসের অর্থ হতে গ্রহণ করেছেন। আর ইজতিহাদ কখনো ভাষ্যের বিরোধিতা করতে পারে না। আর ইজতিহাদে কোনো দলীল নেই। সুতরাং এর মাধ্যমে সাধারণ হাদীসগুলো বিশেষিত হবে না। (মিরকাতুল মাফাতীহ; ‘আওনুল মা‘বূদ ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩৫৫২)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৫ পর্যন্ত, সর্বমোট ৫ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে