পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

২৫২০-[১৬] ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে মানবজাতি! আল্লাহ তা’আলা তোমাদের ওপর হজ্জ/হজ ফরয করেছেন। এটা শুনে আক্বরা’ ইবনু হাবিস দাঁড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! এটা (হজ্জ/হজ) কি প্রতি বছর? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, যদি আমি বলতাম হ্যাঁ, তবে তা (প্রত্যেক বছর) ফরয হয়ে যেতো। আর যদি ফরয হয়ে যেতো, তোমরা তা সম্পাদন করতে না এবং করতে সমর্থও হতে না। হজ্জ/হজ (জীবনে ফরয) একবারই। যে বেশী করলো সে নফল করলো। (আহমাদ, নাসায়ী, ও দারিমী)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ اللَّهَ كَتَبَ عَلَيْكُمُ الْحَجَّ» . فَقَامَ الْأَقْرَعُ بْنُ حَابِسٍ فَقَالَ: أَفِي كُلِّ عَامٍ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: لَوْ قُلْتُهَا: نَعَمْ لَوَجَبَتْ وَلَوْ وَجَبَتْ لَمْ تَعْمَلُوا بِهَا وَلَمْ تَسْتَطِيعُوا وَالْحَجُّ مَرَّةٌ فَمَنْ زَادَ فَتَطَوُّعٌ . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالنَّسَائِيّ والدارمي

وعن ابن عباس قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «يا ايها الناس ان الله كتب عليكم الحج» . فقام الاقرع بن حابس فقال: افي كل عام يا رسول الله؟ قال: لو قلتها: نعم لوجبت ولو وجبت لم تعملوا بها ولم تستطيعوا والحج مرة فمن زاد فتطوع . رواه احمد والنساىي والدارمي

ব্যাখ্যা: (أَفِىْ كُلِّ عَامٍ) প্রতি বৎসরই হজ্জ/হজ করা কি ফরয? যেমন সওম এবং যাকাত প্রতি বৎসরই ফরয।

(لَوْ قُلْتُهَا: نَعَمْ لَوَجَبَتْ) আমি যদি বলতাম, হ্যাঁ, তবে তা প্রতি বৎসরের জন্যই ফরয হয়ে যেত। উল্লেখ্য যে, হাদীসটি মুসনাদ আহমাদে আট জায়গায় বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু কোন স্থানেই (لَوْ قُلْتُهَا: نَعَمْ) এ শব্দে বর্ণিত হয়নি। বরং প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে (১ম খণ্ড, ২৫৫ ও ২৯০-২৯১ পৃঃ) (لَوْ قُلْتُهَا: لَوَجَبَتْ) শব্দে বর্ণিত হয়েছে। সপ্তম স্থানে (১ম খণ্ড, ৩৭১ পৃঃ) ও অষ্টম স্থানে (১ম খণ্ড, ৩৭২ পৃঃ) (لَوْ قُلْتُ: نَعَمْ) শব্দে, তৃতীয় স্থানে (১ম খণ্ড, ২৯২ পৃঃ) পঞ্চম স্থানে (১ম খণ্ড, ৩২৩ পৃঃ) ও ৬ষ্ঠ স্থানে (১ম খণ্ড, ৩০১ পৃঃ) (لو قلت: كل عام لكان) শব্দে বর্ণিত হয়েছে। অতএব এটি স্পষ্ট যে, মিশকাতের বর্ণনা (لَوْ قُلْتُ: نَعَمْ) শব্দটি সংকলক কর্তৃক ভুল হয়েছে। আল্লাহই ভাল জানেন।

(وَالْحَجُّ مَرَّةٌ) ‘‘হজ্জ/হজ মাত্র একবার’’, অর্থাৎ- হজ্জ/হজ জীবনে মাত্র একবারই ফরয। যে ব্যক্তি এর বেশী করবে তা নফল।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

২৫২১-[১৭] ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ’বায়তুল্লাহ’ পৌঁছার পথের খরচের মালিক হয়েছে অথচ হজ্জ/হজ পালন করেনি সে ইয়াহূদী বা খ্রীস্টান হয়ে মৃত্যুবরণ করুক এতে কিছু যায় আসে না। আর এটা এ কারণে যে, আল্লাহ তা’আলা বলেন, ’’মানুষের জন্য বায়তুল্লাহর হজ্জ/হজ পালন করা ফরয, যে ব্যক্তি ওখানে পৌঁছার সামর্থ্য লাভ করেছে।’’

(তিরমিযী; তিনি বলেছেন, এটি গরীব। এর সনদে কথা আছে। এর এক রাবী হিলাল ইবনু ’আব্দুল্লাহ মাজহূল বা অপরিচিত এবং অপর রাবী হারিস য’ঈফ বা দুর্বল।)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ

وَعَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ مَلَكَ زَادًا وَرَاحِلَةً تُبَلِّغُهُ إِلَى بَيْتِ اللَّهِ وَلَمْ يَحُجَّ فَلَا عَلَيْهِ أَنْ يَمُوتَ يَهُودِيًّا أَوْ نَصْرَانِيًّا وَذَلِكَ أَنَّ اللَّهَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى يَقُولُ: (وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حَجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِليهِ سَبِيلا)
رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ. وَفِي إِسْنَادِهِ مَقَالٌ وَهِلَالُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ مَجْهُولٌ والْحَارث يضعف فِي الحَدِيث

وعن علي رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: من ملك زادا وراحلة تبلغه الى بيت الله ولم يحج فلا عليه ان يموت يهوديا او نصرانيا وذلك ان الله تبارك وتعالى يقول: (ولله على الناس حج البيت من استطاع اليه سبيلا) رواه الترمذي وقال: هذا حديث غريب. وفي اسناده مقال وهلال بن عبد الله مجهول والحارث يضعف في الحديث

ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসে হজ্জ/হজ সম্পাদনে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও যে ব্যক্তি হজ্জ/হজ পালন করে না তাকে ইয়াহূদী ও নাসারার সাথে তুলনা করার কারণ এই যে, ইয়াহূদী এবং নাসারাগণ আহলে কিতাব। কিন্তু তারা আল্লাহর নাযিলকৃত কিতাব তাওরাত, ইঞ্জীলের বিধান মেনে চলে না। অনুরূপ যে ব্যক্তি হজ্জ/হজ করল না সে আল্লাহর কিতাব কুরআনের বিধান অমান্য করল। আল্লাহর কিতাব অমান্য করার ক্ষেত্রে সে ইয়াহূদী ও নাসারাদের সাথে সাদৃশ্য হলো। তাই হজ্জ/হজ পরিত্যাগকারীকে ইয়াহূদী ও নাসারাদের সাথে তুলনা করা হয়েছে। অতএব হাদীসের অর্থ এই যে, হজ্জের সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ্জ/হজ পালন না করে মৃত্যুবরণ করা আর ইয়াহূদী ও নাসারা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা উভয়ই সমান। কারণ উভয়েই আল্লাহর নি‘আমাত অস্বীকারকারী এবং তাঁর নির্দেশ অমান্যকারী।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

২৫২২-[১৮] ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও) হজ্জ/হজ পালন না করে থাকা ইসলামে নেই। (আবূ দাঊদ)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:
لَا صَرُورَةَ فِي الإِسلامِ . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

وعن ابن عباس قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: لا صرورة في الاسلام . رواه ابو داود

ব্যাখ্যা: (صَرُوْرَةٌ) শব্দের অর্থ আবদ্ধ রাখা বা বিরত থাকা। হাদীসে (صَرُوْرَةٌ) শব্দের তিনটি ব্যাখ্যা করা হয়ে থাকে।

(১) যে ব্যক্তি হজ্জ/হজ সম্পাদন করা থেকে নিজেকে বিরত রাখে। অর্থাৎ- কোন মুসলিমের জন্য সামর্থ থাকা সত্ত্বেও হজ্জ/হজ সম্পাদন করা থেকে বিরত থাকবেন। সামর্থ থাকা সত্ত্বেও যে হজ্জ/হজ করল না সে নিজের উপর থেকে কল্যাণকে বিরত রাখল।

(২) যে ব্যক্তি বিবাহ করা থেকে বিরত থেকে নিঃসঙ্গ জীবন-যাপন করল। অর্থাৎ- ইসলামে বিবাহ থেকে বিরত থাকার বিধান নেই।

(৩) হারামে (মক্কার সম্মানিত এলকা) যে ব্যক্তি হত্যা করবে তাকেও হত্যা করা হবে। জাহিলী যুগে কেউ অপরাধ করলে সে অপরাধের দায় থেকে বাঁচার জন্য হারামে আশ্রয় নিত। ইসলাম এ ধরনের কৌশল গ্রহণ করা বাতিল করে দিয়েছে। অতএব কেউ যদি হারাম শরীফে হত্যা করে অথবা হত্যা করার পর হারাম শরীফে আশ্রয় গ্রহণ করে তাকে রেহাই দেয়া হবে না।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

২৫২৩-[১৯] উক্ত রাবী [’আব্দুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি হজ্জ/হজ পালনের ইচ্ছা পোষণ করেছে সে যেন তাড়াতাড়ি হজ্জ/হজ পালন করে। (আবূ দাঊদ ও দারিমী)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ

وَعَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ أَرَادَ الْحَجَّ فَلْيُعَجِّلْ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد والدارمي

وعنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «من اراد الحج فليعجل» . رواه ابو داود والدارمي

ব্যাখ্যা: (فَلْيُعَجِّلْ) ‘‘সে যেন তা দ্রুত আদায় করে’’।

ইমাম ত্বীবী বলেনঃ (تفعيل) শব্দটি (استفعال) এর অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ- (تعجل) শব্দটি (استعجال) এর অর্থে এসেছে। যারা বলেনঃ হজ্জ/হজ ফরয হওয়া মাত্রই তা দ্রুত আদায় করতে হবে, বিলম্ব করার অবকাশ নেই, অত্র হাদীসটি তাদের পক্ষে দলীল।


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

২৫২৪-[২০] ’আব্দুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হজ্জ/হজ ও ’উমরা সাথে সাথে করো। কারণ এ দু’টি দারিদ্র্য ও গুনাহ এমনভাবে দূর করে, যেমনভাবে হাঁপর লোহা ও সোনা-রূপার ময়লা দূর করে। কবূলযোগ্য হজের সাওয়াব জান্নাত ব্যতীত আর কিছু নয়। (তিরমিযী ও নাসায়ী)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ

وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «تَابِعُوا بَيْنَ الْحَجِّ وَالْعُمْرَةِ فَإِنَّهُمَا يَنْفِيَانِ الْفَقْرَ وَالذُّنُوبَ كَمَا يَنْفِي الْكِيرُ خَبَثَ الْحَدِيدِ وَالذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَلَيْسَ لِلْحَجَّةِ الْمَبْرُورَةِ ثَوَابٌ إِلَّا الْجَنَّةَ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِيُّ

وعن ابن مسعود قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «تابعوا بين الحج والعمرة فانهما ينفيان الفقر والذنوب كما ينفي الكير خبث الحديد والذهب والفضة وليس للحجة المبرورة ثواب الا الجنة» . رواه الترمذي والنساىي

ব্যাখ্যা: (تَابِعُوْا بَيْنَ الْحَجِّ وَالْعُمْرَةِ) ‘‘হজের সাথে ‘উমরা আদায় করো’’।

(متابعة) অর্থাৎ- ধারাবাহিকভাবে একটির পরে আরেকটি কাজ করাকে (متابعة) বলা হয়। অতএব হাদীসের অর্থ দাঁড়ায় তোমরা হজ্জ/হজ সম্পাদনের সাথে সাথে ‘উমরা করো। অথবা ‘উমরা করার সাথে সাথে হজ্জ/হজও সম্পাদন করো।


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

২৫২৫-[২১] কিন্তু আহমাদ ও ইবনু মাজাহ ’উমার (রাঃ) হতে ’’লোহার ময়লা’’ পর্যন্ত বর্ণনা করেছেন।[1]

اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ

وَرَوَاهُ أَحْمَدُ وَابْنُ مَاجَهْ عَنْ عُمَرَ إِلَى قَوْله: «خبث الْحَدِيد»

ورواه احمد وابن ماجه عن عمر الى قوله: «خبث الحديد»

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

২৫২৬-[২২] ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রসূল! কিসে (কোন বস্তুতে) হজ্জ/হজ ফরয করে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, পথ খরচ ও বাহনে। (তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا يُوجِبُ الْحَجَّ؟ قَالَ: «الزَّادُ وَالرَّاحِلَة» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَابْن مَاجَه

وعن ابن عمر قال: جاء رجل الى النبي صلى الله عليه وسلم فقال: يا رسول الله ما يوجب الحج؟ قال: «الزاد والراحلة» . رواه الترمذي وابن ماجه

ব্যাখ্যা: (مَا يُوجِبُ الْحَجَّ) ‘‘কিসে হজ্জ/হজ ওয়াজিব করে?’’ অর্থাৎ- হজ্জ/হজ ওয়াজিব হওয়ার জন্য শর্ত কি? উত্তরে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ (الزَّادُ وَالرَّاحِلَةُ) ‘‘পাথেয় ও বাহন’’। অর্থাৎ- যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছবার এবং সেখান থেকে ফিরে আসার জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী ও যাতায়াতের খরচের মালিক হবে তার ওপর হজ্জ/হজ ফরয।

উল্লেখ্য যে, এখানে অন্যান্য শর্তসমূহের মধ্য থেকে মাত্র দু’টি উল্লেখ করার কারণ এই যে, এ দু’টি শর্ত অধিক গুরুত্বপূর্ণ। তবে জেনে রাখা দরকার যে, হজ্জ/হজ ফরয হওয়ার শর্ত পাঁচটি। যথা-

(১) মুসলিম হওয়া, (২) বোধশক্তি সম্পন্ন হওয়া, (৩) বালেগ হওয়া, (৪) আযাদ হওয়া, (৫) মক্কায় যাতায়াতে সক্ষম হওয়া। এ বিষয়ে ‘আলিমদের মাঝে কোন দ্বিমত নেই।

ইবনু কুদামাহ্ বলেনঃ উপর্যুক্ত শর্তসমূহ তিনভাগে বিভক্ত। যথা-

(১) ওয়াজিব ও বিশুদ্ধ হওয়ার শর্ত, আর তা হলো মুসলিম ও বোধশক্তি সম্পনণ হওয়া। অতএব কাফির এবং পাগলের ওপর হজ্জ/হজ ফরয নয়। তারা হজ্জ/হজ করলে তা বিশুদ্ধ হবে না।

(২) ওয়াজিবও যথেষ্ট হওয়ার শর্ত। আর তা হচ্ছে বালেগ ও আযাদ হওয়া। তা বিশুদ্ধ হওয়ার শর্ত নয়। অতএব শিশু অথবা গোলাম যদি হজ্জ/হজ করে তাহলে তাদের হজ্জ/হজ বিশুদ্ধ হবে কিন্তু তাদের হজ্জ/হজ ফরয হিসেবে যথেষ্ট নয়। বরং শিশু বালেগ হলে এবং গোলাম আযাদ হলে তাকে পুনরায় ইসলামের ফরয হজ্জ/হজ সম্পাদন করতে হবে অন্যান্য শর্ত পাওয়া গেলে।

(৩) শুধুমাত্র ওয়াজিব হওয়ার শর্ত। আর তা হলো সক্ষম হওয়া। অতএব সক্ষম নয় এমন ব্যক্তি যদি পাথেয় ও বাহন ব্যতীতই কষ্ট করে হজ্জ/হজ পালন করে তাহলে তার হজ্জ/হজ বিশুদ্ধ এবং তা ফরয হিসেবে যথেষ্ট। অর্থাৎ- উক্ত ব্যক্তি যদি পরবর্তীতে সক্ষমতা অর্জন করে তাকে আর পুনরায় হজ্জ/হজ করতে হবে না।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

২৫২৭-[২৩] উক্ত রাবী [’আব্দুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক লোক রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলেন, হাজী কে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, যে লোকের (ইহরাম বাঁধার জন্য) অগোছালো চুল এবং সুগন্ধিহীন শরীর। এরপর অপর ব্যক্তি দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রসূল! কোন্ হজ্জ/হজ উত্তম? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ’লাব্বায়কা’ বলার সাথে আওয়াজ সুউচ্চ করা এবং (কুরবানীর) রক্ত প্রবাহিত করা। তারপর অপর (তৃতীয়) ব্যক্তি দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রসূল! কুরআনে বর্ণিত ’সাবীল’ (সামর্থ্য রাখে)-এর অর্থ কি? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, পথের খরচ ও বাহন। [ইমাম বাগাবী (রহঃ) শারহুস্ সুন্নাহ-তে এবং ইবনু মাজাহ তাঁর সুনানে বর্ণনা করেছেন, তবে তিনি শেষের অংশ বর্ণনা করেননি।][1]

اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ

وَعَنْهُ قَالَ: سَأَلَ رَجُلٌ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: مَا الْحَاج؟ فَقَالَ: «الشعث النَّفْل» . فَقَامَ آخَرُ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَيُّ الْحَجِّ أَفْضَلُ؟ قَالَ: «الْعَجُّ وَالثَّجُّ» . فَقَامَ آخَرُ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا السَّبِيلُ؟ قَالَ: «زَادٌ وَرَاحِلَةٌ» رَوَاهُ فِي شَرْحِ السُّنَّةِ. وَرَوَى ابْنُ مَاجَهْ فِي سُنَنِهِ إِلَّا أَنَّهُ لَمْ يذكر الْفَصْل الْأَخير

وعنه قال: سال رجل رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال: ما الحاج؟ فقال: «الشعث النفل» . فقام اخر فقال: يا رسول الله اي الحج افضل؟ قال: «العج والثج» . فقام اخر فقال: يا رسول الله ما السبيل؟ قال: «زاد وراحلة» رواه في شرح السنة. وروى ابن ماجه في سننه الا انه لم يذكر الفصل الاخير

ব্যাখ্যা: (مَا الْحَاجُّ) ‘‘হজ্জ/হজ আদায়কারী কে?’’ অর্থাৎ- পরিপূর্ণ হজ্জ/হজ সম্পাদনকারীর গুণাবলী কি? (اَلشَّعِثُ التَّفْلُ) ‘‘সৌন্দর্য ও সুগন্ধি বর্জনকারী। অর্থাৎ- হজ্জ/হজ সম্পাদনকারী সফরের কারণে ধূলিমলিন হবে এবং সুগন্ধি বর্জন করার কারণে তার থেকে অপছন্দনীয় দুর্গন্ধ বের হবে।

(أَىُّ الْحَجِّ أَفْضَلُ) ‘‘কোন্ হজ্জ/হজ উত্তম’’। অর্থাৎ- কোন প্রকারের হজে অধিক সাওয়াব অর্জন হয়। (الْعَجُّ وَالثَّجُّ) ‘‘উচ্চস্বরে তালবিয়াহ্ পাঠ এবং রক্ত প্রবাহিত করা’’। সুতরাং যে হজ্জে তালবিয়াহ্ বেশী পরিমাণে পাঠ করা হয় এবং কুরবানী করা হয় সে হজ্জই অধিক সাওয়াবের অধিকারী। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো যে হজ্জের যাবতীয় কাজ, এর রুকনসমূহ, মুস্তাহাবসমূহ পরিপূর্ণভাবে আদায় করা হয় সে হজ্জই উত্তম হজ্জ।


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

২৫২৮-[২৪] আবূ রযীন আল ’উক্বায়লী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমার পিতা অতিশয় বৃদ্ধ, হজ্জ/হজ ও ’উমরা করার সামর্থ্য রাখে, না বাহনে বসতে পারেন না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি তোমার পিতার পক্ষ হতে হজ্জ/হজ ও ’উমরা করে দাও। [তিরমিযী, আবূ দাঊদ ও নাসায়ী; ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলেন, হাদীসটি হাসান সহীহ][1]

اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ

وَعَنْ أَبِي رَزِينٍ الْعُقَيْلِيِّ أَنَّهُ أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ أَبِي شَيْخٌ كَبِيرٌ لَا يَسْتَطِيعُ الْحَجَّ وَلَا الْعُمْرَةَ وَلَا الظَّعْنَ قَالَ: «حُجَّ عَنْ أَبِيكَ وَاعْتَمِرْ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيُّ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ

وعن ابي رزين العقيلي انه اتى النبي صلى الله عليه وسلم فقال: يا رسول الله ان ابي شيخ كبير لا يستطيع الحج ولا العمرة ولا الظعن قال: «حج عن ابيك واعتمر» . رواه الترمذي وابو داود والنساىي وقال الترمذي: هذا حديث حسن صحيح

ব্যাখ্যা: (حُجَّ عَنْ أَبِيكَ) ‘‘তোমার বাবার পক্ষ থেকে হজ্জ/হজ সম্পাদন করো’’ হাদীসের এ অংশটুকু প্রমাণ করে যে, অপারগ পিতার পক্ষ থেকে পুত্রের জন্য হজ্জ/হজ করা বৈধ।

ইমাম ত্ববারী বলেনঃ এ হাদীসটি সুস্পষ্ট প্রমাণ যে, যিনি স্বয়ং হজ্জ/হজ করতে সক্ষম নন এমন জীবিত ব্যক্তির পক্ষ হতে অন্য ব্যক্তির হজ্জ/হজ করা বৈধ। আর তা অন্যান্য শারীরিক ‘ইবাদাত তথা সালাত (সালাত/নামাজ/নামায) ও সিয়ামের মতো নয়। وَأَن لَّيْسَ لِلْإِنسَانِ إِلَّا مَا سَعٰى আল্লাহ তা‘আলার এ বাণী দ্বারা সকল ‘ইবাদাত উদ্দেশ্য নয়।

(وَاعْتَمِرْ) ‘‘আর (তার পক্ষ থেকে) ‘উমরা করো’’। যারা বলেন ‘উমরা করা ওয়াজিব হাদীসের এ অংশটুকু তাদের পক্ষে দলীল। এ মতের স্বপক্ষে একদল আহলুল হাদীস এবং ইমাম শাফি‘ঈ ও ইমাম আহমাদ-এর প্রসিদ্ধ মত এটাই। ইমাম ইসহাক, সাওরী এবং মুযানী এ মতের প্রবক্তা। ‘আল্লামা সিনদী বলেনঃ অন্যের পক্ষ থেকে হজ্জ/হজ ও ‘উমরা করা তা সম্পাদনকারীর ওপর ওয়াজিব নয়। অত্র হাদীসে (اعْتَمِرْ) আদেশসূচক শব্দটি ওয়াজিব বুঝায় না বরং তা মুস্তাহাব বুঝায়। অতএব অত্র হাদীস দ্বারা ‘উমরা ওয়াজিব সাব্যস্ত হয় না।

‘আল্লামা শানক্বীত্বী বলেনঃ অত্র হাদীসে (اعْتَمِرْ) নির্দেশসূচক শব্দটি আবূ রযীন-এর প্রশ্নের জওয়াবে বলা হয়েছে। আর উসূলবিদদের নিকট এটি সাব্যস্ত যে, প্রশ্নের জওয়াবে নির্দেশসূচক শব্দ দ্বারা ওয়াজিব বুঝায় না বরং তা দ্বারা বৈধতা বুঝায়। ইমাম আবূ হানীফা এবং ইমাম মালিক-এর মতে ‘উমরা করা ওয়াজিব নয়।

এদের স্বপক্ষে দলীলঃ ইমাম তিরমিযী, বায়হাক্বী ও আহমাদে জাবির কর্তৃক বর্ণিত হাদীস যাতে রয়েছে (أخبرني عن العمرة أواجبة هي؟ فقال: لا وأن تعتمر خير لك) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলা হলো আমাকে অবহিত করুন যে, ‘উমরা কি ওয়াজিব? উত্তরে তিনি বললেনঃ না। তবে ‘উমরা করা তোমার জন্য কল্যাণকর। কিন্তু হাদীসটি য‘ঈফ। কেননা এর সনদে হাজ্জাজ ইবনু আরতাহ্ নামক রাবী রয়েছে যিনি য‘ঈফ। এ হাদীসের সমর্থনে আরো হাদীস রয়েছে। তাই ইমাম শাওকানী বলেনঃ হাদীসটি হাসান লিগয়রিহী এর পর্যায়ভুক্ত যা জমহূর ‘উলামাগণের নিকট দলীল হিসেবে গণ্য। ‘উমরা ওয়াজিব কি-না? এ বিষয়ে উভয় ধরনের দলীল থাকার কারণে সকল যুগের ‘আলিমগণের মাঝে দ্বিমত রয়েছে।

(১) ‘উমরা ওয়াজিবঃ এ মতের পক্ষে রয়েছেন ‘উমার, ইবনু ‘আব্বাস, যায়দ ইবনু সাবিত ও ইবনু ‘উমার (রাঃ), সা‘ঈদ ইবনু মুসাইয়্যিব, সা‘ঈদ ইবনু জুবায়র, ‘আত্বা, তাউস, মুজাহিদ, হাসান বাসরী, ইবনু সীরীন ও শা‘বী প্রমুখ। সাওরী, ইসহাক, শাফি‘ঈ ও আহমাদ এ মতের প্রবক্তা

(২) ‘উমরা ওয়াজিব নয়ঃ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) থেকে তা বর্ণিত আছে। এ মতের পক্ষে রয়েছেন- ইমাম মালিক, আবূ সাওর ও আবূ হানীফা। ইমাম শাফি‘ঈ ও আহমাদ থেকেও একটি বর্ণনা এরূপ পাওয়া যায়। ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ্ এ মত গ্রহণ করেছেন।

‘আল্লামা শানক্বীত্বী তিনটি কারণে ওয়াজিব হওয়ার মতটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন।

(১) অধিকাংশ উসূলবিদগণ ঐ হাদীসকে প্রাধান্য দিয়েছেন যে হাদীস বারায়াতে আসলিয়াহ্ (মূল হুকুম) থেকে অন্য হুকুমের দিকে ধাবিত করে।

(২) একদল উসূলবিদ ঐ হাদীসকে প্রাধান্য দিয়েছেন যা ওয়াজিব বুঝায় ঐ হাদীসের উপর যা ওয়াজিব বুঝায় না।

(৩) যারা ওয়াজিব বলেছেন তাদের মতানুসারে যদি তা ওয়াজিব হিসেবে পালন করা হয় তাহলে জিম্মা থেকে তা নেমে গেল। পক্ষান্তরে যারা ওয়াজিব বলেনি তাদের মতানুসারে যদি তা আদায় না করা হয় আর যদি তা ওয়াজিব হয়ে থাকে তাহলে তা জিম্মাতেই থেকে গেল। অতএব ওয়াজিব হিসেবে তা আদায় করাই শ্রেয়। আল্লাহই অধিক অবগত আছেন।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

২৫২৯-[২৫] ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে বলতে শুনলেন, আমি শুব্রম্নমাহ্’র পক্ষ হতে (হজ্জ/হজ পালনের উদ্দেশে) উপস্থিত হয়েছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, শুব্রম্নমাহ্ কে? সে বললো, আমার ভাই অথবা বললো, আমার নিকটাত্মীয়। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, তুমি নিজের হজ্জ/হজ করেছো কি? সে বললো, জি না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তবে (প্রথমে) নিজের হজ্জ/হজ করো। পরে শুবরুমাহ্’র পক্ষ হতে হজ্জ/হজ করবে। (শাফি’ঈ, আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ

مَرْفُوع وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَمِعَ رَجُلًا يَقُولُ لَبَّيْكَ عَنْ شُبْرُمَةَ قَالَ: «مَنْ شُبْرُمَةُ» قَالَ: أَخٌ لِي أَوْ قَرِيبٌ لِي قَالَ: «أَحَجَجْتَ عَنْ نَفْسِكَ؟» قَالَ: لَا قَالَ: «حُجَّ عَنْ نَفْسِكَ ثُمَّ حُجَّ عَنْ شُبْرُمَةَ» . رَوَاهُ الشَّافِعِيُّ وَأَبُو دَاوُد وابنُ مَاجَه

مرفوع وعن ابن عباس قال: ان رسول الله صلى الله عليه وسلم سمع رجلا يقول لبيك عن شبرمة قال: «من شبرمة» قال: اخ لي او قريب لي قال: «احججت عن نفسك؟» قال: لا قال: «حج عن نفسك ثم حج عن شبرمة» . رواه الشافعي وابو داود وابن ماجه

ব্যাখ্যা: (حُجَّ عَنْ نَفْسِكَ ثُمَّ حُجَّ عَنْ شُبْرُمَةَ) ‘‘আগে তোমার নিজের হজ্জ/হজ করো এরপর শুবরুমার পক্ষ থেকে হজ্জ/হজ করো’’। দারাকুত্বনী, ইবনু হিব্বান এবং ইবনু মাজাহতে আছে, (فاجعل هذه عن نفسك) ‘‘এটি তোমার নিজের পক্ষ থেকে আদায় করো, এরপর শুব্রুমার পক্ষ থেকে হজ্জ/হজ করো’’। সিন্দী বলেনঃ অত্র হাদীস থেকে জানা গেল যে, যিনি নিজে হজ্জ/হজ করেননি তিনি যদি অন্যের পক্ষ থেকে হজের ইহরাম বাঁধেন তাহলে তা অব্যাহত রাখা জরুরী নয় বরং সে ইহরামকে নিজের হজ্জের জন্য পরিবর্তন করা ওয়াজিব।

এ হাদীস থেকে স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় যে, যিনি নিজের হজ্জ/হজ সম্পাদন করেননি তার জন্য অন্যের পক্ষ থেকে হজ্জ/হজ করা জায়িয নয়। তিনি নিজের হজ্জ/হজ পালন করতে সক্ষম হোন অথবা না হোন।

ইমাম শাফি‘ঈর অভমত এটাই। ইমাম আওযা‘ঈ এবং ইসহাক এ মতের প্রবক্তা। ইমাম আহমাদ থেকেও এ মতের পক্ষে একটি বর্ণনা রয়েছে।

পক্ষান্তরে ইমাম মালিক ও আবূ হানীফার মতে নিজের হজ্জ/হজ না করেও অন্যের পক্ষ থেকে হজ্জ/হজ করা বৈধ। হাসান বাসরী, ‘আত্বা ও সাওরী- এ মতের প্রবক্তা।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

২৫৩০-[২৬] উক্ত রাবী [’আব্দুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পূর্বদিকের অধীবাসীদের (’ইরাকীদের) জন্যে ’আক্বীক্ব নামক স্থানকে (ইহরাম বাঁধার জন্য) মীকাত নির্ধারণ করেছেন। (তিরমিযী ও আবূ দাঊদ)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ

وَعَنْهُ قَالَ: وَقَّتَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِأَهْلِ الْمَشْرِقِ الْعَقِيقَ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُد

وعنه قال: وقت رسول الله صلى الله عليه وسلم لاهل المشرق العقيق. رواه الترمذي وابو داود

ব্যাখ্যা: ‘আল্লামা ত্ববারী বলেনঃ ‘আক্বীক্ব যাতু ‘ইরক্ব-এর নিকটবর্তী একটি উপত্যকার নাম। ‘আরব দেশে অনেক জায়গা যা ‘আক্বীক্ব নামে পরিচিত। মূলত পানি প্রবাহের কারণে সে সমস্ত স্থান নালার মতো প্রশস্ত হয়ে যায় ঐ স্থানকে ‘আক্বীক্ব বলা হয়। আযহারী বলেনঃ ‘আরব দেশে এরূপ চারটি ‘আক্বীক্ব রয়েছে। ‘আল্লামা আলকারী বলেনঃ হাদীসে উল্লেখিত ‘আক্বীক্ব যাতু ‘ইরক্ব বরাবর পূর্ব প্রান্তে একটি জায়গার নাম। এটাও বলা হয়ে থাকে যে, তা যাতু ‘ইরক্ব এর সীমানার মধ্যে অবস্থিত।

(أَهْلِ الْمَشْرِقِ) দ্বারা উদ্দেশ্য যাদের আবাস মক্কার হারাম শরীফের বাইরে পূর্ব দিকে অবস্থিত। আর তারা হলো ‘ইরাকবাসী। হাদীসের মর্মার্থ এই যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পূর্ব এলাকার বাসিন্দাদের জন্য ‘আক্বীক্ব নামক জায়গাকে মীকাত সাব্যস্ত করেছেন।


হাদিসের মানঃ মুনকার (সহীহ হাদীসের বিপরীত)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

২৫৩১-[২৭] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’ইরাকবাসীদের জন্য ’’যাতু ’ইরক্ব’’-কে মীকাত নির্ধারণ করেছেন। (আবূ দাঊদ ও নাসায়ী)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ

وَعَنْ عَائِشَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَّتَ لِأَهْلِ الْعِرَاقِ ذَاتَ عِرْقٍ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ

وعن عاىشة ان رسول الله صلى الله عليه وسلم وقت لاهل العراق ذات عرق. رواه ابو داود والنساىي

ব্যাখ্যা: যাতু ‘ইরক্ব এর পরিচয় পূর্বেই বর্ণিত হয়েছে। এটি মক্কা থেকে পূর্ব দিকে অবস্থিত একটি স্থান। যাতু ‘ইর্ক্ব এবং ‘আক্বীক্ব দু’টি কাছাকাছি স্থান। তবে ‘আক্বীক্বের অবস্থান যাতু ‘ইরক্ব-এর পূর্বে।

ইবনুল মালিক বলেনঃ মনে হয় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পূর্ব এলাকাবাসীর জন্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’টি মীকাত নির্ধারণ করেছেন।

একটি ‘আক্বীক্ব আরেকটি যাতু ‘ইরক্ব। অতএব যে ব্যক্তি যাতু ‘ইরক্ব-এ পৌঁছবার আগেই ‘আক্বীক্ব থেকে ইহরাম পরিধান করে এটি তার জন্য উত্তম। আর যে ব্যক্তি ‘আক্বীক্ব অতিক্রম করে যাতু ‘ইরক্ব-এ ইহরাম পরিধান করে এটি তার জন্য বৈধ। ইমাম শাফি‘ঈ বলেনঃ ‘আক্বীক্ব থেকেই ইহরাম বাঁধা উচিত।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

২৫৩২-[২৮] উম্মু সালামাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি মসজিদে আক্বসা থেকে মসজিদে হারামের দিকে হজ্জ/হজ বা ’উমরার ইহরাম বাঁধবে তার পূর্বের ও পরের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। অথবা তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, তার জন্যে জান্নাত অবধারিত হবে। (আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ

وَعَنْ أُمِّ سَلَمَةَ قَالَتْ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: مَنْ أَهَلَّ بِحَجَّةٍ أَوْ عُمْرَةٍ مِنَ الْمَسْجِدِ الْأَقْصَى إِلَى الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ وَمَا تَأَخَّرَ أَوْ وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَهْ

وعن ام سلمة قالت: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: من اهل بحجة او عمرة من المسجد الاقصى الى المسجد الحرام غفر له ما تقدم من ذنبه وما تاخر او وجبت له الجنة. رواه ابو داود وابن ماجه

ব্যাখ্যা: এ হাদীসে ঐ ইঙ্গিত রয়েছে যে, ইহরাম যতদূর থেকে বাঁধা হয় সাওয়াব তত বেশী। ‘আল্লামা ত্ববারী বলেনঃ এ হাদীস দ্বারা তারা দলীল পেশ করে থাকেন যারা বলেন যে, মীকাতের পূর্বে ইহরাম বাঁধাতে ফাযীলাত বেশী। তবে এখানে এ কথা বলার অবকাশ রয়েছে যে, এটা বায়তুল মাক্বদিসের জন্য বিশেষ বৈশিষ্ট্য যা অন্য স্থানের জন্য নেই। কেননা দূরত্বের কারণেই যদি সাওয়াব বেশী হত তাহলে বায়তুল মাকদিসের চাইতেও আরো কোন দূরবর্তী স্থানের উল্লেখ করাই উত্তম ছিল।

ইমাম খাত্ত্বাবী বলেনঃ এ হাদীস প্রমাণ করে মীকাতের পূর্বে ইহরাম বাঁধা বৈধ। আর একাধিক সাহাবী মীকাতে পৌঁছবার আগেই ইহরাম বেঁধেছেন। তবে একদল ‘আলিম তা মাকরূহ বলেছেন। এমনকি ‘উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) ‘ইমরান ইবনুল হুসায়ন (রাঃ) কে বাসরাহ্ থেকে ইহরাম বাঁধার বিষয়ের প্রতি অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। হাসান বাসরী, ‘আত্বা ইবনু আবী রবাহ এবং মালিক ইবনু আনাস তা মাকরূহ মনে করতেন।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১৩ পর্যন্ত, সর্বমোট ১৩ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে