লগইন করুন
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২৫২৮-[২৪] আবূ রযীন আল ’উক্বায়লী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমার পিতা অতিশয় বৃদ্ধ, হজ্জ/হজ ও ’উমরা করার সামর্থ্য রাখে, না বাহনে বসতে পারেন না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি তোমার পিতার পক্ষ হতে হজ্জ/হজ ও ’উমরা করে দাও। [তিরমিযী, আবূ দাঊদ ও নাসায়ী; ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলেন, হাদীসটি হাসান সহীহ][1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَنْ أَبِي رَزِينٍ الْعُقَيْلِيِّ أَنَّهُ أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ أَبِي شَيْخٌ كَبِيرٌ لَا يَسْتَطِيعُ الْحَجَّ وَلَا الْعُمْرَةَ وَلَا الظَّعْنَ قَالَ: «حُجَّ عَنْ أَبِيكَ وَاعْتَمِرْ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيُّ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ
ব্যাখ্যা: (حُجَّ عَنْ أَبِيكَ) ‘‘তোমার বাবার পক্ষ থেকে হজ্জ/হজ সম্পাদন করো’’ হাদীসের এ অংশটুকু প্রমাণ করে যে, অপারগ পিতার পক্ষ থেকে পুত্রের জন্য হজ্জ/হজ করা বৈধ।
ইমাম ত্ববারী বলেনঃ এ হাদীসটি সুস্পষ্ট প্রমাণ যে, যিনি স্বয়ং হজ্জ/হজ করতে সক্ষম নন এমন জীবিত ব্যক্তির পক্ষ হতে অন্য ব্যক্তির হজ্জ/হজ করা বৈধ। আর তা অন্যান্য শারীরিক ‘ইবাদাত তথা সালাত (সালাত/নামাজ/নামায) ও সিয়ামের মতো নয়। وَأَن لَّيْسَ لِلْإِنسَانِ إِلَّا مَا سَعٰى আল্লাহ তা‘আলার এ বাণী দ্বারা সকল ‘ইবাদাত উদ্দেশ্য নয়।
(وَاعْتَمِرْ) ‘‘আর (তার পক্ষ থেকে) ‘উমরা করো’’। যারা বলেন ‘উমরা করা ওয়াজিব হাদীসের এ অংশটুকু তাদের পক্ষে দলীল। এ মতের স্বপক্ষে একদল আহলুল হাদীস এবং ইমাম শাফি‘ঈ ও ইমাম আহমাদ-এর প্রসিদ্ধ মত এটাই। ইমাম ইসহাক, সাওরী এবং মুযানী এ মতের প্রবক্তা। ‘আল্লামা সিনদী বলেনঃ অন্যের পক্ষ থেকে হজ্জ/হজ ও ‘উমরা করা তা সম্পাদনকারীর ওপর ওয়াজিব নয়। অত্র হাদীসে (اعْتَمِرْ) আদেশসূচক শব্দটি ওয়াজিব বুঝায় না বরং তা মুস্তাহাব বুঝায়। অতএব অত্র হাদীস দ্বারা ‘উমরা ওয়াজিব সাব্যস্ত হয় না।
‘আল্লামা শানক্বীত্বী বলেনঃ অত্র হাদীসে (اعْتَمِرْ) নির্দেশসূচক শব্দটি আবূ রযীন-এর প্রশ্নের জওয়াবে বলা হয়েছে। আর উসূলবিদদের নিকট এটি সাব্যস্ত যে, প্রশ্নের জওয়াবে নির্দেশসূচক শব্দ দ্বারা ওয়াজিব বুঝায় না বরং তা দ্বারা বৈধতা বুঝায়। ইমাম আবূ হানীফা এবং ইমাম মালিক-এর মতে ‘উমরা করা ওয়াজিব নয়।
এদের স্বপক্ষে দলীলঃ ইমাম তিরমিযী, বায়হাক্বী ও আহমাদে জাবির কর্তৃক বর্ণিত হাদীস যাতে রয়েছে (أخبرني عن العمرة أواجبة هي؟ فقال: لا وأن تعتمر خير لك) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলা হলো আমাকে অবহিত করুন যে, ‘উমরা কি ওয়াজিব? উত্তরে তিনি বললেনঃ না। তবে ‘উমরা করা তোমার জন্য কল্যাণকর। কিন্তু হাদীসটি য‘ঈফ। কেননা এর সনদে হাজ্জাজ ইবনু আরতাহ্ নামক রাবী রয়েছে যিনি য‘ঈফ। এ হাদীসের সমর্থনে আরো হাদীস রয়েছে। তাই ইমাম শাওকানী বলেনঃ হাদীসটি হাসান লিগয়রিহী এর পর্যায়ভুক্ত যা জমহূর ‘উলামাগণের নিকট দলীল হিসেবে গণ্য। ‘উমরা ওয়াজিব কি-না? এ বিষয়ে উভয় ধরনের দলীল থাকার কারণে সকল যুগের ‘আলিমগণের মাঝে দ্বিমত রয়েছে।
(১) ‘উমরা ওয়াজিবঃ এ মতের পক্ষে রয়েছেন ‘উমার, ইবনু ‘আব্বাস, যায়দ ইবনু সাবিত ও ইবনু ‘উমার (রাঃ), সা‘ঈদ ইবনু মুসাইয়্যিব, সা‘ঈদ ইবনু জুবায়র, ‘আত্বা, তাউস, মুজাহিদ, হাসান বাসরী, ইবনু সীরীন ও শা‘বী প্রমুখ। সাওরী, ইসহাক, শাফি‘ঈ ও আহমাদ এ মতের প্রবক্তা
(২) ‘উমরা ওয়াজিব নয়ঃ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) থেকে তা বর্ণিত আছে। এ মতের পক্ষে রয়েছেন- ইমাম মালিক, আবূ সাওর ও আবূ হানীফা। ইমাম শাফি‘ঈ ও আহমাদ থেকেও একটি বর্ণনা এরূপ পাওয়া যায়। ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ্ এ মত গ্রহণ করেছেন।
‘আল্লামা শানক্বীত্বী তিনটি কারণে ওয়াজিব হওয়ার মতটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন।
(১) অধিকাংশ উসূলবিদগণ ঐ হাদীসকে প্রাধান্য দিয়েছেন যে হাদীস বারায়াতে আসলিয়াহ্ (মূল হুকুম) থেকে অন্য হুকুমের দিকে ধাবিত করে।
(২) একদল উসূলবিদ ঐ হাদীসকে প্রাধান্য দিয়েছেন যা ওয়াজিব বুঝায় ঐ হাদীসের উপর যা ওয়াজিব বুঝায় না।
(৩) যারা ওয়াজিব বলেছেন তাদের মতানুসারে যদি তা ওয়াজিব হিসেবে পালন করা হয় তাহলে জিম্মা থেকে তা নেমে গেল। পক্ষান্তরে যারা ওয়াজিব বলেনি তাদের মতানুসারে যদি তা আদায় না করা হয় আর যদি তা ওয়াজিব হয়ে থাকে তাহলে তা জিম্মাতেই থেকে গেল। অতএব ওয়াজিব হিসেবে তা আদায় করাই শ্রেয়। আল্লাহই অধিক অবগত আছেন।