পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - দানের মর্যাদা ও কৃপণতার পরিণাম
১৮৫৯-[১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার কাছে যদি উহুদ পাহাড় সমান সোনাও থাকে, ঋণের অংশ বাদে তা তিনদিন আমার কাছে জমা না থাকলেই আমি খুশী হব। (বুখারী)[1]
بَابُ الْإِنْفَاقِ وَكَرَاهِيَةِ الْإِمْسَاكِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَوْ كَانَ لِي مِثْلُ أُحُدٍ ذَهَبًا لَسَرَّنِي أَنْ لَا يَمُرَّ عَلَيَّ ثَلَاثُ لَيَالٍ وَعِنْدِي مِنْهُ شَيْءٌ إِلَّا شَيْءٌ أَرْصُدُهُ لِدَيْنٍ» . رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: মুল্লা ‘আলী ক্বারী এ হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন, (لِدَيْنٍ) দেনার জন্য অর্থাৎ আমার ওপরে যে সকল দেনা থাকে তা পরিশোধ করার জন্য। কেননা দান করার আগে দেনা পরিশোধ করতে হয়। অথচ অনেক মানুষ তাদের অজ্ঞতার কারণে সাধারণ দান এবং মীরাস আদায় করে থাকে কিন্তু তাদের ওপরে যে দেনা থাকে তা পরিশোধ করে না, যা হচ্ছে মানুষের হক।
অত্র হাদীসে কল্যাণকর ব্যাপারে দান করার প্রতি উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একান্ত প্রয়োজন ছাড়া আগামী দিনের জন্য দুনিয়ার কোন জিনিস জমা করে রাখতে পছন্দ করতেন না। বিশেষ করে দেনা পরিশোধের কথা এবং আমানাত আদায় করার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - দানের মর্যাদা ও কৃপণতার পরিণাম
১৮৬০-[২] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রতিদিন ভোরে (আকাশ থেকে) দু’জন মালাক (ফেরেশতা) নেমে আসে। এদের একজন দু’আ করে, ’হে আল্লাহ! দানশীলকে তুমি বিনিময় দাও। আর দ্বিতীয় মালাক এ বদ্দু’আ করে, হে আল্লাহ! কৃপণকে ক্ষতিগ্রস্ত করো। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ الْإِنْفَاقِ وَكَرَاهِيَةِ الْإِمْسَاكِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَا مِنْ يَوْمٍ يُصْبِحُ الْعِبَادُ فِيهِ إِلَّا مَلَكَانِ يَنْزِلَانِ فَيَقُولُ أَحَدُهُمَا: اللَّهُمَّ أطع مُنْفِقًا خَلَفًا وَيَقُولُ الْآخَرُ: اللَّهُمَّ أَعْطِ مُمْسِكًا تلفا
ব্যাখ্যা: দানকারী ব্যক্তির জন্য মালাক (ফেরেশতা) দু‘আ করে আল্লাহর নিকটে দানের প্রতিদান প্রদানের ব্যাপারে দুনিয়াতে এবং আখিরাতে। যেমন আল্লাহ বলেছেনঃ অর্থাৎ ‘‘তোমরা যা কিছু ব্যয় করবে তিনি তার প্রতিদান দিবেন’’- (সূরাহ্ সাবা- ৩৪ : ৩৯)। হাফিয ইবনু হাজার বলেন, কল্যাণকর ব্যাপারে খরচকারীর সার্বিক বিষয় সহজ হওয়ার প্রতিশ্রুতিমূলক হলো এ আয়াতটি।
পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - দানের মর্যাদা ও কৃপণতার পরিণাম
১৮৬১-[৩] আসমা (বিনতু আবূ বকর) (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (আল্লাহর রাস্তায়) খরচ কর। কিন্তু গুণে গুণে খরচ করো না। তাহলে আল্লাহ তোমাকে গুণে গুণে (নেকী) দিবেন। তোমার জমা করে রেখ না। তাহলে আল্লাহ তা’আলা জমা করে রাখবেন। সামর্থ্য অনুযায়ী আল্লাহর পথে খরচ করো। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ الْإِنْفَاقِ وَكَرَاهِيَةِ الْإِمْسَاكِ
وَعَنْ أَسْمَاءَ قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَنَفِقِي وَلَا تُحْصِي فَيُحْصِيَ اللَّهُ عَلَيْكِ وَلَا تُوعِي فَيُوعِيَ اللَّهُ عَلَيْكِ ارْضَخِي مَا اسْتَطَعْتِ»
ব্যাখ্যা: হাদীসের ব্যাখ্যায় আল্লামা খাত্ত্বাবী বলেন, তুমি হিসাব বা গণনা করবে না অর্থাৎ তুমি সম্পদকে কোন পাত্রের ভিতরে গোপন করে রেখে দিবে না বরং তা আল্লাহর রাস্তায় দান করতে থাকবে। কারণ এই যে, রিয্কবের ব্যবস্থার সম্পর্ক হচ্ছে খরচের সঙ্গে।
আল্লামা নাবাবী বলেছেন, হাদীসে মানুষকে উৎসাহিত করা হয়েছে আনুগত্যমূলক কাজে খরচ করার ব্যাপারে এবং নিষেধ করা হয়েছে খরচ না করা ও কৃপণতা থেকে।
পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - দানের মর্যাদা ও কৃপণতার পরিণাম
১৮৬২-[৪] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা বলেন, হে আদম সন্তান! ধন-সম্পদ দান করো, তোমাকেও দান করা হবে। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ الْإِنْفَاقِ وَكَرَاهِيَةِ الْإِمْسَاكِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: قَالَ اللَّهُ تَعَالَى: أَنْفِقْ يَا ابْن آدم أنْفق عَلَيْك
ব্যাখ্যা: আল্লাহ বলেন, ‘‘বল- আমার প্রতিপালকই তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছে রিযক্ব (রিজিক/রিযিক) প্রশস্ত করেন, আর যার জন্য ইচ্ছে সীমিত করেন। তোমরা যা কিছু (সৎ কাজে) ব্যয় কর, তিনি তার বিনিময় দেবেন। তিনিই সর্বশ্রেষ্ঠ রিযক্বদাতা’’- (সূরাহ্ সাবা- ৩৪ : ৩৯)। এ হাদীসটি একটি বড় হাদীসের অংশ বিশেষ যা ইমাম বুখারী ও মুসলিম পূর্ণাঙ্গ রিওয়ায়াত করেছেন এবং হাদীসে কুদসী।
পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - দানের মর্যাদা ও কৃপণতার পরিণাম
১৮৬৩-[৫] আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (মহান আল্লাহ বলেনঃ) হে আদম সন্তান! প্রয়োজনের অতিরিক্ত যে সম্পদ তোমার কাছে আছে তা খরচ করা তোমার জন্য (দুনিয়া ও আখিরাতে) কল্যাণকর। আর তা খরচ না করা হবে অকল্যাণকর। প্রয়োজন পরিমাণ ধন-সম্পদ (জমা করায়) দোষ নেই। তোমার প্রয়োজনের অতিরিক্ত ধন-সম্পদ ব্যয়ের কাজ নিজ পরিবার-পরিজন থেকে শুরু করো। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْإِنْفَاقِ وَكَرَاهِيَةِ الْإِمْسَاكِ
وَعَنْ أَبِي أُمَامَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا ابْنَ آدَمَ إِنْ تَبْذُلِ الْفَضْلَ خَيْرٌ لَكَ وَإِنْ تُمْسِكْهُ شَرٌّ لَكَ وَلَا تُلَامُ عَلَى كَفَافٍ وَابْدَأْ بِمن تعول» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: ইমাম নাবাবী বলেনঃ হাদীসটির অর্থ হচ্ছে, তোমার এবং তোমার পরিবার-পরিজনের প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় খরচ করলেই তোমার কল্যাণ হবে। আর যদি তা খরচ না করে তোমার নিকট রেখে দাও তাহলে তা তোমার জন্য ক্ষতির কারণ হবে।
যেখানে খরচ করা ওয়াজিব সেখানে খরচ না করলে শাস্তির হকদার হবে। আর যেখানে ওয়াজিব নয় কিন্তু মুস্তাহাব সেখানে খরচ না করলে সাওয়াব থেকে এবং পরকালীন কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হবে যা তার জন্য মূলত অকল্যাণকরই হবে।
পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - দানের মর্যাদা ও কৃপণতার পরিণাম
১৮৬৪-[৬] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কৃপণ ও দানশীল ব্যক্তির দৃষ্টান্ত এমন দু’ব্যক্তির মতো যাদের শরীরে দু’টি লোহার পোশাক রয়েছে। আর (এটার কারণে) এ দু’জনের হাত তাদের সিনা হতে গর্দান পর্যন্ত লটকে আছে। এ অবস্থায় দানশীল ব্যক্তি যখন দান করতে চায় তখন তার বেড়ি সম্প্রসারিত হয়। এমনকি তাঁর হাতের আঙ্গুল পর্যন্ত আবৃত করে ফেলে এবং তার চিহ্ন মিটে যায়। কৃপণ ব্যক্তি দান করতে চাইলে তার বেড়ি সংকুচিত হয়ে এর প্রত্যেকটি কড়া নিজ নিজ স্থানে একটা আরেকটার সাথে আটকে যায়। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ الْإِنْفَاقِ وَكَرَاهِيَةِ الْإِمْسَاكِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَثَلُ الْبَخِيلِ وَالْمُتَصَدِّقِ كَمَثَلِ رَجُلَيْنِ عَلَيْهِمَا جُنَّتَانِ مِنْ حَدِيدٍ قَدِ اضْطُرَّتْ أَيْدِيهِمَا إِلَى ثُدُيِّهِمَا وَتَرَاقِيهِمَا فَجَعَلَ الْمُتَصَدِّقُ كُلَّمَا تَصَدَّقَ بِصَدقَة انبسطت عَنهُ الْبَخِيلُ كُلَّمَا هَمَّ بِصَدَقَةٍ قَلَصَتْ وَأَخَذَتْ كُلُّ حَلقَة بمكانها»
ব্যাখ্যা: হাদীসের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, দান করলে দানকারীর পাপ রাশীকে মোচন করে দেয় যেমন মাটি পর্যন্ত ঝুলিয়ে কাপড় পরিধানকারীর ঝুলন্ত অংশ তার চলার পদচিহ্ন মুছে ফেলে।
হাফিয ইবনু হাজার ফাতহুল বারীতে বলেছেন, এটা এমন একটি দৃষ্টান্ত যা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দানকারী এবং কৃপণের ব্যাপারে পেশ করেছেন। এ দু’জনের দৃষ্টান্ত হলো ঐ দুই ব্যক্তির ন্যায় যে দু’জন তাদের শরীরকে শত্রুর আঘাত থেকে হিফাযাতের জন্য লোহার বর্ম পরিধানের উদ্দেশে বর্মের ভিতর দিয়ে মাথা ঢুকিয়ে দিল। অতঃপর দানকারী যেন পরিপূর্ণ একটি বর্ম পরিধান করতঃ তার সম্পূর্ণ শরীর ঢেকে নিল। পক্ষান্তরে কৃপণ ব্যক্তি যখন পরিধান করার ইচ্ছে করে তখন তা তার গলায় এবং বক্ষক্ষ আটকে যায় তখন আর সে সম্পূর্ণ শরীর ঢাকতে পারে না।
হাদীসের সার-সংক্ষেপ ব্যাখ্যা এই যে, দানকারী যখন দান করার ইচ্ছা করে তখন তার অন্তর প্রসার হয়ে যায় এবং সে মনে আনন্দবোধ করে। অন্যদিকে কৃপণ ব্যক্তি যখন মনে মনে দান করার চিন্তা করে তখন তার অন্তর সংকীর্ণ হয়ে যায়। অতঃপর সে তার হাতকে গুটিয়ে নেয় দান করা থেকে।
পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - দানের মর্যাদা ও কৃপণতার পরিণাম
১৮৬৫-[৭] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যুলম থেকে বেঁচে থাকবে, কারণ কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন যুলম অন্ধকারের ন্যায় গ্রাস করবে। আর কৃপণতা হতে বেঁচে থাকবে, কারণ কৃপণতা তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে ধ্বংস করেছে। এ কৃপণতাই তাদেরকে প্ররোচিত করেছে রক্তপাতের জন্য এবং হারাম কাজকে হালাল করার দিকে। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْإِنْفَاقِ وَكَرَاهِيَةِ الْإِمْسَاكِ
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: اتَّقُوا الظُّلْمَ فَإِنَّ الظُّلْمَ ظُلُمَاتٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَاتَّقُوا الشُّحَّ فَإِنَّ الشُّحَّ أَهْلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ: حَمَلَهُمْ عَلَى أَنْ سَفَكُوا دِمَاءَهُمْ وَاسْتَحَلُّوا مَحَارِمهمْ . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: হাদীসে কৃপণতা থেকে বেঁচে থাকতে বলা হয়েছে এবং এর পরিণামের কথাও বলে দেয়া হয়েছে। এর ব্যাখ্যায় আল্লামা ত্বীবী বলেন, এই কৃপণতা হচ্ছে হাদীসে বর্ণিত পরিণামের কারণ। কেননা কৃপণতা না করে ধন-সম্পদ খরচ করলে মানুষের সঙ্গে সু-সম্পর্ক গড়ে উঠে। পক্ষান্তরে কৃপণতা সম্পর্কে ছিন্ন করে, যা পরবর্তীতে হিংসা-বিদ্বেষ সৃষ্টি করতঃ মানুষের মাঝে রক্তপাত ঘটিয়ে এবং হারামকে হালাল করার যেমনঃ ব্যভিচার, কারোর সম্মানহানী এবং অন্যায়ভাবে কারোর সম্পদ লোভে নেয়ার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে।
পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - দানের মর্যাদা ও কৃপণতার পরিণাম
১৮৬৬-[৮] হারিসাহ্ ইবনু ওয়াহ্ব (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা সদাক্বাহ্ (সাদাকা) কর, কেননা এমন সময় আসবে যখন একলোক তার সদাক্বার মাল নিয়ে বের হবে কিন্তু তা গ্রহণ করার লোক পাওয়া যাবে না। বরং প্রত্যেক ব্যক্তিই বলবে, গতকাল তুমি যদি এ মাল নিয়ে আসতে, আমি গ্রহণ করতাম। আজ এ সদাক্বার আমার কোনই প্রয়োজন নেই। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ الْإِنْفَاقِ وَكَرَاهِيَةِ الْإِمْسَاكِ
وَعَنْ حَارِثَةَ بْنِ وَهْبٌ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: تصدقوا فَإِنَّهُ يَأْتِي عَلَيْكُمْ زَمَانٌ يَمْشِي الرَّجُلُ بِصَدَقَتِهِ فَلَا يَجِدُ مَنْ يَقْبَلُهَا يَقُولُ الرَّجُلُ: لَوْ جِئْت بهَا بِالْأَمْسِ لَقَبِلْتُهَا فَأَمَّا الْيَوْمَ فَلَا حَاجَةَ لِي بهَا
ব্যাখ্যা: ইমাম নাবাবী বলেন, শেষ যামানায় সম্পদের ব্যাপকতা, জমিনের ধন-ভান্ডারের প্রকাশ এবং পৃথিবীতে অজস্র বারাকাতের প্রেক্ষক্ষতে দান গ্রহণ করার জন্য কাউকে পাওয়া যাবে না। আর এটা ঘটবে ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) পূর্বক্ষণে ইমাম মাহদী এবং ‘ঈসা (আঃ) এর আবির্ভাবের পর মানুষ যখন ফিৎনায় পতিত হয়ে নিজকে নিয়ে ব্যাস্ত থাকবে তখন কেউ মাল-সম্পদের দিকে খেয়াল করবে না। অথবা এটা ঘটবে মাহদী ‘ঈসা (আঃ) এর অবতরণের পর যখন ন্যায় ও নিরাপদে অবস্থান করবে তখন প্রত্যেকের নিকট যে সম্পদ থাকবে সেটাকেই সে যথেষ্ঠ মনে করবে।
পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - দানের মর্যাদা ও কৃপণতার পরিণাম
১৮৬৭-[৯] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি আরয করল, হে আল্লাহর রসূল! কোন দান মর্যাদার দিক দিয়ে সবচেয়ে বড়। তিনি বললেন, তুমি যখন সুস্থ-সবল থাকো এবং সম্পদের প্রতি আগ্রহ পোষণ করো, দারিদ্রের ভয় কর, ধন-সম্পদের মালিক হতে চাও, তখনকার দান সবচেয়ে বড়। তাই প্রাণ ওষ্ঠাগত হবার সময় পর্যন্ত দান করার অপেক্ষা করবে না। কারণ তখন তুমি বলতে থাকবে, এ মাল অমুকের, এ মাল অমুকের এবং এ মাল অমুকের। অথচ ততক্ষণে মালের মালিক অমুক হয়েই গেছে। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ الْإِنْفَاقِ وَكَرَاهِيَةِ الْإِمْسَاكِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَيُّ الصَّدَقَةِ أَعْظَمُ أَجْرًا؟ قَالَ: أَنْ تَصَدَّقَ وَأَنْتَ صَحِيحٌ شَحِيحٌ تَخْشَى الْفَقْرَ وَتَأْمُلُ الْغِنَى وَلَا تُمْهِلَ حَتَّى إِذَا بَلَغَتِ الْحُلْقُومَ قُلْتَ: لِفُلَانٍ كَذَا وَلِفُلَانٍ كَذَا وَقَدْ كَانَ لِفُلَانٍ
ব্যাখ্যা: হাদীসের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা হচ্ছে, একজন মানুষ যখন সুস্থ এবং স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে, মাল সম্পদের প্রতি প্রবল লোভ-লালসা থাকে তখনকার দান হচ্ছে বেশি ফাযীলাতপূর্ণ। কারণ হচ্ছে, মানুষের ধনের সম্পর্ক থাকে তার মনের মুকুটের সঙ্গে; তাই ঐ সময় ধনকে দানের উদ্দেশে তার ধন-ভান্ডার থেকে বের করাতে হলে মনের সঙ্গে সংগ্রাম করতে হয়। আল্লামা খাত্ত্বাবী বলেন, হাদীসের অর্থ হচ্ছে যে, মানুষ যখন সুস্থ থাকে তার লোভও তখন বেশি থাকে। ঐ সময় সে যদি তার লোভকে সংবরণ করে দান করে তাহলে তার নিয়্যাত সঠিক বলে গণ্য হবে এবং তার ঐ দানে নেকীও বেশি হবে। পক্ষান্তরে সে যখন তার মৃত্যুর আভাস বুঝতে পাবে, বাঁচার আশা ছেড়ে দেবে এবং সম্পদ হাত ছাড়া হয়ে যাবে তখন তার দানে সে পূর্ণ নেকী লাভ করতে পারবে না। হাফিয ইবনু হাজার (রহঃ) বলেন, হাদীসের নির্দেশ হলো তুমি তোমার জীবদ্দশায় এবং সুস্থ অবস্থায় দান করবে। আর এই দান তোমার মৃত্যুর পর অথবা অসুস্থ অবস্থায় দান করার চেয়ে উত্তম বলে গণ্য হবে।
পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - দানের মর্যাদা ও কৃপণতার পরিণাম
১৮৬৮-[১০] আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট গেলাম। এ সময় তিনি কা’বার ছায়ায় বসেছিলেন। আমাকে দেখে তিনি বললেন, খানায়ে কা’বার ’রবের’ কসম! ঐসব লোক ক্ষতিগ্রস্ত। আমি আরয করলাম, আমার মাতা-পিতা আপনার জন্য কুরবান হোক, এসব লোক কারা? তিনি বললেন, যাদের ধন-সম্পদ বেশী তারা। তবে তারা এর মধ্যে গণ্য নয়, যারা এরূপ করে, এরূপ করে, এরূপ করে অর্থাৎ নিজের আগে পিছে, ডানে-বামে নিজের মাল খরচ করে। এমন লোকের সংখ্যা কম। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ الْإِنْفَاقِ وَكَرَاهِيَةِ الْإِمْسَاكِ
وَعَنْ أَبِي ذَرٍّ قَالَ: انْتَهَيْتُ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ جَالِسٌ فِي ظِلِّ الْكَعْبَةِ فَلَمَّا رَآنِي قَالَ: «هُمُ الْأَخْسَرُونَ وَرَبِّ الْكَعْبَةِ» فَقُلْتُ: فَدَاكَ أَبِي وَأُمِّي مَنْ هُمْ؟ قَالَ: هُمُ الْأَكْثَرُونَ أَمْوَالًا إِلَّا مَنْ قَالَ: هَكَذَا وَهَكَذَا وَهَكَذَا مِنْ بَين يَدَيْهِ وَمن خَلفه وعني مينه وَعَن شِمَاله وَقَلِيل مَا هم
ব্যাখ্যা: ইবনুল মালিক বলেছেন, (এ হাদীসের ব্যাখ্যায়) চতুস্পার্শ্বে যে সকল অভাবী লোকজন থাকে তাদের মাঝে দান করলে সার্বিক নিরাপত্তা লাভ করা যায়। অর্থাৎ এ ধরনের দানকারীর কোন ক্ষতি হবে না বরং সে নিশ্চয়ই সফলকাম হবে।