ই‘তিকাফের পরিচিতি:
শাব্দিক অর্থে ই‘তিকাফ অর্থ বাস করা, লেগে থাকা, অবস্থান করা ও আটকে রাখা।
পারিভাষিক অর্থে ইবাদতের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট নিয়াতে ও নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে মসজিদে অবস্থান করা।
ই‘তিকাফ শরী‘আতসম্মত হওয়ার হিকমত:
১- ই‘তিকাফের মাধ্যমে দুনিয়ার কর্মব্যস্ততা থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর ইবাদতে নিজের অন্তরকে নিয়োজিত করা।
২- মহান মাওলা আল্লাহর সমীপে তার আদেশ পালন, তার দরবারে তাঁর দয়া ও রহমত লাভের প্রত্যাশায় নিজেকে সমর্পণ করা।
ই‘তিকাফের প্রকারভেদ:
১- ওয়াজিব ই‘তিকাফ: মানতের ই‘তিকাফ পূর্ণ করা ওয়াজিব। যেমন কেউ বলল, আমি যদি অমুক কাজে সফল হই তাহলে তিনদিন ই‘তিকাফ করব অথবা যদি আমার অমুক কাজটি সহজ হয় তাহলে আমি ই‘তিকাফ করব।
২- সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ: এর উত্তম সময় হলো রমযান মাসের শেষ দশদিন ই‘তিকাফ করা।
ই‘তিকাফের রুকনসমূহ:
১- ই‘তিকাফকারী: কেননা ই‘তিকাফ এমন কাজ যার জন্য একজন ই‘তিকাফকারী প্রয়োজন।
২- মসজিদে অবস্থান করা: আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেছেন,
«لا اعتكاف إلا في مسجد جماعة».
“জামাত হয় এমন মসজিদ ছাড়া কোনো ই‘তিকাফ নেই”।[1]
কেননা ই‘তিকাফকারী যখন জামা‘আত হয় এমন মসজিদে ই‘তিকাফ করবে তখন সে সালাতের জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি নিতে পারবে। আর সালাতের পূর্ণ প্রস্তুতি হলো জামা‘আতে সালাত আদায় করা।
৩- ই‘তিকাফের স্থান: ই‘তিকাফকারী যেখানে ই‘তিকাফের জন্য অবস্থান করে।
ই‘তিকাফ শুদ্ধ হওয়ার শর্তাবলী:
১- ই‘তিকাফকারী মুসলিম হওয়া। অতএব কাফিরের ই‘তিকাফ সহীহ হবে না।
২- ভালো-মন্দ পার্থক্যকারী জ্ঞানসম্পন্ন হওয়া। অতএব, পাগল ও শিশুর ই‘তিকাফ শুদ্ধ হবে না।
৩- পুরুষের জন্য এমন মসজিদে ই‘তিকাফ করতে হবে যেখানে জামা‘আত অনুষ্ঠিত হয়। [নারীর জন্য যে কোনো মসজিদ হতে পারবে]
৪- ই‘তিকাফকারীকে জুনুবী তথা অপবিত্রতা, হায়েয ও নিফাস থেকে পবিত্র হতে হবে।
যেসব কারণে ই‘তিকাফ ভঙ্গ হয়ে যায়:
১- সহবাস করা, যদিও এতে বীর্য নির্গত না হয়। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿وَلَا تُبَٰشِرُوهُنَّ وَأَنتُمۡ عَٰكِفُونَ فِي ٱلۡمَسَٰجِدِۗ﴾ [البقرة: ١٨٧]
“আর তোমরা মাসজিদে ই‘তিকাফরত অবস্থায় স্ত্রীদের সাথে মিলিত হয়ো না।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৭]
২- সহবাসের দিকে ধাবিত করে এমন সব কাজ করা।
৩- বেহুশ ও পাগল হওয়া, চাই মাদক বা অন্য যেকোন কারণে হোক।
৪- মুরতাদ হলে।
৫- ওযর ব্যতীত মসজিদ থেকে বের হওয়া।
যেসব বৈধ ওযরে মসজিদ থেকে বের হওয়া যাবে:
যেসব কারণে ই‘তিকাফকারী মসজিদ বা ই‘তিকাফের স্থান থেকে বের হতে পারবে তা তিন ধরণের। সেগুলো হচ্ছে:
১- শর‘ঈ ওযর: যেসব মসজিদে জুমু‘আ ও ঈদের সালাত আদায় হয় না সেসব মসজিদে ই‘তিকাফ করলে জুমু‘আ ও ঈদের সালাতের জন্য বের হতে পারবে।
এর কারণ ই‘তিকাফ হচ্ছে গুনাহের কাজ ছেড়ে আল্লাহর নৈকট্য লাভের ইচ্ছা করা। আর জুমু‘আ ও ঈদের সালাত ছেড়ে দেওয়া নাফরমানী ও গুনাহের কাজ যা ই‘তিকাফের সাথে করা চলে না।
২- স্বভাবগত ওযর: যেমন পেশাব, পায়খানা বা স্বপ্নদোষ হলে ফরয গোসল করা ইত্যাদির জন্য মসজিদে ব্যবস্থা না থাকলে বের হওয়া। তবে এর শর্ত হচ্ছে যতটুকু প্রয়োজন শুধু ততটুকু সময় মসজিদের বাহিরে থাকা, এর চেয়ে বেশি সময় না থাকা।৩- জরুরি ওযর: যেমন কেউ ই‘তিকাফ চালিয়ে গেলে তার সম্পদ হারিয়ে যাওয়া বা ধ্বংস হওয়া বা নিজের ক্ষতির আশঙ্কা করলে তখন বের হতে পারবে।
>